ভারত কি আইসিএমআর-কে দিয়ে কোভিড মহামারি মোকাবিলা করার ফল ভুগছে?


  • May 15, 2020
  • (0 Comments)
  • 1998 Views

কিছু ধনী দেশের মডেলের শুধুমাত্র একটা অংশকে নকল করে, দিনের পর দিন দেশের সবকিছু বন্ধ করে রেখে, ৮০ শতাংশ দিন আনি দিন খাই মানুষের দেশে, এক উভয়মুখী বিপর্যয় আমদানি করা হল। সর্বস্বান্ত হল মানুষ যে রোগ মুক্তির মিথ্যা চিন্তায়, প্রকৃতপক্ষে সে রোগ আগের চেয়েও বেশি পরিমাণ সংক্রমণ ছড়িয়ে আপাতত দেশে জাঁকিয়ে বসেছে। লিখছেন অমিতাভ আইচ

 

 

লকডাউন ৫০ দিন পার হয়ে গেল। ২১ দিনে ‘শৃঙ্খল ছিন্ন’ করার, মহাভারতের মহাকাব্যিক যুদ্ধ জয়ের গল্প শুনিয়ে শুরু হয়েছিল লড়াই। সেইদিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০০, এবং মৃতের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০জন। আজ ১৪ মে তারিখে সেই জয় দূরে কাছে কোথাও দৃশ্যমান নয়। আক্রান্তের সংখ্যা এখনই ৭৮ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে, (যদিও এসবই কম টেস্টের জন্য মনে করা হচ্ছে, ভারতে টেস্টিঙের হার বিশ্বের মধ্যে নিম্নতম। টেস্টিঙের হার যদি অন্যান্য অনেক বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর সমান হতো, তবে আক্রান্তের সংখ্যা বহুগুণ বাড়ত। এবং আসলে তা বহুগুণই বটে, যদিও হয়তো, অ্যাসিম্পটোমেটিক।) এবং রোগটির নিজস্ব চরিত্র অনুসরণ করে একই সঙ্গে সুস্থও হয়ে গেছেন ২৬ হাজারের বেশি মানুষ। কিন্তু মৃত্যু হয়েছে এখনও পর্যন্ত ২৫০০ জনের বেশি।

 

এর চেয়েও যেটা চোখে পড়ার মতো সেটা হল, এত ভয়ানক কঠিন লকডাউন, যা দেশের গরিব মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে, তার পরও সংক্রমণের হার নিম্নগামী হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। বিশ্বের বড় দেশগুলোতে যেখানে মহামারির হার এমন তীব্র ছিল সেখানে ৪০ দিন পর থেকে একটা নিম্নগামী গ্রাফ দেখা গিয়েছিল, সেটা ভারতের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না । কোনও সন্দেহ নেই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কোভিড-১৯ মহামারির দেশ হিসাবে ভারত আজ নিশ্চিত ভাবেই চিহ্নিত।

 

এটা কিন্তু হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞরা বরাবরই সতর্ক করেছেন, দেশের একদম প্রাথমিক ও মূল আক্রান্তদের পৃথকীকরণের পাশাপাশি প্রচুর প্রচুর টেস্টই যে মুলত এই মহামারীর সাথে লড়ার মূল মন্ত্র এটা তো গোপন নয়। অথচ কিছু ধনী দেশের মডেলের শুধুমাত্র একটা অংশকে নকল করে, দিনের পর দিন দেশের সবকিছু বন্ধ করে রেখে, ৮০ শতাংশ দিন আনি দিন খাই মানুষের দেশে এক উভয়মুখী বিপর্যয় আমদানি করা হল। সর্বস্বান্ত হল মানুষ যে রোগমুক্তির মিথ্যা চিন্তায়, প্রকৃতপক্ষে সে রোগ আগের চেয়েও বেশি পরিমাণ সংক্রমণ ছড়িয়ে আপাতত দেশে জাঁকিয়ে বসেছে। সম্পূর্ণ দিশাহীন সরকার আজ তাই, করোনাকে নিয়েই বাঁচতে হবে, এই এক বাক্যে তার দায় সেরে ফেলে, দেশবাসীকে আরোগ্যর কোন এক ভঙ্গুর ও ভাসমান সেতুর উপর দাঁড় করিয়ে — উলটে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মন্ত্রণা দিচ্ছে।

 

অথচ আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, দেশে, এপিডেমিকের সাথে লড়াই করার জন্য তৈরি করা একমাত্র প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)-কে বসিয়ে রেখে শিশুচিকিৎসক, কার্ডিওলজিস্ট ও পালমোলজিস্টদের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষণা সংস্থা, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা সংক্ষেপে আইসিএমআর-কে দিয়ে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়ছে ভারত। আর এসবই হচ্ছে কোনও এক ডাক্তার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। মহামারির অন্তহীন বিস্তারের এটা আসল কারণ। প্রকৃতপক্ষে, আইসিএমআর এবং তার নেতৃত্বের মহামারির সঙ্গে লড়াই করার কোনও পদ্ধতিগত প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতাই নেই। এর জন্য এই সংস্থা গঠিতও হয়নি। যে কারণে এনসিডিসি গঠিত হয়েছিল, সেই মহামারির সময়ই তারা নিশ্চুপ কিংবা চুপ করিয়ে রাখা হল।

 

এনসিডিসি ও আইসিএমআর:

 

অনেকের মধ্যে হয়তো একটা ধন্দ তৈরি হচ্ছে, সেটা মেটানো দরকার। ভারতে নিজস্ব একটা সিডিসি তৈরি হয়েছে ১৯৬৩ সালে, (আসলে ভক্তরা বলে থাকেন বর্তমান এই কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় আসার আগে এ দেশে কিছুই হয়নি!) আমেরিকার মতোই। আর তারই নাম ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল। যার আগের নাম ছিল, সেন্ট্রাল ম্যালেরিয়া ব্যুরো, ১৯০৯। এই জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার আটটি শাখা, সদর দপ্তরটি নতুন দিল্লিতে। যার মূল কাজই হল মহামারি প্রতিরোধের নীতি তৈরি করা এবং লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া। এটি সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অধীন একটি সংস্থা। এনসিডিসি মাসে চার বার নানা প্রকার সংক্রমক রোগের আগাম পূর্বাভাস দেয়, ট্রেস ও ট্র্যাক করে। খবরে প্রকাশ, কোভিড পরবর্তী কালে সেই রেগুলার আপডেট দেওয়া প্রথমবারের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে

 

প্রকৃতপক্ষে ইন্ট্রিগেটেড ডিজিজ সারভেল্যান্স প্রোগ্রাম বা আইডিএসপি, এনসিডিসি-র এমন একটি প্রকল্প যা ২০০৪ সালে সার্স মহামারির সময় বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্যে তৈরি করা শুরু হয়েছিল। ওই রোগের যাবতীয় তথ্য ভাণ্ডার তৈরি, রোগটিকে নজরে রাখা এবং সেটিকে প্রতিরোধ করার নীতি রূপায়নের জন্য। সেই থেকে এনএসডিসি এই কাজ করে আসছে। দেশে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু বিষয়ে এনএসডিসি সারা বছর এই প্রোগ্রাম জারি রেখেছে। অথচ ভারতে কোভিড-১৯ মহামারি বিষয়ে কিছু সাদামাটা গাইডলাইন ছাড়া এনএসডিসি কোনোভাবেই কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার মূল নিয়ন্ত্রকের জায়গাতেই নেই। শুধু তাই নয়, একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে কোনও সাংবাদিক সন্মেলনেও এই সংস্থার কোনও বিশেষজ্ঞদের দেখা যায় না, ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এনএসডিসি না কোনও তথ্য দিচ্ছে, না তাদের কাছে কিছু চাওয়া হচ্ছে। যাবতীয় নীতি তৈরি করছে আইসিএমআর। যারা প্রকৃতপক্ষে এর জন্য প্রস্তুতই নয়। কোভিড মহামারির মোকাবিলায় দরকার মহামারি বিশেষজ্ঞ বা এপিডেমিলজিস্টদের নেতৃত্বে তৈরি র‍্যাপিড অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। তার বদলে আইসিএমআর তৈরি করেছে এক আশ্চর্য টাস্ক ফোর্স। কারা আছেন সেই টাস্ক ফোর্সে? এর চেয়ারম্যান হলেন ভিনোদ পল নামক একজন শিশু চিকিৎসক; কো-চেয়ারম্যান বলরাম ভার্গব একজন কার্ডিওলজিস্ট; অন্যতম সদস্য হলেন সংস্থার ডাইরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া। যিনি মাঝেসাঝেই কোভিড বিষয়ে অদ্ভুত জ্ঞানগর্ভ কথা বলে থাকেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একজন পালমোলজিস্ট। এদের কারুরই মহামারি সংক্রান্ত বিষয়ে এমন কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই যে তাঁরা এই মহাসঙ্কটে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।

 

অনেকে অবশ্য এই পর্যন্ত পড়ে ভাবছেন এখানে আইসিএমআর-এর মতো একটি গবেষণা সংস্থাকে ছোট করে দেখানো হচ্ছে। না তা নয়। আইসিএমআর তৈরি হয় ১৯৪৯ সালে, পরাধীন ভারতে নাম ছিল ইন্ডিয়ান রিসার্চ ফান্ড অ্যাসোসিয়েশন, ১৯১১। যার প্রধান কাজ বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ, যা একটি অত্যন্ত জরুরি কাজ এবং সংস্থাটি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অধীন। মোদ্দা কথা আইসিএমআর-এর কাজ গবেষণা করা। মহামারির মতো রোগ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বাস্তবায়ন ও মোকাবিলা নয়। ওটা শুধুমাত্র এনএসডিসি-র কাজ। মানে যে পার্থক্যটা ডিআরডিও-র সঙ্গে সেনা কমান্ডের। যুদ্ধ বাঁধলে, সেটা সেনাবাহিনী সামলাবে। ডিআরডিও নয়, তারা অস্ত্র ও সুরক্ষা নিয়ে গবেষণা করে এবং সেনার হাতে তুলে দেয়। এখন যুদ্ধ লাগলে ডিআরডিও-র কর্তারা যদি সেনাপ্রধানদের সরিয়ে যুদ্ধ করতে যায়, তবে যা হবে এটা অনেকটা সেরকম (শুধু একটাই পার্থক্য এক্ষেত্রে এঁরা সকলেই চিকিৎসাবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ। কিন্তু প্রকৃতিগত এবং বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতার দিক থেকে বিপুল ভাবে আলাদা।) এখানে আরেকটা কথা বলা দরকার যে অনেকে বলছেন যে ন্যাশনাল সেন্টার ফর এপিডেমিওলজিও এই কাজ করতে পারে। হ্যাঁ হতেই পারে। তবে ওটাও একটা গবেষণা সংস্থাই, আইসিএমআর-এর অধীনে, চেন্নাইতে অবস্থিত, ১৯৯৯ সালে স্থাপিত, ডিগ্রিও দেয় গবেষণার।

 

নানান বিতর্ক :

 

ভারতে মহামারির শুরু থেকেই একের পর এক অদ্ভুত সব কাণ্ড করে বিতর্কের শিরোনামে আইসিএমআর। কখনও কোভিড চিকিৎসা কর্মীদের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাওয়ার পরামর্শ , তো কখনও কিট কেলেঙ্কারি বা সাম্প্রতিক কালে চিকিৎসারত রোগীর মধ্যে কোনও উপসর্গ দেখা না দিলে পরীক্ষা না করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া । সবকিছুর মধ্যেই একটা অপেশাদারি ভাব বড়ই চোখে পড়ার মতো প্রকট। তবে র‍্যাপিড অ্যান্টবডি কিট সংক্রান্ত বিষয়ে আইসিএমআর-এর যে ভূমিকাটি সামনে এসেছে, তা এক কথায় অমার্জনীয় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তারা চিনের দুটি সংস্থার কাছ থেকে উচ্চদামে কিট কেনার অর্ডার দেয় এবং তা পরে খারাপ বেরিয়ে পড়ায় সব বরাত বাতিল করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ভারতে কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পরার জন্য আইসিএমআর-এর এই মারাত্মক ভুলটি টার্নিং পয়েন্ট মনে করা হচ্ছে। কারণ শত শত র‍্যাপিড টেস্ট দিয়ে রোগের গতিপথের মানচিত্র তৈরির পথটি আটকে যায়। ভয়ানক গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়ে যায়। জানা গেছে তারা এ বিষয়ে এতটাই অনভিজ্ঞ যে টেস্ট কিটের মতো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাতিয়ার, আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডেকে কীভাবে জোগাড় করা যাবে এবং কীভাবে দরপত্রের মূল্যায়ন করা হবে বা কী করেই-বা প্রধান নির্মাণকারী সংস্থাকে খুঁজে বার করা হবে, তা তাদের জানা ছিল না । কারণ এই ধরনের জোগাড়ের কাজও তারা করে না। নইলে কিট কিনতে গিয়ে এভাবে বিপর্যয় হতো না। আসলে প্রাথমিক বা মূল নির্মাণকারী কারা, এই প্রি-টেন্ডারিং-ই (কেনা কাটা করার আগে যে খোঁজখবর করা হয় স্পেক বানানোর জন্য) আইসিএমআর করে উঠতে পারেনি। বায়োমেডোমিকস বলে একটা আন্তর্জাতিক সংস্থা, যারা এ বিষয়ে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও যাদের কিটই আইসিএমআর বেশি দামে চিন থেকে কিনছিল, অভিযোগ করায় বিষয়টি এখন পরিষ্কার। অথচ ছত্রিশগড় সরকার অর্ধেকও কম দামে এই কিট সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংস্থার থেকে কিনেছে এবং তাদের দেখাদেখি অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারও কিনেছে । নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সারা দেশে র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট বন্ধ করে আইসিএমআর। সরকারি মিটিংয়ে বলা হয়, দেশে নাকি কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে । এরচেয়ে বড় মিথ্যা আর হয় না। প্রশ্ন হল, কেন এই আড়াল- আবডাল এবং এত অপেশাদারিত্ব? এর সঠিক কোনও উত্তর পাওয়া মুশকিল। হয়তো এনসিডিসিকে এতটা ম্যানিপুলেট করা সম্ভব ছিল না। কারণ তারা স্পেশালাইজড।

 

এবার ক্রোনোলজিটা বুঝে নিন। এই অসাধারণ ব্যক্তিরাই ঠিক করছেন রাজ্যগুলো কী করবে বা কী করবে না। এবং এই যাদের কাণ্ড তারা রোগের কতটুকু টেস্টিং, ট্রেসিং, ম্যাপিং করবে বা করাবে, সেটা তো সহজেই বোঝা যায়। তাই ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।

 

রেফারেন্স:

 

১)https://caravanmagazine.in/health/epidemiologists-say-india-centre-disease-control-withheld-covid-19-data-since-pandemic-began

 

২)https://www.huffingtonpost.in/entry/icmr-mistakes-waste-india-lockdown-covid-test-kit-shortage_in_5eae2dabc5b69a795518cd39

 

৩)https://www.hindustantimes.com/india-news/chhattisgarh-minister-s-etweet-sets-up-row-in-andhra-pradesh-but-might-save-millions/story-34ZF76uAInwskfkDjGiDxM.html

 

৪)https://www.newindianexpress.com/nation/2020/apr/25/its-final-rapid-antibody-tests-for-covid-19-shelved-for-now-2135212.html

 

৫)https://www.groundxero.in/2020/03/25/controversial-drug-hydroxylchloroquine-to-be-used-for-treating-corona-virus/)

 

৬)https://www.dnaindia.com/india/report-health-ministry-revises-discharge-policy-for-covid-19-patients-here-s-all-you-need-to-know-2824354

 

৭)https://www.indiatoday.in/amp/diu/story/coronavirus-cases-india-lockdown-1674493-2020-05-05?__twitter_impression=true 

 

লেখক : বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক পরামর্শদাতা ও প্রাবন্ধিক।

 

Share this
Leave a Comment