গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন: সুদর্শনা চক্রবর্তী
“সাংবাদিক হিসাবে আমার কাছে উত্তর প্রদেশের হাথরাসে দলিত মেয়েটির ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনাটি কভার করতে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল একটি হিন্দু জাতীয়বাদী রাজনৈতিক দল যেখানে ক্ষমতায় রয়েছে, মানে বিজেপি সেখানে একজন দলিত মেয়েকে মৃত্যুর পর, তাঁর পরিবারের অনুমতি ছাড়াই কীভাবে দাহ করা হল? আমি এই ঘটনায় অন্তিম সংস্কারের খুঁটিনাটির তদন্ত করতে চেয়েছিলাম।”
“আমি কেরালার বাসিন্দা, সেখানেই সাংবাদিকতার শুরু, গত ১০ বছর দিল্লিতে থেকে স্বাধীন সাংবাদিকতা করছি। স্বাধীন দেশে আমি যেকোনও জায়গায় সাংবাদিকতার জন্য যেতে পারি। কিন্তু উত্তর প্রদেশে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনারা কি জানেন কাশ্মীরের কতজন সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ উত্তর প্রদেশের মথুরা ও লক্ষ্ণৌর জেলে আটক হয়ে আছেন?”
“মেরা নাম সিদ্দিক হ্যায়। আমাকে তো হাইব্রিড টেরোরিস্ট বানিয়ে দিয়েছে। আমি একাধারে মাওইস্ট, কমিউনিস্ট সিমপ্যাথাইজার এবং একজন মুসলিম উগ্রপন্থী!”
কলকাতায় পিপল’স ফিল্ম কালেক্টিভ-এর এক আলোচনাসভায় এসে নিজের বক্তব্যে এই কথাগুলোই বলছিলেন কেরালার স্বাধীন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। হাথরাসের দলিত নারীর ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা ‘কভার’ করতে গিয়ে ইউএপিএ ও অর্থ তছরূপের মামলায় আটক করা হয় তাঁকে। আপাতত তিনি জামিনে মুক্ত। ভারতের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা তথা সংখ্যালঘু মানুষদের উপরে নেমে আসা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ও আইনি সন্ত্রাসের উদাহরণ হিসাবে সিদ্দিক কাপ্পান যখন তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তখন ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শাসক ও পুঁজিবাদের কাছে নতজানু হয়ে পড়া সংবাদ মাধ্যমের বিপ্রতীপে দাঁড়ানো স্বাধীন ও বিকল্প সংবাদ মাধ্যমের নিরপেক্ষ, সত্যনীষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য যে দাম দিতে হচ্ছে তার বাস্তব ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যায়।
আলোচনাসভা শুরুর আগে গ্রাউন্ডজিরো-র সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে সিদ্দিক কাপ্লান।
জিএক্স: কাপ্পান, কলকাতায় আপনাকে স্বাগত। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর জীবন কেমন কাটছে?
কাপ্পান: ধন্যবাদ। এমনিতে ভালো। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার সে অর্থে কোনও কাজ নেই। প্রত্যেক সোমবার আমাকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে হাজিরা দিতে হয়। কোনও রকমে চলছে। আরও কিছু শর্তসাপেক্ষে জামিনে ছাড়া পেয়ে রয়েছি বলে আমি বাইরে কোথাও যেতে পারি না। কেস তো এখনও চলছে। পরিবার আর বাচ্চাদের নিয়ে পরিস্থিতি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দু’টো কেস চলছে তাই প্রত্যেক মাসে চোদ্দ দিন অন্তর আমাকে উত্তর প্রদেশের কোর্টে হাজিরা দিতে হয় দু’বার করে।
জিএক্স: আপনার সাংবাদিক হিসাবে পেশাগত জীবন যেমন প্রবল ধাক্কা খেয়েছে, তেমনি আপনার পারিবারিক জীবনও বদলে যেতে বাধ্য হয়েছে। দু’টোই সম্পর্কিত। তবু কোনটা বেশি সমস্যাজনক মনে হয়?
কাপ্পান: সবচেয়ে বড় সমস্যা হল অর্থনৈতিক ক্রাইসিস। এই মুহূর্তে আমি একটা পোর্টালে ফ্রিল্যান্স কাজ করছি। মূলত অনুবাদ বা স্থানীয় প্রতিবেদন তৈরির কাজ, যা আমি ঘরে বসে করতে পারি। আমার কোনও চাকরি নেই। আমি যখন জেলে ছিলাম অনেকেই সাহায্য করেছেন। কপিল সিবাল, আই বি সিং আমাকে সমর্থন করেছেন, বিনা পারিশ্রমিকে যাতে আমার কেস লড়া যায় সে ব্যবস্থা করেছেন। যাইহোক, মূলস্রোতের মিডিয়া মানে প্রিন্ট মিডিয়ায় এখন কাজ করতে পারছি না। এক মাসে চারবার আমাকে লক্ষ্ণৌ যেতে হয়। এরকম পরিস্থিতিতে কে আমাকে ভরসা করে কাজ দেবে?
জিএক্স: মূলস্রোতের মিডিয়ায় আপনার যাঁরা সহকর্মী ছিলেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন?
কাপ্পান: গোদী মিডিয়া তো এখনও আমার থেকে দূরেই আছে। আর সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা স্বাধীন, সেক্যুলার মিডিয়া তারা প্রথম থেকে এখনও পর্যন্ত আমাকে খুবই সমর্থন করছে।
জিএক্স: কেরালার স্বাধীন তথা বিকল্প সংবাদ মাধ্যম খুবই সাহসের সঙ্গে কাজ করে চলেছে। তাঁদের প্রতিক্রিয়া বা তাঁদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
কাপ্পান: কেরালার স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমগুলি প্রথম থেকেই পুরোপুরি আমার সঙ্গে ছিল। যখন জেলে ছিলাম তখনও, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও তাঁরা আমাকে খুবই সাহায্য করেছে। আমার কেসেও সাহায্য করেছে। আমার কেসটা নিয়ে সঠিক স্বাধীন রিপোর্টিং করেছে। কেরালাতেও সংঘী, সরকারকে সমর্থনকারী মিডিয়া থাকলেও তা সংখ্যায় খুবই কম, একট-দু’টি হবে। তারা তো স্বাভাবিকভাবেই দূরে রয়েছে।
জিএক্স: এই ঘটনার পর আপনার কাজ করার পরিসর ছোট হয়ে গেছে বলে মনে করেন, না কি অন্য কোনওভাবে তা আপনার কাজের পরিধি বাড়িয়ে দিয়েছে?
কাপ্পান: বিষয়টা একটু অন্য রকম। আগে আমি মালায়লমে রিপোর্টিং করতাম। এখন আমার পাঠকের পরিসরটা অনেক বড় হয়ে গেছে। আমেরিকা এবং আন্তর্জাতিকভাবে আমি এই ঘটনার সময়ে অনেক সমর্থন পেয়েছি। ফলে আমার ‘অডিয়েন্স’ বড় হয়ে গেছে। ফলে আমার সামনে এখন কাজের সুযোগ অনেক আছে। কিন্তু বিচারব্যবস্থার জটিলতায়, আইনি প্রক্রিয়ায় আমি তা ব্যবহার করতে পারছি না। কাজের জন্য বাইরে যেতে পারি না। যেমন ধরুন, আজ রবিবার আমি কলকাতায় রয়েছি, আমাকে রাতের মধ্যে বাড়ি ফিরতেই হবে কারণ কাল সোমবার আমাকে স্থানীয় থানায় হাজিরা দিতে হবে। এরকম আরও অনেক শর্তাবলী রয়েছে। সেগুলো সামলে আমি কাজ করতে পারছি না। বাইরের কিছু মিডিয়া কাজ দিতে চেয়েছে, আমি বাড়ি থেকে যতটা কাজ করতে পারি, আর্টিকেল লিখতে পারি ততটাই করে পাঠাচ্ছি।
জিএক্স: আপনি যখন হাথরাসে রিপোর্টিং-এর জন্য যাচ্ছিলেন সম্পূর্ণ আচমকা আপনাকে আটক করা ও তারপর জেলবন্দী করার ঘটনা ঘটে। আপনি কখনও আন্দাজ করেছিলেন যে আপনি আপনার কাজের জন্য নজরদারিতে রয়েছেন?
কাপ্পান: না, না, একেবারেই নয়। আমার ভুল ছিল যে আমি হাথরাসে সত্য খুঁজতে যাচ্ছিলাম। সেই সময়ে উত্তর প্রদেশ সরকার, কেন্দ্রের সরকার সবাই খুবই ব্যতিব্যস্ত ছিল। এবিপি নিউজ, ইন্ডিয়া টুডে যারাই ওখানে রিপোর্টিং করতে যাচ্ছিল, সবাইকে ডাইভার্ট করা হচ্ছিল। সেখানে একজন দলিত মহিলার উপর যে দুষ্কর্ম হয়েছিল, ঠিক কী ঘটেছিল সেখানে আমি সেটাই খুঁজে বের করতে যাচ্ছিলাম। সেটাই ভুল ছিল আমার! আপনী নিশ্চয় জানেন সিপিআই-এর অ্যানি রাজা, তাঁর বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রদ্রোহীতার কেস ঠুকে দিয়েছে। উনি তো মণিপুরে বাস্তবে কী ঘটছে সেটাই বলেছিলেন – তার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
জিএক্স: বিজেপির শাসনে দেশে বাকস্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বিপন্ন। অনলাইন মিডিয়া, স্বাধীন মিডিয়ার উপর আরও বড় নিয়ন্ত্রণ তারা আগামী দিনে আনতে চায়। এমতাবস্থায় আপনার মতো স্বাধীন সাংবাদিকদের অবস্থা আগামী দিনে কী হতে চলেছে?
কাপ্পান: কেন্দ্রে এই সরকার থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকদের বিপদ আরও বাড়বে। ভবিষ্যতে আরও সমস্যা বাড়বে। ২০১৪-র পর এদেশে কী ঘটছে আমরা সবাই জানি। ২০২৪-এও যদি আবার তারা সরকার গঠন করে তাহলে তা খুবই বিপজ্জনক হবে।
জিএক্স: কেন্দ্র সরকার তো বটেই, কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলবেন?
কাপ্পান: সব রাজ্যেই ক্ষমতায় কে আছে তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। যে ক্ষমতায় আছে তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা কিছু লিখলেই, তা যতই সঠিক হোক, সমস্যা হবেই।
জিএক্স: ভবিষ্যতে আপনার সাংবাদিকতার কাজ কীভাবে করে যেতে চান?
কাপ্পান: আসলে এখনও আমি কিছু ঠিক করে উঠতে পারিনি। এখনও আমার কেস চলছে। আমার উপরে অনেক আরোপ আছে – রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাওয়া, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ তৈরি করা ইত্যাদি। আমি এখনও অনেক রকম সেন্সরশিপ-এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কেস কবে শেষ হবে জানি না। ২০২৪-এ বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসলে সত্যিই আমি আরও সমস্যায় পড়ব।
জিএক্স: যেসকল সাংবাদিকেরা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার, জেলবন্দী তাঁদের জন্য আলাদা করে কোনও মঞ্চ তৈরির কথা কি ভাবছেন আপনারা?
কাপ্পান: আমি সে সময়ে ইউএপিএ, এই ধরনের আইনের বিরুদ্ধে অনেক লিখেছি। ইউএপিএ আমার রিপোর্টিং বিট-ও ছিল। সত্যি বলতে কী গৌরী লঙ্কেশের হত্যার বিরুদ্ধে, অন্য আন্দোলনকর্মীদের সমর্থনে, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আমি লড়াই করছিলাম। আমার উপর নজরদারির, আমাকে গ্রেফতারের সেটা একটা কারণ বলে পরে আমার মনে হয়েছে।
জিএক্স: স্বাধীন সাংবাদিক, বিকল্প সংবাদ মাধ্যমে যাঁরা রয়েছেন – নতুন প্রজন্ম যাঁরা আসতে চান, তাঁদের কিছু বলবেন?
কাপ্পান: সাংবাদিকতা পি আর মানে পাবলিক রিলেশন-এর কাজ নয়। সাংবাদিকতা মানে জনতার কন্ঠস্বর। আমাদের গণতন্ত্রে সাংবাদিকতা চতুর্থ স্তম্ভ। সাংবাদিক হয়ে পি আর করলে কি লাভ? হ্যাঁ, কারওর নিজের লাভ, আর্থিক ফায়দা হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশ, আমাদের জনগণের জন্য এমন সাংবাদিকতা চাই না।
জিএক্স: বিচারব্যবস্থাও যখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তখন সৎ, সাহসী, স্বাধীন, বিকল্প সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টা কী হবে?
কাপ্পান: ঠিকই, বিচারব্যবস্থার উপর আমাদের ভরসা এখন ক্রমশ কমে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে প্রতিবাদ তৈরি হচ্ছে। তবে, দেশের বিচারব্যবস্থার উপরে আমার এখনও আস্থা আছে। সামান্য হলেও। মানুষের প্রতিবাদ, আন্দোলনই একমাত্র পথ, আমাদের কাছে সেটাই আছে।
জিএক্স: আপনি জামিনে মুক্ত। কিন্তু চারিদিকে যা পরিস্থিতি, তিস্তা শেতলবাদ প্রমুখের সঙ্গে যা ঘটছে, আপনি কি ভয় পান যে আপনাকেও জেলে ফেরত যেতে হতে পারে?
কাপ্পান: আগে আমি এই ভয়টা পেতাম। কিন্তু আমি দেখলাম আমার সমর্থনে প্রচুর মানুষ আছেন। ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ, স্বাধীন সাংবাদিকেরা। এইগুলি দেখে এখন আমার মধ্যে অনেকটাই ‘হিম্মত’ ফিরে এসেছে।
সিদ্দিক কাপ্পান-এর স্ত্রী রাইহানা একজন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে চাকরি করতেন। ২০০২ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। রয়েছে তিন সন্তান – দুই ছেলে, এক মেয়ে। কাপ্পানের গ্রেফতারি তিন নাবালক সন্তান সহ তাঁদের পারিবারিক জীবন আমূল বদলে দেয়। সেই সময়ে নব্বই বছরের অসুস্থ শাশুড়ির দায়িত্বও ছিল তাঁরই। আলোচনার শেষে মঞ্চে বসে স্পষ্ট উচ্চারণে বলছিলেন, “আমি ভেবে দেখলাম বাড়িতে বসে কান্নাকাটি করলে কিছুই হবে না। সবকিছু কে সামলাবে? তাই আমি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মনোস্থির করলাম। এই লড়াই শুধু আমার স্বামী কাপ্পানের জন্য নয়, স্বাধীন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের জন্য। আমাদেরও মেয়ে রয়েছে। হাথরাসের মেয়েটির মতো ঘটনা যদি আমাদের মেয়ের সঙ্গে ঘটত? কাপ্পানের মতো সাংবাদিক জেলে থাকলে কে লিখবেন এইরকম বিষয় নিয়ে?”
রাইহানা মালায়লম ছাড়া আর কোনও ভাষায় স্বচ্ছন্দ নয়। সুতরাং, কাপ্পান দোভাষীর কাজ করলেন।
গ্রাউন্ডজিরো-কে রাইহানা যা জানালেন –
জিএক্স: রাইহানা আপনি কি ভীত যে কাপ্পানকে আবার আটক করা হতে পারে? এই লড়াইটা আপনি কীভাবে লড়ছেন?
রাইহানা: কাপ্পান গ্রেফতার হওয়ার ৪৫ ঘন্টা পরে আমি জানতে পারি যে কাপ্পান গ্রেফতার হয়েছেন। তখন প্রথমে তো আমি বুঝেই উঠতে পারছিলাম না, কী করতে হবে, কীভাবে লড়াই করতে হবে। কিন্তু অনেক মানুষ, অনেক সাংবাদিক, সিদ্দিক কাপ্পান সলিডারিটি টিম সবাই এগিয়ে এসে সাহায্য করেন। এরফলে আমার সাহস বাড়ে। তাছাড়া তখন আমাদের তিন সন্তানই নাবালক ছিল। তাদের পড়াশোনা, অসুস্থ শাশুড়ির চিকিৎসা সব সামলাতে হয়েছে। তবে সামাজিক আন্দোলনকর্মী, সাংবাদিকেরা সব সময়েই পাশে ছিলেন। এখন অর্থনৈতিক সমস্যাটা প্রধান। যদিও সাংবাদিকদের ইউনিয়ন, পরিবার সমর্থন করে, তবু এই অনিশ্চয়তা চিন্তার কারণ তো বটেই। কিন্তু লড়াই ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন নেই।
আটক করার পর সিদ্দিক কাপ্পানকে চড় মারতে মারতে, পায়ে লাঠি দিয়ে মেরে পুলিশ প্রশ্ন করেছিল – পাকিস্তানে কতবার গেছেন? উর্দু পড়তে পারেন? গরুর মাংস খান? জেএনইউতে পড়েছেন? জাকির নায়েককে চেনেন? সিপিএম-এর কোন এমপি পাঠিয়েছেন? কম্যুনিস্ট আপনি? আপনি কি মাওইস্ট?
কেরালা ইউনিয়ন অফ ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস-এর সভাপতি, প্রেস ক্লাব ইন্ডিয়ার সদস্য, স্বাধীন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন যুক্তিপূর্ণ ভাবে। না, জেলহাজতে শারীরিক নিগ্রহ না হলেও, অসম্মানজনক জীবন মানসিক ও শারীরিক ছাপ রেখে গেছে শরীরে, মনে। কিন্তু লড়াই ছাড়বেন না জানিয়ে দিলেন। বললেন, গণতন্ত্র বাঁচানোর একমাত্র উপায় জনগণের আন্দোলন, নাগরিকদের শিক্ষিত করে তোলা, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। “ভয়ের সর্বোচ্চ পর্যয় হল নির্ভয় হয়ে যাওয়া। আমি এখন সেই পর্যায়ে চলে গেছি। আমার আর কোনও ভয় নেই”, অনুরণিত হতে থাকল ভারতের এক স্বাধীন সাংবাদিকের নির্ভিক শব্দগুলি।