কাশ্মীরকে নির্বাক করে দিতে চায় মোদী-শাহ


  • October 29, 2020
  • (0 Comments)
  • 787 Views

গতকাল কাশ্মীরের সামনের সারির সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে মানবাধিকাররক্ষা কর্মী ও সংগঠনগুলির অফিসে চালানো হলো এনআইএ-র তল্লাশি। একটি গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন।

 

মানবাধিকার সংগঠন, অসরকারি সংস্থা থেকে সংবাদমাধ্যম — শ্রীনগর ও বান্দিপোরার অন্তত ১০টি স্থানে তল্লাশি চালাল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। এর সঙ্গেই তল্লাশি চালানো হয়েছে ব্যাঙ্গালোরেও। এনআইএ-র বিবৃতি অনুযায়ী, এর মধ্যে অন্যতম, জন্মু-কাশ্মীর কোয়ালিশন অফ সিভিল সোসাইটির প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর খুরাম পারভেজ, অ্যাসোসিয়েশন অফ প্যারেন্টস অফ ডিসঅ্যাপিয়ারড পার্সনস (এপিডিপি)-র চেয়ারপারসন পারভিন আহেঙ্গার, জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম সারির সংবাদপত্র গ্রেটার কাশ্মীরের দপ্তর, সাংবাদিক পারভেজ আহমেদ বুখারি ও পারভেজ আহমেদ মাট্টা এবং একটি অসরকারি সংস্থায়।  এনআইএ জানিয়েছে, তল্লাশি চালিয়ে তারা অপরাধ প্রমাণিত হয় এমন দলিল ও ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করেছে। কী অপরাধ প্রমাণ করতে চাইছে এনআইএ? তদন্তকারী সংস্থার দাবি এই ব্যক্তি ও সংগঠনগুলি জঙ্গিদের আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য করে। কাশ্মীর টাইমসের সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন এক ট্যুইটার বার্তায় বলেছেন, এই অভিযান ‘আমাদের ফিসফিসে স্বরের উপরও স্তব্ধতা আরোপ করার চেষ্টা’।

 

মানবাধিকার কর্মী খুরাম পারভেজের উপর এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নতুন কিছু নয়। ২০১৬ সালে ১৪ মে ইউনাইটেড নেশনসের আমন্ত্রণে ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলর ৩৩তম অধিবেশনে যাওয়ার পথে বিমানবন্দরে আটক করা হয় খুরামকে। ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে স্রেফ তুলে নিয়ে গিয়ে জেলে পুরে দেওয়া হয়। ২১ সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের এক সেশন কোর্ট তাঁকে মুক্তি দেয়। কিন্তু, দেখা যায় ইতিমধ্যে তাঁকে পাবলিক সেফটি অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারায় জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ৭৬ দিন পর জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট তাঁকে বেকসুর মুক্তি দেয়। খুরামের অপরাধ জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী, সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন, কিশোর-যুবক-সাধারণ মানুষকে ভুয়ো হত্যাকাণ্ডে খুন, শত শত মানুষের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরে চলেছেন। শুধু তাই নয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলিকে আদালতে হাজির করা, অত্যাচারিত, নিখোঁজদের পরিবারকে আইনি সাহায্য এবং তাঁদের কথা ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কমিশনের কাছে পৌঁছে দিয়ে চলেছেন তিনি এবং তাঁর সংগঠনের সদস্যরা।

 

পারভিন আহাঙ্গার এক কিশোর পুত্র-হারানো মা। ১৯৯০ সালের ১৭ অগস্ট গভীর রাতে তাঁর ১৬ বছরের পুত্র জুনায়েদ আহমেদ আহাঙ্গারকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় নিরাপত্তা রক্ষীবাহিনী। এর পর তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। তখনও জম্মু-কাশ্মীরে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট জারি হয়নি। জারি হবে তার একমাস পরেই। মায়ের এই খোঁজ থেকেই ১৯৯৪ সালে জন্ম নিয়েছিল এপিডিপি পুত্রহারা বাবা-মায়েদের সংগঠন। কাশ্মীরে ঠিক কত মানুষ এভাবে হারিয়ে গিয়েছেন? নিরাপত্তারক্ষীরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আর ঘরে ফেরেননি। এপিডিপি-র হিসেব অনুযায়ী, ১৯৮৯ থেকে সংখ্যাটি ৮ থেকে ১০ হাজার। এই হারিয়ে যাওয়া পুত্রদের খোঁজে আজও নিরন্তর কথা বলে চলেছেন পারভিন ও কাশ্মীরের মায়েরা।

 

সম্প্রতি কাশ্মীর টাইমসের দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের কেন্দ্রীয় প্রশাসন। এর কিছুদিন আগেই জম্মুতে কাশ্মীর টাইমসের সম্পাদক অনুরাধা ভাসিনকে তাঁর সরকারি কোয়ার্টার থেকে জোর করেই বার করে দেওয়া হয়। ভাসিনের সম্ভবত সবচেয়ে বড় অপরাধ জম্মু-কাশ্মীরে সংবাদপত্র প্রকাশের পথে যাবতীয় বাধা সরানোর জন্য দেশের শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরের সংবাদমাধ্যম বিগত একটি বছর ধরে চূড়ান্তভাবে নিপীড়িত। গ্রেটার কাশ্মীরও তার মধ্যে অন্যতম। এবং ওয়াকিবহাল মহল ভালোভাবেই জানে গ্রেটার কাশ্মীর কোনও র‍্যাডিক্যাল সংবাদপত্র নয়, একটি জনপ্রিয় ইংরেজি সংবাদপত্র এবং মেইনস্ট্রিম মিডিয়ারই অন্তর্গত। কিন্তু, কাশ্মীর যে এখন স্বৈরতন্ত্রের প্রধান রসায়নাগার। এখানে সরকার বিরোধী একটি শব্দও ছাপা যায় না। এমনকি একটি অস্ফুট উচ্চারণও ইউএপিএ কিংবা এনএসএ-র মতো নির্মম আইন বলে দেশদ্রোহিতা হয়ে উঠতে পারে।

 

তথ্যসূত্র: https://sabrangindia.in/article/srinagar-nia-raids-human-rights-defenders-ngos-media-house-terror-funding-probe

 

ফিচার ছবি: ওয়ান্দে ম্যাগাজিন (Wande Magazine), আলোকচিত্রী: মাসরাত জাহরাহ (Masrat Zahrah)

Share this
Tags :
Leave a Comment