গত ১৭ মে ছত্তিশগড়ের সিলগের গ্রামে ১৩মে গড়ে ওঠা সশস্ত্র সুরক্ষা বাহিনীর ক্যাম্প-এর বিরোধীতায় জমায়েত হওয়া প্রায় ৫০০০ আদিবাসীর উপরে বাহিনীর নির্বিচার গুলিচালনার খবর করেছিলাম আমরা, গ্রাউন্ডজিরো থেকে। সেই ঘটনায় ৩ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়, আহত হন ১৮ জন, আট জন এখনও পুলিশের হাতে বন্দী। বিনা প্ররোচনায় মহামারিকালীন সময়ে এই অমানবিক গুলি চালনা ও হত্যার ঘটনাকে প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে গ্রামবাসীদের সামনে রেখে নকশালরা হামলা চালিয়েছিল ও আত্মরক্ষার্থে বাহিনী গুলি চালায়। এই দাবি যে সম্পূর্ণ মিথ্যে তা সেদিনের ভিডিও ছবি থেকেই স্পষ্ট। নিজেদের জল-জঙ্গল-জমি ও সম্মানের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদরত আদিবাসীদের উপর বাহিনীর বেলাগাম গুলিচালনায় উত্তাল ছত্তিশগড়ের জনজাতি সমাজ ও দেশের মানবাধিকার কর্মীরা। যদিও দেশের মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমে এই প্রান্তিক মানুষদের হত্যা, তাদের উপর অত্যাচার, তাদের জীবন-জীবিকার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ, অকারণ আটক-হেনস্থা ইত্যাদি জায়গা পায় না। লিখছেন সুদর্শনা চক্রবর্তী।
১৭ মে-র পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এই বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেননি। সরকারিভাবেও কোনও বক্তব্য সামনে উঠে আসেনি। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরং গ্রামবাসীদের কাছে টোপ দেওয়া হয়েছিল যে তাঁরা যদি আন্দোলন তুলে নেন, তাহলে আটক গ্রামবাসীদের ছেড়ে দেওয়া হবে। বীজাপুরের কালেক্টর আন্দোলনের প্রতিনিধিদের জানান, আন্দোলন তুললে আটক আন্দোলনকারীদের ছাড়া হবে। কিন্তু গত কয়েক দিনের ঘটনাক্রম সিলগের থেকে যা জানা যাচ্ছে, ক্যাম্প-এর বিরোধীতা করা আদিবাসীরা একদমই পিছু হঠতে তৈরি নন। বরং তাঁরা আরও জোটবদ্ধ হয়ে এই প্রতিবাদকে জোরদার করে তুলছিলেন। গুলিচালনার ঘটনার পরের দিন দুয়েক পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় গ্রামবাসীরা চেষ্টা করা সত্ত্বেও প্রতিবাদ স্থল অর্থাৎ যেখানে ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে সেখানে পৌঁছতে পারেননি। সর্ব আদিবাসী সমাজ নামক সংগঠনকেও সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি। কোনও আইনজীবী, সামাজিক আন্দোলনকর্মী সেখানে পৌঁছতে পারছেন না। সোনি সোরি, লিঙ্গারামের মতো আদিবাসী অধিকার আন্দোলনকর্মীদের কার্যত গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। তাঁরা কোনওভাবেই প্রতিবাদ স্থলে পৌঁছতে পারছেন না। গত ২০ তারিখ সামাজিক আন্দোলনকর্মী বেলা ভাটিয়া ও জঁ দ্রেজ যখন সেখানে পৌঁছতে চান তখন বীজাপুর প্রশাসন তাঁদের আটক করে সার্কিট হাউসে বন্দী করে। তাঁদের মুক্ত করার জন্য একটি সোশ্যাল মিডিয়া পিটিশন চালু করা হয়েছিল। গ্রাউন্ডজিরো যা প্রকাশ করে।
আদিবাসীদের দাবি অত্যন্ত স্পষ্ট – তাঁরা ঐ ক্যাম্প বসাতে দেবেন না ও আটক সাথীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে, গুলি চালিয়েছেন যে আধিকারিকেরা তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
ছত্তিশগড়ের ভূমকাল সংবাদপত্রের সাংবাদিক কমল শুক্লা জানাচ্ছেন, “সম্ভবত আটক ব্যক্তিদের উপর এখনও কোনও মামলা রুজু করা হয়নি। রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মী, সাংবাদিকেরা সেখানে পৌঁছতে চেষ্টা করলে সুকমা, বীজাপুর, দান্তেওয়াড়া, কোড়েনাড়, করণপুর ইত্যাদি জায়গায় প্রশাসনের তরফ থেকে আটকানো হয়। একমাত্র মণীশ কুঞ্জাম পৌঁছতে পারেন ও প্রতিবাদী আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন ও সংবাদমাধ্যমকেও বিবৃতি দেন। তিনি জানিয়েছেন ১৩ তারিখ ক্যাম্প বসার পর থেকেই আদিবাসীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলেন। বাহিনী কিন্তু লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া এগুলো চালিয়েই গেছে লাগাতার। আর ১৭ তারিখ বিনা প্ররোচনায় চালায় গুলি। ফলে এখন আর গ্রামবাসীরা কোনওভাবেই পিছু হটবেন না।”
একদিকে আদিবাসীরা বস্তারের এক ইঞ্জি জমিও রাষ্ট্রের মোতায়েন করা সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ছাড়তে নারাজ, সর্বস্ব পণ করে তারা প্রতিরোধ মজবুত করছেন, আর একদিকে নিশ্চুপ সরকার ও ভয় দেখানো বাহিনী। তবে জল-জমি-জঙ্গলের লড়াই ছেড়ে আদিবাসী জনজাতি সমাজ সরছেন না তা আপাতত পরিস্কার।