গৃহপরিচারিকাদের আর্থিক নিরাপত্তার ভিত্তি দৃঢ় করল তামিলনাড়ু সরকার


  • August 3, 2018
  • (0 Comments)
  • 2040 Views

ভারতের শহরাঞ্চলে গৃহ পরিচারিকাদের কাছে কম মজুরিতে বেশি খাটনি নিত্যদিনের ঘটনা। তামিলনাড়ুতে এর বিপরীতে একটি সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হল। লিখেছেন তৃষ্ণিকা ভৌমিক

 

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পালানিস্বামী গতকাল একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এতে নানান শ্রম-সংস্কারের প্রয়োগ হিসাবে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের – যথা গৃহশ্রমিকদের – সুরক্ষার উদ্দেশ্যে কিছু নির্দেশাবলী জারি করা হয়েছে। এরই একটি অংশ হিসেবে জানা যাচ্ছে, এই রাজ্যে গৃহপরিচারিকাকে প্রতি ঘন্টা কাজের জন্য ৩৭ টাকার কম মজুরি দিলে নিয়োগকর্তা বা কর্ত্রীর জেল হতে পারে।

 

সূত্র – হিন্দু

এই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার ‘অদক্ষ’ গৃহ-শ্রমিকদের ঘন্টা পিছু ন্যূনতম মজুরি ৩৭ টাকা, ‘দক্ষ’ গৃহশ্রমিকদের – যথা রোগীর দেখাশুনোর কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের – ঘন্টা পিছু ন্যূনতম মজুরি ৩৯ টাকা, এবং মালি ও রাঁধুনিদের ঘন্টা পিছু ন্যূনতম মজুরি ৩৮ টাকা নির্ধারিত করেছে। এই ন্যূনতম মজুরি দিনে ৮ ঘন্টা বাড়ির কাজের হিসেবে, অর্থাৎ ঘর ঝাঁট দেওয়া, মোছা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, বাচ্চার দেখাশুনো করা ইত্যাদির ভিত্তিতে ঠিক করা হয়েছে। এই নির্দে‌শাবলী অনুযায়ী সাধারণ ভাবে একজন গৃহশ্রমিকের ন্যূনতম মাসিক আয় ৬৮৩৬ টাকা এবং ট্রেনিং-প্রাপ্ত আয়ার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের মাসিক আয় ৮০৫১ টাকা (প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কাজের হিসেবে) নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে যাঁরা সর্বক্ষণের গৃহশ্রমিক, অর্থাৎ মালিকের বাড়িতে থেকেই কাজ করেন, তাঁদের মজুরির বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, এই ধরনের গৃহশ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক আয় অনান্য গৃহশ্রমিকদের থেকে ১০ শতাংশ বেশি হবে, যার মধ্যে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

 

এই সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করলে, ক্রীতদাস প্রথার অবলোপ আইন (১৯৭৬), ন্যূনতম মজুরি আইন (১৯৪৮) এবং ভারতীয় দ্বন্দ্ববিধি ৩৭০ এবং ৩৭৪ ধারা অনুসারে, তামিলনাড়ুর গৃহশ্রমিকদের নিয়োগকর্তা বা কর্ত্রীদের সর্ব‌োচ্চ সাত বছর অব্দি জেল হতে পারে।

 

কোয়েম্বাটুর শ্রম দপ্তরের ডেপুটি কমিশনারের নেতৃত্বাধীন একটি আট সদস্যের কমিটি, ২০১৭ সালে ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে শ্রম মন্ত্রকের সাথে পরিদর্শন ও আলোচনা এবং গৃহশ্রমিক সংগঠনগুলি ও মালিকপক্ষর সাথে ক্রমাগত আলোচনা এবং বিশ্লেষণের ভিত্তিতে উপরোক্ত বিষয়গুলিকে সরকারি নিয়মনীতি হিসাবে নির্ধারিত করতে পেরেছে। কেরালা, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং এবার থেকে তামিলনাড়ু ১৯৪৮ সালের ন্যূনতম মজুরি আইনের আওতায় গৃহশ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করল। তামিলনাড়ুর গৃহশ্রমিক সংগঠনগুলির বক্তব্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ১৮ লাখ গৃহশ্রমিক এই রাজ্যে কর্মরত।

সূত্র – হিন্দু

 

তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার কর্তৃ‌ক প্রকাশিত এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে বিগত কিছু সময় ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসা এই একই বিষয় নিয়ে অবস্থান উল্লেখ্য। বেশ কিছু দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ গৃহ পরিচারিকা সমিতি ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার লাভ করলেও বর্তমানে তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সেসব সত্ত্বেও এটি গৃহশ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বড় জয়। অন্যদিকে তামিলনাড়ুসহ ভারতবর্ষের বেশ কিছু রাজ্য গৃহশ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি আইন জারি করতে সক্ষম হলেও পশ্চিমবঙ্গ তার দীর্ঘ শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। সম্প্রতি এ রাজ্যের শ্রম দপ্তর গৃহশ্রমিক সংগঠনগুলির কাছে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে তাদের নিজস্ব বক্তব্য এবং একটি খসড়া প্রস্তাব চেয়েছে, যা নিয়ে আগামীদিনে তারা আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক। বেশ কিছু সংগঠন এই প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছে এবং খসড়া প্রস্তাব নিয়ে ন্যূনতম মজুরি আইন প্রণয়নের জন্য আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইন প্রণয়ন বা তার রূপায়ন হতে কত সময় লাগবে, তা যদিও এখনো দীর্ঘ সংগ্রামের বিষয়। আশা করা যায়, তামিলনাড়ুর এই সংবাদ এই সংগ্রামকে ইন্ধন যোগাবে।

লেখক লিঙ্গবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী।

Share this
Leave a Comment