১২ মার্চ বাংলায় এক কৃষক ‘মহাপঞ্চায়েত’-এর ডাক দেওয়া হয়েছে। মৌলালির রামলীলা ময়দানে এই সভা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই সভাতেই রাজ্যে বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আবেদন জানানো হবে। এর পর সারা রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই এই বার্তা নিয়ে অভিযান চালাবে সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা। জানাচ্ছেন দেবাশিস আইচ।
৬ মার্চ ১০০ দিনে পড়বে সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চার কৃষক আন্দোলন। মঙ্গলবার মোর্চা নেতৃত্ব ঘোষণা করলেন আন্দোলনের একগুচ্ছ কর্মসূচি। ৫ মার্চ মান্ডিতে মান্ডিতে ‘এমএসপি দাও’ দিয়ে যার শুরু এবং ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির কেন্দ্রীয় সরকারের ‘কর্পোরেটিয় ও বেসরকারিকরণ’ বিরোধী দেশজোড়া অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হবে সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হলো, পাঁচ রাজ্যে আসন্ন ভোটে বিজেপি বিরোধী ‘ভোট কি চোট দিনা’ অভিযান। যা শুরু হবে আগামী ১২ মার্চ কলকাতা থেকে।
মঙ্গলবার কৃষাণ মোর্চার অন্যতম নেতা যোগেন্দ্র যাদব এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, নির্বাচন ঘোষিত হয়েছে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করছিলেন মোর্চা কী করবে? যাদব বলেন, “ক্ষমতায় বসে থাকা এই সরকার একটাই ভাষা বোঝে। ভোট, আসন, নির্বাচন আর কুর্সি। ইনসাফের ভাষা বোঝে না, সংবিধানের ভাষা বোঝে না, ভাল-মন্দ বোঝে না।” এবং তা বোঝাতে মোর্চার দাওয়াই প্রসঙ্গে যাদব বলেন, “কৃষকরা ঠিক করেছে, এদের ‘ভোট কি চোট’ দেওয়া হবে। এর জন্য পাঁচ রাজ্যের কৃষক ও অন্যান্য ভোটদাতাদের কাছে আবেদন করা হবে। এর শুরু হবে কলকাতা থেকে, ১২ মার্চ।
মোর্চা জানায়, ১২ মার্চ বাংলায় এক কৃষক ‘মহাপঞ্চায়েত’-এর ডাক দেওয়া হয়েছে। মৌলালির রামলীলা ময়দানে এই সভা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই সভাতেই রাজ্যে বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আবেদন জানানো হবে। এর পর সারা রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই এই বার্তা নিয়ে অভিযান চালানো হবে। একইসঙ্গে সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা জানিয়ে দিয়েছে, “তারা কোনও দলকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানাবে না। তা স্থির করবেন ভোটদাতারা।” পরবর্তীতে অন্যান্য ভোটমুখী রাজ্যেও একই অভিযান চলবে। প্রসঙ্গত, রাজ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় একমাস ব্যাপী ‘নো ভোট টু বিজেপি’ বা ‘বিজেপিকে একটি ভোট নয়’ অভিযান চলছে। আগামী ১০ মার্চ এই স্বাধীন নাগরিক উদ্যোগের ডাকে রামলীলা ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত একটি কেন্দ্রীয় মিছিল হবে। পরবর্তীতে একটি সভারও আয়োজন করা হয়েছে। এই নাগরিক উদ্যোগও কোনও বিশেষ দলকে ভোট দেওয়ার কথা বলছে না।
মোর্চার অন্যান্য কর্মসূচিরগুলির মধ্যে রয়েছে:
৫ মার্চ ‘এমএসপি দিলাও অভিযান’। যা শুরু হবে কর্নাটকের গুলবর্গা, চিত্রদুর্গা থেকে। মোর্চার অভিযোগ, কর্নাটকে চানা, রাগি, বাদাম বিভিন্ন ফসল উঠতে শুরু করেছে, কিন্তু ন্যূনতম মূল্যের থেকে হাজার টাকা কম মিলছে মান্ডিগুলি থেকে। ৫ মার্চ থেকে চলবে মান্ডিতে মান্ডিতে এমএসপি দাও অভিযান। যা পরবর্তীতে তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশেও শুরু হবে।
৬ মার্চ আন্দোলনের শততম দিনে কুন্ডলি-মানেসর-পালওয়াল ৬ লেন এক্সপ্রেস ওয়ে অবরোধ করবেন দিল্লি-চণ্ডীগড়-পঞ্জাবের কৃষকরা। সকাল ১১টা থেকে ৪টে পর্যন্ত এই অবরোধ চলবে। ওইদিন অন্যান্য রাজ্যের নাগরিকদের কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক-দমন নীতির বিরুদ্ধে কালা দিবস পালন, কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাজ পড়ার আবেদন জানিয়েছে মোর্চা।
৮ মার্চ সবকটি অবরোধ ও অবস্থান কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস পালন করা হবে। যার নেতৃত্ব দেবেন মহিলা কৃষকরা।
১৫ ও ১৬ মার্চ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা বেসরকারিকরণ নীতির বিরুদ্ধে রেল স্টেশনে স্টেশনে অবস্থান বিক্ষোভে যুক্ত হয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন কৃষকরা।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ সাড়া পড়েছে। সম্প্রতি এবিপি-সি ভোটারের নির্বাচনী সমীক্ষায় বলা হয়েছে, রাজ্যের মাত্র তিন শতাংশ ভোটদাতা মনে করেন নির্বাচনে কৃষি একটি সমস্যাজনক বিষয়। এখান থেকে একাধিক ইঙ্গিতের খোঁজ মিলতে পারে। এক, সমীক্ষাটি যতটা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে, ততটা বৃহৎ রাজনৈতিক গ্রামীণ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে না। দুই, সংবাদমাধ্যম এ রাজ্যের কৃষক ও কৃষি সমস্যা বিষয়ে নাগরিক সমাজকে যথাযথ চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থ। তিন, এই সূত্রেই বলা যায় দিল্লি-হরিয়ানা-পঞ্জাবের কৃষকরা যেমন দিল্লি মিডিয়াকে ‘গোদি মিডিয়া’ বলে চিহ্নিত করেছে, বাংলা সংবাদমাধ্যম একই দোষে দুষ্ট বললে অতিশয়োক্তি হবে না। চার, রাজ্যের বাম ও ডান রাজনৈতিক দলগুলি, সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ শাখা ও নাগরিক সমাজ এ রাজ্যের কৃষকদের সাধারণ ও বিশেষ কোনও সমস্যা নিয়েই সার্বিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চরম ব্যর্থ। কৃষক সমাজে তাদের সিংহভাগেরই ন্যূনতম গণভিত্তি নেই।
১২ মার্চ, তেভাগা-নকশালবাড়ি-খাদ্য আন্দোলনের রাজ্যে এই চরম লজ্জাজনক পরিস্থিতির অবসানের শুভ সূচনা হবে কি না — তা এখন লক্ষ, নিযুত অর্থবহ প্রশ্ন।
The present Central Govt. is totally anti-people. It is serving the interest of its crony capitalists. The Country is being ruled by proxy by these capitalists. The Economy is being systematically ruined. The general masses are in total distress. We should not support this Govt.