বছরে ১০০ নয় ২০০ দিনের কাজ চাই: দাবি তুললেন শ্রমিকরা 


  • May 16, 2023
  • (1 Comments)
  • 1059 Views

সরকারি প্রকল্প-কর্মীদের অধিকার-বঞ্চনা: সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা  

একটি আলোচনা সভা

 

গ্রাউন্ডজিরো-র পঞ্চম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে, ৬ মে ২০২৩, আমরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ হল-এ এ রাজ্যের প্রকল্প-কর্মীদের নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলাম। এই আলোচনা সভায় মূল লক্ষ্য ছিল, অঙ্গনওয়াড়ি, আশা, মিড ডে মিল ও ১০০ দিনের কাজের মতো গুরত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির কর্মী, সহায়িকা, শ্রমিকদের কথা মুখোমুখি বসে শোনা, জানা। সভা শেষে আমাদের সকলেরই অনুভূতি এই যে এই প্রকল্প-কর্মীদের যে দায়-দায়িত্ব, হাড়ভাঙা খাটুনি তার তুলনায় তাঁদের ভাতা/ মজুরি অতি সামান্য। এবং এক জন কর্মী/ শ্রমিকের মর্যাদা ও স্বীকৃতিটুকুও তাঁদের নেই। একইসঙ্গে আমাদের লক্ষ্য ছিল, তাঁদের  যে দীর্ঘকালের দাবি—তা তাঁদের নিজেদের মুখ থেকে শোনা। পাশাপাশি, এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাই বা কী তা বুঝে নেওয়াটাও আর একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।

 

এই আলোচনা সভায় বক্তারা ছিলেন, আশা কর্মী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুন; ওয়েস্ট বেঙ্গল অঙ্গনওয়াড়ি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড হেলপারস ইউনিয়নের সম্পাদিকা মাধবী পণ্ডিত; অ্যাসোসিয়েশন অব মিড ডে মিল অ্যাসিস্ট্যান্টস (আম্মা)-র উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রিনা নায়েক, পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতির অম্বরীশ সোরেন ও প্রতিমা সর্দার এবং প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। গ্রাউন্ডজিরো-র পক্ষ থেকে আলোচনার সূত্রপাত করেন দেবাশিস আইচ।

 

আমরা এই সভার বক্তব্যগুলি আরও অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনুষ্ঠানে বক্তাদের ক্রম অনুসারে তিনটি কিস্তিতে তা প্রকাশিত হবে।

আজ তৃতীয় কিস্তি।

 

অম্বরীশ সোরেন

প্রতিনিধি, পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতি

পুরুলিয়া তো টাউন নয়, অনেকগুলো গ্রাম, যে গ্রামে মানুষ এনআরজেএ-এর [এমজিএনআরইজিএ] উপরে নির্ভর করত। কীভাবে? একশ দিন [দিনের] ওরা কাজ করত, বাকি দিন নিজের গ্রামের আশেপাশে কাজ করে দিন চালাত। আমরা একশ দিনের কাজ নিয়ে বিভিন্ন স্তরে আন্দোলন করেছি যাতে এই কাজটা দু’শো দিন করা যায়। আমরা পুরুলিয়া জেলাতে প্রায় ১৬ মাস হতে চলেছে ২৬ ডিসেম্বর [২০২১] লাস্ট, আমরা পুরুলিয়া জেলাতে কাজ করে সেটার পেমেন্ট পাই। অনেক গ্রাম থেকে, পঞ্চায়েত এলাকায় আমরা কাজ করেছি, পুরুলিয়া জেলায় ১৯টা ব্লকের মধ্যে প্রায় ১১টা ব্লকে আমরা বেশি করে কাজ করেছি। আর বাকিগুলায় কম-বেশি কাজ হয়েছে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে অসুবিধার মতো হয়েছে।

প্রথমে বলব আমরা কাজ করতে যেয়ে – আমাদের কাজের স্থানে – আপনারা জানেন পুরুলিয়া জেলা পাহাড়িয়া জেলা এবং পাথর-মাটি। সেখানে কাজ করতে গিয়ে আমাদের যে পরিষেবার দরকার হয়, সেখানে মেয়েছেলে এবং ছেলেরা একসঙ্গে কাজ করে, মেয়েছেলেদের যে বাচ্চা দেখাশোনা করার যে সহকর্মী প্রয়োজন হয়, আইনে কিন্তু আছে – বাস্তবে আমরা সেটা কোনওদিন পাইনি। আচ্ছা এই যে রোদ্দুরেতে কাজ করব – রোদ্দুরেতে একটা ছাউনি, আধ ঘণ্টা একটু বসব টিফিনের টাইমে – একটা ছাউনির প্রয়োজন হয়। আইনে আছে, বাস্তবে কিন্তু হয় না। সেখানে ঐ গাছে ছায়ায় একটু বসল তো বসল, শ্রমিকরা একটু বিশ্রামে বসল তারপর আবার কাজে লাগল। আমাদের ওখানে পাথরে মাটি, আমরা দেখেছি আট ঘণ্টা কাজ করে শ্রমিক ভাইয়েরা কোনও সময়ে ৬০ টাকাও মজুরি পেয়েছেন। এখন আমাদের বেতন আছে ২২৩ টাকা, ২১৩ টাকা অবধি কাজ হয়েছে, ২২৩ টাকা হওয়ার পর কাজ হয়নি। ডিসেম্বরে শেষ কাজ হয়েছে ২১৩ টাকা মজুরিতে। পঞ্চায়েতে আমরা কাজের জন্য আবেদন করেছিলাম, কাজ তো বলছে নেই।

গত ১৬ মার্চ আমরা এডিএম-এর সাথে একটা জরুরি বৈঠকে বসেছিলাম, সেখানে আমি বলেছিলাম নিজে যে গাঁয়েতে কাজ করেছি, টাকা পাচ্ছি না, কিছুদিন পরে হয়তো পাব – এই আশা আছে। আপনি আমাদের মিনিমাম কাজের একটা ব্যবস্থা করুন। উনি বললেন, ঠিক আছে দেখছি কী করা যায়। উনি বললেন, “আমাদের পশ্চিমবাংলায় বাজেটটা হয়নি, কেন্দ্র পাস করেনি।” আমরা বললাম সেটা আপনাদের দায়িত্ব বাজেটটা আপনারা কীভাবে করবেন, সেটা তো আমরা জানি না, আমাদের প্রয়োজন হচ্ছে কাজ। আমাদের এখানে মানুষ কাজ না পেয়ে, আমাদেরই পাশের অঞ্চলের ছেলেরা কাজ না পেয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। একদল বলছে আমরা উড়িষ্যা [ওড়িশা] যাচ্ছি, একদল বলছে চেন্নাই যাচ্ছি। আমি বললাম কেন? বলছে, আমাদের পুরুলিয়াতে কোনও কাজ নেই তো আমি বর্ষার আগে পর্যন্ত ওখান থেকে কিছু টাকা করে আসব, বর্ষাতে আমার কাজে [আমন চাষের কাজ] আসবে। বলে এখানে আমি কাজ করছি, দিন আনতে ফুরিয়ে যাচ্ছে। ওখানে গেলে ৮ হাজার টাকা করে যদি আমার থাকে, আমি ২ হাজার টাকা সঙ্গে করে নিয়ে আসব। এই পরিস্থিতিতে পুরুলিয়ায় গ্রামগঞ্জের যারা মানুষ তারা ভুগছেন।

আপনারা শুনেছেন, আমরা ডিএম, রাজ্য, কেন্দ্র পর্যন্ত এই কাজের টাকা নিয়ে আন্দোলন করেছি। তো ওখানে বলছে যে, পশ্চিমবাংলাতে ব্যাপক দূর্নীতি হয়েছে। আমরা সেটা মানছি যে পশ্চিমবাংলাতে দূর্নীতি হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েতে তো সরকার আছে। তাদের ওখানে দূর্নীতি হয়েছে। শ্রমিকরা তো দূর্নীতি করে না। পঞ্চায়েতে যারা আছে তারা দূর্নীতি করেছে। সেখানে সংখ্যায় কত জন আছে? যারা পঞ্চায়েতবাবু ওখানে থাকে, তারা ৫ জন, ১০ জন, তার বেশি না। আমরা গ্রামে যারা কাজ করি তারা ৫০০ জন লেবার কাজ করি। তো এই ১০ জনের দুর্নীতির জন্য আমাদের ১০০ জনকে ব্যান করে রেখেছে। পঞ্চায়েত লেভেলে যারা সেখানে সরকারের মাধ্যমে দূর্নীতি হয়েছে। তাহলে এখানে কেন্দ্র সরকার যিনি দেখছেন উনারও সরকার আছে, এখানে যিনি বলছেন এনারও সরকার আছে। তাহলে যে দুর্নীতিটা হয়েছে আপনারা সমাধান করুন। আমরা যারা কাজ করেছি তাদেরকে, আমাদের পয়সা দিন, বাকি যারা দুর্নীতি করেছে তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। সেটা আমরা সাপোর্ট করছি। আমরাও বলছি দুর্নীতি বন্ধ হোক।

এই অবস্থায় আমরা পুঞ্চা তথা ১১টি ব্লকে কম-বেশি করে [আছি]। আমার এখানে আমার দাবি ছিল ১৬ লাখ টাকা আমার পুঞ্চা পঞ্চায়েতে কাজ করেছি। হাইকোর্টে আমরা যেটা মামলা করেছি ১৬ তারিখে শুনানি ছিল। তাতে এডিএম বলল, আপনার পুঞ্চাতে ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ লাখ মতো বাজেট হয়েছে। আমি বললাম কেন? আমার তো দাবি অনুযায়ী ১৬ লাখ ছিল। তো আমি যে গ্রামে কাজ করেছি, আমার শ্রমিক ভাইয়েরা যে কাজ করেছে তাতে আমি গুণ করেছি – ৭০ দিন ওরা কাজ করেছে, ৭০ গুণ ২১৩ টাকা। তাহলে কত টাকা হয়? তো সেই অনুপাতে আমি ১৬ লাখ টাকা দাবি করেছি। কিন্তু ওখানে যখন পঞ্চায়েত থেকে যেটা রিপোর্ট যাচ্ছে, সেখানে ওর এম আই এস-টা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানে বলা হচ্ছে আপনি এত টাকার কাজ করেননি। মানে উনি হয়তো ২০০ টাকার কাজ করেছেন, ১৮০ টাকার কাজ করেছেন, তার ফলে ওনার টাকাটা কমে গেছে। আমরা ৮ ঘণ্টা ডিউটি করলাম, রোদে খাটলাম আর আমাদের আপনারা ২১৩ টাকা দিতে পারলেন না? বলছে, “না, ওটা তো এমআইএস-এ যেটা আছে সেটা আপনাদের নিতে হবে।” আচ্ছা আমি মানলাম, আপনার এমআইএস-এ যেটা দেওয়া হয়, আমি মানলাম আমি কম কাজ করেছি আমাকে ২০০ টাকা, ১৮০ টাকা দেওয়া হোক। কিন্তু ওখানে দেখা যায় যে, ওখানে পঞ্চায়েতের যে বাবুরা কাজ করেন, যারা পঞ্চায়েতটা চালায়, তাদের এই যে বৌয়ের নামে, মায়ের নামে, বাচ্চার নামে ফলস এন্ট্রি করা হয়, তাদের ২১৩ টাকা যাবে। আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি সেটা। মাস্টার রোলে দিখায়ে দিয়েছি যে এরকম – ওদের ক্ষেত্রে কমানো যাবে না। কিন্তু আমরা যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেললাম, তাদের ক্ষেত্রে যতটা কমানো যায় ততটার জন্য পঞ্চায়েতের যারা অফিসার কর্তারা আছে তারা কম্পিউটার চালায়, যে ওদের কীভাবে টাকাটা কমানো যাবে। এক ইঞ্চি ধাপ কাটল, হাফ ইঞ্চি মাটি কাটল, দু’ঝুড়ি মাটি কমল তারজন্য যতটা কায়দা পঞ্চায়েতে করতে হয় তারা করে।

তো সে বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছি যে আমরা আট ঘণ্টা ডিউটি করব। ন্যায্য মূল্যে ন্যায্য কাজ করব, ন্যায্য মজুরি নেব। বাস্তবে সেটা হয় না। আমাদেরকে সেটা করতে দেওয়া হয় না। কারণ আমরা যখন কাজ করি, মেজারমেন্ট যখন হয়, তখন যিনি পঞ্চায়েতে এসি আছেন উনি নিজের মতো করে চলে যান। মেপে-টেপে চলে এল। যারা কাজ করল, তাদের না জানিয়েই মেপে চলে এলেন। সেদিন তো উনি জানলেন না যে আমার মজুরি কত হল বা হল না। সাত দিনের মধ্যে আমি কতটা মাটি কাটলাম ওকে জানানো হল না। লাস্টে যেদিন জানানো হবে, যেদিন উনি টাকা পাবেন, দেখা যাবে ওনার কয়েকশো টাকা কমে গেছে। হয়তো সাত দিন কাজ করার পর ১৪০০, ১৫০০ টাকা হওয়ার কথা ছিল, সেটা দেখা গেল ১২০০ টাকা হচ্ছে, তো সেটা হল না। এ ধরনের কাজের মধ্যে দিয়ে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে।
যেহেতু একশো দিনের কাজটা কেন্দ্রীয় আইন, আমরা দাবি করেছি যে আমাদের ন্যূনতম মজুরি ৬০০ টাকা করা হোক। আর ১০০ দিন নয়, সেটাকে ২০০ দিন করা হোক বছরে। এবং এটা যেহেতু পরিবার পিছু জব কার্ড, পরিবারে যারা ১৮ বছর বয়স হলেন তাদের যেন ব্যক্তিগত জব কার্ড হয়। জন প্রতি, পরিবার প্রতি নয়। হয়তো পরিবারে তার দুটো ছেলে, তার দুটোই সংসার হবে। তাহলে ওদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ওরা ৪ জন যদি হয়, তাহলে গড়ে তাদের কত দিন ধরে কাজ পড়বে? ১০০ দিন কাজ যদি হয়, ২৫ দিন করে পড়বে। তো ২৫ দিন করে যদি কাজ করে বছরের মধ্যে তাহলে ২৫ দু-গুণে ৫০০০ টাকা [২৫X২= ৫০। ৫০x১০০=৫০০০] তাহলে ৫০০০ টাকা একটা সংসারে এই মুহূর্তে চালানো সম্ভব? তাহলে এই অবস্থায় গ্রামের মানুষগুলো, [এই] পরিস্থিতির উপরে কাজ করে চলেছে।

আমরা কেন্দ্রের কাছে বারবার দাবি করে আসছি যাতে [কাজ] ২০০ দিন করা হোক, পরিবার পিছু জব কার্ড উঠিয়ে ব্যক্তিগত জব কার্ড করা হয় যেন এবং সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা মজুরি করা হোক। আমাদের কিছু দাবি আছে:

১) অবিলম্বে সমস্ত বকেয়া মজুরি মেটাতে হবে

২) নরেগা আইন, ২০০৫, ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রতি মজুরির উপরে যে আমরা কাজ করেছি তার উপরে ০.৫ প্রত্যেকদিন ক্ষতিপূরণের যে থাকে সেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৩) ২০২২ সাল ১ এপ্রিল থেকে সমস্ত শ্রমিক কাজের জন্য আবেদন করুক। যারা গ্রামগঞ্জে অনেকেই পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত নন, তারা কাজের আবেদনও করতে পারে না। তাদের জন্য যেন যে বেকারভাতা আছে সেটা যেন ওরা পায়। তাতে তারা কাজের আবেদন করুক বা না করুক।

৪)অবিলম্বে নারেগায় যে ১০০ দিনের কাজ শুরু হয়েছে, ২০১৯ থেকে যে তথ্য কেন্দ্র সরকারের কাছে আছে ও সম্প্রতি যে কেন্দ্রীয় দল পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল তার রিপোর্ট জনগণের সমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

৫) রাজ্যে দূর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যে সকল জায়গায় দুর্নীতি প্রমাণ হয়েছে সে সকল স্থানে সরকারি অর্থ পূরণ করতে হবে।

৬) পরবর্তীকালে ১০০ দিনের কাজ দুর্নীতির জন্য কখনওই শ্রমিকদের মজুরি আটকে রাখা চলবে না। এবং সকল সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে রাজ্য সরকারকে ১০০ কোটি টাকার কমপক্ষে তহবিল বানাতে হবে। যেখানে ভবিষ্যতে নরেগা কাজের মজুরি পাঠাতে দেরি হলে যাতে এই তহবিল থেকে মজুরি দিতে পারেন।

এইসব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতির আন্দোলন রাজ্য তথা কেন্দ্র পর্যন্ত চলছে। আমরা হাইকোর্টে মামলা করেছি। এটার জন্য যে আমরা ধর্নামঞ্চ করার জন্য পারমিশন পাচ্ছি না। ধর্মতলাতে ধর্নামঞ্চ করব বলেছিলাম, পারমিশন পাচ্ছি না। মনে হয় সেটা আমাদের হাইকোর্ট পারমিশন করতে হচ্ছে। আমাদের এই যে মানুষগুলো কাজ করেছে, যে টাকাটা আটকে রেখেছে সে বিষয় নিয়ে আমরা চাই আপনারা সহযোগিতা করুন, যাতে আমরা আন্দোলন করে যে কাজ করেছি তার টাকা আমরা গরিব মানুষগুলা পাই। তার জন্য এই সংবাদমাধ্যম, আপনারা যারা এসেছেন আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে একটু সহযোগিতা করে দুই সরকার পক্ষ – রাজ্য সরকার আমাদের কাজের অর্ডার করেছেন, কেন্দ্র আমাদের বলছে যেহেতু ওয়েস্ট বেঙ্গল গর্ভনমেন্ট আপনাদের অর্ডার করেছে, ওদের বলুন আপনাদের টাকা দিয়ে দিতে। কিন্তু এটা যেহেতু কেন্দ্রের আইন, কেন্দ্রের টাকা ছাড়া পেমেন্ট হবে না। এতে আমরা বারবার বলি যে বারবার আমাদের ফিরে আসতে হচ্ছে। কেন্দ্রের বক্তব্য পশ্চিমবাংলায় দুর্নীতি হয়েছে, আমরা সেটা মানছি। কিন্তু দুর্নীতি হওয়া সত্ত্বেও আমরা অরিজিনাল যে কাজ করেছি, সেই টাকা দিয়ে দেওয়া হোক। আজ পর্যন্ত না রাজ্য সরকার না কেন্দ্র সরকার এটা নিয়ে কারওর মাথাব্যথা নেই। কোনও জায়গায় আমাদের নিয়ে ওরা ভাবছে না। পুরুলিয়ার ডিএম, এডিএম থেকে শুরু করে সবাই বলবে – দাদা, দেখুন আমরা কীই করতে পারি? আমরা রাজ্যকে বলছি, কেন্দ্রকে বলছি, টাকা না দিলে কী হবে।

যাইহোক, আমার এই ক্ষুদ্র বক্তব্য বলে আমার বক্তব্যটা শেষ করলাম। ধন্যবাদ। নমস্কার।

 

প্রতিমা সর্দার

প্রতিনিধি, পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতি

বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত সাথিদের আমাদের পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতির পক্ষ থেকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে আমি বক্তব্য রাখছি। আমার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলপি ব্লকে। আমি পুরুলিয়া জেলাতে কাজ করি, সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে। আমি গান গেয়ে শেষ করব বলেছিলাম, কিন্তু এখানে দু’চারটি কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে। প্রথমে বলছি, ভুল-ত্রুটি হলে, সবাই নিজ গুণে ক্ষমা করে দিও।

 

আজকে আমরা যারা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক আছি, ১৯৮৪ সালে আমাদের সংগঠনটা তৈরি হয়।… প্রথম থেকে ১৯৮৬ সাল থেকে—এই যে এনআরইজিএ আইনটা পাশ হয়েছে—এই কাজের আইনটা আইনে আনার জন্য সর্বপ্রথম আমাদের মতো সংগঠন আন্দোলন শুরু করে। সর্বপ্রথম হয়েছিল যে, আট ঘণ্টা কাজের জন্য ন্যূনতম মজুরি দিতে হবে। তারপরে দাবি তোলা হয়েছিল এমন একটা আইন আনা হোক – আমাদের দুটো স্লোগান দেওয়া হয়েছিল – (ক) আমরা গ্রামে থাকব, গ্রামে খাটব, ভিটে-মাটি ছাড়ব না, (খ) প্রতি পাতে ভাত চাই, ভাতের জন্য কাজ চাই/ প্রতি হাতে কাজ চাই, কাজের জন্য আইন চাই। সেই দাবিটা করা হয়েছিল, সারা বছর কাজের জন্য এমন একটা আইন আনা হোক, যাতে গ্রামে খেত মজুররা তাদের মতো করে ঐ আইনের বলে জীবন নির্বাহ করতে পারে। একটা নিশ্চিত করা যেতে পারে যে তাদের হাতে কাজ থাকবে, তাদের আর কোথাও যেতে হবে না, তার মাধ্যমে তারা তাদের জীবন নির্বাহ করবে। তো সেই দাবি নিয়ে যখন লড়াই শুরু হয়েছিল, তখন তো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলেছিল “এরা খেত মজুররা মনে হচ্ছে একটা পাগল। প্রলাপ বকছে। এত কাজ দেওয়া সম্ভব কী করে? এত কাজ আসবে কোথা থেকে? এত টাকা আসবে কোথা থেকে?” তখনও কিন্তু খেত মজুরদের পথ দেখাতে হয়েছিল – কোথা থেকে টাকা আসবে, কীভাবে কাজ দেওয়া সম্ভব। শেষমেশ যখন চাপে পড়েছিল, শুধু খেত মজুর সমিতি নয়, শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন খেত মজুর সমিতির সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। আন্দোলনটা এরকম হয়েছিল, শুধু আইনটা করার জন্য একটা সময়ে কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত পা-সাইকেলে র‍্যালি করা হয়েছিল, ৪২ দিন ধরে। বুঝুন, কতটা কষ্ট করা হয়েছিল। অনেক আন্দোলন হয়েছিল। কখনও এমএলএ হস্টেল ঘেরাও করা হচ্ছে, আরও নানা কিছু। অনেক কিছু করার পরে শেষমেশ সরকার যখন চাপে পড়ল, আন্দোলন শুরু থেকে দীর্ঘ ২০ বছরের মাথায় গিয়ে ২০০৫ সালে আইনটা পাশ হয়, ২২ অগষ্ট। আইনটা পাশ হওয়ার সময় দেখা গেল, সরকার স্বীকার করল যে, সারা বছর নয়, বছরে ১০০ দিন হবে। তখন আমরা অনেকটাই খুশি হয়েছিলাম, কারণ ‘নেই মামার থেকে কানা মামা ভালো’।

 

আমরা কিন্তু ওটাতে ফেলিওর ছিলাম না। এখনও পর্যন্ত সেটার রেশ ধরে চালিয়ে যাচ্ছি – বছরে ১০০ দিন নয়, অন্তত কম করে ২০০ দিন কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।… যখন কাজ ছিল না, যখন ব্যক্তিগত মালিকানা তাদের দিয়ে কাজ করাত, তখন মজুরি দিত কোথাও ৮০ টাকা কোথাও ৬০ টাকা। আমি যখন সংগঠনে প্রথম এসেছি, তখন দেখেছি একটা জায়গায় ৬০ টাকা মজুরির জন্য লড়াই করতে হল। বলেছিলাম ৫০ থেকে ৬০ করতে হবে, ১০ টাকা বাড়াতে হবে। সেটা রায়দিঘিতে।

 

যখন কাজের আইন এল লোকেরা দেখল এখানে তো একটা ভালো আইন এসেছে। এটাতে খেত মজুরদের জন্য সবচেয়ে ভালো – আমি যখন কাজ চাইব, তখন সরকার আমাকে কাজ দিতে বাধ্য। এখানে সরকারের খেয়ালখুশি মতো কাজ দিতে পারবে না। এখানে খেত মজুরদের চাহিদা অনুযায়ী সরকার কাজ দিতে বাধ্য।… আমরা হলফ করে বলতে পারি, আমাদের মতো সংগঠন যেখানে আছে, সেখানে কেবলমাত্র লোকেরা একটু এই কাজের বিষয়ে এই আইন সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। এই দেশে কিন্তু বেশিরভাগ সাধারণ লোকেরা এখনও পর্যন্ত এনআরইজিএ-টা কী, এই এনআরইজিএ সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কেউ ওয়াকিবহাল নয়। কাজের আইনটা আজকে নয়-নয় করে ১৭ বছর পূর্ণ হল। তারপরে এত বছর পরে আমাদের ভারতবর্ষে এই রাজ্যে দাঁড়িয়ে এখনও পর্যন্ত চিৎকার করতে হচ্ছে, এত সুন্দর একটা আইন আসার পরেও বলতে হচ্ছে, সেই আইনটা ভাঙা হয়েছে কেন? খর্ব করা হচ্ছে কেন? এখনও পর্যন্ত আমাদের কাজ দেওয়া হচ্ছে না কেন? আমাদের কাজের ব্যবস্থা করা হোক। আর যে কাজ করা হয়েছে, ১৫-১৬ মাস হয়ে গিয়েছে সেই মজুরি দেওয়া হয়নি কেন? সেই মজুরি দেওয়া হোক। কত টাকা করে মজুরি আমাদের জন্য এখন হয়েছে? এনআরইজিএ-এর ক্ষেত্রে হয়েছে ২১৩। আর লাস্ট হয়েছে ২২৩, সেই ২২৩ এখনও অবধি পুরোপুরি সব জায়গায় কার্যকরী হয়নি। সামান্য ২১৩ টাকা মজুরির লোভ যারা ছাড়তে পারে না, সেই লোভের বশীভূত হওয়ার জন্য সেই শ্রমিকদের মজুরি যারা আটকে রাখে, তাহলে আমরা আজকে সে জায়গায় দাঁড়িয়ে কী করব?

 

…পুরুলিয়া, বাঁকুড়াতে দেখেছি বেশিরভাগ, প্রায় লোক বললে হয় এনআরইজিএ-র উপর নির্ভরশীল। আমি দক্ষিণের অনেক জেলায় দেখেছি এই সরকারের গাফিলতির জন্য অনেকে বলেন, “আর এনআরইজিএ-র দরকার নেই। অনেক হয়েছে, ঢের হয়েছে। আমরা ঘাম ঝরানো যে পরিশ্রম করছি, তারপরে সরকার যেভাবে আমাদের সঙ্গে ছলচাতুরি, বদমাইশি করছে তার থেকে মনে হয় আমরা যদি কষ্ট করে একটু অন্য কাজের ব্যবস্থা করে নিতে পারি, তা দিয়ে হয়তো একটু নগদ টাকাও আসবে, আমাদের কিছুদিন অন্তত চলবে।” এখন মানুষের হাতে কাজ নেই, খাবার নেই, তার উপরে, ঐ যে কাজগুলো করিয়েছিল – কাজ করলে তো খিদে বাড়ে, তো মানুষের কাজ করানোর পরে এই যে এতদিন হয়ে গেছে, টাকাপয়সা দেয়নি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলায় দেখেছি, বেশিরভাগ লোক এত বঞ্চিত হওয়ার পরেও, এখনও পর্যন্ত তারা বলছে, “ঐ মজুরু যখন দেয় দিক, বর্তমানে আবার নতুন করে কাজের ব্যবস্থা শুরু করুক।” কারণ সেখানে আর অন্য কোনও কাজের বিকল্প নেই একদম। ব্যক্তিগত মালিকের বাড়ি ওখানে দেখেছি, যারা এখনও কাজ করায়, এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে, কোনও ব্লকে ৮০ টাকা মজুরি, কেউ দেয় ১২০ টাকা মজুরি, এখনও পর্যন্ত এরম অবস্থা আছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাজারমূল্য বিশালভাবে আকাশছোঁয়া। বাজারের অবস্থা এত বেশি শুধু ৯০ টাকা, ৮০ টাকার যদি কাজ করা হয়, তার মধ্যে দিয়ে তারা খাবেটা কী? তার বাচ্চার শিক্ষা করাবে কী? অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাবে কী করে?

 

এই গরিবির জন্য দেখেছি ঐ জেলাগুলোতে বেশিরভাগ মানুষজন অপুষ্টিতে সব ভুগছে। তাদের পানীয় জলের এত করুণ অবস্থা, আমি ওখানে একটা অফিস ভাড়া নিয়ে থাকি, সেখান থেকে যেখানে যাই জল ভরে নিয়ে যাই, যাতে ওখানে গিয়ে না খেতে হয় – তাদের সেটা বুঝতে দিই না যদিও। কেন? ওখানকার লোকেরা এখনও পর্যন্ত নদীর জল খায়। এখনও পর্যন্ত কুয়োর জল খায়। এই অবস্থার মধ্যে তারা আছে। সেখানে এই কাজের উপরে যারা নির্ভরশীল আছে, তারা বারবার যেহেতু এটা দাবি করছে, “আমাদের পুনরায় কাজের ব্যবস্থা করা হোক, বকেয়া মজুরিগুলো মিটিয়ে দেওয়া হোক”, এটা নিয়ে শুধু পুরুলিয়াতে নয়, আমরা পশ্চিমবঙ্গের কম-বেশি বিভিন্ন জেলাতে কাজ করি। পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতির পক্ষ থেকে কখনও আমরা পথ অবরোধ করেছি বিভিন্ন জেলাতে, কখনও বিডিও-র বিরুদ্ধে এফআইআর করেছি থানায়। কেস নিতে বাধ্য হয়েছে, যখন দেখেছে, খেত মজুর সমিতির আন্দোলন জোরদার রূপ দিয়েছে, তখন ওরা কথা শুনতে বাধ্য হয়েছে।

 

নরেগা সংঘর্ষ মোর্চা, খাদ্য-কাজের নেটওয়ার্ক পশ্চিমবঙ্গ, আমাদের মতো সংগঠন, আরও বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজ্য থেকে দিল্লিতে তিন বার করে অবস্থান করা হয়েছে, ধর্না দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিজেপি-র যারা নেতারা আছে, সাংসদ আছে – যখন তাদের কাছে যাচ্ছি, যে এখনও টাকা দেওয়া হচ্ছে না কেন, মজুরি দেওয়া হচ্ছে না কেন, এর কৈফিয়ত দেওয়া হোক, তারা এর কোনও উত্তর দিতে পারছে না। রাজ্যে যখন যাচ্ছি, বিভিন্ন সরকারি আমলাদের কাছে প্রশাসনে, পঞ্চায়েত ভবনে, তারাও এর কোনও উত্তর দিতে পারছে না। একটাই কথা খালি বলে যাচ্ছে – রাজ্য দোষ দিচ্ছে কেন্দ্রের, কেন্দ্র দোষ দিচ্ছে রাজ্যের। এদের এই দোষারোপের মাঝখানে, আমাদের সমস্ত গরিব মানুষগুলো পিষে মরছে। তা আমাদের বক্তব্য সেখানেই। কেন্দ্র বলছে রাজ্য চুরি করেছে, দুর্নীতি করেছে, সেইজন্য আমরা টাকা দিচ্ছি না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যারা চুরি করেছে, দুর্নীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক, দেখা হোক, দরকারে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যারা প্রকৃতপক্ষে কাজ করেছে, যে সমস্ত শ্রমিকেরা, তাদের উপরে এর দায় চাপানো হচ্ছে কেন? সমস্ত শ্রমিকদের এই মজুরিগুলো আটকে রাখা হচ্ছে কেন?

 

আমরা এটা নিয়ে অনেক অবস্থান করেছি দিল্লিতে, অনেক পথ অবরোধ করেছি – আমরা শেষমেশ হাইকোর্টে কেস করেছি, সেখানে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে যে অবিলম্বে সমস্ত জেলাশাসক এই মজুরিগুলো খতিয়ে দেখে, দিয়ে দেওয়া হোক। পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতি যে অভিযোগটা করছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এগুলো দিয়ে দেওয়া হোক। সেখানে জেলাশাসক, খেত মজুর সমিতির লোকেদের ডেকেছে, তাদের নিয়ে শুনানি করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে স্বীকারও করেছেন যে আমরা যে অভিযোগটা করছি, বকেয়া মজুরি নিয়ে কথাগুলো বলছি, সেগুলো সবই ঠিক আছে, “কিন্তু আমরা মজুরি দিতে পারব না।” কেন? না, সরকার যতক্ষণ না দেবে আমরা দিতে পারব না।

 

তাই সকলের কাছে আহ্বান করছি, যারা যেখানে আছেন, প্রত্যেকে – এখন ফেসবুকে, ভিডিওতে সবাই সবকিছু দেখতে পাচ্ছেন, আগে এগুলো সংবাদমাধ্যমে আসত না, পুরুলিয়াতে দেখেছি, আমরা যেখানে যা বলছি, সংবাদের মাধ্যমে ভালো ছড়াচ্ছে, তারা ভালো সহযোগিতা করছেন। আমরা সাংবাদিকদের কাছে আবারও আশা করব, যাতে, তারা আমাদের কাজ নিয়ে আরও ভালো করে প্রচার করেন, যারা আজ এসেছেন তারা যাতে আমাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সহমত হন, একসাথে হন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন – এই কথা বলে আমার ছোট্ট বক্তব্য শেষ করছি।

 

Share this
Recent Comments
1
  • comments
    By: Ina Mitra on May 24, 2023

    আপনাদের পুরো আলোচনাটি পড়ার পর মনে হল, এর সঙ্গে যুক্ত করা যায়, পঞ্চায়েতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব, যাতে দুর্নীতি কিছু টা ঠেকানো যায় ।

Leave a Comment