আরজি কর হাসপাতালের পড়ুয়ারা হাসপাতাল প্রশাসনের, বিশেষ ভাবে প্রিন্সিপালের কর্মকাণ্ডে অখুশি, ক্ষুব্ধ হয়ে অনশন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। লিখলেন দেবাশিস আইচ।
দেখেশুনে মনে হয় রাজ্যের স্বাস্থ্যপ্রশাসনে ‘মাফিয়ারাজ’ এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এবং তাদের সাতখুন মাফ। সরকারি হাসপাতালে প্রভুর কুকুরের ডায়ালেসিস থেকে জীবনদায়ী ওষুধ চুরি ও বিক্রির অভিযোগ উঠলেও কোনও প্রকৃত তদন্ত হয় না। এফআইআর হয় না। কোভিডের ওষুধ চুরি তবু ডিএম অ্যাক্ট প্রয়োগ হয় না। শাস্তি দূরে থাক। কিন্তু, অব্যবস্থার ভিডিও প্রচার করলে ‘বেয়াদপ’ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা যায়। চাকরি খেয়ে নেওয়া যায় দেশবিদেশে সম্মানিত বিদ্বৎচিকিৎসকের। সম্প্রতি এক চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। সংবাদে প্রকাশ কী এক ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ এবং সরকারের নিষ্ঠুর বদলি নীতির সাড়াঁশি-দৌরাত্মই তাঁর আত্মহত্যার কারণ। তার স্মৃতি মুছতে না মুছতেই দেখা গেল আরজি কর হাসপাতালের ডেপুটি সুপারকে পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘিরে ধরে তাঁর চেম্বারে তল্লাসি চালাচ্ছে। কেন? তিনি নাকি হাসপাতাল প্রশাসনের ‘গোপন’ তথ্য সরিয়ে ফেলতে পারেন, এই সন্দেহে। এই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, ইনবিল্ট ক্যামেরা, স্ক্যানার, ইন্টারনেটের যুগে একি হাস্যকর প্রচেষ্টা? নাকি আসলে ওই বিদায়ী চিকিৎসককে সমাজের কাছে, পরিবারের কাছে মিডিয়া ডেকে চতুর্দিকে চরম হেনস্থা, অপদস্থ, অপমানের সেই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া — শোনো সুধী সমাজ, চিকিৎসক সমাজ, শিক্ষক সমাজ, বিদ্বৎকুল মুখে কুলুপ এঁটে থাকো। খবরে আরও প্রকাশ আসলে তিনি সুপারের চক্ষুশূল হয়ে উঠে পদ থেকে সরতে বাধ্য হয়েছিলেন। অবশেষে, এই ঔদ্ধত্যের আঁচ গিয়ে পড়ল আরজি কর হাসপাতালের পড়ুয়া চিকিৎসকদের পারিবারিক অন্দরমহলে। ছাত্ররা হাসপাতাল প্রশাসনের, বিশেষ ভাবে প্রিন্সিপালরের কর্মকাণ্ডে অখুশি, ক্ষুব্ধ হয়ে অনশন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বাগে আনতে না পেরে প্রয়োগ করা হল ‘দুয়ারে প্রকল্প’। ঘরে ঘরে দ্বারে দ্বারে উপস্থিত হল পুলিশ। অভিভাবকদের সতর্ক করা হল। নাকি ‘ক্যারিয়ার হেল’ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসা হল? প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রিন্সিপাল আঙুল তুলে ছাত্রদের প্রচণ্ড শাসাচ্ছে। শরীরী ভাষা বলছে গুন্ডাদলের সর্দারের ভূমিকায় তাকে মানাত ভাল। আর একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রিন্সিপাল ঘর থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদরত ছাত্র-ছাত্রীদের তাঁর পদত্যাগ চেয়ে পাঠানো দাবিপত্র মুখের উপর ছুঁড়ে মারছেন। ছাত্ররা অন্যায়ের কাছে এখনও মাথা নত করেনি। কথায় কথায় যারা ছাত্র-ছাত্রীদের জেলে ভরে, লোপাট করে দেয় ছাত্র-ছাত্রীদের পুষ্টির খাদ্য। ওষুধ চুরি করে, সদলবলে নকল ভ্যাকসিনের ফাঁদ পাতে। পচা-বদ্ধ গলা জল ঠেলে যে রাজ্যে শিশুদের টিকা দিতে যেতে হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের। আর নাগরিক সমাজ, মিডিয়া লজ্জায় মরে না গিয়ে, রাগে আগুন না হয়ে উঠে তাঁদের ‘মহৎ’ উপাধি দান করে — তাদের বিরুদ্ধে কেউ তো বলবে — না, ঢের হয়েছে। থামো। এমন ‘স্টেথো মাফিয়া’দের আমরা চাই না। পচা-গলা দুর্গন্ধে ভরা এই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমাজে নতুন কুঁড়ি তো ফুটুক।