বিজেপি একটা বিপর্যয়কারী শক্তি: দীপঙ্কর ভট্টাচার্য


  • November 26, 2020
  • (1 Comments)
  • 1437 Views

১৮ নভেম্বর কলকাতায় আমরা সিপিআই (এমএল) লিবারেশন দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের মুখোমুখি হই। আমাদের সবিশেষ উৎসাহ ছিল এই দেশের উপর নেমে আসা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপদকে তিনি ও তাঁর দল কী চোখে দেখছেন এবং এই বিপদ মোকাবিলায় তাঁদের ভূমিকা কী হবে – তা বোঝার চেষ্টা করা। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাম জোট-রাজনীতির সম্ভাবনা, এবং তাঁর দলের সম্ভাব্য নির্বাচনী রণকৌশল বিষয়েও আমাদের আগ্রহ ছিল। আমাদের দীর্ঘ প্রশ্নাবলী তিনি সাক্ষাৎকারের প্রাক্কালে চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলেন। টানা কর্মসূচির চাপে প্রত্যেক প্রশ্নের পৃথক পৃথক উত্তরের সময় ছিল না। কিন্তু, আমাদের মূল জিজ্ঞাস্যগুলো প্রধানত দু’টি প্রধান ভাগে ভাগ করে টানা আধঘণ্টা আলোচনা করেছেন। প্রথম ভাগে ছিল জাতীয় রাজনীতি, ফ্যাসিবাদের বিপদ এবং ফ্যাসিবাদে-বিরোধী জোটের প্রয়োজনীয়তা এবং সমস্যা। দ্বিতীয় ভাগে ওই আলোচনার প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ, আসন্ন নির্বাচন এবং জোট রাজনীতি, সিপিএম, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল সম্পর্কে মূল্যায়ন। আজ দ্বিতীয়  কিস্তি  ‘পশ্চিবঙ্গ ও বিজেপির বিপদ ‘। সম্পাদকমণ্ডলী গ্রাউন্ডজিরো

 

 

পশ্চিবঙ্গ ও বিজেপির বিপদ

 

পশ্চিমবাংলায়, আমরা যেটা পরিষ্কার মনে করি বিজেপি ক্রমবর্ধমান বিপদ। এটা তো না বোঝার তো আমরা সত্যিকারের কোনও কারণ দেখি না। এটা যদি কেউ না বোঝেন আজকে তাহলে তো এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক কিছু হতে পারে না। ত্রিপুরায় যে বিজেপি এল, সেটা মনে হল হঠাৎ করে চলে এল। ত্রিপুরার মানুষ নিশ্চয়ই টের পাচ্ছিলেন, কিন্তু আমরা যারা ত্রিপুরার বাইরে থাকি, আমাদের যেন মনে হয়েছিল – বিজেপি হঠাৎ করে ক্ষমতায় চলে এল। কিন্তু, পশ্চিমবাংলায় চুপিসাড়ে হঠাৎ করে আসবে না। যথেষ্ট জানান দিতে দিতে তারা আসছে। এই যে সিগনালগুলো, ওয়ার্নিং সিগনালগুলো, সেই সিগনালগুলো তো অবশ্যই বামপন্থীদের পাওয়া উচিত। আমি একটা কথা বার বার বলি, আমরা বামপন্থীরা ভালো দেওয়াল লিখতে পারি, কিন্তু দেওয়ালের লেখাটা পড়ার ক্ষেত্রেও আমার মনে হয় বামপন্থীদের সবার আগে থাকা উচিত যে, দেওয়ালের লিখনটা কী? সেই দিক থেকে এই যে বিজেপির ক্রমবর্ধমান বিপদ, সেটা আমার ধারণা, বামপন্থীরা বুঝবেন অবশ্যই, বুঝবেন – সেটা বুঝতে কত সময় লাগবে সেটা আমি জানি না।

 

বিমানবাবু পশ্চিমবাংলার প্রবীণতম বামপন্থী নেতা। তাঁকে কোনও পরামর্শ দেওয়ার সামর্থ বা ধৃষ্টতা আমাদের নেই। পশ্চিমবাংলায় আমরা একটা ছোট পার্টি। পশ্চিমবাংলায় আমরা কোনও দিন কোনও নির্বাচনী সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। সিপিএম নির্বাচনী সাফল্যের এভারেস্টের চূড়ায় দীর্ঘদিন বসে থেকেছে। তো তাদেরকে কীভাবে নির্বাচন লড়তে হয় জিততে হয় – এ কথাগুলো আমরা বলতে পারব না। কিন্তু, ওঁরাও নিশ্চয়ই ভাবছেন। কিন্তু, ওঁরা যে কথাগুলো বলে যাচ্ছেন, ২০০৬ সাল থেকে একই কথা বলে যাচ্ছেন। ২০০৬ সাল থেকে ওঁদের কথাগুলো কিছু পাল্টায়নি। কিন্তু, ভোটটা সমানে কমে গেছে। ওঁরা তো আমাদের লাইন নিয়ে চলছেন না, ওঁরা ওঁদের লাইন নিয়ে চলছেন। ওঁরা যেটাকে বেস্ট মনে করেন, উচিত মনে করেন, সব থেকে যুক্তিসঙ্গত মনে করেন – সেটাই ওঁরা করছেন। একটা সময় তো নিশ্চয়ই আসবে যখন ওঁরা ভাববেন , আমরা তো ২০০৬ সাল থেকে কথা বলে গেলাম, অথচ কথাগুলো মানুষ শুনছে না। তো আমি নিজে যে কথাটা বললাম, বলে আমি নিজে মনে করতে পারি খুব সঠিক বললাম। অনেকে স্মার্ট ভাবে কথা বলতে পারেন। স্মার্টভাবে কথা বলে বেশ একটা আত্মতৃপ্তি অনুভব করতে পারেন।  কিন্তু, আমার সে কথার যদি কোনও ইমপ্যাক্ট না হয়, আমার সে কথাটা সত্ত্বেও যদি সমানে বিজেপিই বাড়তে থাকে আর সমানে যদি বামপন্থীদেরই ভোট কমতে থাকে এবং বামপন্থী এককালের কর্মী, বামপন্থী এককালের এমএলএ বিজেপিতে চলে যেতে শুরু করেন তাহলে তো আমার মনে হয় অবশ্যই কিছু ভাবার ব্যাপার।

 

আমরা ব্যাপারটা এভাবে দেখছি যে, বিজেপি একটা বিপর্যয়কারী শক্তি। বিজেপি মানে সামাজিক বিপর্যয়। বিজেপি মানে আর্থিক বিপর্যয় এবং বিজেপি মানে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিপর্যয়। বিপর্যয় যখন হয় তখন শুধু আমরা তার কারণ অনুসন্ধান করি না। কারণ অনুসন্ধান করতে হয়, সেটাকে কীভাবে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ঠেকানো যায় সব ভাবতে হয়। কিন্তু, যখন বিপর্যয় চলে আসে তখন আমরা বিপর্যয়ে যে মানুষগুলো বিধ্বস্ত, যে মানুষগুলো নিপীড়িত তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। বিপর্যয়টাকে ঠেকানোর চেষ্টা করি।

 

আমার মনে হয়, পশ্চিমবাংলায় বিজেপি কেন বাড়ছে, সেখানে দায়ভার কার এবং সেটা কেউ ৪০ বছরের ইতিহাস ধরে বলতে পারে, কেউ ৫০ বছরের বলতে পারে, কেউ গত ১০ বছর দেখে মমতা ব্যানার্জির দায় দিতে পারেন। তাঁরা গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এলেন – দলতন্ত্র নয় গণতন্ত্র – অথচ পশ্চিমবাংলায় গণতন্ত্র আক্রান্ত হল। সেই আক্রান্ত গণতন্ত্র বিজেপির মতো একটা গণতন্ত্র বিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দিল, পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের ধ্বজা উড়িয়ে তারা কথা বলে যাচ্ছে। অবশ্যই এই দায়ভার মমতা ব্যানার্জির, তৃণমূল সরকারের উপর বর্তায়। কিন্তু আমার মনে হয়, এই মুহুর্তে কোথায় কোথায় কার কার দায় আছে, সে দায়ভার ঠিক করা – তার জন্য তো সময় আছে। এই মুহূর্তে দরকার এই যে বিপদটা বাড়ছে, সে সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা এবং মানুষকে তার বিরুদ্ধে সংগঠিত করা। এই বিপদটা থেকে পশ্চিমবাংলাকে বাঁচানো।  বাংলার জন্য এই বিপদটা মারাত্মক হবে। শুধুমাত্র একটা সরকার পরিবর্তন হবে না। বাংলায় যদি আজ বিজেপ চলে আসে – সেটা তো ঠিকই আছে, এতদিন ধরে এত সরকার এল গেল কী আছে – এটা কিন্তু ঠিক তা হবে না। এটা কিন্তু ঠিক তা হবে না সেটা যখন আমরা বুঝতে শুরু করব ততক্ষণে কিন্তু খুব দেরি হয়ে যাবে। ফলে, বিজেপি মানে যে একটা বড় বিপর্যয় আসতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে এবং আমরা যদি সেই বিপর্যয়টা বুঝেও না বুঝি এবং নির্বিকার ভাবে সেই বিপর্যয়কে আহ্বান করি এবং তাকে স্বাগত জানাই পশ্চিমবাংলার মাটিতে তবে সেটা বিরাট ক্ষতি হবে।

 

আমরা মনে করি যে, আমাদের পার্টি পশ্চিমবাংলায় এখনও দুর্বল। আমরা যে চেষ্টাটা করছি, সে বিপর্যয় সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা। দ্বিতীয় হচ্ছে, মানুষ সেই বিপর্যয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে থাকবেন, কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁদের যে বিভিন্ন প্রশ্নগুলো – সেই দাবিদাওয়ার আন্দোলন, যেটা বিহারের শিক্ষা, এই লকডাউন পর্যায়ে মানুষ আন্দোলন করেছেন – বাংলার মেয়েরা মাইক্রোফিনান্সের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সেখানে হাজারে হাজারে মহিলাকে একটা ব্লকে আমি ডেমনস্ট্রেশন করতে দেখেছি। আমি জানি না – সেই মহিলারা হিন্দু, সেই মহিলারা মুসলমান, সেই মহিলারা দলিত (হতে পারেন), সেই মহিলারা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা… সেই মহিলারা হয়তো কেউ বিজেপকে ভোট দিতে পারেন, সেই মহিলারা হয়তো কেউ তৃণমূলকে ভোট দিতে পারেন, সেই মহিলারা হয়তো কেউ বামপন্থী – এটা তাঁদের জন্য একটা নতুন আন্দোলন। এবং নতুন আন্দোলন  থেকে নতুন চেতনা হবে। ধরুন, বাংলার ছাত্ররাও নতুন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে লড়বে, অবশ্যই লড়বে। বাংলার যে যুবশক্তি যাঁরা চাকরি পাচ্ছেন না বা চাকরির নাম করে তাঁদের ঠকানো হচ্ছে…। আজকে সসরকারগুলো পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসে বলে আমি পঞ্চাশ বছর রাজত্ব করব। খোলাখুলি বলছেন অমিত শাহ। চাকরি যেটা লোকে মনে করত, একবার চাকরি পেলে ৩০ বছর, ৪০ বছর করব। তার পর রিটায়ার করব, পেনশন পাব – তাকে বলছে, স্থায়ী চাকরি বলে কিছু হয় না। সরকারগুলো স্থায়ী হয়ে যাবে আর চাকরিগুলো হয়ে যাবে চরম অস্থায়ী। সেখানে প্রতিদিন দিতে হবে কত প্রোডাকশন করছ আর কী করছ। এই যে অবস্থাটা, আমার মনে হয়, এই যে ইনসিকিউরিটিটা, এটা নিশ্চয়ই আজকের যে নতুন প্রজন্ম তারা ফীল করছে, হাড়ে হাড়ে ফীল করছ। পশ্চিমবঙ্গেও নিশ্চয়ই দলিত, আদিবাসী মানুষ তাঁরা এটা ফীল করছেন। সেদিক থেকে আমার মনে হয়, পশ্চিমবাংলায় এই যে আন্দোলনের উপাদানগুলো আছে, এই আন্দোলনের উপাদানগুলোকে সংগঠিত করে নতুন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এগোতে হবে।

 

এনআরসি নিয়ে পশ্চিমবাংলাতেও যথেষ্ট উদ্বেগ ছিল এখনও আছে। এবং সেই উদ্বেগটা যথেষ্ট জাস্টিফায়েড উদ্বাস্তু মানুষের কাছে।  কারণ,  আসামের এনআরসিতে আমরা দেখলাম – যে কারণে বিজেপি এখন বলছে, আসামে এনআরসিটা আমরা আবার চাই – সেই এনআরসিতে ২০ লক্ষ মানুষ যাঁরা বাদ গেলেন, সেখানে হয়তো পাঁচ লক্ষ, ছ’লক্ষ মুসলিম জনগণ ছিলেন, কিন্তু ১৫-১৬ লক্ষ হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান তাঁরা বাংলাভাষী, অসমিয়াভাষী, হিন্দিভাষী – প্র‍্যাকটিক্যালি যাঁরা গরিব মানুষ, যাঁদের কাছে কাগজের কোনও ব্যাপার নেই, তাঁরা কাগজ দেখাতে পারবেন না তাঁরা বাদ গিয়েছেন। আর যাঁরা বাদ গিয়েছেন, তাঁদের একটা অংশ ডিটেনশন ক্যাম্পে পৌঁছে যাচ্ছেন। এটা আমার মনে হয় খুব বাস্তবিক বিপদ পশ্চিমবাংলার মানুষের কাছে। এই বিপদটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সিএএ-র একটা অপযুক্তি আনা হয়েছিল যে, বিপদটা শুধুমাত্র মুসলিম জনগণের জন্য হবে, হিন্দুদের জন্য হবে না। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। যে হিন্দু ছাড় পাবেন তাঁকে দেখাতে হবে ২০১৪ সালের আগে তিনি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে তাড়া খেয়ে, সাম্প্রদায়িক তাড়া খেয়ে এসেছেন।  তাঁকে তো সেই রেকর্ড করিয়ে আসতে হবে। সেখানকার থানায়। সেটা ক’জন হিন্দুর কাছে থাকবে? এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা বলে মানুষকে ভুল বোঝানোও হচ্ছে।

 

এটা এবং যে অ্যান্টি সিএএ আন্দোলনটা গড়ে উঠল, সেই আন্দোলনে ব্যাপক মুসলিম অংশগ্রহণ হল। সেই আন্দোলনে যাঁরা অংশ নিচ্ছিলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, সেখানে আমরা হিন্দু জনগণকে, ব্যাপক জনগণকে, অতটা বুঝিয়ে উঠতে পারিনি যে, এই সিএএ ব্যাপারটা অ্যাকচুয়ালি হিন্দু-মুসলিম সমস্যা নয় – এটা মুসলিম জনগণের বিশেষ সমস্যা নয়। এটা গণতন্ত্র ও সংবিধানের উপর সার্বিক আক্রমণ। এবং নাগরিকত্ব যদি আমাদের বিপন্ন হয় – আমরা নাগরিক বলেই তো সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ভোগ করি – নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা মানে হচ্ছে আমার সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার বিপন্ন হওয়া।

 

বিজেপি বলে এক দেশ এক ট্যাক্স। পারলে পরে ওরা বলে, এক দেশ এক ভাষা, এক দেশ এক ধর্ম, এক দেশ এক নেতা – অতটা বলে উঠতে পারছে না। কিন্তু একদেশের নাম করে এক কালচার ইত্যাদি ইত্যাদি চাপিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এক দেশ এবং সেই দেশের সমান নাগরিকত্ব – এই গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার চেতনায় এবং নাগরিকত্ব রক্ষার চেতনায় – এই প্রশ্নে আমাদের লড়া উচিত। বাকি বহু কিছুর ব্যাপারে বৈচিত্র্য থাকবে, বৈচিত্র‍্যই আমাদের শক্তি কিন্তু নাগরিকত্বের প্রশ্নে সবাই সমান নাগরিক (সংবিধানের) প্রস্তাবনায় যেটা বলা হচ্ছে, যেখানে ইক্যুয়ালিটি, সিটিজেনের যে ইক্যুয়ালিটি, সেখানে কেউ প্রথম শ্রেণির, কেউ দ্বিতীয় শ্রেণির, তৃতীয় শ্রেণির, কেউ আনরিজার্ভ কম্পার্টমেন্টে আছে, কেউ চিরকাল ওয়েটিং লিস্টে আছে – এটা হতে পারে না। তাহলে নাগরিকত্বের প্রশ্নে যে নিশ্চয়তা, যে সম্মান, যে একটা সমতা – আমার মনে হয় এটা কিন্তু খুব দরকার। এই চেতনাটা আমরা এখনও…। অর্থাৎ, বেসিক্যালি যেটাকে অ্যান্টি সিএএ মুভমেন্ট বলি, আমি সেটাকে বলি সিটিজেনশিপ মুভমেন্ট। এটা হচ্ছে সিটিজেনশিপ এবং সংবিধান রক্ষা, সিটিজেনশিপ রক্ষা এবং ক্লেম করার মুভমেন্ট। তো এইটা যেহেতু একটা আকার ধারণা হয়েছে যে, এটা ব্যাপক মুসলিমদের কোনও মুভমেন্ট, তার ফলেও একটা বড় অংশের হিন্দু জনগণ তার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছে। আমাদের দরকার সেই হিন্দু জনগণকে আরও বেশি বেশি করে কথাগুলোকে বোঝানো।

 

এই দায়িত্বগুলো আছে। সময় খুব কম। এই কম সময়ে যত দ্রুত সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত কোমর বেঁধে নেমে পড়া যায় এবং যত ভাবে নেমে পড়তে পারি, যত মানুষকে নামাতে পারি সেটা হচ্ছে আমাদের কাছে বড় প্রশ্ন। আমরা এটা চেষ্টা করব। এই ভয়াবহ বিপদ থেকে মানুষকে সচেতন করতে করতে এগিয়ে যাওয়া সেটা একটা কাজ। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে, যেখান থেকে মানুষের মধ্যে কনফিডেন্স আসবে, যে আন্দোলনগুলোর জয় থেকে সেগুলো ছোট ছোট প্রশ্নও হতে পারে। সেটা তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য,  রেশন পাওয়া, ১০০ দিনের কাজ পাওয়া, একটা কৃষিঋণ পাওয়া – মানুষকে এই যে তার জায়গা থেকে, যেখান থেকে তার সেই নাগরিক চেতনা, অধিকারবোধ শক্তিশালী হতে পারবে। এবং নতুন করে একটা ঐক্যও গড়ে উঠতে পারবে। হিন্দু-মুসলমানের যে ঐক্যটা ছিল সেটা কৃষকের ঐক্য। সেই কৃষকের ঐক্য অনেক ধাক্কা খেয়েছে এই সময়ে।

 

প্র‍্যাকটিক্যালি বিহারের নির্বাচন গণআন্দোলনের চেহারা নিয়েছিল। একটা যুব আন্দোলনের চেহারা নিয়েছিল। অন্তত দুই প্রজন্ম – এই ১৮ থেকে ২৫ এবং ২৫ থেকে ৩৫-এর মধ্যে মানুষ যে ভোট দিয়েছে সেই ভোটে কিন্তু আমরাই অনেক বেশি এগিয়ে। বিহারের নির্বাচনে এবারে সবচেয়ে নতুন দিক সেটা হচ্ছে, চিরকাল পোস্টাল ব্যালটে বিজেপি এগিয়ে থাকে। যে কোনও নির্বাচনে চোখ বুজে এটা আপনি বলে দিতে পারেন। এবারের বিহারের নির্বাচনে আমরা বিজেপিকে পরাজিত করেছি। কারণ সেই পোস্টাল ব্যালট যাঁরা ভোট দিয়েছেন, সেই শিক্ষকরা, যে সমস্ত সরকারি কর্মচারীরা তাঁরা তাঁদের দাবি নিয়ে বিরাট মাত্রায় বিজেপির বিরুদ্ধে, এনডিএর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এটা কিন্তু নতুন দিক। তার মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ছিল না। তার মধ্যে কোনও আপারকাস্ট লোয়ারকাস্ট ভাগাভাগি ছিল না। এটা বড় দিক। এটা সম্ভাবনার দিক। এটা পশ্চিমবাংলাতেও হতে পারে, ভারতবর্ষেও হতে পারে।

 

 

 

Share this
Recent Comments
1
  • comments
    By: Arpan Bose on November 27, 2020

    একদম সঠিক বিশ্লেষন। আমি ঠিক এভাবেই বুঝিয়ে পারিনি আমার বামপন্থী বন্ধু ও ভাই বোনেদের। মুখে আমার ব্যাথা ধরে গেছে। সিপিএম চিরকাল ভুল ম্যাচ রিডিং করে গেল। এই ভুলগুলকে শুধরে সময়ের বাস্তব নিরিখে ভাবতে হত। অথচ ভো হয়ত সিপিএমকেই দেব। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে সেটাই বুঝতে উঠতে পারছিনা। এ বড় ভীষন সময়ে ভীষন দুশ্চিন্তার কথা।

Leave a Comment