গ্রাউন্ডজিরো রিপোর্ট
পুরস্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক নির্মাণ: গঙ্গার মুখ ঢেকে যায় ‘উন্নয়ন’-এ। এমনই অভিযোগ শ্রীরামপুর শহরবাসীদের। ইতিমধ্যেই তাঁদের পক্ষ থেকে বেআইনি নির্মাণগুলির প্রতিবাদ করে পুরপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একদিকে যখন শহরের পুরনো ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থাপত্যগুলি শ্রীরূপ ফিরে পাচ্ছে, অন্যদিকে বেআইনিভাবে দখল হচ্ছে গঙ্গার পাড়।
গঙ্গার পাড়ের জমি দখল করে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র গঠনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন থেকে পোর্ট ট্রাস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’। জানা গিয়েছে, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পোর্ট ট্রাস্টের জমির উপর নির্মীয়মাণ অথচ পুরসভা পোর্ট ট্রাস্টের কোনও অনুমতিও নেয়নি। এমনকি নেওয়া হয়নি পরিবেশ দফতরের অনুমতি। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির একতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, বেসরকারি উদ্যোগে একইভাবে শুরু হয়েছে আরও এক বাণিজ্যিক নির্মাণ। যেকোনও নির্মাণের নকশা পরীক্ষা করে অনুমতি দেওয়ার কথা পুরসভার, তারাই যদি বেআইনি নির্মাণে জড়িয়ে পড়ে তবে পুরো গঙ্গার পাড়ই একদিন জবরদখল হয়ে যাবে বলে শ্রীরামপুরের নাগরিকদের আশঙ্কা। পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, পরিবেশ দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে নদীতে জোয়ার-ভাটা খেলে, তার ৪৭ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ করা নিষিদ্ধ। অথচ, এখানে গঙ্গাপাড়ের ৭ মিটারের মধ্যে নির্মাণ হচ্ছে।
সম্প্রতি পুরপ্রধানকে শ্রীরামপুরের ডেনিশ ইতিহাসের ঐতিহ্য এবং ডেনমার্ক ন্যাশনাল মিউজিয়াম এবং রাজ্য হেরিটেজ কমিশন, তথ্য-সংস্কৃতি, নগরোন্নয়ন, পর্যটন দফতরের উদ্যোগে অতীত গৌরব ফেরানোর চলমান কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নাগরিক সংগঠন ‘শ্রীরামপুর হেরিটেজ রেস্টোরেশন ইনিশিয়েটিভ’-এর সভাপতি সৌমিত্রশংকর সেনগুপ্ত ও সম্পাদক দেবাশিস মল্লিক। শ্রীরামপুর পুরসভার পুরপ্রধান গিরিধারী সাহাকে লেখা এক চিঠিতে তাঁরা বলেন, “সম্প্রতি আমরা হতবাক হলাম দেখে, গঙ্গাকে দৃষ্টির আড়াল করে নদীর তীর জুড়ে একের পর এক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।… নদীতীরে এমন নির্মাণ যেমন এই শহরের সৌন্দর্য-হানি ঘটাবে, তেমনি পরিবেশের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই নির্মাণ আত্মঘাতী। এই ধরনের কোনও নির্মাণের আগে উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে ‘এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট’ করানো আইনত বাধ্যতামূলক।”
এই নাগরিক সংস্থাটি ‘প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃত এই গঙ্গা নদীর তীরের সৌন্দর্যের স্থায়ী ক্ষতি করে দেওয়ার, পরিবেশকে বিপন্ন করে দেওয়ার’ মতো এই প্রকল্পগুলি বাতিল করার অনুরোধ করেছে। একইসঙ্গে পুরপ্রধানকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য, পর্যটনের শ্রীবৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা মনে রেখে সেন্ট ওলাভ গির্জা থেকে রবীন্দ্রসদন রোডের মুখ পর্যন্ত যে শ্রীরামপুর টাউন স্কোয়ার নির্মিত হচ্ছে, গঙ্গার তীর দখল করে এই বেআইনি নির্মাণগুলি তার পরিপন্থী।