মার্চ মাসের ২৯ তারিখ কলকাতা পুলিশের বিশেষ মাওবাদী দমন শাখা স্পেশাল টাস্ক ফোর্স, নদিয়ার জাগুলিয়া থেকে রাজনৈতিক কর্মী জয়িতা দাসকে গ্রেফতার করে। তাকে আদালতে পেশ করা হলে, জানা যায় স্পেশাল টাস্ক ফোর্স জয়িতার বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রয়োগের আবেদন রেখেছে। সিটি সেশন কোর্টের বিচারপতি ৭-ই এপ্রিল ইউএপিএ ২০০৮ আইনের ১৬/১৮/১৮বি/২০/৩৮/৩৯ ধারাগুলিতে জয়িতার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন। আগামী ১১ এপ্রিল জয়িতাকে পুনরায় কোর্টে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
জয়িতা দীর্ঘদিন বাম গণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ২০১৩ সালে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তাকে গ্রেফতার করেছিল। পরবর্তী সময় তিনি জামিনে মুক্ত হন।
৮/০৪/২০২২ তারিখে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)-এর সাধারণ সম্পাদক তার প্রেস বিবৃতিতে একথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তাদের মতে এই আক্রমণ কেন্দ্রের অপারেশন প্রহার এবং অপারেশন সমাধানকে সফল করবার চেষ্টা। এই অপারেশান প্রহার এবং অপারেশন সমাধানের মূল লক্ষ্য হলো ২০২২-এর মধ্যে ভারত থেকে মাওবাদী আন্দোলনকে শেষ করে দেওয়া।
অন্যদিকে বন্দিমুক্তি কমিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, “২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বসিরহাটের ছাত্রী তানিয়া পারভীনকে জঙ্গি অভিযোগে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের STF। পরে অন্যরাজ্য ও বিদেশী যোগাযোগ আছে বলে মামলা কেন্দ্র সরকারের কুখ্যাত NIA-র হাতে যায়। অন্য রাজ্যে জয়িতা দাশের নামে মামলা আছে বলে আগামী দিনে NIA-র হাতে মামলা যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এছাড়া খাগড়াগড়ের মামলায় UAPA-তে অনেকেই জেলবন্দী। SUCI(C) নেতা বাসিনাথ গায়েন ২২ বছরের দীর্ঘ কারাবাস ভোগ করছেন। রাজনৈতিক বন্দী ও সিপিআই (মাওবাদী) নেতা বরুন সুর সহ অনেকেই UAPA আইনে একযুগের বেশি জেলে আছেন। কামতাপুরী আন্দোলনের নেতা জীবন সিংহের বিরুদ্ধে UAPA গ্রয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। এছাড়া জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA) এরাজ্যের ডোমকল থেকে ১১জনকে, ছত্রধর মাহাতকে UAPA-তে গ্রেফতার করেছে।”
তবে যা এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক মহলকে চিন্তায় ফেলছে তা হলো, একদিকে রাজ্য সরকারের ইউএপিএ-র বিরোধীতা আর অন্যদিকে আন্দোলনের কর্মীদের ইউএপিএতে আটক করা। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ বাংলার গণতান্ত্রিক পরিবেশকে প্রশ্নের সম্মুখীন করছে।
প্রসঙ্গত, মুম্বাইতে একটি সভায় অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর সহ বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মীদের সামনে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টতই ঘোষণা করেন, পশ্চিমবঙ্গে, অর্থাৎ তাঁর রাজ্যে ইউএপিএ ব্যবহার করা হচ্ছে না। গণ-আন্দোলনের কর্মীদের ইউএপিএ ব্যবহার করে গ্রেফতার করার উদাহরণ অবশ্য এ রাজ্যে বা তৃণমূল সরকারের আমলে নতুন নয়। আনিস-তুহিনা সহ পশ্চিমবঙ্গে ঘটে চলা রাজনৈতিক হিংসা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপর্যুপরি ঘটনা তাই প্রশ্ন রাখে সচেতন নাগরিদের কাছে, একের পর এক অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ পরিচালনার মধ্যে দিয়েই কি জারি থাকবে বাংলার বিজেপি-বিরোধী সরকার?
প্রতিবেদক পীযূষ দত্ত।