মহারাষ্ট্র পুলিশ যে সমস্ত চিঠিপত্র ও অন্যান্য “চূড়ান্ত” প্রমাণের উপর ভিত্তি করে গ্রেপ্তার হওয়া সামাজিক কর্মীদের সাথে নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনের যোগাযোগের দাবি ঘোষণা করেছিল, ঠিক তার একদিন পরে, শনিবার, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ পুলিশের আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেন। একইসঙ্গে তাঁর নাম উল্লেখিত একটি ‘চিঠি’র বিষয়ে তিনি জানালেন, চিঠিটি পুলিশের ‘মনগড়া’ এবং এমন ভাবে ‘বানানো’ হয়েছে, যাতে তাঁকে ও অন্যান্য মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও সংগঠনকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যায়। তাঁর আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারের মাধ্যমে পুলিশের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুধা ভরদ্বাজ একটি বিবৃতি জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। গ্রাউন্ডজিরো থেকে তার বাংলা অনুবাদ পাঠকের কাছে তুলে দেওয়া হল। সুধার হাতে লেখা মূল ইংরিজি বিবৃতিটি পড়ার জন্য এই লিংক ক্লিক করুন।
সুধা ভরদ্বাজের বিবৃতি
(পুনে পুলিশের প্রেসকে দেওয়া চিঠির বিষয়ে)
১.আমাকে আর আমার মতো অন্যান্য মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, এবং সংগঠনগুলোকে অপরাধী সাব্যস্ত করার অছিলায় চিঠির ব্যাপারটা আগাগোড়া সাজানো হয়েছে।
২. নানান প্রকাশ্য নির্দোষ ঘটনাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন রঙচঙ দেওয়া হয়েছে। সভা-সমিতি করা, প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইত্যাদির মতো আইনসম্মত ও গণতান্ত্রিক কাজকর্মকে মাওবাদী যোগাযোগের তকমা লাগিয়ে বেআইনি দাগানোর চেষ্টা হচ্ছে।
৩. অভিসন্ধিমূলকভাবে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন, কর্মী ও আইনজীবীর নাম তোলা হচ্ছে, যাতে তাদের ওপর একটা ছাপ্পা পড়ে যায় এবং যার ফলে তাদের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে ও তারা সামাজিক অবিশ্বাস ও ঘৃণার শিকার হয়।
৪. আইনজীবীদের সংগঠন আইএপিএল-কে বেআইনি ঘোষণার চেষ্টা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, অবসরপ্রাপ্ত জাজ হসপেট সুরেশের সভাপতিত্বে এই সংগঠন দীর্ঘসময় ধরে আইনজীবীদের ওপর নেমে আসা আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে।
৫. পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই যে মোগায় কোনো অনুষ্ঠানের জন্য আমি কখনওই ৫০,০০০ টাকা দিই নি। আর কোনো মহারাষ্ট্রের অঙ্কিতকেও আমি চিনি না, কমরেড অঙ্কিত নামের কোনো কাশ্মীরী বিচ্ছিন্নতাবাদীকেও না।
৬. হ্যাঁ, আমি গৌতম নওলাখাকে চিনি। তিনি একজন বরিষ্ঠ সম্মানিত মানবাধিকার কর্মী। তাঁর নামটাও এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেন তিনি একজন অপরাধী, যাতে করে তাঁর প্রতি জনমানসে ঘৃণার আবহ তৈরি হয়।
৭. আমি জগদলপুর লিগাল এইড গ্রুপ সম্পর্কেও জানি। কিন্তু আমি কোনোদিন তাদের জন্য কোনো ফান্ডের আবেদন করিনি, কোনো নিষিদ্ধ সংস্থা থেকে তো নয়ই। আর একথাও নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই যে এই গ্রুপের কাজকর্ম সম্পূর্ণ বৈধ ও আইনসম্মত।
৮. দলিত মানবাধিকার কর্মী ডিগ্রি প্রসাদ চৌহানকেও আমি চিনি। তিনি পিইউসিএল-এর সক্রিয় কর্মী এবং হিউম্যান রাইটস ল নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাজ করেন। তাঁর বিরুদ্ধেও আগাগোড়া ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
৯. যেসব আইনজীবী ও অন্যান্য কর্মী ও সংগঠন ছত্তিসগড়, বস্তারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা ফাঁস করে দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সামাজিক ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু করে তোলার বিশ্রী চক্রান্ত করছে সরকার।
আবারও একবার মনে করিয়ে দিই যে এই চিঠি পুরোপুরি সাজানো। ৪ জুলাই রিপাব্লিক টিভিতে সামনে আসার মুহূর্ত থেকেই এ অভিযোগ আমি অস্বীকার করছি। এবং আমায় পুনেয় তাড়ানোর চক্রান্ত হলেও এই চিঠি কিন্তু পুনে আদালত বা ফরিদাবাদ সিজেএম কারো সামনেই আনা হয়নি।
সুধা ভরদ্বাজ
৩১.৮.২০১৮
আমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট বৃন্দা গ্রোভারের মাধ্যমে
পুনে পুলিশের ‘চিঠি’:
সুধা ভরদ্বাজের বিবৃতি:
ছবি – http://www.prokerala.com