এক বিরল প্রকৃতির মানুষ, যাঁর চিন্তা ও কর্মধারায় মিশেছিল মার্ক্সবাদ, লিবারেশন থিয়োলজি ও আদিবাসী দর্শন। ফাদার স্ট্যান স্বামীর মিথ্যা অপরাধে গ্রেফতার ও মৃত্যু, যাকে প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা আখ্যা দেওয়া হয়েছে – তাই নিয়ে লিখেছেন সত্য সাগর।
(লেখাটি কাউন্টার কারেন্ট-এ প্রথম প্রকাশিত হয়। গ্রাউন্ডজিরো থেকে লেখাটির বাংলা অনুবাদ করা হল। )
কয়েক বছর আগে, আন্দিয়ান পর্বতশ্রেণীর চুড়োয় অবস্থিত বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজ-এ যাবার সময় আমি একটা রেস্তোরাঁর ভিতর স্প্যানিশে লেখা একটা বোর্ড দেখতে পাই। তাতে লেখা ছিল – ‘সব মানুষ সমান’।
যে এক সপ্তাহ আমি ওই শহরে থেকেছিলাম, নানান খাবার জায়গায় ওই একই বোর্ড টাঙানো আছে বলে দেখেছিলাম। শেষে আমার এক বলিভিয়ান বন্ধুর সাহায্য নিয়ে রহস্যভেদ করা ছাড়া উপায় রইল না। সব মানুষ সমান – এই সহজ সত্যটা বারবার করে বলার দরকার কী?
আমার বন্ধু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “দেশের অধিকাংশ মানুষ যে এখনো কথাটায় বিশ্বাসই রাখে না… তাই বারবার বলতে হয়।”
অবশ্য এ কথাটা বলিভিয়ার জন্য না বলে ভারতের জন্য বললেও কিছুমাত্র ভুল হত না। ভারত হল এমন এক দেশ, যেখানে মানুষ নামে যে একটি সত্ত্বা রয়েছে, তার যে কিছু সার্বজনীন বৈশিষ্ট্য এবং অধিকার রয়েছে, এই কথাটার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তিই তৈরি হয়নি। গভীর ভাবে জাতি ও শ্রেণীবিভক্ত হিন্দু সামাজিক দর্শনের মূল কথাটাই হল কিছু মানুষ ‘শ্রেষ্ঠ’ ও কিছু মানুষ ‘নিকৃষ্ট’। আর এদের মধ্যে শুধু শূন্যতা – যেন মাঝারি কেউ নেই।
লা পাজ থেকে ফেরার সময়, জুলাইয়ের শুরুতে ফাদার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর খবর প্রসঙ্গে, এ কথাটা ঘুরেফিরে আমার মাথায় আসতে থাকে। জেসুইট পাদ্রি স্ট্যান স্বামী মিথ্যে অভিযোগে অ্যারেস্ট হন এবং জেল কাস্টডিতে মারা যান। এক বিরল প্রজাতির মানুষ ছিলেন এই ফাদার, যিনি মানুষে মানুষে সাম্যের সহজ সত্যটি প্রতিষ্ঠা করতে জীবন পণ করেছিলেন।
এই পণই তাঁকে ঝাড়খণ্ডের অত্যাচারিত ও শোষিত আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করতে ঠেলে দেয়। এই অত্যাচার-শোষণ শুধু আধুনিক যুগের নয়, বহু যুগের। ভারতের আদিবাসীরা বারবার, পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় জুড়ে মূলত পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া থেকে বিদেশী অভিবাসী আক্রমণের ফলে এক দীর্ঘ পরাজয়, অধিকার হনন ও উচ্ছেদের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছেন।
আজ ভারতে ১০ কোটি ৪০ লক্ষ আদিবাসী ৭০০টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত – ১২৫ কোটির দেশে এঁরাই ৮.৬ শতাংশ। তাঁদের একটি বড় অংশ দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একদম নীচের ধাপে রয়েছেন। তাঁদের উপর নিয়ম করে অত্যাচার চলে। পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নির্দেশকের নিরিখে তাঁরা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। দেশের জেলগুলিতে কয়েদিদের একটি বিরাট অংশ আদিবাসী গোষ্ঠী থেকে আসেন – এইসমস্ত তথ্য থেকে তাঁদের উপর অসাম্যের ভার প্রকট হয়ে ওঠে।
এই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলিকে যেভাবে নানা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে, তাতে বেশিরভাগ স্বচ্ছল ভারতীয়রই কিছু যায় আসে না, কিন্তু স্ট্যানের জন্য এই অধিকারের লড়াইই তাঁর জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি আদিবাসীদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে খনিশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের নামে জমি দখলের বিরুদ্ধে এবং আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে বহু প্রতিবাদে শামিল হন – এর ফলে তাঁকে বহু মূল্যও দিতে হয়।
স্ট্যান স্বামী বৃদ্ধ এবং পারকিন্সন ডিজিজের রোগী হওয়া সত্ত্বেও ভারত সরকার তাঁকে এতটাই ভয় পায়, যে তারা তাঁকে ‘মাওবাদী’ আখ্যা দিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার করে। বারবার জামিনের আবেদন করেও ব্যর্থ, এমনকি বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন ন্যূনতম সুবিধাগুলি থেকেও বঞ্চিত স্ট্যানকে মুম্বইয়ের যে কয়েদি ঠাসা জেলে তাঁকে থাকতে বাধ্য করা হয়, সেখানেই এবছর জুলাই মাসের ৫ তারিখ তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যু ‘প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা’ আখ্যা পেয়েছে এবং দেশবিদেশে তীব্রভাবে নিন্দিত হয়েছে।
এই শান্ত মানুষটি যেভাবে লড়াই করেছেন ও শহীদ হয়েছেন, তার সাথে বলিভিয়ার অনেক মানুষের ছন্দ মেলে, যেমন মেলে লাতিন আমেরিকার আরো নানা দেশের মানুষেরও, যেখানে আদিবাসী আন্দোলনের শিকড় খুঁজতে গেলে পাঁচ-ছ’ শতক আগে ক্রিস্তোফার কলম্বাসের ‘আমেরিকা আবিষ্কার’ অবধি পৌঁছে যেতে হবে। এই অঞ্চলের উপর স্পেনীয় আধিপত্যের পিছনেও এই আবিষ্কারেরই অবদান রয়েছে, যার ফলে এখানে লক্ষ লক্ষ আদিবাসী তাঁদের জমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বেঁচে থাকার ক্ষমতা অবধি হারান।
লাতিন ও উত্তর আমেরিকা যেভাবে পরাস্ত হয়, সেই একই ছকে পরপর এশিয়া ও আফ্রিকার নানা দেশ – যেমন ভারত – ইউরোপীয় ক্ষমতাগুলির হাতে দখল হতে থাকে। এজাতীয় উপনিবেশবাদের পিছনে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও সস্তার শ্রমিকদের আরো বেশি পরিমাণে শোষণ করার সুবিধাই মূল কারণ, যাতে ক্রমবর্ধমান শিল্প ও পণ্য ক্রয়ক্ষমতার অশেষ লালসায় আরো ইন্ধন জুগিয়ে যাওয়া যায়।
স্পেনের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার পরেও, উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে ছোট ছোট শাসকগোষ্ঠীগুলি যেভাবে একনায়কতন্ত্র চালিয়েছিল, তার ধরনধারণ স্পেনীয় আধিপত্যের মতোই ছিল। যেমন বলিভিয়া ১৮২৫ সালে স্বাধীন হয়, শাসনদণ্ড চলে যায় সাদা চামড়াদের হাতে, যারা ছিল জমির জবরদখলকারী মালিক। আর আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যারা ছিল দেশের জনসংখ্যার ৬২%, তাঁদের উপর ঔপনিবেশিক ধাঁচে শোষণ চলতে থাকে।
এই আদিবাসীদের নির্বিচারে নাগরিকত্বের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, ভোটের অধিকার বা বিয়ের জন্য সরকারি ভাবে নাম লেখানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতে থাকে। ১৯৩৮-এ একটি নতুন সংবিধান লাগু করার আগে অবধি আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির আইনি অস্তিত্বই স্বীকার করা হত না। লাগাতার আদিবাসী আন্দোলন ও অন্যান্য আন্দোলনের মাধ্যমে শেষে ১৯৫২ সালে দেশে বিপ্লব হয়, যার ফলে আদিবাসীরা ভোট ও নাগরিকত্বের মৌলিক অধিকার পান।
তবে বলিভিয়ায় আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হতে আরো বহুসময় কেটে গেছে। তা ঘটেছে ২০০৬-এর ইভো মরেলসের নির্বাচনে। এবং তারও পরে, ২০০৯-এ সংবিধান রচনা করার পর, দেশের আদিবাসী জনতা শেষ অবধি সরকারি স্বীকৃতি পান।
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, স্ট্যান স্বামী নিজে লিবারেশন থিয়োলজি আন্দোলন দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। এই আন্দোলন লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে দারিদ্র্য ও সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে ষাটের দশকে ক্যাথলিক চার্চের ভিতরেই গড়ে উঠেছিল। এই তত্ত্বের প্রবক্তারা আংশিক ভাবে মার্ক্সিজম দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন যে, ধর্মের উদ্দেশ্য হল মানুষকে মৃত্যুর পরে স্বর্গসুখের স্বপ্ন দেখানো নয়, বরং বস্তুগত ভাবে ও রাজনৈতিক ভাবে মানুষকে শোষণের হাত থেকে বাঁচানো। লিবারেশন থিয়োলজি দিয়ে শুরু করলেও, আমার বিশ্বাস স্ট্যান তাঁর আত্মিক অনুভবের দিক থেকে আরো এগিয়ে গিয়েছিলেন। আদিবাসীদের সাথে থাকতে থাকতে তিনি আদিবাসী দর্শন ও মূল্যব্যবস্থায় বিশ্বাসী হয়ে পড়েন, যা বলে, পৃথিবী শুধু মানুষের বসবাসের জন্য না, অন্য জীবজন্তুর বসবাসের জন্যেও। ২০১০ সালে ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অন রাইটস অফ মাদার আর্থ বলিভিয়াতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে পৃথিবীর সম্পদকে সমস্ত জীবজন্তুর সাথে সমান ভাবে ভাগ করে নেওয়ার শপথ নেওয়া হয়েছিল।
বেশ কিছু মিল থাকলেও, ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবস্থা বলিভিয়া বা লাতিন আমেরিকার অন্যান্য অংশের মতো নয়। প্রথমত, ভারতে অন্য জনগোষ্ঠীগুলি আদিবাসীদের উপর যে অত্যাচার চালিয়ে আসছে, তার ইতিহাস বহু প্রাচীন। হয়তো এ কথাটা শুনলে বাড়াবাড়ি মনে হবে, কিন্তু কলম্বাস ও অন্যান্য ইউরোপীয়রা আমেরিকায় ৫০০ বছর ধরে যা করেছে, ভারতে তা-ই করা হয়েছে ৫০০০ বছর ধরে।
যুগ-যুগ ধরে, একদিকে ভারতের আদি বাসিন্দাদের একটি অংশ হিন্দু জাতিভেদের শিকার হয়ে দাসখত লিখে চলেছে – তাঁদের ‘দলিত’ বা ‘অস্পৃশ্য’ নাম দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে আজ আদিবাসীদের জীবন কঠিনতর করে তোলা হচ্ছে। জঙ্গল, পর্বত বা সমুদ্রতীরে, যেখানেই আদিবাসীরা বসবাস করেন, সেখানেই তাঁরা আক্রমণের শিকার হন, কারণ তাঁদের বসবাসভূমির নীচে পাওয়া যায় মূল্যবান খনিজ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ – যা দেশীয় ও বিদেশী লগ্নিকারীদের কাছে অতীব লোভনীয়।
ভারতের আদিবাসীরা শুধুমাত্র বস্তুগত ভাবে না, সাংস্কৃতিক ভাবেও লাতিন আমেরিকার চাইতে বেশি বঞ্চিত। যেমন, তাঁদের সরকারি ভাবে হিন্দু বলা হয়, অথচ হিন্দুধর্মে তাঁদের নিজেদের পুরুষানুক্রমে পালিত ধর্মকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, এমনকি তাঁদের দেশের আদি বাসিন্দা বলে স্বীকৃতিই দেওয়া হয় না।
ভারত যখন আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের ইন্ডিজিনিয়াস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন অফ ১৯৫৭-এ সই করে, এবং ইউএন ডিক্লারেশন অন দা রাইটস অফ ইন্ডিজিনিয়াস পীপলস ইন ২০০৭-এর পক্ষে মত দেয়, তাতে শর্ত ছিল, সমস্ত ভারতীয়কে আদি বাসিন্দা বলে মেনে নিতে হবে। এতে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল এই যে, ভারতের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আর কোনো মানে করা যেতে পারে না ।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস), বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র নির্মাতা সংগঠন, বিশেষ ভাবে ভারতীয় আদিবাসী ও দলিতদের ‘মূলনিবাসী’ বলে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি বিষয়ে খুবই সচেতন। এক বড় অংশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে আদি বাসিন্দা বলে মেনে নিলে আরএসএস-এর নিজস্ব দাবিটি নাকচ হয়ে যায়, যে সমস্ত হিন্দুই ভারতের বাসিন্দা এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষরা সব বহিরাগত।
আদিবাসীরা প্রকৃত অরথে মূলনিবাসী বলে পরিচিত হলে তাঁদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের দাবি আরো শক্তিশালী হবে। স্থানীয় সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। এমনকি হিন্দু ধর্মের উঁচু স্তরে থাকা জাতির মানুষরা আদিবাসীদের যেসব জমি কেড়ে নিয়েছে, সেই জমির মালিকানা ফিরে পাওয়ার লড়াইয়েও সুবিধা হবে।
এইসব মিলিয়ে, স্ট্যান কেন বর্তমান ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের আক্রমণের স্বাভাবিক লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও কর্পোরেটের জমি দখলের আন্দোলন ছাড়াও তিনি গান্ধীর মতো শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন চালাবার কৌশল কাজে লাগিয়েছিলেন। সেই গান্ধী, যিনি শোষিত মানুষের হয়ে কথা বলেছিলেন, আর যাঁকে হিন্দুত্ববাদীরা খুন করেছিল।
লিবারেশন থিয়োলজি, অহিংসা এবং বলিভিয়ার মতো ‘ধরিত্রী মা’ (মাদার আর্থ) – এই দর্শন স্ট্যান স্বামীকে এক ‘লাল সবুজ গান্ধী’-তে পরিণত করেছিল। তাঁকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া তো দূরের কথা, তাঁকে নিঃশ্বাস নিতে বা বাঁচতে দিতেই আর রাজি ছিল না রাষ্ট্র।
এরপর কী? স্ট্যান স্বামীর কাস্টডিতে মৃত্যু নিয়ে দেশেবিদেশে আওয়াজ উঠলেও ভারতে এই মুহূর্তে যারা ক্ষমতায়, তারা তাদের কাজকর্ম বিষয়ে কখনোই লজ্জাবোধ করবে না, যেমন আগেও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অসংখ্য উদাহরণে দেখা গেছে। আর ভারতের প্রভাবশালী হিন্দু উচ্চবর্ণ গোষ্ঠীর কাছ থেকে কিছু আশা করাটাই বাতুলতা – তাদের গোটা ইতিহাসটাই দেশের আদি বাসিন্দাদের সম্পদ চুরি করা বা ছলেবলেকৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার উপর নির্ভরশীল।
স্ট্যান যে আদিবাসীদের জন্য বেঁচেছিলেন এবং লড়েছিলেন, তাঁরা স্ট্যান-এর মৃত্যুর পর তাঁর নাম ৫২ জন আদিবাসী শহীদের নামের সাথে যুক্ত করেছেন এবং বাগাইচায় একটি বৃহৎ পাথরখণ্ডের উপর খোদিত করেছেন। এই তাঁদের শ্রদ্ধার অর্ঘ্য। এই বাগাইচাই স্ট্যান-এর সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র এবং বেশিরভাগ সময়টা তিনি এখানেই কাটিয়েছিলেন। আদিবাসীরা শেষটায় তাঁকে নিজেদের একজন বলেই মেনে নিয়েছেন।
অন্যদিকে স্ট্যান-এর হাজার হাজার ভক্ত-বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের কাছে আদিবাসী আন্দোলনে যোগ দেওয়া, তথাকথিত ‘সভ্য’ ঐতিহ্যের চেয়ে বহুগুণে সভ্যতর আদিবাসী ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা, তাঁদের সমান নাগরিক অধিকার পাওয়ার চ্যালেঞ্জটিই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার সাথে রয়েছে, প্রকৃতির সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থান করা, সমস্ত জীবজন্তুর সাথে প্রাকৃতিক সম্পদ ভাগ করে নেওয়া, এবং পৃথিবী গ্রহটির থেকে ততটুকুই মাত্র নেওয়া, যা আবার ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
লেখক সত্য সাগর-এর সাথে sagarnama@gmail.com ইমেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে।
এই লেখাটি যেকোনো জায়গায় বিনা অনুমতিতে পুনঃপ্রকাশিত করা যাবে।
Tribal people have paid highest
Regards to Father Stan. He belongs to them.