ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যের চেয়ে হাজার টাকা কম পাচ্ছেন কৃষকরা। ওন্দার মান্ডিতে না আছে প্রয়োজনীয় কর্মী, না আছে সরকারি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। একটি গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন।
সরকারি কৃষক মান্ডিতে উৎপাদন ব্যয়ের চেয়েও কম মূল্যে ধান কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানাল সারা ভারত ক্রান্তিকারী কৃষকসভা। তাদের অভিযোগ, এ বছর সারের দামের বিপুল বৃদ্ধির ফলে কুইন্টাল প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ২০০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা। অথচ, রাজ্য সরকার ২০ টাকা পরিবহন ব্যয়-সহ কুইন্টাল প্রতি ন্যূনতম সংগ্রহমূল্য ধার্য করেছে ১৯৬০ টাকা। বাঁকুড়ার ওন্দায় কৃষক মান্ডির সামনে দাঁড়িয়ে কৃষকসভার প্রতিনিধি ভোলানাথ শিট জানান, “স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সংগ্রহমূল্য সমস্ত উৎপাদন ব্যয়ের দেড়গুণ, অর্থাৎ ন্যূনতম ৩০০০ টাকা হওয়ার কথা ছিল। অথচ সরকারি মান্ডিতে অন্তত ১০৪০ টাকা কম দেওয়া হচ্ছে।“ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ধানে জলীয় বাষ্প এবং ধুলোবালির পরিমাণ নির্ধারণ। গত বছর কুইন্টাল প্রতি ১০ থেকে ১২ কিলোগ্রাম ধান বাদ দেওয়া হয়। এবারও সেই নিয়ম জারি রয়েছে। তবু সিংহভাগই ধান বিক্রির সুযোগ পান না।
অনিয়ম ও ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকদের হেনস্থার অভিযোগ তুলে কৃষকসভার প্রতিনিধিরা জানান, বিক্রয় কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন, কৃষকদের জমির কাগজ নিয়ে হেনস্থা তো আছেই তার সঙ্গে জমির কাগজ ঠিক না থাকলে ধান বিক্রি করা সম্ভবই হচ্ছে না। পাশাপাশি এও দেখা যায়, ওন্দা কেন্দ্রটিতে পর্যাপ্ত কর্মীও নেই। কৃষকসভার আর এক প্রতিনিধি শিবু গিরি বলেন, “মাত্র দু’জন কর্মী এই বিপুল কাজের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁদের সামনে কৃষকদের দীর্ঘ লাইন। তাঁরাই কৃষকদের আনা ধান মাপছেন, কম্পিউটারে তাঁদের নাম-ধাম, টাকা-পয়সা, ধানের পরিমাপ নথিভুক্ত করছেন। স্লিপ কাটছেন। আর তাঁদের সামনে দীর্ঘ লাইন।“ কর্মীদের অভিযোগ, “সব কাজটা কম্পিউটার মারফত হলেও মান্ডিতে কোনও ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড কানেকশন নেই।“ পুরো কাজটাই হয়ে থাকে কর্মীদের মোবাইলের ইন্টারনেট কানেকশনে। এত বড়, এত গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম এভাবেই চালাতে হচ্ছে। কর্মীদের ভয়, মোবাইলের দুর্বল কানেকশনে কোনও সমস্যা হলে কিংবা ডেটা ফুরিয়ে গেলে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছাবে না।“ তাঁদের ক্ষোভ, প্রতিদিন কাজ শেষ করে বাড়ি পৌঁছাতে রাত ১০টা-১১টা বেজে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক স্বীকার করেন, ওন্দা বাঁকুড়া জেলার এই গুরুত্বপূর্ণ ধান্যক্রয় কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান সমস্যা কর্মীর অভাব। মান্ডি কর্তৃপক্ষ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অনেক সময় কিছু কিছু অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। অভিযোগ, এই কর্মচারীদের খাদ্যদপ্তরের এই কাজের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা বা অনুরাগ থাকে না। আবার এত মানুষ সামলানোর অভিজ্ঞতাও তাঁদের থাকে না। কথায় কথায় জানা গিয়েছে, গত বছর কিছু কিছু অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী্কে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই সময়ে একদিন এক অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ কর্মী অজ্ঞান হয়ে যান। তখন তাঁর সামনে ছিল প্রায় চারহাজার কৃষক, ধানের বস্তার পাহাড়, শত শত ট্র্যাক্টর। সেদিন কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।
শিবু গিরি বলেন, “আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সকল কৃষকদের ধান কেনা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী জেলার ২০ শতাংশ ধান কিনলেই তাঁদের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়ে যাবে। এর থেকে বেশি কেনার সরকারি অনুমতি তাঁদের নেই। বাজেট নেই। এই হল অবস্থা।“ তিনি আরও জানান, তবে, কৃষকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেটা তাঁরা দেখবেন বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে কুইন্টাল প্রতি তিন কিলোগ্রামের বেশি ধান বাষ্প বা ধুলোবালির কারণে বাদ দেওয়া হবে না এবং প্রকৃত কৃষকরা যাতে অগ্রাধিকার পান সেদিকে নজর রাখবেন। এর বাইরে আর কিছু করা সম্ভব নয় বলেই তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন। ভোলানাথ শিট বলেন, “ক্রান্তিকারী কৃষকসভার পক্ষ থেকে আমরা পরিষ্কার জানিয়েছি, যে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কেনার বন্দোবস্ত ও আগ্রহ রয়েছে, তার পরিবর্তে প্রকৃত কৃষকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এবং যে সমস্ত কৃষক ধান বিক্রি করতে আসবেন তাঁদের সকলের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে হবে।”
মান্ডি কর্তৃপক্ষের কাছে ডেপুটেশন শেষে কৃষক নেতৃত্ব উপস্থিত কৃষক জমায়েতের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যা বুঝলাম, এর থেকে বেশি কিছু সত্যিই যদি কিছু করতে হয়, তবে বৃহত্তর লড়াই মধ্য দিয়েই তা অর্জিত হতে পারে। সেই লক্ষ্যেই এগোনোর জন্য তাঁরা আহ্বান রাখেন।