অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা উত্তরপ্রদেশে নতুন কিছু নয়। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে অনাহারে মারা গিয়েছেন ১৬ জন। তবে এবারে যেটা নতুন, তা হলো খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে গায়ে আগুন লাগায় আট বছরের রোহিনী। নবনীতা ভট্টাচার্য -এর রিপোর্ট।
রোহিনীর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলার মজলিশপুর গ্রামে। ঘটনাটি ঘটে অক্টোবরের দশ তারিখ। স্কুল থেকে ফিরে রোহিনী দেখে ঘরে খাবার বলতে একটা রুটি। অথচ খাবার লোক দু’জন। সে আর তার ছোটো ভাই। ভাগাভাগি করে খাবে ঠিক করলেও খিদের জ্বালায় ছোটো ভাই গোটা রুটিটাই খেয়ে ফেলে। আর তাই কেরোসিন তেল ঢেলে নিজের গায়েই আগুন লাগায় রোহিনী। বাড়িতে কেউ না থাকায় প্রতিবেশীরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তারপর সেখান থেকে সরকারি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
রোহিনীর বাবা রাকেশ পেশায় জনমজুর। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অনাহার তাদের নিত্যসঙ্গী। জেলা হাসপাতালের ডাক্তাররা রোহিনীর চিকিৎসার ওষুধ কিনে আনতে বলে বাইরে থেকে। কপর্দকহীন রাকেশ এর পরে টাকা বা ওষুধ কোনও কিছুরই ব্যবস্থা করতে না পেরে রোহিনীকে বাড়ি নিয়ে চলে আসেন। দৈনিক হিন্দুস্থান-এ এই খবর বেরোতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। রোহিনীকে পুনরায় জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দিওয়ালির পরের দিন, ঠিক আঠারো দিনের মাথায় হাসপাতালেই মারা যায় রোহিনী। অনেক রাতে মিডিয়া ভিজিল-এর সঙ্গে ফোন কথা বলতে গিয়ে অসহায় পিতা জানান দিওয়ালির দিন পর্যন্ত রোহিনী ভালোই ছিল। রাত বারোটার পর থেকে বমি আর পায়খানা শুরু হয়। তারপর আর কোনো ওষুধেই কাজ হয়নি।
মিডিয়া ভিজিল-এ ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর কিছুটা তৎপর হয় প্রশাসনও। জননিয়োগ সমিতি ও রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার আয়োগের চেষ্টায় সরকারি সাহায্য পৌছায় ওদের বাড়িতে। মৃত রোহিনীর বাবা রাকেশ জানান আপাতত ঘরে খাবার আছে। পরে কী হবে তার জানা নেই।
আপতত ঘটনাটি রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার আয়োগকে জানানো হয়েছে।