বছর দুয়েক আগে, ২০১৮ সালের ২১ মার্চ , এক নিভৃত আলাপচারিতায় ধরা দিয়েছিলেন জলিমোহন কল, কলকাতাবাসীর কাছে তিনি জলি কল নামেই প্রিয় ও পরিচিত। আমরা কড়েয়ায় তাঁর ছোট্ট কোয়ার্টারে বসে বলে এসেছিলাম, শতবর্ষের জন্মদিনটা তাঁকে নিয়েই পালন করব। কিন্তু কথা রাখতে পারলাম না। তার আগেই গত ২৯ জুন ২০২০, তিনি চলে গেলেন।জন্মসূত্রে কাশ্মীরি পণ্ডিত এই মানুষটির পরিবার সিমলা, দিল্লি ঘুরে শেষ পর্যন্ত থিতু হয় কলকাতায়। এই শহরেই তাঁর পড়াশোনা, বর্ণময় ও কর্মবহুল রাজনৈতিক জীবনের বিস্তার, সেইসঙ্গে খুবই আকর্ষণীয় এক ব্যক্তিজীবনও। জলিমোহন কল কমিউনিস্ট হয়ে উঠেছিলেন, পার্টির প্রয়োজনে আন্ডারগ্রাউন্ড-এ গেছেন, জেলবন্দিও হয়েছেন। জেল থেকে বেরিয়ে টানা এক দশক ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে টানা ৮৭ দিন কলকাতা বন্দরে যে শ্রমিক ধর্মঘট চলে তারও অন্যতম সংগঠক ছিলেন জলি কল। ১৯৬২ সালে আদর্শগত পার্থক্যের কারণে পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। অধ্যাত্মবাদের দিকে ঝুঁকেছিলেন, কিন্তু আমৃত্যু রাজনৈতিক চর্চা চালিয়ে গেছেন। বলেছিলেন — ‘ইকো-সোশ্যালিজম-ই ভবিষ্যত’, পরিবেশবাদের সঙ্গে সমাজবাদকে মেলাতে হবে। জলিমোহন কল-এর এই দুর্লভ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নীলাঞ্জন দত্ত ও নীলাঞ্জন মন্ডল।
আপনারা তো কাশ্মিরী পণ্ডিত। ওখান থেকে আপনাদের পরিবার চলে আসে কবে?
আমরা আড়াইশ’ বছর আগে চলে এসেছি। আমার বাবা দিল্লিতে চাকরি করতেন। আমি সবচেয়ে ছোট ছিলাম আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে। আমার বাবা যখন সিমলায় ট্রান্সফার হলেন, আমার বয়স তখন খুব কম। রেলওয়ে বোর্ডের অফিস তখন সিমলাতেই ছিল। আমি ওখানে কিন্ডারগার্টেনে পড়েছি। তিনচার বছর আগে সিমলায় গিয়ে সেই স্কুল খুঁজে বার করেছি। ওরা খুব এক্সাইটেড হল, যে ৯০ বছরের একজন লোক স্কুল দেখতে এসেছে। ওদের কয়েক বছর আগে ১০০ বছর কমপ্লিট হয়েছিল। ওরা বলল, আমরা যদি জানতাম, আপনাকে ডাকতাম।
আর কাশ্মিরের যে জায়গা থেকে আপনারা এসেছিলেন, সেখানে গেছেন কখনও?
ব্যাপার হচ্ছে যে, সেটা আমরা ঠিক জানতাম না যে কোথা থেকে এসেছি। তবে আমার বাবা এবং এক কাকা কিছু রিসার্চ করেছিল, সেটাকে ভিত্তি করে আমার এক ভাইপো পুরো বংশলতিকা তৈরি করেছে।
এখনও যেসব পণ্ডিত পরিবার ওখানে আছে, তাদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ আছে? কেমন আছে তারা?
পণ্ডিতরা ভাল নেই। তাদের অনেকেই বিদেশে চলে গেছে, আসবে কিনা তাও বলা যায় না। আমরা কাশ্মিরী ভাষা জানি না। কিন্তু ফার্স্ট জেনারেশন বা সেকেন্ড জেনারেশন যারা এসেছে, তারা অনেকেই কাশ্মিরী ভাষা জানে। এখানে কাশ্মির ভবনে একসময় ওরা কাশ্মিরী ক্লাস শুরু করেছিল। আমিও সেই ক্লাস অ্যাটেন্ড করেছি। কিন্তু প্র্যাকটিস করার তো কোনও সুযোগ নেই, তাই সব ভুলে গেছি।
পণ্ডিতরা চলে আসছেন কেন ওখান থেকে?
ওদেরকে থ্রেট দেওয়া হয়েছিল। পোস্টার পড়েছিল — ‘গেট আউট’, তা না হলে তোমাদের আমরা শেষ করে দেব। যখন মেহবুবা মুফতিকে কিডন্যাপ করলো, তখন থেকেই তো এইসব আরম্ভ হল। আমরা তো গেছি টুরিস্ট হিসেবে, কিন্তু [যারা চলে এসেছে] দে আর ভেরি বিটার। এখন তো ওদের অনেক ডাকছে। কিন্তু এরা বলছে যে না, ফিরে যাওয়ার মত পরিস্থিতি এখনও আসেনি। কেউ যাচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে, কিন্তু ওদের যেসব অ্যাসোসিয়েশন আছে দিল্লিতে বা এখানে, তারা যেতে চাইছে না।
ওখান থেকে অনেক ওয়েভস অভ মাইগ্রেশন হয়েছে চারশ’ বছর, পাঁচশ’ বছর ধরে — সবগুলো পারসিকিউশনের জন্যে নয়। চাকরিবাকরির জন্যেও হয়েছে। ওখানে কোথায় চাকরি? ওদের তো রুরাল ইকনমি। ইন্ডাস্ট্রি আছে — শাল। ওই কাজটা খুব ভাল। ওরকম সূক্ষ্ম কাজ আর কোথাও হয় না।
কিন্তু কাশ্মিরী মুসলিমদের সঙ্গে কাশ্মিরী পণ্ডিতরা মিলতে পারল না কেন?
তাহলে আপনাদের শেখ আবদুল্লার সময়ে ফিরে যেতে হবে। কাশ্মিরের অন্তত একটা অংশ যে এখনও ইন্ডিয়ার মধ্যে আছে, তা শেখ আবদুল্লার জন্যেই। কিন্তু ওদের পারিবারিক চক্রান্তের জন্যে — বক্সী গুলাম মহম্মদ যে ছিল, ওর আত্মীয়, সে নেহরুকে এমন উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে দিল যে নেহরু শেখ আবদুল্লাকেই জেলে পাঠিয়ে দিলেন। এবং তার পর থেকেই এলিয়েনেশন শুরু হয়। কারণ তার পরে যারা এসেছে তারা খুব কোরাপ্ট। আমরা যখন যেতাম, তখন ট্যাক্সিওয়ালারা বলত, “এরা তো লুট করছে।” তখন তো কোনও ইনসার্জেন্সি আরম্ভ হয়নি। ইনসার্জেন্সি পরে হল। ইট ওয়াজ আ পার্ট অভ পাকিস্তান’স পলিসি। তারা বাংলাদেশের জন্যে প্রতিশোধ নিতে চায়।
কিন্তু শুধু কি পাকিস্তানের জন্যই?
না, বললাম তো, এলিয়েনেশন হয়ে গিয়েছিল। আমাকে এখানে কাশ্মির ভবন থেকে যখন ডাকে, আমি বলি, ভুলে যান যে আমি কাশ্মিরী। আমি বাঙালি।
এখানে তো আপনি দীর্ঘদিন (১৯৫২–’৬২) অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতা জেলা কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন। পার্টি ছাড়লেন কেন?
পার্টি ছাড়লাম ফ্যাকশনালিজমের জন্য, আর — এখন আরও ভাল করে বুঝতে পারছি — এটা একটা মার্ক্সিস্ট পার্টিই ছিল না, একটা স্ট্যালিনিস্ট পার্টি ছিল। দুটোর মধ্যে অনেক তফাত আছে। মার্ক্স হিউম্যানিস্ট ছিলেন। এরা মানুষকে মেশিন বলে মনে করে।
স্বাধীনতার আগে, যখন পার্টি আন্ডারগ্রাউন্ড, তখন পার্টির কাজকর্ম, চেহারা, এসব একরকম ছিল। তার পরে যখন পার্লামেন্টে ঢুকতে আরম্ভ করলো, তখন… মানুষ যে কী করে চট করে বদলে যায়…। [পরে] সিপিএম বলেছে, ‘আমরাই হলাম পাক্কা কমিউনিস্ট, আর সিপিআই হচ্ছে রিফর্মিস্ট রাইট।’ কিন্তু, লেনিন তো বলেছেন যে বুর্জোয়া পার্লামেন্ট হল শুয়োরের খোঁয়াড়, তাহলে [সেখানে ঢুকে] আর পাক্কা কমিউনিস্ট রইলে কী করে?
আসলে, ১৯৫৬ সালে ক্রুশ্চেভ রিপোর্টের পর থেকেই আমি ভাবতে আরম্ভ করলাম যে এই কমিউনিস্ট পার্টির কোনও ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু যাব কোথায়? তখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আর আমার স্ত্রীর পরিবারের সবাই রেফিউজি।
ডিসেম্বর ১৯৬২তে একটা মিটিং হল মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে। সেই মিটিং-এ প্রথম বক্তৃতা দিলেন নাম্বুদ্রিপাদ। পিন-ড্রপ সাইলেন্সে সবাই শুনলো। তার পরেই ডাঙ্গে উঠলেন। ডাঙ্গেকে বলতে দিল না। হৈ হৈ রৈ রৈ করে মিটিং ভেঙে দিল। আমি তখন ডিস্ট্রিক্ট অফিসে এলাম। সেখানে দেখলাম দুই ফ্যাকশনের মধ্যে ঘুষোঘুষি হচ্ছে। তখন এত বন্দুক-টন্দুক ছিল না। থাকলে কী হত জানি না। আমি বললাম, আর থাকা যায় না।
তা, লোকেরা ভাবলো যে ও রাগের মাথায় বলছে ছেড়ে দেবে, ও কখনও ছাড়বে না। আমিও কখনও ভাবিনি যে আমি কোনওদিন পার্টির বাইরে থাকবো। আমি পার্টি ছাড়ার পরেও যখন ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার হল, তখন ময়দানে ওদের যে জনসভা হয়েছিল — আমি তখন চাকরি করছি, আমার এইসব মিটিং-এ যাওয়া তখন একটু মুশকিল, কিন্তু আমি গিয়েছিলাম।
যে আশা নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা কী শেষপর্যন্ত রইল?
রইল না, রইল না। অনেকে, যারা পার্টি ছেড়ে দিয়েছিল, আমার কাছে আসত। তার বলত যে এটা ফ্যাশিবাদ চলছে। সন্তোষ ভট্চায খুব ভাল, অ্যাক্টিভ পার্টি কেডার ছিল। ভাইস-চ্যান্সেলর হল সে; তাকে ইউনিভার্সিটিতে ঢুকতেই দিল না! জ্যোতিবাবুর কাছে গেল। জ্যোতিবাবু ওকে ভাল চিনতেন, কিন্তু বললেন যে, ‘ওই বিষয়ে আমার সঙ্গে কিছু কথা বলা যাবে না।’
সেটা কি এই কারণে যে, যারা এইরকম লোক, সন্তোষ ভট্টাচার্যকে ঢুকতে দিচ্ছে না, তাদের ওপরেই নির্ভর করতে হত ভোটের জন্য?
ওরা তো ভোটের ওপরে নির্ভর করত না। কাগজে যা লিখত, যেটা সত্যিই, যে এটা সায়েন্টিফিক রিগিং।
আপনারা যখন ভোট করেছেন কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে, সেই সময়েও কি এরকম কাজ করতে হয়েছে?
ফল্স ভোটিং প্রথম থেকেই আরম্ভ হয়েছিল।
সেটাকে কীভাবে জাস্টিফাই করেছেন আপনারা?
জাস্টিফাই করেছি এইরকমভাবে যে, ওরাও তো করে, কংগ্রেসও তো করে, ওটাকে কাউন্টার করার জন্যে আমাদেরও করতে হবে।
কিন্তু ওদের আর আপনাদের মধ্যে তো একটা ফারাক ছিল।
তখন আমি যা করেছি, তার কয়েকটা ব্যাপারে এখন আমি লজ্জিত, কিন্তু ওই চেয়ারে বসলে ওসব করতে হয়।
তার আগের সময়টা, পার্টি যখন আন্ডারগ্রাউন্ড, তখন অবস্থাটা কেমন ছিল?
ভাল ছিল। কত লোক কত স্যাক্রিফাইস করেছে। আমরা দমদম সেন্ট্রাল জেলে ছিলাম। তিন বছর আমাদের কোর্টে প্রডিউস করেনি। জেলে মুজাফফর আহমেদকে দেখেছি, মানুষ হিসেবে একজন কত ভাল হতে পারে তার উদাহরণ। কিন্তু স্ট্যালিনে ভক্তি — সেটা তো ভক্তির মতন ব্যাপার।
বাহান্ন সালে বেরিয়ে আসার পরে প্রথম পার্টির যে কনফারেন্সটা হল, তাতে আমি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ইলেকটেড হলাম। তখন আমাকে বলল, যে তোমাকেই ডিস্ট্রিক্ট কমিটির সেক্রেটারি হতে হবে। আমার মনে হয় সেটা হয়ে ভুল করেছি। তার আগে ট্রেড ইউনিয়ন করতাম আমি, সেটাই আমার জীবনের সেরা সময়। আমার তাই করা উচিত ছিল। কিন্তু রণদিভে তো সব উল্টোপাল্টা করে দিল, সব ইউনিয়ন ভেঙে গেল। পরে চারু মজুমদার যা করল, ওই সময় আমরা তাই করতে গিয়েছিলাম — পটকা-বোমা দিয়ে বিপ্লব। চারু মজুমদার আমাদের সঙ্গে জেলে ছিল। সে ছিল শান্ত প্রকৃতির লোক। কিন্তু ওদের জলপাইগুড়ি গ্রুপের অন্যরা ছিল খুব জঙ্গী মেজাজের। তারা সবসময় বলত, লড়াই করতে হবে।
তা লড়াই তো করলাম আমরা। গোর্খা পুলিশ এসেছিল। বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের তো অস্ত্র নেই, আমরা বোতলটোতল যা ছিল ওদের দিকে ছুঁড়লাম। আমরা বলেছিলাম যে আমরা সেলে যাব না। গুলি চলল। আমরা — আমি আর আরেকজন, যেহেতু হিন্দি বলতে পারি — একেবারে সামনে চোং নিয়ে ওদের অ্যাপিল করছি। বলছি যে আমরা রাজনৈতিক বন্দি, আমরা দেশের জন্যে কাজ করছি, তোমরা গুলি চালাবে না। আমার মনে হয়, তাতে এফেক্ট হয়েছিল। কারণ, এত কাছ থেকে যদি সত্যিই ওরা মারবার জন্যে গুলি চালাত, অনেক লোক মারা যেত। আমি যা শুনেছি, কিছু বুলেট দেওয়ালে লেগে ছিটকে এসে তিনজন মারা গেছে। নাহলে আমাদের টোটাল ম্যাসাকার হত। তার পরেও লড়াই চলল, আমরা তখন আমাদের ব্লকে চলে গেলাম, কিন্তু সেলে যাইনি। ওরা আমাদের সেলে ঢোকানোর জন্য অনেক চেষ্টা করল, টিয়ার গ্যাসিং করল, আমরা টিয়ার গ্যাস [শেলগুলো] ওদের ওপরে ছুঁড়লাম। ওই লড়াইতে আমরা জিতলাম। কারণ আমাদের সেলে ঢোকাতে পারল না। এটা ১৯৪৯ সালের ঘটনা। তখন আমাদের একজন ছিল, শিবশঙ্কর মিত্র নামে। সে মিলিটারি স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে বইটই পড়ত, চিন্তা করত। সে আমাদের যে স্ট্র্যাটেজি করে দিয়েছিল, সেটা দারুণ স্ট্র্যাটেজি ছিল। আমরা ওকে নাম দিয়েছিলাম টিমোশেঙ্কো — সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন জেনারেলের নামে। তবে ১৯৪৮এ সশস্ত্র বিপ্লবের যে চেষ্টা হয়েছিল, তাতে রেফিউজিদের ছাড়া আর কারও তো বিশেষ সাপোর্ট ছিল না।
আপনি তো পার্টির তলার দিককার কেডার ছিলেন না, আপনি তো ছিলেন পার্ট অভ দা লিডারশিপ।
আমি লিডারশিপের পার্ট ছিলাম, এবং তার জন্য অনেক সময় ওদের মতই আচরণ করেছি। পরে আমি যে পালটে গেলাম, তার অনেকটাই মণিকুন্তলা সেনের জন্য। পার্টিতে যখন দুটো [রাজনৈতিক লাইন] ভাগ হয়ে গেল, ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্ট আর ন্যাশনাল ফ্রন্ট, আমি সবসময় ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্টের পক্ষে থেকেছি। কিন্তু চাইনিজ ইনভেশনের সময় আমি বুঝতে পারলাম যে, ওই লাইন ভারতে চলবে না।
সিপিএম তো গায়ের জোরে কমিউনিস্ট পার্টি হয়ে গেল। আমি যেখানে চাকরি করতাম, সেখানে আমদের ইউনাইটেড সিপিআই-এর খুব ভাল ইউনিয়ন ছিল। সিপিএম-এর লোকেরা ফিজিক্যালি, সিপিআই-পন্থী নেতাদের মেরে সেটা দখল করল, তারপর স্ট্রাইক করিয়ে দিল। স্ট্রাইকের দাবিটা কী? না, আমাদের ইউনিয়নকে রেকগনাইজ করতে হবে। অনেক ইউনিয়ন এরকম ভাবে দখল করেছে।
আপনি যখন ট্রেড ইউনিয়নে ছিলেন, আপনারাও কি একই কাজ করেছেন?
আমি তো পোর্টে ইউনিয়ন করতাম। পোর্ট আর ডকে ৩০,০০০ ওয়ার্কার ছিল। কমিউনিস্টরা ওখানে আসার আগে সুরাবর্দি কিছু লোকজন নিয়ে একটা ইউনিয়ন করেছিল, পরে সেটা আইএনটিইউসির মধ্যে গেল। মৈত্রেয়ী বোস ওদের লিডার হলেন। তাতে বড়জোর ১০ থেকে ১৫ পার্সেন্ট ওয়ার্কার ছিল। বাকি ৮৫-৯০% আমাদের। কিন্তু, আমরা যখন স্ট্রাইক করলাম, আমরা ওদের সঙ্গে জয়েন্ট করেছিলাম। ওদের ইনভাইট করলাম। ওরা স্ট্রাইকে রাজি হল। মাঝে মাঝে ওরা বলত, এতদিন চলছে স্ট্রাইক, ওরা মানবে না, আমরা উইথড্র করে নেব। আমরা ওদের চাপ দিয়ে বলতাম, না, উইথড্র করা চলবে না। শেষপর্যন্ত আমাদের জয় হল। সরকার পে কমিশন বসাল, মজুরী অনেকটাই বাড়ল।
এখন কী ভাবছেন?
পৃথিবীটা বদলে যাচ্ছে। শুধু টেকনলজির দিক থেকে নয়, মানুষের চিন্তাভাবনা, সবকিছু নিয়েই বদলাচ্ছে। কিউবার পরে আর কোনও সশস্ত্র বিপ্লব সফল হয়নি, হবে বলেও মনে হয় না। তবে, যেটা দেখা গেল এই যে ‘আরব স্প্রিং’ যাকে বলা হচ্ছে, তাতে, যে লাখ লাখ লোক রাস্তায় বসে আছে, নড়ছে না। এইটাতে সব রেজিমগুলোর পতন ঘটত, পরে আমেরিকা ইন্টারফিয়ার করে তাদের বাঁচিয়ে দিল।
আমার এত কথা শুনলেন যখন, আরেকটা কথাও তাহলে বলে দিই। এখন আমার মেন চিন্তা — আধ্যাত্মিক বিষয়টা ছাড়া, আমাদের এই পৃথিবীটার ব্যাপারে — আমি মনে করি আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ক্লাইমেট চেঞ্জ। এবং, অনেক বিজ্ঞানীরাও বলছেন যে, এখনি যদি ব্যবস্থা নেওয়া না যায়, তা হলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে অনেক কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
সারা পৃথিবীতে সোশালিস্টদের মধ্যে একটা নতুন ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। তারা নিজেদেরকে বলছে ‘ইকো-সোশালিস্ট’। আমার মনে হচ্ছে — কীভাবে হবে আর কতদিনে হবে আমি জানি না, কিন্তু — দিস ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিভিলাইজেশন উইল কোল্যাপ্স। শিগগিরই উপকূলের এলাকাগুলো সব জলের তলায় চলে যাবে। আর সেখানে যারা বাস করে, সেই লক্ষ লক্ষ লোক রেফিউজি হয়ে যাবে। তো, তারা কি চুপচাপ বসে থাকবে?
ওই যে একটা স্লোগান ছিল না — ছাত্ররা বের করেছিল — ‘হোক কলরব’? হবেই। হোক কলরব!
নীলাঞ্জন দত্ত ও নীলাঞ্জন মণ্ডল মানবাধিকার কর্মী।