ধ্বংসক আমপানে লন্ডভন্ড বাংলার উপকূলবর্তী দুই জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় তার পাশেই রয়েছে কলকাতা। এছাড়াও আমপানের আঘাতে জর্জরিত দক্ষিণবঙ্গের আরও পাঁচ জেলা। বৃ্হস্পতিবার রাত পর্যন্ত রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৭৬। বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ নেই, ল্যান্ডফোন-মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবস্থাও একরকম ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার সংগঠন, সংশ্লিষ্ট উদ্যোগী নাগরিকরা আমাদের ভরসা হয়ে উঠেছেন। তাদের হাত ধরে আমরা পৌঁছতে চাইছি বিপর্যস্ত মানুষদের কাছে।
গ্রাউন্ডজিরো: দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে কুলতলি, সাগর, নামখানা, কলস, পাথরপ্রতিমা। সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট বা সেফ-এর সদস্য দিগন্ত মুখোপাধ্যায় এই তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, গোসাবা ও বাসন্তীর ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক ভাবে কম।
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এবং সংগঠনের সদস্য আলতাফ আহমেদ জানিয়েছেন, মৈপীঠ থানা এলাকার মধ্য পূর্ব গুড়গুড়িয়ায় ঠাকুরানি নদীর ১০০-১৫০ ফুট বাঁধ ফুঁসে ওঠা ঢেউয়ের ধাক্কায় ভেঙে গিয়েছে। গ্রামে লোনা জল ঢুকে পড়ায়, স্থানীয় হিসেব অনুযায়ী, ২০০০ বিঘা জমির লঙ্কা, উচ্ছে, মিঠে জলের ছোট মাছের ভেড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোনা জলের প্রভাবে মাছ মরে ভেসে উঠেছে।
নদীবাঁধ ভেঙে কুলতলির দেউলবাড়ির পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। ঝড়ের আগে বহু মানুষ ফ্লাড সেন্টারে আশ্রয় নেন। এছাড়াও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলবাড়িগুলিতেও আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। আলতাফ জানিয়েছেন, বিদ্যালয়গুলিতে খাবার ও পানীয়জলের বন্দোবস্ত ছিল না। কুলতলিতে মোট ১২টি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
আমফান আছড়ে পড়ার সময় জোয়ার না থাকায় বাঁধ ভাঙা প্লাবনের ঘটনাও কম ঘটেছে। ভরা জোয়ার থাকলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বহুগুণ বাড়তে পারত বলে মনে করছেন দিগন্ত। তাঁর মতে ভাঙনের সম্ভাবনায় আপৎকালীন তৎপরতায় বাঁধ মেরামতি ও জোরদারের কাজ সুফল দিয়েছে। ফলত, চাষজমি, মিঠে জলের পুকুর, গবাদিপশু অনেক জায়গাতেই রক্ষা পেয়েছে। তবে, গাছপালার ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ পড়ে এবং ঝড় ও বৃষ্টির প্রকোপে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সামগ্রিক হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় ১০৫৯টি ফ্লাড সেন্টার ও অন্যান্য ত্রাণকেন্দ্রে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নেন।