কেন্দ্রের খসড়া প্রস্তাব ‘আই ওয়াশ’, কৃষক আন্দোলনে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা: সাংবাদিক সম্মেলনে জানাল এসকেএম


  • February 19, 2024
  • (0 Comments)
  • 486 Views

১৯ তারিখের অনলাইন সাংবাদিক সম্মেলনে এসকেএম-এর তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁরা ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বিষয়ক কেন্দ্রের খসড়া প্রস্তাবকে একটি সম্পূর্ণ ‘আই ওয়াশ’ বলে মনে করছেন এবং এই প্রস্তাবের সম্পূর্ণভাবে বিরোধীতা করা হচ্ছে।

 

Groundxero|19 February, 2024

 

১৯ জানুয়ারি সংযুক্ত কিসান মোর্চা জরুরি ভিত্তিতে একটি অনলাইন সর্বভারতীয় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে।  এর কারণ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সংযুক্ত কিসান মোর্চা (নন-পলিটিক্যাল) ও কিসান মজদুর মোর্চা যে কৃষক আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তাদের নেতৃত্বের সঙ্গে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, পীযূষ গোয়েল ও নিত্যানন্দ রাইয়ের ৪ দফায় বৈঠকের পর রবিবার, ১৮ জানুয়ারি শেষ বৈ্ঠকের পর কৃষক নেতৃত্ব জানায় তারা দু’দিনের জন্য ‘দিল্লি চলো অভিযান’ স্থগিত রাখছে, কেন্দ্রের তরফ থেকে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বিষয়ক একটি খসড়া প্রস্তাব তাঁদের দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অভ্যন্তরীণভাবে সেই প্রস্তাব আলোচনার পরেই আন্দোলন বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

 

১৯ তারিখের সাংবাদিক সম্মেলনে এসকেএম-এর তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁরা এই খসড়া প্রস্তাবকে একটি সম্পূর্ণ ‘আই ওয়াশ’ বলে মনে করছে। তাঁরা মনে করছে বৃহত্তর কৃষক আন্দোলনে বিভেদ তৈরির জন্য এবং তার উদ্দেশ্য গুলিয়ে দেওয়ার জন্যই কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বে বিজেপি সরকার এই প্রস্তাব চলতি আন্দোলনের নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে যা বলা হয়েছে তা এসকেএম-এর পক্ষ থেকে কোনওভাবেই সমর্থন করা হচ্ছে না, এর সম্পূর্ণভাবে বিরোধীতা করা হচ্ছে।

 

এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে পাঁচটি শস্যকে পাঁচ বছরের জন্য সরকার সংগ্রহ/অধিগ্রহণ করবে, যেখানে এসকেএম-এর শুরু থেকেই দাবি সরকারের পক্ষ থেকে মোট ২৪টি শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চিতিকরণ। সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয় তাঁরা স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এই শস্যগুলির সি২০+৫০% সহায়ক মূল্যে সরকারের তরফ থেকে সংগ্রহ/অধিগ্রহণ সুনিশ্চিত করার দাবি জারি রাখছে। কোনও অবস্থাতেই তাঁরা এই দাবি থেকে পিছু হঠবে না বা তার মান কমাবে না। এসকেএম নেতৃত্ব জানায়, এই দাবি আদায় হলে সারা দেশের কৃষকেরা উপকৃত হবেন। কিন্তু কেন্দ্রের ৫টি শস্য উল্লেখ করার অর্থ বিষয়টিকে সরকারের জন্য সুবিধাজনক ও শুধুমাত্র পাঞ্জাব-হরিয়াণা কেন্দ্রীক করে তোলা।

 

বর্তমানে মাত্র দু’টি সংগঠনের কয়েক জন নেতার সঙ্গে কেন্দ্রের বৈঠকের গোপনীয়তার বিষয়টিও সামনে আনেন তাঁরা। ২০২০-২১-এ শুরু হওয়া বৃহত্তর কৃষক আন্দোলনে ৪০ জন নেতার সঙ্গে মোট ১১টি বৈঠক হয়েছিল উল্লেখ করে তাঁরা জানান সেই সব বৈঠকে আলোচিত সমস্ত বিষয়ই প্রকাশ্যে আনা হত। বর্তমানে আন্দোলনরত কৃষক নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনা ও খসড়া প্রস্তাবে নির্দিষ্টভাবে কী কী আলোচিত হয়েছে তা সর্বসমক্ষে আনার দাবিও এদিন জানানো হয়।

 

এসকেএম-এর অন্যান্য দাবির মধ্যে ঋণ মকুব, বিদ্যুৎ বিল ২০২৩ প্রত্যাহার, পেনশন ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে আন্দোলন জারি রাখার কথাও জানানো হয়। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব-হরিয়াণার বিজেপি নেতাদের বাড়ির সামনে ও সরকারি আধিকারিকদের সামনে এবং সারা দেশ জুড়ে্‌ই বিক্ষোভ দেখানোর কথা জানানো হয়।

 

কে্ন্দ্রের খসড়া প্রস্তাবকে কৃষক আন্দোলনের দাবি-দাওয়াকে ছোট করে দেখা ও কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে উল্লেখ করা হয়। তাঁদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিকে মুদ্রাস্ফীতির কারণ হিসাবে দেখিয়ে দেশের মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে মোদী সরকার – এই অভিযোগও তোলে এসকেএম নেতৃত্ব। তাছাড়া ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র জানিয়েছিল তা প্রয়োগ হলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য নষ্ট হবে, তাহলে এখন পাঁচটি শস্যের ক্ষেত্রে তা অকস্মাৎ মেনে নেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলে এসকেএম নেতৃত্ব।

 

বর্তমান দিল্লি চলো অভিযান-এর কৃষক নেতৃত্বের সঙ্গে এসকেএম নেতৃত্বের কোনও যোগাযোগ নেই এবং এখনই তাদের পৃথক কোনও দিল্লি অভিযানের পরিকল্পনা নেই। কিন্তু পাঞ্জাব-হরিয়াণায় যেভাবে কৃষকদের উপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে তার তাঁরা তীব্র বিরোধিতা করেছে, কারণ যেকোনও গণ আন্দোলনের উপর সরকার, প্রশাসনের আক্রমণের বিরোধিতাই তাঁদের নীতি বলে এদিন জানানো হয়।

 

গ্রাউন্ডজিরো-র তরফ থেকে করা দু’টি প্রশ্ন – (ক) ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছাড়া এসকেএম-এর বাকি দাবিগুলি বর্তমান দিল্লি চলো অভিযানের নেতৃবৃন্দ কেন খুব বেশী সামনে আনছেন না? এবং (খ) নেতৃত্বগুলির মধ্যে যোগাযোগ না থাকা বৃহত্তর কৃষক আন্দোলনের পক্ষে ভবিষ্যতে ক্ষতিকারক হতে পারে কি না? – এর জবাবে এসকেএম জানায়, (ক) ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের বিষয়টি থেকে দৃষ্টি শস্য বৈচিত্র্যের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্র এবং নেতৃত্বও সেটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এরফলে জম্মু-কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, রাজস্থান থেকে ইম্ফলের কৃষকদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (খ) এসকেএম বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনার বিরোধী নয়। কিন্তু তাঁরা নিজেদের দাবি থেকে কোনওভাবেই সরবে না। কৃষকদের দাবিকে রাজনৈতিক দাবি হিসাবে গত তিন বছরে প্রতিষ্ঠা করেছে এসকেএম। তারাই দেশের বৃহত্তম কৃষক সংগঠন এবং তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন পূর্ণ মাত্রায় জারি আছে। তিন মাস পরে নির্বাচনে কী হবে তার স্থিরতা নেই। এখনকার বিজেপি সরকার এসকেএম-এর আন্দোলনে ভীত হয়েছে বলেই বৃহত্তর কৃষক আন্দোলনে ভাঙন ধরাতে চাইছে।

 

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হান্নান মোল্লা, যোগীন্দর সিং উগ্রাহান, দর্শন সিং, পি.কৃষ্ণপ্রসাদ, রামিন্দর সিং পাতিয়ালা প্রমুখ।

 

Share this
Leave a Comment