বাঁধভাঙা বিপর্যয়ে কিছু কি এসে যায় কর্পোরেট কিংবা রাজনীতিকদের?


  • October 9, 2023
  • (0 Comments)
  • 1045 Views

২০০৩ সাল থেকে  প্রায় যে সময় সিকিমে তিস্তার উপর সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে  ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তত আধ ডজন গবেষণাপত্রে হিমালয়ে বরফ গলে বিশাল বিশাল হ্রদ তৈরি হওয়া, তার বিপদ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছেযে ১৪টি হ্রদকে গবেষকরা অতি বিপজ্জনক এবং যেকোনও সময় হিমবাহ হ্রদভাঙা বন্যা ও বিপর্যয় ঘটাতে পারে বলে চিহ্ণিত করেছিলেন, সেই ছটি গবেষণাপত্রেই অন্যতম ছিল সিকিমের দক্ষিণ লোনাক হিমবাহ এবং তার ক্রমে বাড়তে থাকা হ্রদএর পরও ধারাবাহিকভাবে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে গড়ে উঠেছে একের পর এক বাঁধ, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রলিখছেন দেবাশিস আইচ

 

 

হিমবাহ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আর বরফ গলা জলে ভরে উঠছে হ্রদ। বাড়ছে আয়তনে ও গভীরতায়। সমগ্র হিমালয় জুড়েই চলছে এমন প্রাকৃতিক পরিবর্তন। আর তা ঘটছে বিশ্বজুড়ে উষ্ণায়নের প্রভাবে। দেশ-বিদেশের ভূতত্ত্ববিদরা বেশ কিছু সময় ধরেই হিমালয় জুড়ে ঘটতে থাকা এই পরিবর্তনের উপর গবেষণা করে চলেছেন। তাঁদের গবেষণালব্ধ তত্ত্ব, তথ্য একটু খুঁজলেই মেলে। ২০১৩ সালের কেদারনাথ বিপর্যয়ের পর এ বিষয়ে আলোচনা তর্কবিতর্ক জোরদার হয়েছে। হিমবাহ গলে সৃষ্ট হ্রদ পাড় ভেঙে পরিমাপের অতীত নুড়ি-পাথর, বড় বড় পাথরের চাঁই, কাদামাটি নিয়ে নেমে এলে কী বিপর্যয় ঘটতে পারে কেদারনাথ তা আমাদের দেখিয়েছে। আনুমানিক ৬০০০ মানুষের মৃত্যুর পরও আমাদের টনক নড়েনি। খবর অচিরেই প্রথম পৃষ্ঠা থেকে ভিতরের পাতায় চলে গিয়েছে। এবং মুছে যেতেও খুব একটা সময় নেয়নি। কতিপয় হাতেগোনা পরিবেশপ্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমীদের আন্দোলন, বিপর্যয়ে নাজেহাল স্থানীয় মানুষের আন্দোলন; করগোনা বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ, ভূতত্ত্ববিদদের সতর্কবার্তাতেও কেউ কান দেয়নি। এর পরও গত দু’বছর যাবত বার বার বিপর্যস্ত হয়েছে হিমাচল ও উত্তরাখণ্ড। অতিবৃষ্টি, একের পর এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, পাহাড় ফুঁড়ে টানেল, চওড়া চওড়া রাস্তার জেরে সম্পূর্ণ ন্যাড়া ও ফোঁপড়া হয়ে যাওয়া পাহাড়, শহর জুড়ে যত্রতত্র পাহাড়ের ঢালে অজস্র বিপজ্জনক বেআইনি নির্মাণ, জনসংখ্যার বিপুল বৃদ্ধি আর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো লাগামহীন পর্যটক, পুণ্যার্থী এবং তাঁদের হাজার হাজার গাড়িঘোড়ার চাপে এই দুই রাজ্য চরম বিপর্যস্ত। সেই একই পথ গত বিশ বছর ধরে বেছে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম। তথাকথিত এই উন্নয়নের জেরে বার বার বিপর্যস্ত হয়েছে দুই রাজ্য। কিন্তু, এখানেও কোনও প্রতিবাদে কান দেয়নি দুই রাজ্যের সরকার। উলটে উন্নয়ন বিরোধী তকমা দিয়ে দমনপীড়নের রাস্তা নিয়েছে।

 

যাদের কান দেওয়ার কথা ছিল বলে আমরা ভাবতে ভালবাসি, আবেদন-নিবেদন করি, আঙুল তুলি, কষে গালাগালি দিই—কোনও বিপর্যয়েই—কেদারনাথ হোক কিংবা উত্তরাখণ্ড, হিমাচল, কাশ্মীর কিংবা সিকিম— তাদের কিছু যায় আসে না। যদি আসত তবে জেনে-বুঝে সমগ্র হিমালয় জুড়ে উন্নয়নের নামে এমন প্রকাণ্ড ও ভয়ংকর রকমের আগ্রাসন, প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারত না। এই সব কর্মকাণ্ডে এক সময় প্রকৃতিও ফুঁসে ওঠে। সেও পাল্টা তাণ্ডব চালায়। আমরা কাব্য করে বলি ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’। ভাবি এই পালটা মারে বুঝি সংবিৎ ফিরবে রাজনীতিক থেকে কর্পোরেটের কর্তাদের। এমনটা হয় না। প্রকৃতি ‘প্রতিশোধ’ নেয় ঠিকই, তার বুকের উপর গড়ে তোলা হাজার হাজার কোটি টাকার কংক্রিট আর ইস্পাতের নির্মাণ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ঠিকই—তাতে কিছু আসে যায় না কর্পোরেট কিংবা রাজনীতিকদের। তাদের কাছে এ হল প্রকল্পটির ‘ডেটলাইন’ পিছিয়ে যাওয়া মাত্র। কিংবা এই বিপর্যয় আরও আরও মুনাফার দরজা খুলে দেয়। আরও অর্থবরাদ্দ, আরও কমিশন, আরও ইট-বালি-সিমেন্ট-ইস্পাতের বিক্রিবাটা। সরকারি ত্রাণকর্তাদের পকেট ভারি হওয়া। মরে সাধারণ, ধ্বংস হয়ে যায়। প্রকল্পের জন্য উচ্ছেদ হওয়া এক বিপর্যয়। আর গ্রামের পর গ্রাম বিশ-তিরিশ ফুট কাদামাটি, পাথরের নীচে  ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, গবাদিপশু, ছোট দোকানপাট চাপা পড়ে যাওয়ার মানে ধ্বংস হয়ে যাওয়া। এর কোনও ত্রাণ নেই, পরিত্রাণও নেই। যত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার চেয়ে ঢের বেশি থাকে নিখোঁজ মানুষ। মৃতের আত্মীয়রা শংসাপত্র জোগাড় করে ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন বটে, কিন্তু যাঁরা চিরতরে হারিয়ে গেলেন, তাঁরা যে মৃত সে প্রমাণপত্র দেবে কে? এসব ক্ষেত্রে কীর্তিনাশা কর্পোরেট চুপ মেরে থাকে। সরকার এগিয়ে আসে তাদের যাবতীয় অপরাধ ধামাচাপা দিতে। তার সাম্প্রতিক নিদর্শন হল যোশীমঠ বিপর্যয়ের রিপোর্ট আড়াল করার চেষ্টা। যোশীমঠ-বিপর্যয়ের কার্যকারণ নিয়ে উত্তরাখণ্ড হাই কোর্ট রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। ইসরো-সহ আটটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান যোশীমঠের ক্রমে পাহাড়ের বুকে সেঁধিয়ে যাওয়া নিয়ে যে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরি করেছে, তা কেন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হচ্ছে না, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় উত্তরাখণ্ড হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। ২২ সেপ্টেম্বর, বহু টালবাহানার পর, এই আটটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে আদালতে জমা দেয় উত্তরাখণ্ড সরকার। তখনই বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন যে, এই রিপোর্ট কেন সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হচ্ছে না? তবেই এই রিপোর্ট থেকে সাধারণ মানুষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারে এবং সরকার কী করছে না-করছে তাও জানতে পারবে।

 

সিকিমে তো এখনই বিগত সরকারের ঘাড়ে দায় চাপানোর খেলায় নেমেছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী প্রেমসিংহ তামাং। এই বিপর্যয়ের জন্য তিনি দায়ী করেছেন পূর্ববর্তী মুখ্যমন্ত্রী সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের পবনকুমার চামলিংকে। সিংটামে ১২০০ মেগাওয়াটের তিস্তা উরজা বেসরকারি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ার সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ‘দুর্নীতিযোগ’-এর গন্ধ পেয়েছেন সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চার প্রেমসিংহ। সঙ্গে পেয়েছেন রাজ্যের বিজেপি দলটিকেও। বিজেপির পূর্ব গ্যাংটকের বিধায়ক ওয়াই টি লেপচা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বলেছেন, বৌদ্ধ লামা, স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদ, ৯০০ দিনের বেশি রিলে অনশন কোনও কিছুকেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গ্রাহ্য করেননি। তাঁর ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোভ’ জোরজবরদস্তি তিস্তা উরজা বাঁধ নির্মাণের জন্য দায়ী। এই বাঁধ ভাঙার ফলেই আজ এত বড় বিপর্যয়। সন্দেহ নেই, এই বিপর্যয়ের বিজ্ঞানসম্মত কারণগুলি খুঁজে দেখার চেয়ে রাজনৈতিক ‘নন্দ ঘোষ’ খুঁজতেই বেশি ব্যস্ত বর্তমান শাসকেরা। যাতে তাদের অপদার্থতা, কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির অপদার্থতাকে আড়াল করা যায়।

 

২০০৩ সাল থেকে—প্রায় যে সময় সিকিমে তিস্তার উপর সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে — ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তত আধ ডজন গবেষণাপত্রে হিমালয়ে বরফ গলে বিশাল বিশাল হ্রদ তৈরি হওয়া, তার বিপদ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যে ১৪টি হ্রদকে গবেষকরা অতি বিপজ্জনক এবং যেকোনও সময় হিমবাহ হ্রদভাঙা বন্যা ও বিপর্যয় ঘটাতে পারে বলে চিহ্ণিত করেছিলেন, সেই ছ’টি গবেষণাপত্রেই অন্যতম ছিল সিকিমের দক্ষিণ লোনাক হিমবাহ এবং তার ক্রমে বাড়তে থাকা হ্রদ। তিন দশক ধরে কীভাবে এই হিমবাহটি ক্রমে পিছিয়ে যাচ্ছে, কীভাবে বরফগলা জলের হ্রদ বাড়ছে তার কার্যকারণের পুঙখানুপুঙখ বিবরণ এই গবেষণাপত্রগুলিতে রয়েছে। এর পরও ধারাবাহিকভাবে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে গড়ে উঠেছে একের পর এক বাঁধ, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখনও এ রাজ্যে তিস্তা ও রঙ্গিতের উপর আরও বাঁধ নির্মাণের কর্মকাণ্ড অব্যাহত।

 

তিস্তা উরজা বাঁধের নির্মাণ কৌশল নিয়ে আগেও প্রশ্ন তুলেছিলেন বাঁধ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। বাঁধভাঙার ফলে হরপা বানের প্রকোপ যে বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল সে বিষয়েও কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু, এই বিপর্যয়ের সেটিই একমাত্র কারণ নয়। বাঁধ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ হিমাংশু ঠক্কর এই বিপর্যয়ের পিছনে একগুচ্ছের কারণ নির্দেশ করেছেন। যেগুলি সূত্রাকারে এরকম:

 

১। সকলেই জানত দক্ষিণ লোনাক হ্রদ হিমবাহ হ্রদভাঙা বন্যা বা ‘গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড'(জিএলওএফ)-এর একটা খুবই সম্ভাব্য স্থান। ওই গবেষকরা ছাড়াও ২০১৩ সালে ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারের বিজ্ঞানীরা সিকিম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এসএসডিএমএ)-কে জানিয়েছিল ৫,২৪৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত দক্ষিণ লোনাক আদৌ নিরাপদ নয়। হ্রদভাঙা বন্যার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে চুংথাং, ডিকচু, সিংটাম, রংপো বিপগ্রস্ত হবে। মনে রাখতে হবে, সিংটামে তিস্তা উরজা বাঁধ নির্মিত হয়েছে ২০১৫ সালে।

 

২। তিস্তার উজানে কোনও প্রারম্ভিক বিপদসংকেত ব্যবস্থা (আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম, ইডব্লিউএস) ছিল না। বিপর্যয়ের পর ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এনডিএমএ) এই বিপদসংকেত ব্যবস্থা চালু করার কথা তোলে। ঠক্কর জানাচ্ছেন অন্তত কুড়ি মিনিট সময় পেলেও হয়তো বাঁধ বিপর্যয় এড়ানো যেতে পারত।

 

৩। তিস্তা উরজা বাঁধটি সম্পূর্ণ কংক্রিটের নয়। পাথর ও কংক্রিটের (রক ফিলড কংক্রিট ড্যাম)। ফলত বিপর্যয়ের ঝুঁকি বেশি।

 

৪। বাঁধের জল ছাড়ার ক্ষমতাও (স্পিলঅ্যাওয়ে ক্যাপাসিটি) ছিল কম। প্রতি সেকেন্ডে ৭০০০ কিউবিক মিটার জল ছাড়ার ক্ষমতা ছিল এই বাঁধটির। গ্লেসিয়ার হ্রদভাঙা বন্যা ও অতিবৃষ্টির ক্ষেত্রে যা যথেষ্ট ছিল না।

 

৫। এই জাতীয় বাঁধে জল ছাড়ার ব্যবস্থাটি বিদ্যুৎচালিত হয়। সময়মতো সেই গেটগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সে কথা অবশ্য বাঁধ কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন। এবং এও জানা গিয়েছে বাঁধটি জলে পরিপূর্ণ ছিল। এর সঙ্গে পাথর, কাদামাটি-সহ প্রচণ্ড গতিতে নেমে আসা বন্যার জলের প্রকোপে বাঁধটি ভেঙে পড়ে।

 

৬। ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বাঁধটি বৃহৎ বাঁধের আওতায় পড়ে। প্রকৃত অর্থে বহমান নদীর (রান অব দ্য রিভার হাইড্রো-পাওয়ার প্রজেক্ট) উপর স্থাপিত এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ। অথচ, বাঁধের নিরাপত্তার দিকে নজর রাখার দায়িত্ব যে কেন্দ্রীয় সংস্থার সেই সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (সিডব্লিউসি)-এর ন্যাশনাল রেজিস্টারে তিস্তা উরজার নামগন্ধ নেই। ফলত, বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ যে, ড্যাম সেফটি অ্যাক্ট অনুযায়ী এই বাঁধটি আদৌ ‘সেফটি মেকানিজম’-এর আওতায় ছিল কি না!

 

৭। চুংথাং থেকে ২০ কিলোমিটার উজানে সিডব্লিউসি-র একটি আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র রয়েছে। যার অন্যতম কাজই হচ্ছে হরপা বানের আগাম সতর্কতা জারি করা। দেখা গেছে ৩ অক্টোবর রাত ১০টার পর থেকে কোনও রেকর্ডই রাখা হয়নি। যার কিছু সময় পড়েই বিপর্যয় নেমে আসে।

 

অন্যান্য আরও বিশেষজ্ঞদের মতোই হিমাংশু ঠক্করের প্রশ্ন প্রথমত, এই বাঁধ নির্মাণের অনুমতি কেন দেওয়া হল? দ্বিতীয়ত, বাঁধ নির্মাণের পরও কোনও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থাই-বা কেন নেওয়া হয়নি? ফলত যা ঘটার তাই ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিপর্যয় যে মানুষেরই তৈরি সে বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ থাকে না। ঠক্কর মনে করেন, নির্মিত বাঁধগুলির নিরাপত্তার জন্য এনডিএমএ-কে আরও অনেক বেশি সক্রিয় হতে হবে। এবং সিডব্লিউসি-র মতো দুর্বল, নানা স্বার্থের সংঘাতে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানের বদলে বাঁধগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দিক নিয়মিত খতিয়ে দেখার জন্য স্বাধীন, স্বশাসিত সংস্থার দরকার।

 

হিমাংশুর শেষের কথার মধ্যে অবশ্য সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলের বিপর্যস্ত মানুষের কথার অনুরণনই খুঁজে পাওয়া যায়। ইতিমধ্যেই সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে বাঁধ বিরোধী আন্দোলন মাথা চাড়া দিচ্ছে। তিনি খুবই স্পষ্ট ভাষায় আবারও জানিয়েছেন, পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে, এই জাতীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, যা বর্তমান অবস্থায় রয়েছে, হিমালয় অঞ্চলে তা কোনওভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়, বাস্তবোচিতও নয়। বিশেষভাবে এই সমস্ত অঞ্চলে এই পরিকল্পনাগুলোকে আমাদের নতুন করে ভেবে দেখতে হবে।

 

কৃতজ্ঞতা:

Ashim Sattar, Indian Institute of Science, Bengaluru,
Future Glacial Lake Outburst Flood (GLOF) hazard of the South Lohonak Lake, Sikkim Himalaya, Ashim Sattar et al, 2021
Suman Singhal, News 9, October 7, 2023.

 

পড়ুন : তিস্তা বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কে?

 

Share this
Leave a Comment