বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রভাব : আজ ধ্বংসের মুখে জম্মু-কাশ্মীরের বাস্তুতন্ত্র


  • August 21, 2020
  • (0 Comments)
  • 2274 Views

এই প্রতিবেদনটিকাশ্মীর রিডিং রুম‘- (অগস্ট ২০১৯ থেকে অগস্ট ২০২০ পর্যন্ত অর্থাৎ ধারা ৩৭০ বিলোপের এই একবছরের বন পরিবেশ বিষয়ে প্রকাশিত একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের অংশ। লিখেছেন মুম্বাই নিবাসী বনআইন নিয়ে কাজ করা স্বাধীন গবেষক সুস্মিতা ভার্মা মূল ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদটি করেছেন সঞ্চিতা আলি এবং পরিমার্জনা করেছেন অমিতাভ আইচ। মূল ইংরেজি লেখাটি এই লিঙ্কে পাওয়া যাবে।

এই লেখাটি দেশপ্রেমের ছদ্মবেশে রাষ্ট্রের মদতে জম্মু কাশ্মীরের বনভূমি প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়নের নামে জমি কাঠ ব্যবসা, বননির্ভর সম্প্রদায় গুজ্জরবাখরওয়ালাদের অধিকারহীনতা, ভঙ্গুর ঝিলমের আশেপাশে খনি বিষয়ক সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সর্বোপরি কারফিউ, লকডাউনের নামে দিনের পর দিন ইন্টারনেট যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে রাখার ফলে জম্মু কাশ্মীরের মানুষের বেঁচে থাকার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত গবেষণা তথ্য আহরণ কতটা অসম্ভব বিঘ্নিত হয়ে পড়েছে তারই বিশ্লেষণ আলোচনা। সম্পাদকমণ্ডলী

 

 

কথায় আছে “আন পেশি তেলি ইয়েলি ওয়ান পোশি।” অর্থাৎ, যতদিন বনজঙ্গল থাকবে ততদিন খাবারের অভাব হবে না — কাশ্মীরের বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি কাশ্মীরের মানুষের জীবনের সাথে অরণ্য যে কতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়। কাশ্মীরের কৃষিকাজ এবং শক্তি উৎপাদন ব্যবস্থা তার চিরসবুজ এবং ঘন বনাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল () এবং একটি সূক্ষ পরিবেশগত ভারসাম্যে এটিকে টিকিয়ে রেখেছে।  কিন্তু এই বনভূমির গুরুত্বের এত বোধগম্য প্রাসঙ্গিককতা থাকা সত্ত্বেও — যা কিনা শেখ উল আলম ও অন্যান্য সুফি সাধক ও কবিদের দ্বারা বন্দিত ও জনপ্রিয় — গত তিন দশক ধরে  নজিরবিহীন ধ্বংস প্রত্যক্ষ করেছে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শারীরিক হিংস্রতার চক্র ও সামরিকীকরণ।

 

উপরন্তু, জম্মু-কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা বিলোপের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু কাশ্মীর পুনর্গঠন (Jammu and Kashmir Reorganization Act) আইনটি ভারতীয় সংসদে পাশ করেছে। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে এই আইন বলবৎ হয়। এই আইন অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্বের ১৫৩টি আইন বাতিল করা হয়েছে,পূর্বের ১৬৬টি আইন আগের মতোই বহাল থাকছে এবং নতুন ১০৬টি আইন লাগু হয়েছে। যদিও এতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই কোন ভারতীয় আইনগুলি এখানে প্রযোজ্য আর কোনগুলো ইতিমধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে। যেমন, তফসিলি জাতি এবং অন্যান্য বনবাসী (বন অধিকারের স্বীকৃতি) আইন, ২০০৬ এখানে প্রযোজ্য হলেও এখনো পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ৩৭০ ধারা সংশোধনের পূর্বে রাজ্যের বনগুলি জম্মু-কাশ্মীর বন আইন, ১৯৮৭ দ্বারা পরিচালিত হত। কারও কারও মতে এই বন আইনটি এই উপত্যকার বনজঙ্গল রক্ষার জন্য এক শক্তিশালী আইন ছিল।

 

৩৭০ ধারা সংশোধনের পরবর্তীতে কাশ্মীরে দ্রুত বনাঞ্চল সাফাই

 

ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ২০১৭ সালের এক রিপোর্ট () অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের বনভূমি ২০১৫-র নিরিখে ২৫৩ বর্গকিমি  বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন (৩), ২৫৩ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল বৃদ্ধির কথা যে বলা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে ২৪৫ বর্গকিমি অঞ্চল লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) অর্থাৎ দেশের নিয়ন্ত্রণ রেখার বাইরে অবস্থিত। যদিও ১৯৪৮ সাল থেকে এই অংশটি পাকিস্তান শাসিত হওয়া সত্ত্বেও ভারত রাষ্ট্র এই অঞ্চলকে সরকারিভাবে নিজেদের বলে দাবি করে, এমনকি মানচিত্রে ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যেই এই অংশটি অন্তর্ভুক্ত।

 

কাশ্মীরের দক্ষিণাংশে চারপাশে জঙ্গল ঘেরা পহেলগাঁও, একটা পর্যটন কেন্দ্র, কিন্তু ১৯৬১ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত এখানকার প্রায় ১৯১ বর্গকিমি, অর্থাৎ বছরে গড়ে প্রায় ৩.৯ বর্গকিমি বনভূমি ধ্বংস হয়েছে মূলত অবৈধ নির্মাণের কারণে। যেসব জেলাগুলোতে বনাঞ্চলের বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে, যেমন  বুদগাম (৬১ বর্গকিমি), বারামুল্লা (৩৪ বর্গকিমি), ও পুলওয়ামা (২১ বর্গকিমি), সেখানে আদৌও বনভূমির কোনো বিকাশ ঘটেনি, মূলত বাগিচা অঞ্চলের বিস্তার লাভ করেছে।

 

বন উপদেষ্টা কমিটি (Forest Advisory Committee/FAC) যেটি রাজ্যের অ-বনজ কার্যে ব্যবহারের জন্য বনভূমিকে রুপান্তর করার বিষয়ে প্রধান নিয়ামক সংস্থা, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ অক্টোবর মাত্র এই ৩৩ দিনের ব্যবধানে ৭২৭ হেক্টর বনভূমির রূপান্তরের অনুমতি দেয়। একই সময়ের মধ্যে এই নিয়ামক সংস্থা ১৮০০-র বেশি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছ, যদিও সংখ্যাটা কেউ গুণে দেখেনি আর তা অনেক বেশিও হতে পারে। ()

 

উল্লেখযোগ্য ভাবে, এই রূপান্তরিত ভূমির ৬০% অনুমোদিত হয়েছে রাস্তা তৈরির কাজে। সরকারি নথি অনুযায়ী, এই রুপান্তরিত ভূমির ৩৩ শতাংশ পিরপাঞ্জল (গুলমার অভয়ারণ্যে), ঝিলাম উপত্যকা, সাম্বা ও জম্মু বনবিভাগের এলাকা যা  সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে।

 

সরকারি তথ্যের একটি পর্যালোচনা থেকে স্পষ্ট, এই অঞ্চলে এক ভয়ানক জমি লুঠের খেলা চলছে। () এখনও পর্যন্ত কাশ্মীরের দুই লক্ষ একর সরকারি জমি থেকে পনেরো হাজার একর জমি শিল্পক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। বলাবাহুল্য এই জমিগুলির বেশিরভাগ অংশই নদী, পাহাড়ি ঝোরা ও অন্যান্য জলাভূমির অংশ বা নিকটবর্তী হওয়ার কারণে পরিবেশগত ভাবে ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ।

 

যেটা আরও মারাত্মক পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে,  এই বনভূমির  একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্যই অনুমোদিত হয়েছে। পিরপাঞ্জল (গুলমার্গ অভয়ারণ্যে), কেহমিল, ঝিলাম উপত্যকা, সাম্বা ও জম্মু বনবিভাগের ৭২৭ হেক্টর বনভূমির ৩৩% (২৪৩ হেক্টর) এক্ষেত্রে অনুমোদিত হয়েছে গতবছর ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে।

 

এমন একটা সিদ্ধান্ত এইভাবে চটজলদি গ্রহণের পেছনে আসল কারণ ছিল ২০১৯, ৩১ অক্টোবর থেকে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন চালু হয়ে গেলে জম্মু-কাশ্মীরের বনভূমি আইনের কোনও গুরুত্ব থাকবে না। ()

 

বালি খনন

 

পূর্বে ঝিলাম ও তার শাখানদীগুলিতে বিশাল পরিমাণে খননকার্যের বিরুদ্ধে যে সরকারি সতর্কতা জারি ছিল তা নিজেরাই উলঙ্ঘন করে সরকার এ-বছর ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ এই সব নদীতে বালি ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের খনির জন্য প্রায় ২০০ টি ব্লক খোলার প্রক্রিয়া শুরু করে।

 

রাজ্যের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের (IFC) অনুরোধে কেন্দ্রীয় জল ও বিদ্যুৎ গবেষণা কেন্দ্র (Central Water and Power Research Station বা CWPRS) দ্বারা প্রস্তুত ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে এ-রাজ্যের নদীর পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

 

“ঝিলাম নদীর উজানে আসাম পর্যন্ত প্রবাহে বালির খনন বা অন্য কোনো খননকাজ ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কেবল কেন্দ্রীয় জল ও বিদ্যুৎ গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের ট্যুর রিপোর্টের সুপারিশ অনুসারে, সম্ভবত কয়েকটি জায়গায় জলের প্রবাহ বৃদ্ধি করার জন্য জলপথ চওড়া করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।” এই গবেষণাটি বিশ্বব্যাংকের অর্থানুকূল্যে সম্পন্ন হয়।

 

নদীর দুর্বল ও ভগ্নপ্রায় দশা সম্পর্কে যাবতীয় রকম সতর্কবার্তাসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ সত্ত্বেও ঝিলাম ও তার শাখানদীগুলিতে খনিজ ব্লকগুলির নিলাম শুরু হয়ে যায় ২০১৯-এর ডিসেম্বরে । ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ও পরবর্তীতে অত্যন্ত ধীরগতির নেট পরিষেবার কারণে মূলত অ-কাশ্মীরিরাই এই নিলামে জয়লাভ করেন। ( জম্মু-কাশ্মীরের পরিবেশগত মূল্যায়ন কমিটির (যারা খনন ও অন্যান্য প্রকল্পগুলিকে মূলত পরিবেশগত ছাড়পত্র দিয়ে থাকে) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক  সদস্য  থার্ড পোল. নেটকে () বলেছেন, “তারা গতবছর ডিসেম্বরে এক মিটিংয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছিলেন যে ঝিলাম ও অন্যান্য নদীতে কোনোরকম খননকার্যের অনুমতি দেওয়া উচিত নয় যতক্ষণ না পর্যন্ত নদী অববাহিকা ভিত্তিক একটা বৈজ্ঞানিক খনি পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে যাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে নদীর কোন অঞ্চল খনির জন্য উপযুক্ত আর কোন অঞ্চল নদী অভয়ারণ্যের তৈরি করা দরকার।”

 

২০১৪ সালে কাশ্মীরের মানুষ ভয়ংকর বন্যা দেখেছেন, ফলে বিশেষজ্ঞরা এই ভেবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন যে এই অত্যধিক খননকার্য কাশ্মীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পাশাপাশি স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের উপরও এক মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

 

তথ্যের ঘাটতি

 

অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে তথ্যের বিরাট ঘাটতি রয়েছে। লকডাউনের কারণে জলবায়ুগত পরিবর্তন এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সকল গবেষণা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (), এর ফলে তথ্যের ঘাটতি পূরণ করতে যে ধারাবাহিকভাবে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছিল সেই প্রক্রিয়া পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।(১০)

 

নতুন নীতিগুলোর প্রভাব রাজ্যের উপর কতটা?

 

এই অঞ্চলের অধিবাসী এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটা বড় অংশ মনে করেন যে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯-এর অন্তর্ভুক্ত বনআইন মোটেই কোনো কাজের নয়। নাদিম কাদরী, একজন পরিবেশ আইনজীবী ও সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ল-এর নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, “আগে জম্মু-কাশ্মীরের আইনগুলি অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল কারণ সেগুলো মহারাজার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।” (১১)

 

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে যে অব্যবস্থাপনা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে তার সাথে কোভিড মহামারির লকডাউন আর সরকারের সৃষ্টি করা যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতা  সুযোগে কাশ্মীরে কাঠ পাচারের পথ আরও সুগম হয়েছে। নানা রকম রিপোর্ট এটাই দেখাচ্ছে যে নানাবিধ বনজ সম্পদ সম্পর্কিত অপরাধ এই রাজ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

এরমধ্যে আরেকটি  ঘটনায় জম্মু কাশ্মীরের সাধারণ প্রশাসনিক বিভাগ (General Administration Department/GAD)  জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য বন কর্পোরেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৮ বাতিল করে  জম্মু-কাশ্মীর বন বিভাগ কর্পোরেশন (JKFDC) তৈরির কাজে সরকারি অনুমোদন দিয়েছে, যেটি একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে রেজিস্টার্ড কোম্পানি হিসাবে কাজ করবে।(১২)

 

যাযাবর জনজাতি সম্প্রদায়ের অবস্থা

 

২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, কাশ্মীরের মোট জনসংখ্যার ১১.৯% তফশিলি আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। তবে, এ রাজ্যের এই আদিবাসী অধিকার কর্মীরা দাবি করেন যে গুজ্জর এবং বাখারওয়ালদের জনসংখ্যা ১২ কোটি অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ।(১৩) গুজ্জর ও বাখারওয়াল হল কাশ্মীরের দুই যাযাবর জনজাতি। মার্চ মাস এগিয়ে আসতেই এঁদের মধ্যে অনেকে সমতল (জম্মু) ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে কাশ্মীরে চলে যান।(১৪)  এই জনজাতিদের অনেকেই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করেন, কেউ কেউ বেঁচে থাকার তাগিদে ভিক্ষা করতে পর্যন্ত বাধ্য হন। কিন্তু প্রথাগতভাবে এই গুজ্জররা দুগ্ধ ব্যবসার সাথে যুক্ত, অন্যদিকে বাখারওয়ালরা গবাদি পশুপালনের সঙ্গে। এই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেরাই যে বনকে পাহারা দেয়, বনকে কাঠ মাফিয়াদের হাত থেকে রক্ষা করে একথা কারোর অজানা নয়।

 

কাশ্মীরে চলমান সংঘর্ষের কারণে বাখারওয়ালরা দ্বিগুণ শোষণের শিকার। একদিকে বনে তাদের সশস্ত্র কর্মীদের সীমাহীন নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে (১৫), অন্যদিকে তাদের চোখের সামনে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে একের পর এক পশুপালনের জন্য প্রয়োজনীয় চারণভূমি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

 

বন অধিকার আইনে (FRA) যারা বহুবছর বনে বাস করেন তারা বন থেকে বলপূর্বক উচ্ছেদের হাত থেকে সুরক্ষা পান এবং তাদের বনজমিতে অধিকার ও অন্যান্য প্রথাগত অধিকার (গবাদি পশুচারণের অধিকার ইত্যাদি) স্বীকৃত হয়। তবে এক প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, গুজ্জর ও বাখারওয়ালরা (যাদের বেশিরভাগই মুসলমান) বন অধিকার আইনের  আওতায় থাকা সমস্ত অধিকার পেলে তারা ওই অঞ্চলের (মূলত জম্মু, কাটুয়া, সাম্ভা) জনতাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে পারে। প্রাক্তন বিজেপি মন্ত্রী লাল সিংয়ের মতো লোকেদের — যারা এই আইন প্রয়োগের বিরোধিতা করে আসছেন — এই ধরণের ন্যারেটিভগুলোয় ঘৃতাহুতি দেয়। এই সবই এখন জনজাতি সম্প্রদায়ের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

বন অধিকার আইন অনুযায়ী আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় যাবতীয় উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গ্রামসভার উপর ন্যস্ত আছে। কিন্তু অন্যান্য জায়গার মত এখানেও জনজাতিদের বিরুদ্ধে একটা ব্যাপক প্রচার আছে যে, তারা বনে অবৈধ প্রবেশকারী ও গবাদিপশু পাচারকারী, যদিও বনজঙ্গলের উপর তাদের নির্ভরশীলতা এবং বন সংরক্ষণে তাদের ভূমিকাও নথিভুক্ত আছে।

 

উপসংহার

 

প্রাচীন বনভূমি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এই নীতিগত সিদ্ধান্ত এত দ্রুত গ্রহণ করা হয়েছে আর মূলত বিশেষ করে সেই সব প্রকল্পগুলোর জন্য, যেগুলো এতদিন অনুমোদন পায়নি, বিবেচনাধীন ছিল এবং যেগুলো বাস্তুতন্ত্রের উপর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হারকে ত্বরান্বিত করতে পারে। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো এই  সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের একেবারে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যখন এইসব পশ্চাদগামী আইনগুলো একে একে কার্যকর হচ্ছে, তখন  বনাধিকার আইনের এর মতো প্রগতিশীল আইন প্রয়োগের কাজও শুরু হয়নি। ওই অঞ্চলে  স্বাধীন গবেষণা ও  তথ্য জোগাড়ের ক্ষেত্রে নানাপ্রকার প্রতিবন্ধকতা একটি উদ্বেগের বিষয় কারণ সামরিকীকরণ ও অন্যান্য প্রকল্পগুলির কারণে ক্রমবর্ধমান দূষণ ও ভূমি চরিত্র পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত প্রতিযোগিতামূলক ও ধারাবাহিক গবেষণায় এখানে এক বিরাট শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে।

 

তথ্যসূত্রঃ

 

১).Jammu and Kashmir State Forest Policy, 2010. Retrieved fromhttp://jkforest.gov.in/pdf/approved_forest_policy_28jan11.pdf

২) FSI assesses forest cover of the country every 2 years by digital interpretation of remote sensing satellite data and publishes the results in a biennial report called ‘State of Forest Report'(SFR). Beginning in 1987, 16 SFRs have come so far.

৩) Parvaiz, A (12 December 2019). ‘Kashmir’s forests face the axe’. Thirdpole.net. Retrieved from https://www.thethirdpole.net/2019/12/12/kashmirs-forests-face-the-axe/

৪) Ibid.

৫) Parvaiz, A (8 January 2020). ‘Forest Land identified for development after reorganization of Jammu and Kashmir’. Wire.in. Retrieved from https://thewire.in/government/forest-land-jammu-and-kashmir[/mfn]

৬) Ibid.

৭) Ahmad, M (25 June 2020). ‘Kashmir: Online bidding for mineral blocks leaves locals at a disadvantage’. Wire.in. Retrieved from https://thewire.in/government/kashmir-jhelum-mineral-blocks-bidding-online

৮) Thethirdpole.net is a magazine covering issues related to the environment.

৯) Parvaiz, A (11 October 2019). ‘Kashmir communications ban hits key climate studies’. thethirdpole.net. Retrieved from https://www.thethirdpole.net/2019/10/11/kashmir-communications-shutdown-impacts-key-climate-studies/

১০) Javeed, A (29 November 2019). ‘Kashmir’s famous Dal Lake suffers during political uncertainty’. Thethirdpole.net. Retrieved from https://www.thethirdpole.net/2019/10/11/kashmir-communications-shutdown-impacts-key-climate-studies/

১১) Javeed, A (9 June 2020). ‘Timber smugglers loot Kashmir’s forests during lockdown’. Eco-business. Retrieved from https://www.eco-business.com/news/timber-smugglers-loot-kashmirs-forests-during-pandemic-lockdown/

১২) GK News Network (24 June 2020). ‘Government clears creation of forest dept Corp as company’. Greater Kashmir. Retrieved from https://www.greaterkashmir.com/news/jammu/government-clears-creation-of-forest-dept-corp-as-company/

১৩) Parvaiz, A (16 January 2020). ‘Tribal population of Jammu and Kashmir cries foul about non-implementation of Forest Rights Act. Mongabay. Retrieved from https://india.mongabay.com/2020/01/tribal-population-of-jammu-and-kashmir-cries-foul-about-the-non-implementation-of-the-forest-rights-act/

১৪) Sushmita (19 April 2018). ‘EXCLUSIVE! Implement Forest Rights Act to Protect Bakarwals of Kathua: Talib Hussain’.

১৫) Supra note 235.

 

Feature Image courtesy: https://kashmirlife.net/

 

Share this
Leave a Comment