দেশ জুড়ে তিনদিনব্যাপী কয়লাখনি শ্রমিকদের সর্বাত্মক ধর্মঘট সফল: দাবি ট্রেড ইউনিয়নগুলির


  • July 4, 2020
  • (1 Comments)
  • 1066 Views

গ্রাউন্ডজিরো রিপোর্ট, 

৪ জুলাই, ২0২0

 

কয়লা শ্রমিকদের তিনদিনব্যাপী সর্বভারতীয় ধর্মঘট চলল ২ জুলাই থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত। কয়লা শিল্পের বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকিকরণের বিরূদ্ধে এবং বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের ৪১টি কোল ব্লক (মূলত মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও মহারাষ্ট্রে) নিলাম প্রক্রিয়ার বিরূদ্ধে প্রতিরোধ হিসাবেই দেশ জুড়ে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তিন দিনের এই ধর্মঘটে দেশের নানা প্রান্তে সব মিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ স্থায়ী ও ঠিকা শ্রমিকেরা যোগ দিয়েছিলেন। সিটু, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, এইচএমএস, বিএমএস – এই পাঁচটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন প্রাথমিকভাবে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। পরে এতে শামিল হয় কোল ইন্ডিয়ার বিভিন্ন সাবসিডিয়ারির অন্যান্য ইউনিয়নগুলি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রানিগঞ্জ কয়লা খনিতে ইসিএল ঠিকা শ্রমিক অধিকার ইউনিয়ন, গোদাবরী খনিতে এফটিইউ সহ সিঙ্গারেনি ট্রেড ইউনিয়ন, জয়েন্ট ফোরাম ইত্যাদি।

 

গত বুধবার ১ জুলাই কয়লামন্ত্রী ও কয়লা শ্রমিকদের ইউনিয়নগুলির মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স-এর মাধ্যমে এক দীর্ঘ আলোচনাতেও কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় বৃহস্পতিবার ২ জুলাই থেকে ভোর ছ’টায় কয়লা শ্রমিকদের দিনের প্রথম যে ‘শিফট্‌ ডিউটি’ শুরু হয়, তাতে যোগ না দিয়েই তিন দিনের ধর্মঘট শুরু করেন শ্রমিকেরা।

 

ধর্মঘটের প্রথম দিন ২ জুলাই ঝাড়খণ্ডে যেমন কয়লাখনি মালিকেরা বলেন যে ধর্মঘটের ন্যূনতম প্রভাব পড়েছে, অন্যদিকে ইউনিয়ন থেকে দাবি জানানো হয় ধর্মঘট সর্বাত্মক, আশাব্যঞ্জক সাড়া পড়েছে। জানা গেছে, ঐ একই দিনে পশ্চিমবঙ্গের ইস্টার্ন কোল্ডফিল্ডস লিমিটেড-এর ৮০% মাটির তলার খনিতে কাজ হয়নি। ধর্মঘট চলাকালীন কাজ হয়নি পশ্চিমবঙ্গের কুনস্তোড়িয়া, ঝাঁঝরা, কাজোরা, সোদপুরের নরসোমদা, ধেমোমেন কয়লাখনিতে। ধর্মঘটের তিন দিনই কাজ বন্ধ ছিল। সোনপুর বাজারি ওসিপি-তে আউটসোর্সিং করে কিছু কাজ হলেও স্থায়ী শ্রমিকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো কম ছিল। সাতগ্রাম, পাণ্ডবেশ্বর বা সালানপুরের কয়েকটি কয়লাখনি ও সোনপুর বাজারি ওসিপি-তে কিছু কাজ হলেও ঠিকা শ্রমিকেরা সর্বত্রই ১০০% কাজে যোগ না দিয়ে ধর্মঘটে শামিল হন।

 

ঝাড়খণ্ডে ইসিএল-এর রাজমহল, চিত্রা, মুগমা-তে উৎপাদন বন্ধ ছিল ১০০%। ঝাড়খণ্ডের বিসিসিএল, তেলেঙ্গানায় গোদাবরী খনিতে সিঙ্গারেনি কোল মাইনস্‌ লিমিটেড, ওড়িশার মহানদী কয়লা খনিতে ধর্মঘটের তিন দিনই উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল, কাজে যোগ দেননি প্রায় ৮০% কয়লা শ্রমিক। আউটসোর্সিং বা ঠিকা শ্রমিক সংস্থা দিয়ে সেন্ট্রাল কোলফিল্ডস লিমিটেডের খোলামুখ খনি উৎপাদন চালু রাখার খবর পাওয়া গেছে। তবে, তিন দিনের এই ধর্মঘটে সব মিলিয়ে প্রায় ৪ মিলিয়ন টন কয়লার উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ থেকে জানা গেছে, কোল ইন্ডিয়ার স্থানীয় শাখা, সিইএসএল সাময়িক খনি শ্রমিকদের ভাড়া করতে বাধ্য হয়েছিল।

 

কোনওরকম হিংসাত্মক ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও কয়লাখনি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জায়গায় বিরাট সংখ্যায় সিআইএসএফ জওয়ানদের মজুত রেখেছিল। প্যারামিলিটারি বাহিনীও দফায় দফায় টহল দিয়েছে কয়লাখনি এলাকায় যাতে ইউনিয়ন নেতৃত্ব ইচ্ছুক শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধা না দেয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রমিকেরা স্বেচ্ছায় ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য শাসক গোষ্ঠীর ইউনিয়ন কেকেএসসি ধর্মঘটের বিরোধীতা করা ও পুলিস দিয়ে ধর্মঘট আটকানোর চেষ্টা করেছে। ঝাঁঝরা কোলিয়ারিতে ধর্মঘট সমর্থকদের রাজ্যের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কয়লাখনি কর্তৃপক্ষের সমর্থনে ধর্মঘট ভাঙতে শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটকারীদের উপর লাঠিচার্জের খবরও পাওয়া গেছে।

 

এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মাইনার্স কো-অর্ডিনেশন-এর পক্ষ থেকে জার্মানির অ্যান্ড্রেস টাডিসাইক। অন্যদিকে ইসিএল ঠিকা শ্রমিক অধিকার ইউনিয়ন এই ধর্মঘটের সূত্র ধরেই দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল কোম্পানির ধ্বংস, জঙ্গল বা পরিবেশ ধ্বংস, আদিবাসী মানুষদের উচ্ছেদ প্রতিরোধ করতে ধারাবাহিকভাবে খনি শ্রমিক তথা খনির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী ও গ্রামবাসীদের ঐক্যবদ্ধ ও জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

 

Share this