ফেডেরালিজম — আরএসএস-এর স্বৈরাচারী এককেন্দ্রিক হিন্দুরাষ্ট্র প্রকল্পের পথের কাঁটা


  • May 23, 2023
  • (0 Comments)
  • 1056 Views

মোদী রাজত্বের নবম বর্ষপূর্তি উৎসব পালন করতে চলেছে বিজেপি। কানে তালা লাগানো ঢাক-ঢোল বাজিয়েই যে তার প্রচার চলবে তার আঁচ এখনই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, বিগত ন’বছরে বিজেপি নামক দলটি ভারতের সাংবিধানিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটিকেই ছলেবলে ভেঙে ফেলতে উদ্যত। তার সাম্প্রতিক নমুনাটি হল, দিল্লি রাজ্যটির প্রশাসনিক ক্ষমতাকে করায়ত্ব করতে দেশের শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় নাকচ করতে অর্ডিন্যান্স জারি করা। আরএসএস-এর তত্ত্ব অনুযায়ী, ভারতে কেন্দ্রীভূত, অবাধ ও স্বৈরাচারী শাসন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিজেপি। তারই স্বরূপ উদঘাটন করলেন পার্থ সিংহ

 

কর্নাটকের সাম্প্রতিক নির্বাচনের উচ্চকিত সংবাদের ভিড়ে গত ১১ মে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের দেওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ রায়ের খবরটি চাপা পড়ে গেছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে জানিয়েছে, দিল্লি রাজ্য প্রশাসনের আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত (পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা ও ভূমি দফতর বাদে) নেওয়ার অধিকার রয়েছে নির্বাচিত রাজ্য সরকারের (দিল্লি প্রশাসনের ভার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জয় কেজরির, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১২/০৫/২০২৩)।

 

উল্লেখ্য, সংবিধানের সপ্তম তফসিলের অন্তর্গত রাজ্য তালিকার ৪১ নম্বরে রয়েছে ‘সার্ভিস’। অর্থাৎ রাজ্য সরকারের অধীন প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণ করার এক্তিয়ার রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রিপরিষদের। নাগরিকের ভোটে নির্বাচিত একটি রাজ্য হলেও, দিল্লি দেশের রাজধানী হওয়ায়, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা ও ভূমি-দফতর সংক্রান্ত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের। ২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা দখল করার পরেই, ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দিল্লি রাজ্য সরকারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল করে আপ। শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের নাকের ডগায় অন্য একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকবে, এটা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না বিজেপির পক্ষে। তাই ওই বছরই একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিল্লির নির্বাচিত রাজ্য সরকারের এক্তিয়ার থেকে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল [গেজেট নোটিফিকেশন এস.ও. ১৩৬৮(ই), ২১.০৫.২০১৫]। ফলে, দিল্লির রাজ্য সরকারের নীতি ও মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মতো কাজকর্ম কতটা এগোল বা ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তা দেখাশোনার এক্তিয়ার দিল্লির নির্বাচিত রাজ্য সরকারের আর ছিল না। কারণ, কাজকর্মের অগ্রগতি, সমস্যা সংক্রান্ত কোনও বিষয়েই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে অবহিত করার কোনও দায়িত্ব পদস্থ আধিকারিকদের ছিল না। তাঁদের নিয়ন্ত্রণের ভার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। এই আঘাতটা তারা নামিয়ে এনেছিল দিল্লির নির্বাচিত রাজ্য আইনসভা তথা নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর।

 

দীর্ঘ আট বছর আইনি লড়াইয়ের পর, শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দিল, ওই তিনটি দফতর বাদে বাকি সমস্ত দফতর এবং আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিল্লির নির্বাচিত রাজ্য সরকারের।

 

ঘটনাচক্রে, অতি সম্প্রতি বিজেপি পর্যুদস্ত হয়েছে কর্নাটকে। এই সময়ে, শীর্ষ আদালতের রায়টি তাদের কাছে কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই, দ্রুততার সঙ্গে ১৯ মে রাত এগারোটায় (২০২৩), একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে দিল্লি রাজ্য সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নিতে ফের সচেষ্ট হয়েছে তারা। এই অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে দিল্লি সরকারের আমলাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস অথরিটি’ গঠন করা হচ্ছে। যার চেয়ারপার্সন হবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আর বাকি দুই সদস্য হবেন সরকারের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিব, যদিও কোনও মতপার্থক্য হলে শেষ কথা বলবেন উপরাজ্যপাল। অর্থাৎ ঘুরিয়ে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ নস্যাৎ করে সমস্ত ক্ষমতাটুকু আবারও কেড়ে নেওয়া হল।

 

লক্ষ্যণীয়, বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার কাঠামোটিকে ধ্বংস করতে একটির পর একটি ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। যা তাদের উদ্দিষ্ট শক্তিশালী স্বেচ্ছাচারী এককেন্দ্রিক হিন্দু রাষ্ট্র প্রকল্পের অন্যতম অংশ। দ্বিতীয়বার দিল্লির মসনদ দখল করেই তারা, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার তথা জনপ্রতিনিধিদের মতামত এড়িয়ে, রাজ্যটিকে দু-টুকরো করে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের জায়গির গড়ে তুলল। নিতান্তই অসাংবিধানিক এই পদক্ষেপ বুঝিয়ে দিয়েছিল আগামীদিনে গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংসকারী এমন অনেক অসাংবিধানিক আইনকানুন হতে থাকবে।

 

ঠিক এই ভাবনা থেকে, ২০১৯-এ দু’টি কুখ্যাত কালাকানুন, ইউএপিএ (আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট) এবং এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) আইনের ভয়াবহ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটিয়েছিল। মনে পড়বে, ২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর মুম্বইতে জঙ্গি হামলার পর তড়িঘড়ি তদানীন্তন ইউপিএ সরকার, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে নতুন এক তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি গঠন করে। দেশের যেকোনও স্থানে সার্বভৌমত্ব, সুরক্ষা ও ঐক্য বিঘ্নকারী সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দ্রুত তালিকাভুক্ত আতঙ্কবাদী অপরাধের তদন্ত করতে পারবে। প্রাথমিকভাবে, এনআইএ যে সমস্ত আইনের আওতায় অপরাধের তদন্তের দায়িত্বে ছিল তা হল, (১) আণবিক শক্তি আইন, (২) ইউএপিএ, (৩) অ্যান্টিহাইজ্যাকিং আইন, (৪) বেসামরিক বিমান পরিবহন সুরক্ষায় বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধী আইন, (৫) সার্ক সম্মেলন (আতঙ্কবাদ প্রতিরোধী) আইন, (৬) নৌপরিবহন সুরক্ষায় বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধী আইন, (৭) গণবিধ্বংসী অস্ত্র ও তার পরিবহন (বেআইনি কার্যকলাপ নিবারণ) আইন এবং (৮) (ক) দেশের সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা, যুদ্ধ ঘোষণার প্ররোচনা দেওয়া ও (খ) জাল নোট সংক্রান্ত অপরাধ। কিন্তু, ২০১৯-এর সংশোধনীর মাধ্যমে ওই তালিকাভুক্ত অপরাধের সঙ্গে আরও যোগ করা হল, (ক) বিস্ফোরক আইন, (খ)অস্ত্র আইন, (গ) তথ্য-প্রযুক্তি আইন এবং (ঘ) মানব-পাচার বিরোধী আইন। যেগুলো ভারতীয় পেনাল কোডের অন্তর্গত এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কাজ মূলত রাজ্যপুলিশের। সংবিধানের ২৪৬ ধারায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের আইনপ্রণয়ন করার এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা আছে। সপ্তম তফসিলের ২য় তালিকার (রাজ্যের বিষয়) প্রথমেই বলা আছে ‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। এমনকি, তফসিলের ১ম তালিকায় (কেন্দ্রের বিষয়) বলা আছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সামলাতে শুধুমাত্র রাজ্যের সাধারণ প্রশাসনকে সহায়তা করতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাজ্যে বহাল করা যেতে পারে (২ক, ১ম তালিকা)।

 

এরপর, ২০২১-এর অক্টোবরে এক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে (সংখ্যা ৩৮৫৩, গেজেট নোটিফিকেশন ১১/১০/২০২১) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরদারির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান সীমান্ত থেকে থেকে দেশের ভেতরে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো এবং সেই সঙ্গে ভারতীয় ফৌজদারি আইনের (১৯৭৩) কয়েকটি ধারা প্রয়োগের ক্ষমতাও তুলে দেওয়া হল তাদের হাতে। সীমান্ত থেকে দেশের ভেতরে একটা বড় এলাকায় বিএসএফ জওয়ানরা অনায়াসে, রাজ্য-সরকারের প্রশাসনের তোয়াক্কা না করেই, তাদের সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে যেকোনও সময়, যেকোনও স্থানে ঢুকে গ্রেফতার করতে, খানাতল্লাসি চালাতে, তাদের জিনিষ-পত্র বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। সশস্ত্র আধাসামরিক বাহিনীর কাজের সঙ্গে রাজ্য নিয়ন্ত্রিত পুলিশবাহিনীর দায়বদ্ধতা এবং কার্যক্ষেত্র অনেকটাই আলাদা। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মূল দায়িত্ব সমর শিক্ষিত সশস্ত্র বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের নাগরিকদের আশু সুরক্ষার ব্যবস্থা করা, আন্তর্জাতিক চোরাচালান রোখা। বেপরোয়া শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের আচরণ কঠোর এবং অস্ত্র নির্ভর। অপরপক্ষে, পুলিশ জনসমাজের মধ্যে থেকে সুস্থ নগর-জীবনকে অনাবশ্যক বিব্রত না করে সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ, অপরাধ দমন করে থাকে। যে দায়িত্ব অনেক বেশি সংবেদনশীল। অহরহ স্বদেশের নিরীহ নাগরিকদের উপরেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নৃশংস অত্যাচার, হত্যা, অমানবিক অস্ত্র নির্ভর আচরণের ভূরি ভরি নজির উঠে এসেছে। নেহাত চোরাচালান, পাচার রুখতে কিংবা সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বিএসএফকে পুলিশি ক্ষমতায় বলীয়ান করে তাদের কাজের এলাকা অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেওয়াটা আসল উদ্দেশ্য নয়। বরং একাধিক রাজ্যে, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ শাসিত রাজ্যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত সমান্তরাল আরেকটি পুলিশ প্রশাসন গড়ে তুলে, রাজ্য প্রশাসনকে এড়িয়ে, সরকারের সমালোচক ও রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ তথা নিকেশ করাই এগুলোর অন্যতম উদ্দেশ্য।

 

সংবিধানের সপ্তম শিডিউল অনুযায়ী কো-অপারেটিভ সোসাইটি একেবারেই রাজ্য সরকারের বিষয় হওয়া সত্ত্বেও (৩২নং, তালিকা ২, ৭ম শিডিউল), এবছর ৬ জুলাই, কেন্দ্রীয় সরকার ‘সহযোগিতা মন্ত্রক’ (মিনিস্ট্রি অফ কো-অপারেশন) নামে একটি নতুন একটি মন্ত্রক তৈরি করল। সহযোগিতার মাধ্যমে সমৃদ্ধি (সহকার সে সমৃদ্ধি) – এমনই নাকি মহৎ উদ্দেশ্য তার। সারা দেশে ৩৩টি রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা রাজ্য নিয়ন্ত্রিত স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক এবং ডিসট্রিক্ট সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলোতে জমা আমানতের পরিমাণ যথাক্রমে, ১,৩৫,৩৯৩ কোটি টাকা এবং ৩,৭৮,২৪৮ কোটি টাকা। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, রাজ্যের এক্তিয়ারে অনাবশ্যক হস্তক্ষেপ করে আদতে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলোর নিয়ন্ত্রণের উপর কেন্দ্রের দখল নেওয়াই তার মুখ্য উদ্দেশ্য (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১৫/০৭/২০২১)।

 

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই সমস্ত ঘটনাগুলো মোটামুটি একই সূত্রে গাঁথা। ভারতীয় গণতন্ত্রে সংবিধানের মর্মবস্তু ফেডেরালিজমের বা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটিকে ধ্বংস করে, রাজ্যগুলির সংবিধানসম্মত স্বতন্ত্র ক্ষমতাকে উপেক্ষা করে ক্রমশ ভয়াবহ এককেন্দ্রিক স্বৈরক্ষমতার একটি কেন্দ্রীয় সরকার গঠন (ইউনিটারি নেশন স্টেট) গড়ার উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছে তারা। দেশের রাজ্যগুলো হবে যার অধীনস্ত, আজ্ঞাবাহী মনসবদার পরিচালিত জায়গির। উল্লেখ্য, হিটলার তাঁর সাম্রাজ্যকে (দ্য থার্ড রাইখ) ৪২টি অংশে বিভাজিত করেছিলেন, যা ‘Gaue’ নামে অভিহিত ছিল, প্রতিটি ‘Gaue’-এর প্রশাসনিক কর্তাকে বলা হত ‘Gauleiter’, যাদের হিটলার স্বয়ং মনোনীত করতেন, হিটলারের প্রতি ছিল তাদের পূর্ণ আনুগত্য।

 

বিজেপি ও তাদের মাতৃ সংগঠন আরএসএসের কাছে ফেডেরালিজমের ধারণাটি অসহনীয়। এটি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর একটি নির্দেশে। ২০২১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর, মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন ৭ মে (২০২১) একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্দেশিকা দেন, রাজ্যের সরকারি নথিতে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টকে তামিল ভাষায় ‘মাথিয়া আরাসু’-র বদলে উল্লেখ করা হবে ‘ওন্দ্রিয়া আরাসু’ বা ইউনিয়ন গভর্নমেন্ট শব্দে। মুখ্যমন্ত্রী সংবিধানের প্রথম ধারা উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, তাঁর সরকার সংবিধান অনুযায়ী শব্দটি ব্যবহার করছে। স্টালিনের এই কাজটির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ জানিয়ে এটিকে সামাজিক অপরাধ বলেছিল বিরোধী বিজেপি (দ্য নিউজ মিনিট, ১৬/০৬/২০২১)।

 

সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপের মতে, ফেডেরালিজমের ধারণাটিকে প্রকাশ করতে ইউনিয়ন শব্দটিই সঠিক, ‘সেন্ট্রাল’ শব্দটির ব্যবহার একেবারেই সংবিধানসম্মত নয়। বস্তুত, সংবিধানের প্রথম ধারাতেই দেশকে পরিচিত করানো হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া, দ্যাট ইজ ভারত, শ্যাল বি এ ইউনিয়ন অফ স্টেটস’ বলে। সংবিধানের মর্মবস্তুতে প্রতিভাত হয়েছে একটি ফেডেরাল বা যুক্তরাষ্ট্রের অবিনশ্বর ঐক্যের ধারণা। ইউনিয়ন গভর্নমেন্ট শব্দটি বার বার এসেছে কেন্দ্রের সরকারকে উল্লেখ করতে। আক্ষরিক অর্থে সেন্টার শব্দটি বৃত্তের শুধুমাত্র মধ্যবিন্দুটিকে বোঝায়, অপর পক্ষে ইউনিয়ন শব্দটি দিয়ে সম্পূর্ণ বৃত্তটিকে বোঝানো যায়। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, তথাকথিত কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোর সম্পর্ক বোঝাতে সামগ্রিক দেশের সাথে তার বিভিন্ন অংশের সম্পর্ককে বোঝায়, বলেন শ্রীকাশ্যপ। আরও বলেন, ইউনিয়ন সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার বলে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে সারাদেশে একছত্র প্রভুত্ব করার মানসিকতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে রাজ্যগুলোর বক্তব্যের কোনও গুরুত্ব নেই। বস্তুত, জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি দেশের ইউনিয়ন সরকারের শাসনাধীন এবং নাগরিকের প্রাত্যহিক ও বিস্তারিত বিষয়ে প্রশাসন চালাবে রাজ্যের সরকারগুলো। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকার শব্দটি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে রাজ্য সরকারগুলোকে কেন্দ্রের অধীনে আজ্ঞাবহ এক একটি প্রশাসন একক বলে বোঝানো হচ্ছে। ভারতের সংবিধান সে কথা বলে না (দ্য নিউজ মিনিট, ১৬/০৬/২০২১)।

 

বিজেপির মাতৃ সংগঠন আরএসএসের কাছে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয়তা তথা জাতীয়তার ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের কাছে এক দেশ, এক আইন, এক প্রশাসনের অধীনে সমগ্র দেশ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রীভূত অবাধ ও প্রশ্নাতীত ক্ষমতার এক রাষ্ট্রব্যবস্থা আর হিন্দুত্ব—এসবই এক সুরে বাঁধা। এমনই এক ধারণা থেকে জন্ম নিয়েছে তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রীয়তা, দেশভক্তির তত্ত্ব। তাদের প্রকল্পিত সেই আজব রাষ্ট্র কাঠামোয় সরকারের কোনও রকম সমালোচনা, বিরোধিতা, ভিন্নমত মানেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এই তত্ত্বের উৎস আরএসএসের গুরুজি মাধব সদাশিব গোলওয়ালকরের প্রবল বিতর্কিত ‘বাঞ্চ অফ থটস’ গ্রন্থটি। বইটি আরএসএস পরিবারের সদস্যদের কাছে বেদ স্বরূপ। এটি পড়লে বোঝা যাবে, গুরুজির চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত বিজেপি সরকার এবং সঙ্ঘের পরিবারভুক্ত অন্যান্য সংগঠনের সুপরিকল্পিত কাজকর্ম। বস্তুত, ভারতের গৃহীত সংবিধানের তীব্র বিরোধী ছিলেন গোলওয়ালকর। বিশেষত ফেডারাল রাষ্ট্র কাঠামোর ধারনা তাঁর কাছে ছিল অসহনীয়। বাঞ্চ অফ থটস-এর প্রথম খণ্ডের উনিশ অধ্যায়ে ‘ওয়ান্টেড এ ইউনিটারি স্টেট’ শীর্ষক নিবন্ধে গোলওয়ালকর বলছেন, “বর্তমান সংবিধান আমাদের দেশকে এক রকম আলাদা বেশ কিছু এককে রূপান্তরিত করেছে, প্রত্যেকটি এককের আছে একটি করে নিজস্ব রাজ্য এবং সেই রাজ্যগুলো একটি কেন্দ্রে সংঘীভূত (ফেডারেশন)। ভারত বা এই নামে পরিচিত অবশিষ্ট যেটুকু আছে তাকে একটি একাত্ম অখণ্ড রাষ্ট্রের অভিব্যক্তিরূপে গণ্য করে এক দেশ, এক আইনসভা, এক প্রশাসন পরিচালনরত এক কার্যকরী কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারত সম্পূর্ণ দেশে।”

 

স্বাধীনোত্তরকালে ব্রিটিশ শাসনের অর্থনৈতিক, সামরিক কৌশলগত সুবিধার্থে ভারতে ৯টি প্রদেশ, ১৯টি রাজন্যশাসিত রাজ্যসমূহ ক, খ, গ এই তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। ধর্মীয় বিভাজনে ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত স্বাধীন দেশে সময়ের দাবি ছিল অপেক্ষাকৃত কম বিতর্কিত ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের। ১৯৫৩ সালে প্রাক্তন বিচারপতি ফজল আলি, কূটনীতিক সর্দার কে এম পানিক্কর এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সাংসদ এইচ এন কুঞ্জরুকে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশ নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছাড়া ১৪টি রাজ্য গঠিত হয়। কমিশনের এই রিপোর্টের তীব্র সমালোচনা করেন গোলওয়ালকর। সংবিধানের ফেডেরাল কাঠামোর বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্য ছিল,“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পদক্ষেপ হবে, আমাদের দেশের সংবিধানের সংঘীয় কাঠামোর সমর্থনকারী (ফেডেরাল) যাবতীয় কথাবার্তার চিরতরে ইতি টানা, ভারত নামে এক রাষ্ট্রের অধীন সমস্ত স্বশাসিত বা আধা-স্বশাসিত রাজ্যের অস্তিত্ব বিলোপ করা এবং এক দেশ, এক রাষ্ট্র, এক আইনসভা ও এক প্রশাসনের কথা ঘোষণা করা যাতে খণ্ডাত্মক, আঞ্চলিক, সাম্প্রদায়িক, ভাষাগত বা আমাদের সংহত সম্প্রীতি বিনাশের সুযোগ সৃষ্টিকারী অন্য কোনও ধরনের অহমিকার চিহ্নমাত্র না থাকে। এই এককেন্দ্রিক ধাঁচের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান আবার পর্যালোচনা এবং নতুন করে রচনা করা হোক” (বাঞ্চ অফ থটস)। এই বিরাট দেশের ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের’ বিপুল বৈচিত্রময় সংস্কৃতির কোন গুরুত্বই ছিল না তাঁর এক ছাঁচে ঢালা হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থানের স্বপ্নে।

 

গোলওয়ালকরের মতাদর্শের নিষ্ঠ অনুসারীরা এখন কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় আসীন। দেশে গুরুজির স্বপ্ন-প্রকল্পের বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। সমস্ত রাজ্যকে সমগুরুত্ব দেওয়া, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে সমস্ত রাজ্যের, সকল রাজনৈতিক সত্তার প্রতিনিধিদের নিয়ে একত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা বিরোধী রাজনৈতিক মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার মতো সাংবিধানিক নৈতিকতাকে ধ্বংস করে, সমগ্র দেশটিকে এক আইনসভা, এক প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্যোগী। উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক বরাদ্দ, বিশেষ করে আরক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ—এ সবই তাদের স্বেচ্ছাচারী, একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং রাজ্যগুলো কেন্দ্রীয় প্রশাসনের আজ্ঞানুবর্তী এক একটি পৌরসভায় পরিণত হবে। এই লক্ষ্যে তাদের সুচিন্তিত পরিকল্পনা দেখা গেছে জম্মু-কাশ্মীরকে বিভাজন করে কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় আনা, দিল্লির রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক ক্ষমতা একতরফাভাবে কেড়ে নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রের জায়গিরে পরিণত করা, ইউএপিএ, এনআইএ, বিএসএফ আইন, নয়া কৃষি আইন, নতুন শ্রমকোড, নতুন শিক্ষানীতি ইত্যাদি আইন প্রণয়নে। এমন এক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন একটি আইনানুগ শব্দবাণে সংবিধানসম্মত ফেডেরালিজমের ধারনাটিকে উস্কে দেওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত। এই ধারণা ক্রমেই আরও গতি পাবে। সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল, অবিজেপি রাজ্যগুলোর উচিত একইভাবে ফেডেরালিজমের ধারণাটিকে আরও বেশি করে গণ-পরিসরের আলোচনায় নিয়ে আসা। যা তাঁদের হিন্দুরাষ্ট্রের সুচিন্তিত পরিকল্পনায় ধাক্কা লাগবেই। প্রতি মুহূর্তে ভারতীয় নাৎসিদের প্রতিটি প্রতর্কের মোকাবিলা করা ভীষণ জরুরি।

 

এখনও ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভিত্তিক সংবিধানকে সরাসরি বাতিল করে উঠতে পারেনি তারা। তাই, সুপরিকল্পিত উদ্যোগে বর্তমান সংবিধানের উপরি কাঠামো অক্ষত রেখেই একটি কেন্দ্রীভূত অতি রাষ্ট্রিক ক্ষমতার (ডিপ স্টেট) রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে। গোলওয়ালকর প্রকল্পিত মনুস্মৃতি অনুসারী স্বৈরাচারী, ব্রাহ্মণ্যবাদী, বর্ণদ্বেষী, ধর্মান্ধ, প্রবল কেন্দ্রীভূত স্বৈর ক্ষমতাধর হিন্দুরাষ্ট্র গড়ে তোলাই একমাত্র লক্ষ্য। কল্যাণকামী চরিত্রটি ধ্বংস করে দেওয়া দায়হীন সে রাষ্ট্রে নিম্নবর্ণের, নিম্নবর্গের আর অহিন্দু ধর্মানুসারী মানুষদের থাকবে না ন্যূনতম মানবাধিকার। অনুপ্রবেশকারী, দেশদ্রোহী তকমা দেগে দিয়ে কেড়ে নেওয়া হবে তাদের জীবনের সমস্ত অধিকার। গণতন্ত্রের ভেকধারী সেই ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রে, দেশ এবং সরকার সমার্থক। সরকারের সমালোচনা কিংবা বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন—এসবই দেশদ্রোহিতার সমতুল্য।

 

সভ্যতা বিরোধী, গণতন্ত্র, মানবতা হত্যকারী ভারতীয়-নাৎসিদের ভয়ঙ্কর আক্রমণের বিরুদ্ধে, দেশজুড়ে ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতী, কৃষক, শ্রমজীবী প্রান্তবাসী মানুষ গান্ধীজির অহিংসার ব্রতকে পাথেয় করে রাজনৈতিক দল-নিরপেক্ষ বহু গণআন্দোলনে পা মিলিয়েছেন বারংবার। জনসমাজকে উদ্বেলিত করেছে শাহিনবাগের আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন। প্রবল গণআন্দোলনের চাপে পিছু হটে কৃষক বিরোধী বিপজ্জনক কৃষি বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে তারা। ইতিমধ্যেই জিএসটি, জাতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা, নয়া শিক্ষানীতি, কৃষিবিল নিয়ে অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গে এবং সম্প্রতি কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে দল নিরপেক্ষ নাগরিক সমাজের সতেজ গণআন্দোলনের রেশ চারিয়ে গেছে নাগরিক জীবনের গভীরে। নির্বাচনে বিজেপিকে রুখে দেওয়ার এটাও ছিল অন্যতম দিক নির্দেশক।

 

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের আজ্ঞাবহে পরিণত করে, প্রাতিষ্ঠানিক, বৃহৎ সংবাদ মাধ্যমগুলিকে প্রায় সরকারের মুখপত্রে নিয়োজিত করে, প্রাতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক দলগুলোকে কব্জা করে, বারবার নানান গণআন্দোলনকারীদের জেলে পুরেও, নাগরিক জীবনের ভিতর থেকে উঠে আসা স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনকে বাগে আনতে পারছে না ভারতীয় ফ্যাসিস্তরা। আজ থেকে ২০ বছর আগে এক গবেষণা পুস্তিকায় তপন বসু, সুমিত সরকার প্রমুখের পর্যবেক্ষণ ছিল, “সৃষ্টিশীল বাম আন্দোলন, নাগরিক জীবন থেকে উঠে আসা গণআন্দোলনই পরিবর্তনের বিকল্প সংস্কৃতি নির্মাণ করতে পারে। যা গড়ে তুলবে ফ্যাসিস্ত শক্তি রোখার রসদ।”

 

তাই রাস্তাই এখন একমাত্র রাস্তা।

 

সূত্র:

১। “The ideal conclusion would be that GNCTD ought to have control over services, subject to exclusion of subjects which are out of its legislative domain….The legislative and executive power of NCTD over entry 41 shall not extend over to services related to public order, police and land. However, legislative and executive power over services such as Indian Administrative Services or Joint Cadre Services which are relevant for the implementation of policies and the vision of NCTD in terms of day-to-day administration of the region, shall lie with the NCTD”. … “We reiterate that in the light of Article 239AA of the Constitution and the 2018 Constitution Bench judgment, the Lieutenant Governor is bound by the decisions of GNCTD on services as explained above. To clarify, any reference to Lieutenant Governor over Services excluding services relating to public order, police and land in relevant rules shall mean Lieutenant Governor acting on behalf of NCTD” (Civil Appeal No 2357 of 2017, SCR, 11.05.2023) [GNCTD vs LG: Supreme Court Holds Delhi Govt Has Control Over “Services” Excluding Public Order, Police & Land,  Live Law, 11/05/2023].

 

২। The Govt. Of National Capital Territory of Delhi (Amendment) Ordianance, 2023

 

৩। Centre moves Ordinance to neglect SC verdict on Delhi services, Hindustan Times, 20.05.2023

 

৪। ট্রিগার হ্যাপি : এক্সেসিভ ইউজ অফ ফোর্স বাই ইন্ডিয়ান ট্রুপস অ্যাট বাংলাদেশ বর্ডার, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ডিসেম্বর, ২০১০ এবং হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন বাই ইন্ডিয়ান বিএসএফ এগেন্সট বাংলাদেশি সিটিজেন, ২০০০-২১, অধিকার, বাংলাদেশ

 

৫। খাকি প্যান্ট গেরুয়া ঝাণ্ডা, তপন বসু, প্রদীপ দত্ত, সুমিত সরকার, তনিকা সরকার, সম্বুদ্ধ সেন, ওরিয়েন্ট লংম্যান, ১৯৯৩

 

(লেখক মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী।)

 

পড়ে দেখুন:

 

গণপিটুনি: দেশভক্তদের চাবুক কি বুমেরাং হচ্ছে

 

মিথ্যা প্রচার, ঘৃণার রাজনীতি

 

প্রতিবাদ আর সন্ত্রাসবাদ — ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রের কাছে সবই সমান

 

 

Share this
Leave a Comment