করোনা জনিত লকডাউনের কারণে সারা পৃথিবীর মত এদেশের অর্থনীতিও আজ বিপন্ন। সাধারনভাবে মনে করা হচ্ছে প্রায় দু’মাস ব্যাপী এই লকডাউনের ফলে গড়পড়তা ক্ষতির পরিমাণ ১৬ লক্ষ কোটির কাছাকাছি অর্থাৎ ভারতের বর্তমান জিডিপির ৮ শতাংশের সমান। এই আর্থিক বিপর্যয় নিয়ে সারা দেশে আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন বনিকসভা, রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, নানা রঙের থিঙ্কট্যাঙ্ক এই বিপদ থেকে পরিত্রাণের বিভিন্ন উপায় নিয়ে সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলে, সোসাল মিডিয়ায় তাদের বক্তব্য পেশ করছেন। প্রধানমন্ত্রী ও সবার মতামত আহ্বান করেছিলেন। এমন সময় গত ১২ই মে প্রধানমন্ত্রী মহামারীর কবল থেকে অর্থনীতিকে মুক্ত করে দেশকে ‘স্বনির্ভর’ করার উদ্দেশে ২০ লক্ষ কোটি টাকার একটি আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেন। অর্থনীতি আর সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কি কি ছাড় দেওয়া হবে খেপে খেপে বিস্তারিত ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। আমরা সরকারের এই প্যাকেজের বিশ্লেষণ করব আগামী দিনগুলিতে। কোভিড ১৯-এর প্রেক্ষাপটে আইআরএস (Indian Revenue Services) একটি প্রস্তাব, রিপোর্ট আকারে সরকারকে পাঠিয়েছিল। সরকারী প্যাকেজের আলোচনায় ঢোকার আগে আইআরএস-এর সেই রিপোর্ট-এর মূল বক্তব্যগুলো আমরা আর একবার ফিরে দেখবো সুমন কল্যাণ মৌলিক -এর এই লেখায়।
ইন্ডিয়ান রেভেনিউ সার্ভিস (আমলাতন্ত্র এর সেই অংশ যারা দেশের কর ব্যবস্থা পরিচালনা করেন) তাদের পক্ষ থেকে একটি সুপারিশ নামা তৈরি করে যার নাম F.O.R.C.E (Fiscal Options and Response to Covid-19 Epidemic)। সেই সুপারিশনামাটি ২৩ এপ্রিল (২০২০) সিবিডিটি (Central Board of Direct Tax) এর চেয়ারম্যানের কাছে জমা করা হয়।
বিষয়টি যখন সাধারণের মধ্যে প্রচারিত হয় তখন কর্পোরেট মিডিয়া ও ক্ষমতাসীন দল তীব্র হৈচৈ শুরু করে। সরকার এই রিপোর্টকে অন্যায্য, এক্তিয়ার লঙ্ঘন ও দুরভিসন্ধিমূলক বলে প্রচার শুরু করে। এনডিটিভি-র খবর অনুযায়ী এই রিপোর্ট-এর কারণে প্রশান্ত ভূষণ, প্রকাশ দুবে,সঞ্জয় বাহাদুর নামে তিন প্রবীণ অফিসারকে সরকার সাসপেন্ড করেছে। সেই রিপোর্টে যেহেতু ধনকুবের ও কর্পোরেট সংস্থা গুলোর উপর কোভিড কর চাপানোর কথা রয়েছে তাই এই প্রতিক্রিয়া বলে অনেকেই মনে করছেন।
একই সঙ্গে এটাও লক্ষ্য করার মত বিষয় যে প্রাথমিক বিতর্ক হবার পর রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা আর সেভাবে হচ্ছে না। মূলধারার মিডিয়া পরিকল্পিত ভাবে খবরটিকে ব্ল্যাকআউট করেছে। অধিকার আন্দোলনের কর্মী হিসাবে ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর বিশ্বাস রেখে আমরা এই আধিকারিকদের উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার তীব্র বিরোধিতা করছি। একই সঙ্গে আমরা মনে করি এই রিপোর্টটি নিয়ে সামগ্রিক আলোচনার প্রয়োজন আছে।
এই রিপোর্ট একদিকে যেমন সংকটের চরিত্র বিচার করেছে, কর আদায়ে লকডাউন কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে তার হিসাব করেছে তেমনি কিভাবে ত্রাণের জন্য আয় বাড়ানো যায়, সরকারি খরচের পুনর্বিন্যাস করা যায় তার প্রস্তাব দিয়েছে। তাই রিপোর্টের গুরুত্বপূর্ন নির্বাচিত অংশ আমরা এখানে তুলে ধরছি। বলা বাহুল্য এই সুপারিশনামার যৌক্তিকতা, ভালো মন্দ বা মূল্যায়নের কোন চেষ্টা এখানে করা হয়নি। তবে আমরা বিশ্বাস করি করোনার সময় অর্থনীতির গতি প্রকৃতি, আর্থিক প্যাকেজ,সরকারের ইতিকর্তব্য নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, ইন্ডিয়ান রেভেনিউ সার্ভিসের বর্তমান দলিলটি তার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তেতাল্লিশ পাতার এই মূল্যবান দলিলে অনেক গুলি ভাগ রয়েছে। আমরা এই আলোচনা কেন্দ্রীভূত করছি যে বিষয়গুলিতে তারমধ্যে রয়েছে করোনা লকডাউন জনিত আর্থিক সংকটের স্বরূপ, তা রাজস্ব আদায়ে কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তার উপরে।
প্রথমে বলা হয়েছে এই করোনা অতিমারী আর্থিক দুনিয়ায় এক ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলবে ও ভারত তার থেকে রেহাই পাবে না। বৃদ্ধির হার যে কমবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে কতটা কমবে বা কমে কত হবে সে বিষয়ে এই দলিলে বিশ্বব্যাঙ্ক (১.৫-২.৮%) এবং আইএমএফ-এর (১.৯%) ভবিষ্যৎবাণীর উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এই বৃদ্ধির হার ১৯৯১ সাল থেকে হিসাব করলে সবচেয়ে কম।
অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধাক্কাটা কেমন হবে তার একটা প্রাথমিক মূল্যায়নের চেষ্টা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার আন্দাজ করা হয়েছে ২.১%। এখানে বলা হয়েছে যদিও রবি শস্যের ক্ষেত্রে খুব ভালো উৎপাদন হয়েছে তবে লকডাউন পরবর্তী সময়ে কৃষকদের অবস্থা খারাপ হবে। অবশ্য এই আন্দাজটা কোন নতুন কথা নয় কারণ ভারতের কৃষি ও কৃষকদের মূলগত সমস্যার সমাধান কখনো হয় নি। তবে সবচেয়ে দুর্ভাবনার দিক এই দলিলের মতে শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রে। শিল্পের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে -১%। বলা হয়েছে পিপিই, ওষুধ, সাবান, স্যানিটাইজার, মাস্ক প্রভৃতি উৎপাদনে বৃদ্ধি দেখা গেলেও কোর ইন্ডাস্ট্রি যেমন গাড়ি শিল্প, ভারি শিল্প ও লৌহইস্পাত শিল্পে ধ্বংসাত্মক প্রভাব আসবে। আর ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে এই ঋনাত্মক বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে খনি ও বিদুৎ শিল্প। এ প্রসঙ্গে একটি তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে যার থেকে আমরা জানতে পারছি যে লকডাউনের সময় দেশে বিদুৎ-এর চাহিদা কুড়ি শতাংশ কমে গেছে কারণ শিল্প উৎপাদন অনেকটাই স্তব্ধ। দীর্ঘ লকডাউনের ফলে দলিলে মনে করা হয়েছে যে দেশের এমএসএমই (Micro, Small and Medium Enterprises) ক্ষেত্রে মারাত্মক আঘাত আসবে অথচ জিডিপির ৩০% আসে এই ক্ষেত্র থেকে। আরেকটি উদ্বেগের জায়গা অবশ্যই পরিষেবা ক্ষেত্র। জিডিপির ৫৮% আসে এখান থেকে। বলা হয়েছে ই-কমার্স (অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিল, গ্রসার প্রভৃতি)-এর ব্যবসা বাড়বে। বিভিন্ন অনলাইন গেম,স্ট্রিমিং চ্যানেল (নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ইত্যাদি) এরও ব্যবসা বাড়বে। কিন্তু পরিষেবা ক্ষেত্রের স্তম্ভ বলে বিবেচিত হোটেল, বিনোদন, লজিস্টিকস, টেলিকম দীর্ঘস্থায়ী মন্দার শিকার হবে।
দলিলে বলা হয়েছে মানুষের হাতে টাকা থাকবে না ফলে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমবে, বেকারি বাড়বে। সিএমআইই-এর ৫ এপ্রিলের সমীক্ষা উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে দেশে এই মুহূর্তে বেকারির হার ২৩ শতাংশ যা ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই দলিলে কোন রাখঢাক না করেই বলা হয়েছে যে বিশ্বজোড়া আর্থিক সংকটের কারণে ব্যাপক পরিমাণ বেসরকারি ও বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে বিনিয়োগের দায় সরকারের। সেইজন্য স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রফতানি বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ২.৯%। বর্তমান পরিস্থিতিতে যা আরো কমবে। রেভেনিউ সার্ভিসের মতে এই পরিস্থিতিতে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় বিরাট অঙ্কের সরকারি খরচের পরিকল্পনা যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনার ১.৭ লক্ষ কোটি টাকাকে যুক্ত করতে হবে। এই দলিলে ২৪.২ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে।
পূর্ববর্তী আলোচনায় এটা পরিষ্কার যে আগামী আর্থিক বিপর্যয়কে সামলাতে ভারত সরকারকে একটা বিশাল সংখ্যক টাকা দেশে খরচ করতে হবে। সেই টাকা কিভাবে আসবে সে সম্পর্কে বহু সুপারিশ এই দলিলে আছে যার গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ আমরা উপস্থিত করছি–
# ধনকুবের (Super Rich) দের জন কল্যাণের জন্য অধিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ তাদের খরচ করার মত টাকা অন্যদের তুলনায় বেশি। তাদের এত টাকা আসলে রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের মধ্যে সামাজিক চুক্তির ফল। ধনকুবেরদের নিজেদের ঘর থেকে কাজ করার সুযোগ আছে এবং তারা তাদের সম্পদের কারণে অর্থনীতির উপর অস্থায়ী আঘাতকে সয়ে নিতে পারে। দলিলে উদাহরণ হিসাবে ইউরোপীয় অর্থনীতিবিদ প্রসঙ্গ টানা হয়েছে, যাদের মতে ধনকুবেরদের উপর কর ধার্য করা একটি অতি প্রগতিশীল পদক্ষেপ কারণ তাদের আয় ও ভোগের বিচারে সম্পদের কেন্দ্রীভবন অনেক বেশি। রেভেনিউ সার্ভিসের আধিকারিকদের মতে কোভিডের কারণে ভারতের ধনকুবেরদের জন্য একটা সময় ভিত্তিক অতিরিক্ত করব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
# যাদের নেট সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি টাকার বেশি তাদের উপর সম্পত্তি কর চাপানো দরকার। যে সমস্ত বিদেশি কোম্পানির ভারতে শাখা আছে তাদের উপর কোভিড সারচার্জ বসানো যেতে পারে।
# প্রাপ্ত টাকা কিভাবে খরচ করা যাবে তার একটা রূপরেখা সুপারিশ পত্রে আছে। ধরে নেওয়া যাক এইভাবে অতিরিক্ত ৫৫০০০ কোটি টাকা উঠলো। সেটাকে একটা পৃথক তহবিল হিসাবে রাখতে হবে। তারপর কোভিডের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পে এই টাকা ব্যবহার করা হবে। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট তৈরি করে কত টাকা কোন প্রকল্পে কিভাবে খরচ করা হবে তা সবাইকে জানাতে হবে। এই সরাসরি ও জরুরি ভিত্তিতে টাকার ব্যবহার, যারা কর দেবে তাদেরও সন্তুষ্ট করবে। তারা বুঝতে পারবে তাদের দেওয়া টাকা কিভাবে খরচ হচ্ছে।
# কোভিড রিলিফ সেসও চাপানো যেতে পারে। আমরা এখন ৪% সেস (স্বাস্থ্য খাতে ২% ও শিক্ষা খাতে ২%) দিই। এর সঙ্গে এককালীন আরো ৪% সেস চাপানো হোক যা ত্রাণ কার্যে ব্যবহার করা হবে। মধ্যবিত্তের উপর চাপ যাতে বেশি না পরে তার জন্য যাদের করযোগ্য আয় দশ লাখ ও তদোর্দ্ধ তাদের উপর এটা চাপানো যেতে পারে।
কর্পোরেট সংস্থা গুলো তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার (Corporate Social Responsibly/CSR Fund) অংশ হিসাবে যদি কোভিড ত্রাণে অংশ নেয় তবে তাদের ছাড় দিতে হবে। তবে কর্পোরেট সংস্থাগুলো কি ধরনের কাজ করবে তার রূপরেখা সরকার ঠিক করে দেবে।
# এমন কি কোম্পানিগুলো যদি এই লকডাউন পিরিয়ডে কাজ না হওয়া সত্বেও নন-ম্যানেজেরিয়াল কর্মীদের পুরো মাইনে দেয় তবে সেটা ও তাদের CSR হিসাবে গন্য করা যেতে পারে।
# এখনও পর্যন্ত নিয়ম রয়েছে কর্পোরেট সংস্থা গুলো পিএম কেয়ার্সে টাকা দিলে তা সিএসআর হিসাবে গণ্য হবে। এই সুপারিশে বলা হয়েছে রাজ্যসরকারগুলির দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে কর্পোরেট সংস্থাগুলো অনুদান দিলে তাহলে সেটাও সিএসআর হিসাবে গণ্য হবে।
# আইনে রয়েছে নথিভুক্ত নির্দিষ্ট শ্রেণির কোম্পানিগুলো তাদের লাভের ২ শতাংশ সিএসআরে খরচ করবে। এখানে একটা নতুন প্রস্তাব আনা হয়েছে। ধরুন এই হিসাবে কোন কোম্পানির ফান্ডে ১০০ টাকা জমা আছে। যদি সে ৩০ জুন (২০২০)এর মধ্যে ৭৫ টাকা পিএম-কেয়ার্সে জমা দেয় তাহলে সে বাকি ২৫ টাকা নিজের ব্যাবসার কাজে লাগাতে পারবে।
# নতুন কর সাশ্রয় কারী স্কিম হিসাবে কোভিড সেভিংস সার্টিফিকেট (এনএস সির মতো) চালু করা যেতে পারে। এতে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে। এই প্রকল্পে লক ইন পিরিয়ড থাকবে ৫ বছর। আইন সংশোধন করে রাজনৈতিক দল ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গুলোকে এই প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।
# বিতর্ক ও বিরোধ আছে এমন কর সংক্রান্ত মামলা গুলো দ্রুত সমাধানের জন্য আয়কর ও বাণিজ্য করের ক্ষেত্রে বিবাদ সে বিশ্বাস প্রকল্প চালু আছে। এটি ও এক ধরনের কর ছাড়ের প্রকল্প। এই প্রকল্পটি যে সমস্ত কোম্পানি কোন বিতর্ক না থাকা সত্তেও বাকি রেখেছে তাদের জন্য বিস্তৃত করা যেতে পারে।
# বিশ্ব জোড়া আর্থিক সংকটের সময় কোম্পানি গুলো যাতে সঠিক সময়ে কর দেয় তার জন্য বেশ কিছু ইনসেন্টিভ প্রদানের কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
# নতুন করের ক্ষেত্রে উল্লেখ যোগ্য হল inheritance tax এর পুনঃপ্রচলন। এছাড়া ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে কর এবারের বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে তার আওতায় নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, জুম প্রভৃতি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলিকে আনার কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে।
# এছাড়া স্বেচ্ছায় সুবিধা ছাড়ার (give up call) প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে এলপিজি প্রকল্পের ক্ষেত্রে অনেকে স্বেচ্ছায় ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছে তেমনি এই আর্থিক বছরে করদাতারা চাইলে যে কোন একটি ধারায় কর ছাড় না নেবার কথা ঘোষণা করতে পারেন।
এই সুপারিশ গুলো বাস্তবায়িত হলে সরকার তার প্রস্তাবিত আর্থিক প্যাকেজ জনগণের জন্য ঘোষণা করতে পারবেন বলে দলিলে মনে করা হয়েছে।
দেশ যখন এক আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন তখন কিভাবে সরকার খরচ করবে, কোনগুলো তার অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হওয়া উচিত এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে এই দলিলে–
# খরচের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে। প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়-বরাদ্দ কমাতে হবে। যে সমস্ত প্রকল্পের এখনো কাজ শুরু হয়নি সে সব প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখা যেতে পারে। উদাহরণ হিসাবে মুম্বাইয়ের বুলেট ট্রেন প্রকল্প স্থগিত রাখা যেতে পারে।
# বিভিন্ন মন্ত্রকের জন্য বর্তমান আর্থিক বাজেটে যে বরাদ্দ করা হয়েছে দলিলে তার পুনর্বিন্যাসের কথা রয়েছে। যেমন রেল ও সড়ক পরিবহন দপ্তরে পরিকাঠামো নির্মাণে ১৫১৯৭৪ কোটি ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে তার থেকে একটা বড় অঙ্কের টাকা কোভিড প্যাকেজে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে।
# কোভিড প্যাকেজে জিডিপির কত অংশ ব্যয় করা হবে তা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ শতাংশ, গ্রেট ব্রিটেনে ১৫ শতাংশ, মালয়েশিয়া তে ১৬ শতাংশ ব্যয় করা হচ্ছে। আশা করা হয়েছে এখনও পর্যন্ত কোভিড ত্রাণে বাজেটের ০.৮% ব্যয় করা হলেও সরকার নিশ্চয়ই পরিমাণটা বাড়াবে।
# গ্রামীণ একশ দিনের রোজগার যোজনার ক্ষেত্রকে আরো বৃদ্ধি ও পুনর্বিন্যাস করার কথা বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট করে এই প্রকল্পের কাজের মাধ্যমে স্থায়ী সম্পদ তৈরির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
# দেশের গরীব মানুষের জন্য সরাসরি আর্থিক সাহায্য এর প্রস্তাব এই দলিলে রয়েছে। বলা হয়েছে দেশের গরীব মানুষের সংখ্যা ৬০ কোটি ও পরিবার হিসাবে সংখ্যাটা ১২ কোটি। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনা ও উজালা প্রকল্পের মাধ্যমে এই পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করা যাবে। এই পরিবারগুলির জন্য আগামী ৬ মাস ধরে ৩০০০—৫০০০ টাকা সরাসরি আর্থিক সাহায্য দেবার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সন্মান যোজনার জন্য বরাদ্দ ৭৫০০০ কোটি টাকা এই কাজের জন্য লাগানো যেতে পারে।
# বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে। অনুপ্রেরণা নিতে বলা হয়েছে ব্রিটেনের Corona Virus Job Retention Model এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Families First Corona Virus Response Act প্রকল্পের।
# করোনা উত্তর অর্থনীতিতে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রকে প্রধান ক্ষেত্র (Growth Engine) হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে। যে সমস্ত ফার্ম/কোম্পানি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে কাজ করবে তাদের সম্পুর্ন কর ছাড়ের প্রস্তাব রয়েছে।
লেখক স্কুলশিক্ষক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী।