অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন গণহত্যা নিয়ে চর্চা, গবেষণা ও আশঙ্কা নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে গড়ে তোলেন ‘জেনোসাইড ওয়াচ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠান ভারতের সামগ্রিক সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক-রাজনৈতিক দিকগুলোকে বিশ্লেষণ করে আগামী দু’বছরের মধ্যে এই দেশে ‘জেনোসাইড’ বা ‘গণহত্যার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের অনুসারী সঙ্ঘপরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই দেশের বর্তমান শাসক দল নাৎসি পার্টির সিলেবাস দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলনসহ অনুসরণ করে চলেছে। ধর্মীয় মেরুকরণকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস্’ আসলে প্রিল্যুড, বড় কোনও ধ্বংসযজ্ঞের আগে। রোয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট কিংবা রাষ্ট্রসংঘ শোনেনি গ্রেগরি স্ট্যানটন-এর সতর্কবাণী। সেদেশের নাগরিক সমাজও নীরব থেকেছে। তার খেসারত তাঁদের দিতে হয়েছে। আমরা কি এই অভিজ্ঞতা থেকে পাঠ নেব না? হিরন্ময় নীরবতাই বেছে নেবো? লিখেছেন মোহিত রণদীপ।
আমেরিকার ভার্জিনিয়ার জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জেনোসাইড স্টাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশন’ বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন গ্রেগরি স্ট্যানটন। ১৯৮৯ সালে তিনি আফ্রিকার রোয়ান্ডা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সেখানে ভয়াবহ জাতিগত গণহত্যার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সেই আশঙ্কার কথা রোয়ান্ডার প্রেসিডেন্টকে যেমন জানান, ঠিক একই ভাবে রাষ্ট্রসংঘকেও সতর্ক করেন। তাঁর সেই সতর্কবাণীতে কেউই সেভাবে কান দেননি। গণহত্যা প্রতিরোধে আগাম কোনো ব্যবস্থাও নেননি তাঁরা, যাঁদের পক্ষে কিছু করার সম্ভাবনা ছিল। এই সতর্কবাণীর ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৯৪ সালে ঘটে যায় পূর্বতন বেলজিয়ামের উপনিবেশ রোয়ান্ডার সংখ্যাগুরু ‘হুটু’ এবং সংখ্যালঘু ‘তুৎসি’ সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়ঙ্কর গণহত্যা। সে দেশের সরকারের একের পর এক সংখ্যালঘু-বিরোধী পদক্ষেপ সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘হুটু’ সম্প্রদায়ের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অদম্য আকাঙ্ক্ষাকে তীব্র করে তোলে। শুরু হয় নির্বিচারে সংখ্যালঘু নিধন। সরকার কার্যত নীরব থেকে উৎসাহ দেয় এই গণহত্যায়। আশি লক্ষ অধিবাসীর দেশ রোয়ান্ডায় ওই গণহত্যায় মারা যান প্রায় আট থেকে দশ লক্ষ মানুষ। ব্যাপক সংখ্যায় নিহত হন সংখ্যালঘু ‘তুৎসি’ জনগোষ্ঠীর মানুষ। তবে প্রত্যাঘাতে ‘হুটু’ সম্প্রদায়েরও লক্ষাধিক মানুষ নিহত হন। এই গণহত্যা প্রতিরোধ করা যেতো, যদি সে দেশের সরকার এবং দায়িত্বশীল নাগরিক সমাজ রুখে দাঁড়াতেন।
অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন দেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যা এবং তার পূর্বের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে গণহত্যার আটটি পূর্বলক্ষণসহ দশটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেন।
১. বিভাজন
মানুষকে ‘ওরা’ এবং ‘আমরা’ এই দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া। সেই বিভাজন হতে পারে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে, ভাষার ভিত্তিতে, প্রাদেশিকতার ভিত্তিতে, গাত্রবর্ণের ভিত্তিতে, মতাদর্শের কারণে কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়কে ভিত্তি করেই।
২. প্রতীকীকরণ
কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষকে কোনো নির্দিষ্ট চিহ্নের মাধ্যমে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেওয়া। জার্মানীতে নাৎসি রাজত্বে ইহুদিদের প্রথমে ন্যুরেমবার্গ আইনের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরে তাঁদের বাধ্য করা হয়েছিল হলুদ তারকা চিহ্নিত ব্যাজ বা বাহুবন্ধনী পড়তে। এই ব্যাজের মাধ্যমে ইহুদিদের ‘বহিরাগত’ কিংবা ‘ঘৃণ্য’ হিসাবে চিহ্নিত করাই উদ্দেশ্য ছিল।
৩. বৈষম্য
সমাজের মধ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক চিহ্নিত ‘ওদের’ জন্য প্রতি পদক্ষেপে থাকবে বৈষম্যমূলক নানা ব্যবস্থা। ধর্মাচরণ, সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ, মতপ্রকাশ, নাগরিক অধিকার…সব ক্ষেত্রেই বুঝিয়ে দেওয়া হবে ‘তোমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’। এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থায় দেশেরই সংখ্যালঘু অংশের মানুষ সব অর্থে বঞ্চিত হবেন সংখ্যাগুরুর তুলনায়।
৪. মানবেতর হিসাবে দেখা
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে মানুষ হিসাবে গণ্য না করে ভয়ঙ্কর কিংবা হীন ও ঘৃণ্য জনগোষ্ঠী হিসাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্র পরিকল্পিত ভাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের অধিকাংশের মধ্যে চারিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। সমস্ত মাধ্যমকে ব্যবহার করে চলতে শুরু করে প্রচার ‘ওরা নোংরা’, ‘ ওরা হিংস্র’, ‘ওরা ধর্ষক’, ‘ওদের বিশ্বাস করা যায় না’, ‘ওদের ঘরে ঘরে ক্রিমিনাল’! আগের তুলনায় এখন এই প্রচার খুব দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে! সদ্য নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী ফিলিপিন্সের সাংবাদিক মারিয়া রেসা বর্তমানের শক্তিশালী সমাজমাধ্যম ‘ফেসবুক’-এর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছেন রাষ্ট্রশক্তির হয়ে নির্দিষ্ট অংশের মানুষের বিরুদ্ধে নিরন্তর ঘৃণা প্রচারে সহায়কের ভূমিকা নেওয়ার! সেই পরিকল্পিত ঘৃণা প্রচার কোথাও কোথাও গণহত্যার পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
৫. সামরিক সাংগঠনিক প্রস্তুতি
সরকার নিজের সংখ্যালঘু বিরোধী পরিকল্পনা রূপায়নে তৈরি করে নির্দিষ্ট বাহিনী। ১৯৩৩ সালে নাৎসি পার্টি শাসিত জার্মানীতে গড়ে তোলা হয় ‘গেস্টাপো’ নামের একটি গোপন রাজনৈতিক পুলিশ বাহিনী। সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এই গেস্টাপো বাহিনী জার্মানী এবং নাৎসি অধিকৃত ইওরোপ জুড়ে ইহুদি জনগোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নির্মম নির্যাতনের বহু দৃষ্টান্ত তৈরি করে। বহু গোপন হত্যা ও নাশকতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই গেস্টাপো বাহিনীর নাম।
৬. মেরুকরণ
নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে প্রচার চালিয়ে মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ সরকারের নিরন্তর করে চলা। দেশের মানুষের অন্য সমস্ত পরিচিতিকে গৌণ করে দিয়ে নির্দিষ্ট দু’টি মেরুর পরিচিতিকেই মুখ্য হিসাবে তুলে ধরা, যা পারস্পরিক বিরোধ আরও তীব্র করে তোলে। ভারতে যেভাবে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুর বিভাজন তীব্র মেরুকরণ করা হয়েছে পরিকল্পনা করেই।
৭. প্রস্তুতি শুরু করা
ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মানুষকে নতুন করে চিহ্নিত করা, তাঁদের দীর্ঘদিনের বসতি থেকে উৎখাত করে অন্যত্র থাকতে বাধ্য করা। জার্মানীতে ইহুদি-নিধনের আগে এমনটাই ঘটেছিল। প্রথমে ন্যুরেমবার্গ আইনের মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত করা, তারপর সেই হলুদ তারকা ব্যাজ পড়তে বাধ্য করা, তারপর তাঁদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প-এ বন্দি করে রাখা।
৮. নিপীড়নের শুরু
কখনও নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মানুষের ওপর, কখনও বিরোধী মতাবলম্বী গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর, কখনও উদারনৈতিক প্রতিবাদী মানুষের ওপর সংঘবদ্ধ ভাবে গণপ্রহারের মাধ্যমে বা চোরাগোপ্তা আক্রমণের মাধ্যমে হত্যা করা, ঘরবাড়িতে লুঠ চালানো বা আগুন ধরিয়ে দেওয়া। কখনও ছোট আকারে দাঙ্গা বা গণহত্যা ঘটানো।
৯. নির্মূলকরণ
পৃথিবীতে সংঘটিত বেশিরভাগ জেনোসাইড বা গণহত্যার ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য থাকে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মানুষকে নির্মূল করা, নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানীতে নাৎসি বাহিনী ইহুদিদের নির্মূল করার লক্ষ্যে গণহত্যার উদ্যোগ নেয়। বার্লিনের উপকন্ঠে বসে নাৎসি আমলারা মাত্র নব্বই মিনিটের সভায় সমগ্র ইওরোপ থেকে এক কোটি দশ লক্ষ ইহুদিকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং হলোকাস্টের মাধ্যমে তা রূপায়িত করে। ১৯৬৫-৬৬ সালে ইন্দোনেশিয়াতে প্রায় বারো লক্ষ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য-সমর্থক নিহত হন সরকার এবং দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক বাহিনীর হাতে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং পূর্ব পাকিস্তানের ইসলামিক সাম্প্রদায়িক শক্তি ১৯৭১-এর মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাপক গণহত্যা ও ধর্ষণ চালায়। সেখানে আশঙ্কা তিন থেকে তিরিশ লক্ষ বাঙালি (হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মুক্তিকামী মানুষই) নিহত হন। ধর্ষণের শিকার হন তিন থেকে চার লক্ষ বঙ্গ নারী। ১৯৭১ সালের ১২ এবং ১৩ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের কাশীপুর-বরানগরে বিপ্লবকামী নকশালবাড়ি আন্দোলনের সদস্য-সমর্থকদের প্রায় দেড়শো জনকে হত্যা করা হয় ওই দু’দিনে। ১৯৮৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আসামের নওগাঁও জেলার নেলীতে দিনের আলোয় গরীব মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রায় দশ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। ১৯৮৯-এ চিনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রশাসন বেজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে প্রায় তিন হাজার গণতন্ত্রকামী ছাত্রছাত্রী ও নাগরিকদের হত্যা করে। রোয়ান্ডাতে ১৯৯৪-এ তুৎসি জনগোষ্ঠীর প্রায় সাত লক্ষ মানুষ নিহত হন। আমাদের দেশে গুজরাতে ২০০৪-এ শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতে তিন থেকে পাঁচ হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হন। ধর্ষিত হন বহু নারী।
১০. অস্বীকার করা
খুব স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত গণহত্যার পর শাসক হাত ধুয়ে ফেলতে চায় গণহত্যার যাবতীয় দায় অস্বীকার করে। প্রতিটি গণহত্যার পরে শাসক তথা রাষ্ট্র দায় চাপিয়ে দিতে চায় আক্রান্তদের ওপরেই। গুজরাত গণহত্যার ক্ষেত্রে অভিযুক্তরাই এখন দেশের শাসন ক্ষমতার মসনদে আসীন।
দ্বন্দ্বদীর্ণ দেশে গণহত্যার আশঙ্কা কতখানি তা নির্ধারণে ওপরের এই লক্ষণগুলোর মাধ্যমে বুঝতে চেষ্টা করেন ‘জেনোসাইড চর্চা’-র গবেষকরা। অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন গণহত্যা নিয়ে চর্চা, গবেষণা ও আশঙ্কা নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে গড়ে তোলেন ‘জেনোসাইড ওয়াচ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠান ভারতের সামগ্রিক সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক-রাজনৈতিক দিকগুলোকে বিশ্লেষণ করে আগামী দু’বছরের মধ্যে এই দেশে ‘জেনোসাইড’ বা ‘গণহত্যার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ওপরের দশটি লক্ষণের মধ্যে সম্ভাব্য গণহত্যার যে প্রেক্ষাপটের কথা বলা হয়েছে, আমাদের দেশের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রাসঙ্গিক। মুসোলিনি এবং হিটলারের ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের অনুসারী সঙ্ঘপরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই দেশের বর্তমান শাসক দল নাৎসি পার্টির সিলেবাস দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলনসহ অনুসরণ করে চলেছে।
২০১৯-এ সার্বিক ব্যর্থতার মধ্যেও শাসকদল নির্বাচনী বৈতরণী পেরিয়েছিল ‘পুলওয়ামা হামলা’-পরবর্তী ‘দেশপ্রেম’-এর জোয়ারে। ২০২৪-এর আগেই ব্যর্থতার চিত্র আরও প্রকট ও নগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে কোনো আশঙ্কাই আর অমূলক নয়!
গত ১৬ জানুয়ারী হরিদ্বারে ধর্ম সংসদে যতি নরসিংহানন্দ, স্বাধ্বী অন্নপূর্ণা, স্বামী ধরমদাস প্রমুখ ব্যক্তি প্রকাশ্যে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষ এবং পুলিশকে সশস্ত্র হওয়ার কথা বলেছেন। ‘সাফাই অভিযান’ শুরুর ডাক দিয়েছেন। যে ‘সাফাই অভিযান’ আসলে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বা ‘গোষ্ঠীগত নির্মূলকরণ’ ছাড়া কিছু নয়! যার লক্ষ্য এখানে বলার অপেক্ষা লাগে না!
নিজেদের ফাসিস্ট উদ্দেশ্য সাধনে আর এক ধাপ এগোলো সঙ্ঘপরিবার। ১৯৯০-এর মার্চ মাসে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের ওপর নির্যাতন এবং তাঁদের আতঙ্কিত হয়ে কাশ্মীর থেকে চলে আসার ঘটনাকে অবলম্বন করে অর্ধসত্য ও মিথ্যার মিশেলে তৈরি করা হলো ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস্’। এই সিনেমার উদ্দেশ্যই হলো দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পর্কে সংখ্যাগুরু মানুষের মধ্যে তীব্র ঘৃণা আর বিদ্বেষ তৈরি করা! এই সিনেমার প্রচার-প্রসারে মুখ্য ভূমিকা নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা। সংঘপ্রধান মিলিত হলেন পরিচালকের সঙ্গে। সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে প্রায় সর্বত্র সংখ্যালঘু বিরোধী ‘নাড়া’ দেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় মেরুকরণকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস্’ আসলে প্রিল্যুড, বড় কোনও ধ্বংসযজ্ঞের আগে।
‘গুজরাত তো সির্ফ টেলর থা, পিকচর অভি বাকি হয়’ উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রেনে ফেরার সময় এক সংঘীর মুখে সহযাত্রীকে বলা এই কথা গ্রেগরি স্ট্যানটন-এর আশঙ্কাকেই সমর্থন যোগায়!
রোয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট কিংবা রাষ্ট্রসংঘ শোনেনি গ্রেগরি স্ট্যানটন-এর সতর্কবাণী। সেদেশের নাগরিক সমাজও নীরব থেকেছে। তার খেসারত তাঁদের দিতে হয়েছে। আমরা কি এই অভিজ্ঞতা থেকে পাঠ নেব না? হিরন্ময় নীরবতাই বেছে নেবো?
* লেখক মনঃসমাজকর্মী
Feature Image : Screengrab (twitter) from Haridwar Dharma Sansad in which hate speeches against Muslims were made.
Get united against the Fascist design.