কৃষক আন্দোলন ও গণ আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকা: পাঞ্জাবে কীর্তি কিসান ইউনিয়নের মহিলা শাখার কনভেনশন


  • July 17, 2024
  • (0 Comments)
  • 732 Views

১৫ জুলাই পাঞ্জাবের কীর্তি কিসান ইউনিয়ন-এর মহিলা শাখা এক সারা দিনব্যাপী কনভেনশন-এর আয়োজন করে। মূলত মহিলা কৃষক এবং যাঁরা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত এমন মহিলা কৃষি-শ্রমিকদের মধ্যে, কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের যে কর্পোরেটমুখী কৃষিনীতি, তার কুফল বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং আরও বেশি সংখ্যক মহিলাকে আন্দোলনের শরিক করে তোলার উদ্দেশ্যেই এই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। সুদর্শনা চক্রবর্তীর প্রতিবেদন।

 

Groundxero | July 17, 2024

 

১৫ জুলাই পাঞ্জাবের মোগা-য় সংযুক্ত কিসান মোর্চার অন্যতম সদস্য কীর্তি কিসান ইউনিয়ন-এর মহিলা শাখা এক সারা দিনব্যাপী কনভেনশন-এর আয়োজন করে। আলোচনার মূল বিষয় ছিল কৃষক আন্দোলন ও গণ আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকা। এই কনভেনশন-এ যোগ দেন পাঞ্জাবের প্রায় ১০টি জেলা থেকে কীর্তি কিসান ইউনিয়ন-এর এক হাজারেরও বেশি সংখ্যক মহিলা সদস্য। মূলত মহিলা কৃষক এবং যাঁরা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত এমন মহিলা কৃষি-শ্রমিকদের মধ্যে, কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের যে কর্পোরেটমুখী কৃষিনীতি, তার কুফল বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং আরও বেশি সংখ্যক মহিলাকে আন্দোলনের শরিক করে তোলার উদ্দেশ্যেই এই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। কনভেনশনে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা, বক্তারা সকলেই ছিলেন মহিলা। অধিকার আন্দোলন কর্মী ডঃ নভশরন কৌর, সমালোচক ডঃ অরবিন্দর কৌর কাকরা, স্ত্রী জাগৃতি মঞ্চের নেত্রী আমান দেওল ছিলেন আমন্ত্রিত বক্তা।

 

এদিনের কনভেনশন-এ মূলত যে বিষয়গুলি উঠে আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

 

  • পাঞ্জাবে কৃষির যে সবচেয়ে বড় সংকট, পাঞ্জাবের যে ‘খেতি-বাড়ি’ মডেল পরিবর্তন করে আরও বেশি প্রকৃতিবান্ধব কৃষি-মডেল তৈরির উপরে জোর দিতে হবে। এই মডেলের কারণে পাঞ্জাবে কৃষি জমিতে জল সংকটও দেখা দিয়েছে, মাটির গভীরের জলরেখা মাত্র ১৫ বছরের মতোই অবশিষ্ট রয়েছে।

 

  • রাজ্যের সব কৃষি ক্ষেতে ক্যানাল থেকে জলের সমান যোগান থাকতে হবে।

 

  • রাজ্যের সব বাড়িতে পাণীয় জলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকতে হবে।

 

  • পাঞ্জাবের মধ্যে আন্তঃরাজ্য নদীগুলিকে কেন্দ্র করে যে সমস্যা তা দ্রুত রাজ্যের নদীপথের আইনের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

 

  • পাঞ্জাবের কৃষক ও মজুরদের উপরে যে ঋণ রয়েছে, তা মকুব করতে হবে। আলোচনায় উঠে আসে কর্পোরেটদের কোটি টাকা মকুব হয়ে যায় অথচ কৃষক-মজুরদের ঋণ মকুব হয় না।

 

  • ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তা বজায় রাখতে ওয়াঘা বর্ডার ও হুসেইনিওয়ালা বর্ডার ব্যবহার করতে হবে।

 

কীর্তি কিসান ইউনিয়ন-এর মহিলা শাখার কনভেইনার হরদীপ কৌর কোটলা দূরভাষে কথোপকথনে বলেন, “আমাদের এই যে কৃষি মডেল, তা আদতে আমেরিকা থেকে আমদানি করা। এই মডেলে একবারে কৃষকদের আমদানি অনেকটা বাড়িয়ে তো দিয়েছে কিন্তু তার সঙ্গে দিয়েছে বহু ধরনের অসুখ আর ঋণের বোঝা। এই ঋণের কারণে ২০০৫ সালে ভাতিন্ডা জেলায় ২৩ জন কিসান মহিলা আত্মহত্যা করেছেন, এই মহিলারা সকলেই নিজেরা চাষ করতেন। সাঙরুর জেলায় ৩৩ জন মহিলা কিসান আত্মহত্যা করেছেন। সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে যদি ১০০ জন মহিলা কিসান ‘খেতি’ করেন, তাহলে তার মধ্যে ৮ জন কিসান মহিলা আত্মহত্যা করছেন। কিন্তু এই বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয় না, কারণ আমাদের সমাজে মহিলাদের কৃষক হিসাবে মেনেই নেওয়া হয় না।”

 

এর মুখ্য কারণ অবশ্যই মহিলাদের নামে জমি না থাকা। সারা পাঞ্জাব প্রদেশে মাত্র ১২% জমি মহিলাদের নামে রয়েছে। এমনকি বাড়িও তাঁদের নামে থাকে না। অথচ বাস্তবে যখন ঋণের চাপে কৃষক পরিবারের পুরুষ সদস্য বা পুরুষ কৃষকটি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন, তখন সেই ঋণ শোধ করার সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে পরিবারের মহিলার উপরে। “মহাজন হোক বা ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি ঋণের অর্থ আদায়ের জন্য এই মহিলাদেরই হেনস্থা করতে থাকেন। তাঁদের জমি দখলেরও চেষ্টা অনেক সময়েই করা হয়, ‘এ তো মহিলা, কীই বা করবে,’ এই মানসিকতা কাজ করতে থাকে,” বলছিলেন হরদীপ।

 

এই কনভেনশন-এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, মহিলাদের বাড়ির বাইরে বের করে এনে, তাঁদের যে অধিকারের কথা সেই বিষয়ে সচেতন করা। পাঞ্জাবে মহিলাদের মধ্যে সার্ভাইকাল ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সারের মতো অসুখের প্রকোপও বিগত দশকে অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অন্যতম মূল কারণ পাঞ্জাবের কৃষি মডেল এবং তাকে বদল করা খুবই জরুরি – এই বিষয়েও কনভেনশনে উপস্থিত মহিলাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।

 

এই কনভেনশন আয়োজনের মুখ্য কারণ ছিল, পাঞ্জাবের কৃষি পরিস্থিতির বদলে মহিলা কিসান ও মহিলা কৃষি শ্রমিকদের বেশি সংখ্যায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা। গ্রামে গ্রামে মহিলাদের ‘জঠবন্দি’ বাড়ানো হবে। এই উদ্দেশ্যেই কীর্তি কিসান ইউনিয়নের মহিলা শাখা আগামী দিনের কর্মসূচীর পরিকল্পনা করতে চলেছেন। সংযুক্ত কিসান মোর্চা আগামীতে কর্মসূচী আসতে চলেছে, পাঞ্জাবের জল কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়, পাঞ্জাবের আবহাওয়া কীভাবে রক্ষা করা যায়, ঋণ থেকে কীভাবে মুক্তি দেওয়া যায় ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে, কীর্তি কিসান ইউনিয়নের মহিলা শাখাও নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই বিষয়গুলি নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে দ্রুত পরিকল্পনা করতে চলেছে।

 

Share this
Leave a Comment