আমি একজন গর্বিত মিঞা নারী : ওয়াহিদা পরভেজ


  • August 31, 2022
  • (3 Comments)
  • 1264 Views

আসামে বাংলাভাষী মুসলমান সম্প্রদায়, যাঁরা বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ আমলে বর্তমান বাংলাদেশের মূলত তিনটি জেলা ময়মনসিংহ, রঙপুর ও রাজশাহী থেকে ব্রহ্মপূত্র উপত্যকায় এসে বসত গড়ে তোলেন তাঁরা মিঞা নামে পরিচিত। এই পরিচয়টি নেহাতই নেতিবাচক হিসাবে তাদের প্রতি ব্যবহার করা হয়। অহমিয়াভাষী আসামের মানুষদের কাছে বিগত কয়েক দশক ধরে তাঁরা রয়ে গেছেন অভিবাসী হিসাবেই। কয়েক পুরুষ ধরে আসামে বাস করে, লেখাপড়া-কাজকর্ম-পরিবার গড়ে তোলা সত্ত্বেও, ভারতীয় নাগরিকত্বের আইনি নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও এই মানুষগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্ম অহমিয়াদের কাছে ‘বাংলাদেশী’ই রয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্র ও আসামের বর্তমান রাজ্য সরকার এই বৈষম্য আরও বেশি করে উসকে দিচ্ছে। গত জুলাই মাসেই আসামের বিজেপি সরকার অহমিয়াভাষী পাঁচটি মুসলিম সম্প্রদায়কে আসামের মূলবাসী-আদিবাসী সম্প্রদায় বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু মিঞাদের প্রতি সরকার ও সংখ্যাগরিষ্ঠ অহমিয়া মানুষের মানসিকতা রয়ে গেছে বৈষম্যমূলক ও অসম্মানজনকই।

 

তরুণ গবেষক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা ওয়াহিদা পরভেজ-এর বাড়ি আসামের বরপেটা জেলায়। ওয়াহিদা একজন মিঞা ও তিনি তাঁর এই পরিচিতি তরুণ প্রজন্মের মিঞাদের মতোই গর্বের সঙ্গে স্বীকার করেছেন। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচডি করছেন। বিষয় – হিন্দি কথাসাহিত্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিচয়ের লড়াইয়ের উপস্থাপনা। আসামে নাগরিকত্ব নিয়ে যে বিতর্ক তা তাঁর পি.এইচডি-র বিষয় তো বটেই, কিন্তু নিজে সেই রাজ্যের নাগরিক হিসাবে ইস্যুটি দেখার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক গভীরও। সম্প্রতি ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ-এর দু’দিনের গণমাধ্যমের কর্মশালায় ওয়াহিদা পরভেজ-এর সঙ্গে গ্রাউন্ডজিরো-র সুদর্শনা চক্রবর্তীর আলাপচারীতায় উঠে এল মিঞা পরিচিতি, মিঞা কবিতা, লিঙ্গ পরিচিতি, ডিটেনশন ক্যাম্প, আসামে নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভাবনার নানা দিক।

 

প্র: কীভাবে সাম্প্রতিক সময়ে নাগরিকত্ব বিষয়টি আপনাকে ছুঁয়েছে ?

 

উঃ লকডাউন-এর সময়ে আমি দিল্লি থেকে বাড়ি গেলাম। ক্যাম্পাস বন্ধ, সবকিছু বন্ধ। আমি রুম-এ থেকে কোনও কাজও করতে পারছি না। ঘরে ফিরে গিয়ে আমি ফিল্ড ভিজিট করতে শুরু করলাম। একটা প্রজেক্টের কাজ করছি, সেই সূত্রেই ফিল্ড-এ যাওয়া। আর ফিল্ড-এ গিয়ে কী দেখলাম আমি? দেখলাম আসলে যা নিউজ-এ এগুলো আসেই না। ফিল্ড-এ গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হল, তা কোনও নিউজ-এই আসে না। নিউজ থেকে আমরা তা বুঝতে পারি না। আমি অনেক ইন্টারভিউ করেছি। আমি প্রায় ২০ জন প্রাক্তন বন্দীর ইন্টারভিউ করেছি, তাছাড়া ৩০, ৪০ বা ৫০ জনের মতো ডি-ভোটার, রেফারেন্স কেস, এনআরসি থেকে বাদ পড়া মানুষদের ইন্টারভিউ করেছি। এই ইন্টারভিউগুলো করতে গিয়েই আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, আসামে যে সিটিজেনশিপ ইস্যু চলছে তা কীরকমভাবে চলছে আর কেন চলছে। আসামে সিটিজেনশিপ ইস্যু অনেক অনেক বছরের পুরনো, হঠাৎ করে শুরু হওয়া কোনও ইস্যু নয়। এটি একটি প্রায় ঐতিহাসিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে এই সমস্যাটি শুরু না হলেও, জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যাটিকে আরও বাড়াচ্ছে।

 

প্র: আসামের যে জাতিসত্ত্বার সংঘাত, তা বিগত কয়েক বছরে কেন্দ্র সরকার, রাজ্য সরকার ও তারপরে কোভিড মহামারী, লকডাউন, এন আর সি-র বিষয়টি ও তার সঙ্গে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতির বিষয়টিকে আড়াল করে রাখছে?

 

উঃ একদমই তাই। একটা কথা বলুন, ডিটেনশন সেন্টার-এর কথা আপনি কবে শুনেছেন?

 

প্র: হুমমম….২০১‌৭/১৮ সাল নাগাদ।

 

উঃ আমার তথ্যচিত্রের চরিত্র মমিরন সাড়ে দশ বছর ডিটেনশন ক্যাম্পে ছিলেন। ভাবতে পারছেন কবে থেকে? তার আগে থেকেই আছে এটা। ওনার আগেও বহু লোককে নিয়ে গেছে। এত বছর ধরে ডিটেনশন ক্যাম্প আছে, লোকজনকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ভাবুন কীরকম মেন্টাল ট্রমা, হেলথ ইস্যু চলছে তো চলছেই। আমরা কেউ জানিই না। এমনকি আমি আসামের হয়েও আমিই অনেক দেরিতে জেনেছি। নিউজপেপার-এ বা কোথাও এগুলো থাকেই না। থাকলেই একেবারে কোনায় কোথাও। কারওর নজরেই পড়ে না।

 

প্র: একটা কথা বলুন আসামে বহু আন্দোলনকর্মী কাজ করছেন, ফিল্ড-এও কাজ করছেন। তাঁদের চোখের বা নজরের বাইরে এত বছর ধরে কী করে এই জিনিসটি চলছে?

 

উঃ কথাটা এরকম নয় যে কেউ জানে না বা একেবারেই লুকাছুপি করে চলছে। একেবারেই নয়। কথা হল, দে আর নট ইন্টারেস্টেড। যাঁরা আসামিয়া লোক, তাঁরা ইন্টারেস্টেড নয়। তাঁরা তো আমাদের পছন্দই করে না। তাঁদের জন্য আমরা বাংলাদেশী। আমার বাবা, ঠাকুর্দা, তাঁর বাবা যাঁর জন্মই আসামে হোক না কেন, ওদের একটাই কথা – ‘এই যে লোকগুলো আসামে আসছে, তারজন্য আমাদের সংস্কৃতির উপর প্রভাব পড়েছে, আমাদের জমি চলে গেছে’, ওদের তো কোনও সমস্যা নেই আমাদের ডিটেনশন ক্যাম্প-এ রাখুক বা অন্য কোথাও। বাংলাদেশে ছেড়ে দিয়ে আসলেও ওদের কিছু আসে যায় না। মিঞা সম্প্রদায় থেকে এমন শিক্ষিত লোক নেই যারা এগুলো নিয়ে বলবেন, বা এরকম লিডার-ও নেই। নেতাগুলোও কিছু বলে না। এখন শেষ দু’চার বছরে দেখা যাচ্ছে এক, দু’জন মুখ খুলে কিছু বলছেন। তাঁরাই বলছেন যাঁরা নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত মিঞা, আমাদের মতো যারা লেখাপড়া করে, যারা এটা বুঝতে পারছে আমাদের এত বছর ধরে ডিহিউম্যানাইজ করা হয়েছে। আমাদের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয় প্রত্যেকটা দিন, প্রত্যেকটা জায়গায়। আমি যদি গৌহাটি যাই, যদি আমাকে নাম জিগায়, যদি শোনে যে আমি মিঞা ল্যাঙ্গোয়েজ-এ কথা বলছি, টেরা চোখে দেখবে, ভাববে বাংলাদেশী, সবার মানে দিমাগ-এ এইটাই ঘোরে। এত বছর পরেও আসামিজ মানুষগুলা, মিঞা মানুষগুলাকে অ্যাকসেপ্ট-ই করতে পারেনি। যদি অ্যাকসেপ্ট-ই না করতে পারে, তাহলে ভাবে, ‘ওদের লগে যা হোক, আমাদের কী! যদি খেদিয়ে দেয় আমাদের জন্য ভালো।’

 

প্র: মিঞা কবিতা বিষয়ে আমরা গত তিন, চার বছর ধরেই শুনতে শুরু করেছি। খুব ভালো লাগল দেখে যে আপনি একজন মেয়ে এবং নিজের মিঞা পরিচিতিটা তুলে ধরছেন, ইংরেজিতে বললে ‘ক্লেইম’ করছেন। আসামে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই কাজটা কতটা সহজ? মহিলা মিঞা কবি কী আছেন?

 

উঃ আমার যতদূর মনে পড়ছে প্রথম মিঞা কবিতা লেখা হয়েছিল ২০১৬ বা ২০১৮ সালে। দু’জন মানুষ যখন লিখছেন ফেসবুক-এ তখন আশপাশের মিঞা মানুষগুলাও মনে করছে, ‘আমরা তো লিখতে পারি’। প্রথমবার কেউ উপলব্ধি করছে, ‘হ্যাঁ, আমি লিখতে পারি। কেন আমি লিখব না?’ মিঞাদের মধ্যে আগে অনেকেই হয়তো কবিতা বেশ কয়েক বছর ধরে লিখেছেন, তারপরে একটা সময় এসেছে যখন তাঁরা মনে করেছেন, ‘আমরা আমাদের আইডেন্টিটি নিয়েও কবিতা লিখতে পারি’। এমনকি আমরা আমাদের ল্যাঙ্গোয়েজ-এ লিখতে পারি। তখন সবাই লিখতে শুরু করল আর শুরুর দিকের কবিতাগুলো এরকমই হত যে – ‘আমি মিঞা, আর আমি এটা অ্যাকসেপ্ট করি যে আমি মিঞা’। অনেক মেয়েরাও সে সময়ে লাহে লাহে লেখা স্টার্ট করল। সবার আগে রেহানা সুলতানা মিঞা পোয়েট্রি লিখেছে। তারপরে অনেক মেয়েরাও এখন লিখছে। একজন আছে হিনা আলহায়া, আরেক জন খুব শক্তিশালী মহিলা কবি আছেন, আমিনা আহমেদ। আরও এরকম কয়েক জন আছেন। নিজের আইডেন্টিটি নিয়েই লিখেছে ওরা।

 

প্র: আপনি যে মহিলা মিঞা কবিদের কথা বলছেন, তাঁরা যখন লিখছেন তখন তাঁদের লেখায় কি জেন্ডার আইডেন্টিটি-র বিষয়টিও আসছে?

 

উঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ। ওরা যখন লিখছেন তখন একজন মিঞা হিসাবে লিখছেন এবং একজন মিঞা নারী হিসাবেও লিখছেন। আসল মুদ্দা’টা তো অবশ্যই আইডেন্টিটি। মিঞা কমিউনিটি একটা মার্জিনালাইজড (প্রান্তিক) কমিউনিটি। মার্জিনালাইজড কমিউনিটি-র নারীরা আরও মার্জিনালাইজড থাকে। ডাবল মার্জিনালাইজড থাকে। ঐ প্রশ্নগুলোই আসে। আমি যখন মহিলা মিঞা কবিদের ইন্টারভিউ করেছি, আমি একটা পেপার-ও লিখেছি, যখন আমি ওদের লগে কথা বলছি, ওরা বলছেন যে, ‘আমরা না পুরুষ মিঞা কবিদের মতো আমরা লিখতেও পারি না। কারণ আমাদের উপর অনেক বাধা-নিষেধ। তুমি এটা কেন লিখছ? ওটা কেন লিখছ? আমাদের এমনকি একটা একটা শব্দেও প্রশ্ন আসে।’ কারণ প্রায় সবাই ফেসবুক-এ আপলোড করে। তো সবাই কোয়েশ্চন করে। এমনকি আসামিজ ন্যাশনালিস্টগুলা তো গালিগালাজও দেয়। তারপরে কমিউনিটি-র মধ্যেও অনেকে মেয়েদের কোয়েশ্চন করে – ‘তুমি এটা লিখেছ? তুমি এত ভালগার শব্দ লিখে দিয়েছ।’

 

প্র: যখন এরকমভাবে প্রশ্ন করা হচ্ছে তখন ধর্মীয় বিষয়টিও কী কোথাও চলে আসছে, মেয়েদের উপর বাধা-নিষেধ আরোপের ক্ষেত্রে?

 

উঃ হ্যাঁ। মেয়েরা মেয়ে হিসাবে সবার আগে টার্গেট হয়। হিনার একটা ইন্টারভিউ করেছিলাম, তাতে ও বলেছিল, ‘কাজি (একজন পুরুষ মিঞা কবি) যদি ওর কবিতায় কোনও ভালগার ওয়ার্ড-ও লেখে, কোনও প্রব্লেম নাই। কিন্তু যদি ঐটা আমি লিখি, তাহলে ইট’জ আ বিগ ইস্যু। আমার ওটুকু ফ্রিডম নাই। এমনকি লিখতে গেলেও আমাকে এটুকু ভাবতে লাগে যে আমি এটা লিখব কি লিখব না।’ আমাকে বলছিল, ‘একটা পোয়েট্রি আছে। আমি লিখছিলাম, আমি ভাবি ওটা তুমি পড়লে খুব ভালো হবে। কিন্তু অ্যাকচুয়ালি আমি পোয়েট্রি’টা কোনওদিন পুরাই করতে পারলাম না।’ আমি বললাম, ক্যান? বলল, ‘আমার হিম্মতই হল না।’  আরেক জন মহিলা মিঞা কবি আছেন। ওনার বিয়ে হয়েছে, বাচ্চাও আছে। ওনার হাজব্যান্ড সাপোর্ট করে না ওনার পোয়েট্রি লেখা। বিয়ার পরে অনেক বছর উনি লেখেননি। আগে লিখতেন। তারপর বাচ্চাকাচ্চা হওয়ায় ওসবে এনগেজ হয়েছেন। রিসেন্টলি, ওরা সেপারেটেড হয়েছেন। উনি নিজের ঘরে থাকেন, চাকরি করেন, বাচ্চাদের দেখেন। তার লগে লগে এখন পোয়েট্রি-ও লেখেন। আর এটা উনি নিজে আমাকে বলেছেন যে, ‘দেখো আমাকে তো সবে বাধা দেবে। কিন্তু আমি ঐটা করতে চাই যেটা আমি চাই। আমি জানি যে আমি পোয়েট্রি লেখার জন্যই জন্মেছি। আর আমাকে কেউ পোয়েট্রি লিখতে বাধা দিবে এটা তো হতেই পারে না। আমি লিখব। যে যা বলে বলুক, আমি লিখব।’ তার কবিতাগুলো এত পাওয়ারফুল, আপনি পড়লে গায়ের রোম খাড়া হয়ে যাবে। তার যেটা ল্যাঙ্গোয়েজ সেটা বাংলা, মিঞা মিক্স অল্প।

 

আমি যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলি না তখন আমার বেশি ফিল হয়, আমি মানে কত্ত ভালো ফিল করি এই বিষয়ে কথা বলে। (উচ্ছাস ও হাসিতে ভরে বলে উঠলেন কথোপকথনের মাঝে)

 

প্র: আসামের সাহিত্যবৃত্তে মিঞা কবিদের কীভাবে দেখা হয়? মিঞা কবিরাও বা কী ভাবেন এই বিষয়ে?

 

উঃ লিটারেচর পড়া মানুষজন অল্প থাকেন। তার মধ্যেও বহুত ধরনের থাকে। মিঞা কবিতা যখন শুরুতে লেখা হল, তখন ঐ টিম-এ একটা মেয়ে ছিল যে অহমিয়া ছিল। ও মিঞা ছিল না। ও মিঞাদের জন্য কবিতা লিখত, কিন্তু ও অহমিয়াতেই লিখত। তার লগে লগে আমি এমন অনেক লোক পেয়েছি যারা মানে আসামিয়া, তারা সাহিত্যের লগে জড়িত বা লেখালেখি করে, তারাও এমনকি সাপোর্ট করে। অনেক এমন মানুষও ছিল যারা সাপোর্ট করে না। তারা এটা বলে যে ‘মিঞা পোয়েট্রি আমাদের আসামিয়া সাহিত্যের উপরে একটা খতরা টাইপ’। এমন অনেক লোকও আবার আছে যারা সাপোর্ট করে, ভালোবাসে মিঞা পোয়েট্রি। সবাই নন, কিছু কিছু মিঞা কবিও তাদের কাজের স্বীকৃতি নিশ্চয়ই চান।

 

প্র: গত দশ বছরে দেশে যে ধরনের রাজনীতি চলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে মিঞা সম্প্রদায়, মিঞা কবিরা, আপনার মতো তরুণ প্রজন্মের মিঞারা তারা কীভাবে নিজেদের পরিচিতির লড়াইটা আগামী দিনে লড়ার, প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন?

 

উঃ বিজেপি গভর্নমেন্ট আসার পরে বস্তুগুলো আরও টাফ (কঠিন) হয়ে গেছে। মানে ওয়ার্স্ট (সবচেয়ে খারাপ) হয়ে গেছে। আগে যেখানে হিন্দু-মুসলিম হত না, এখন সেটাও হয়। এক তো তুমি মিঞা তারজন্য টার্গেট, তারপরে তুমি মুসলিম তারজন্যও টার্গেট। আমি মনে করি বিজেপি গভর্নমেন্ট আসার পরে আমরা এটা বেশি বুঝতে পারছি যে আমরা যদি এখন আওয়াজ না উঠাই তাহলে আমরা শেষ হয়ে যাব। আমাদের কোনও নামচিহ্নই থাকবে না। আমাদের আগের যারা, আমরা, আমাদের বাচ্চা সব বাংলাদেশীই হয়ে থাকব। আমি মনে করি এই সরকারও একটা বড় কারণ যার জন্য আমরা আওয়াজ উঠিয়েছি, পোয়েট্রি লিখছি, ফিল্ম বানিয়েছি – এগুলো করার কারণও এটাই।

 

প্র: আপনি কি দেখছেন আপনার বয়সী, নতুন প্রজন্ম যারা তারা এভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এগিয়ে আসছে?

 

উঃ হ্যাঁ।

 

প্র: এটা কি এক ধরনের আন্ডারগ্রাউন্ড মুভমেন্ট না কি একেবারেই প্রকাশ্য?

 

উঃ উমমমম, না আন্ডারগ্রাউন্ড না। কিন্তু আবার এটাও নয় যে আমাদের কমিউনিটি-র সবাই এগিয়ে এসেছে। একটা গ্যাপ আছে।

 

প্র: যারা আসেননি তারা কেন আসছেন না?

 

উঃ গত অনেক বছর ধরে, অনেক দশক ধরে এই মিঞা কমিউনিটি ডমিনেটেড হয়ে গেছে। ঐ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা অত সহজ নয়। মিঞা মানুষগুলা যখন ফিল (অনুভব) করেন যে অসমিয়া মানুষগুলা আমাদের অ্যাকসেপ্ট করছে না, তখন তারা না অসমিয়া হতে চেষ্টা করে। ভাবে যে, আমরা যদি অসমিয়া টাইপ হয়ে যাই তাহলে তো ওরা আমাদের সাপোর্ট করবে। ভাবে আমরা অহমিয়া বলব, অহমিয়ার মতোই চলব, পিন্ধব (পোশাক পরব), খাব। কিন্তু এটা অ্যাকচুয়ালি হচ্ছে না। তুমি যদি অহমিয়া রক্ত নিজের শরীরে ঢুকিয়েও নাও তাহলেও তুমি যেটা তুমি সেটাই থাকবে। এটা একটা কনফ্লিক্ট চলছে। আমি মনে করি, এটা বহুত জলদি সবাই অ্যাকসেপ্ট করে নেবে যে, আমি কারওর মতো হতে পারব না। আমি যেটা আমি ওটাই থাকব।

 

প্র: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? আপনি সাহিত্যের ছাত্রী, তথ্যচিত্র বানাচ্ছেন। নিজের মিঞা পরিচিত, সঙ্গে জেন্ডার আইডেন্টি সবটা মিলিয়ে কীভাবে কাজ করতে চান ?

 

উঃ দেখুন আমি এটা ফিল (অনুভব) করি যে আমরা না অনেক দেরিতে করেছি। আমরা যে অ্যাকসেপ্ট করেছি, আমরা যে বলছি যে আমরা মিঞা, এটা অনেক বছর আগেই করা উচিত ছিল। আমার এরকম লাগে যে, আমার বাবা যদি করত, তাহলে আমরা এই পরিস্থিতি দেখতাম না, যেটা এখন আমরা দেখছি। আমার মনে হয় যে, এখন তো আমার এটা বলতে লাগব যে আমি মিঞা, তুমি আমাকে যাই বলো, আমি মিঞা আমি এটা মেনে নিয়েছি আর যখন তুমি তোমার আইডেন্টিটিকে অ্যাকসেপ্ট করবে তারপরের বস্তুগুলা এত টাফ (কঠিন) হয় না। তুম যাহা খড়ে হো তুমহে আগর উহা সে কোয়ি নেহি হিলা সাকতা তো তুম আগে হি বঢ়োগে। এখন আমাদের প্ল্যান এটাই যে আমরা আমাদের কমিউনিটি নিয়ে কাম করব, আমাদের আইডেন্টিটি নিয়ে কাম করব, আমাদের যেটা কালচার, ভাষা সেগুলাই আমরা সেলিব্রেট করব। একজন আরেক জনকে এনকারেজ করব। এই কমিউনিটিকে ভালো ধরনের গ্রো আপ করব।

 

প্র: আপনার ভাষাটি কী? কবিতা, ফিল্ম?

 

উঃ আই থিঙ্ক আই অ্যাম আ স্টোরি টেলার। আমার মনে হয় আমার লেখাটা বেশি ভালো।

 

Share this
Recent Comments
3
  • comments
    By: Ibrahim khan on August 31, 2022

    I can not understand what role will be played by this in your career.

  • comments
    By: Fatima Nazia Barlaskar on August 31, 2022

    Well done sister ..khub bhalo kaj korcho Allah tumake kamiyab korun

  • খুব গুরুত্বপূর্ণ লেখা। এইভাবেই মিঞা কবিরা এগিয়ে আসলে সমাজের চিন্তাশীল ব্যক্তিরাও তাদের সাপোর্ট করবে। অসমিয়ারা এইভাবে চলতে থাকলে তারা শুধুমাত্র সারা আসামেই নয় ভারতবর্ষেও নিন্দিত হবে।

Leave a Comment