আমার পৃথক হওয়া যে মূলস্রোত মেনে নেবে আমি তাকেই স্বীকার করব


  • March 31, 2020
  • (0 Comments)
  • 1545 Views

আজ ৩১শে মার্চ আর্ন্তজাতিক রূপান্তরকামী দৃশ্যমানতা দিবস। আজ রাষ্ট্রের নির্দেশে সারা ভারতে লক ডাউন চলছে করোনার সংক্রমণ রুখতে। অথচ কেন্দ্র বা কোনও রাজ্যের সরকারের বিন্দুমাত্র সচেতনতা নেই এই রূপান্তরকামী মানুষগুলির এই বিপদের দিনে পাশে থাকার বিষয়ে। উপরন্তু হায়দ্রাবাদে পোস্টার পড়েছে রূপান্তরকামীদের সঙ্গে কথা বললে করোনা ছড়াবে। এই বিদ্বেষ, এই উপেক্ষা সমাজের প্রান্তিক করে রাখা এক বিরাট সংখ্যক মানুষের প্রতি অমানবিক, অসংবেদনশীল মানসিকতারই প্রকাশ। কিন্তু তারই মাঝে লড়াই চালিয়ে যান মহারাষ্ট্রের রূপান্তরকামী কবি, অধিকার আন্দোলনকর্মী দিশা পিঙ্কি শেখ। তিনি মহারাষ্ট্রের বঞ্চিত বহুজন আঘাদি দলের রাজ্য মুখপাত্র। সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন বস্তার সলিডারিটি নেটওয়ার্ক আয়োজিত ৩য় কলকাতা জনতার সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে। লিঙ্গ পরিচিতি, জাতের পরিচিতি, কবিসত্তা, মূলস্রোতের সংজ্ঞা এইসব নিয়ে সুদর্শনা চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রাণখোলা আলোচনায় দিশা পিঙ্কি শেখ

 

 

প্র: শুরুতেই আপনার কাছে যেটা জানতে চাইব, আজকের দিনে এই যে পরিচিতি ভিত্তিক যে রাজনীতি – লিঙ্গ জাতের পরিচিতি ভিত্তিক, শ্রেণী পরিচিতি ভিত্তিক, লিঙ্গ পরিচিতি ভিত্তিক – আপনার কাছে তা কতটা জরুরি আর ভারতে এর ভবিষ্যতই বা কী?

 

উ: এই যে ‘ভিত্তি’ বা ‘ভিত’ আমি এই শব্দটাকেই ‘আন্ডারলাইন’ করতে চাইব। কারণ একটি ভালো সমাজের ভিত্তি হল – শ্রেণী থেকে বেরিয়ে শ্রেণীহীন হওয়া, লিঙ্গবৈষম্য থেকে বেরিয়ে লিঙ্গ নিরপেক্ষ হওয়া, জাতভেদ থেকে বেরিয়ে জাত নিরপেক্ষ সমাজ হওয়া। এই যে শ্রেণী-লিঙ্গ-জাত নিরপেক্ষ সমাজ তৈরি হওয়ার যে সফর তা ‘আইডিওলজি পলিটিক্স’ বা তার সঙ্গে যুক্ত যা কিছু তার থেকেই শুরু হয়। আমরা যে বিষয়টাকে নিয়ে কাজ করব, তা ভালোভাবে বোঝা খুব দরকার। যেমন আমরা জাতপাত নিয়ে যখন কথা বলি, বলা খুব সহজ যে সবাই এক হয়ে যাও, নিজের নিজের জাত ভুলে যাও, কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব নয়। দৃশ্যত হয়তো কোথাও জাতভেদ নেই, কিন্তু অদৃশ্যভাবে সকলের মধ্যেই জাতপাত রয়েছে। তাহলে সবার আগে তো আমাদের তাদের এটা উপলব্ধি করাতে হবে যে আপনার মনে ‘জাতপাত’ রয়েছে আর তারপর পড়াশোনা করে বুঝতে হবে যে কীভাবে এর থেকে তাকে বের করে আনা যায়। সেইজন্যই এরকম ‘জনতার সাহিত্য উৎসব’-এর মতো উৎসব খুব জরুরি। কারণ এখানে যাঁরা আসছেন, আলোচনায় অংশগ্রহণ করছেন, তাঁরা আশা করব আগামী দিনে বৈষম্যের ভাষা কম ব্যবহার করবেন, বৈষম্যমূলক চিন্তাভাবনা কম করবেন। আমি ‘কম করবেন’ – এই কথা বলছি কারণ এই দুনিয়া বৈষম্য নিয়েই চলবে, শিকড় থেকে কোনওদিনই উপড়ে ফেলা যাবে না। তবে পরিবর্তনের অভিব্যক্তি সব সময়েই বদলাতে থাকে। এই ধরনের সম্মেলনগুলি পরিবর্তনের অভিব্যক্তি বদলানোর প্রয়াস।

 

প্র: আমরা যেরকম পরিস্থিতির মধ্যে বর্তমানে রয়েছি সেখানে সর্বস্তরে, সব ক্ষেত্রে পুরুষতন্ত্র, ‘ম্যাসকুলিনিটি’ ইত্যাদির বাড়বাড়ন্তই চোখে পড়ে আর তার থেকে ক্রমাগতই হিংসার ঘটনাও বাড়ছে। পরিচিতিভিত্তিক রাজনীতিতে তাহলে এর মোকাবিলা করার জন্য কী কৌশল নেওয়া পয়োজন?

 

উ: আজ পুরুষতন্ত্রের যে রূপ দেখা যাচ্ছে, তা হাজার বছর ধরে যে বীজ বপন করা হয়েছে আজ তাই এক বিরাট বৃক্ষের চেহারা ধারণ করেছে। আর এখনও আমরা শুধু কিছু ডালপালা কাটারই চেষ্টা করছি, এতে কিছুই হবে না; কয়েক’টা ডালপালা কাটলে পুরুষতন্ত্রের বিরাট বৃক্ষের কোনও ক্ষতিই হবে না। এটি নতুন দিশায়, নতুন জায়গায় বেড়েই উঠবে। আমাদের এর শিকড়ের উপরে কাজ করতে হবে। শৈশব থেকে পুরুষতন্ত্রে ভেতরে ভেতরে শিকড় ছড়াতে থাকে। আমরা যখন শিশুদের বড় করি, তখনই পরোক্ষে তাদের পুরুষতন্ত্র শিখিয়ে দিই। যেমন – ছেলেদের কেমন হতে হবে, মেয়েদের কেমন হতে হবে, আর তারপর প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তারা যখন সঙ্গী নির্বাচন করে, তখনও আমরা আমাদের শ্রেণী, জাতি ও পছন্দের আর যা কিছু তা তাদের উপর চাপিয়ে দিই আর তাদের আরও কট্টর করে তুলি। যা কিছুর ফল ভোগ করছি, তার বীজ আমরাই বপন করেছি। সেইজন্য আমি পুরুষতন্ত্রকে একা দেখি না, পুরুষতন্ত্রের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে জাতপাত, জাতপাতের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে লিঙ্গ পরিচিতি, লিঙ্গবৈষম্যের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ভাষা, জাতিসত্ত্বা ও আরও নানা বিষয়। যদি আমাদের এর সঙ্গে লড়তে হয়, তাহলে যে নতুন প্রজন্ম রয়েছে যা এখনও যেন একতাল কাঁচা মাটির মতো, তাকে রূপ দিতে হবে। কারণ আমরা এখন যেন পরিবর্তনের ঠিক মাঝপথে রয়েছি। একদিকে যেমন আমরা পুরুষতন্ত্রের কুফল ভোগ করছি, তেমনি প্রযুক্তির কারণে পৃথিবীটা অনেক ছোট হয়ে গেছে আর বহু বিষয়ের জন্য সারা পৃথিবী একজোট হয়ে লড়াই করছে। আর আমরা যদি চাই পরবর্তী প্রজন্ম এই লড়াইয়ের শরিক হোক, তাহলে তাদের শ্রেণী-জাত-লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবেই বড় করতে হবে।

 

প্র: আমরা জাতের পরিচয়ের ভিত্তিতে বা লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কথা বলি। যদি আপনার সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গে আসি, তাহলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা – কোন্‌ বিষয়টি নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে জরুরি বলে আপনি মনে করেন? আপনার বক্তব্যে যেমন আপনি বললেন যে মহিলাদের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করতে চান…

 

উ: সবার আগে তো সমাজে সচেতনতার প্রচার, প্রসার হতে হবে। তা না হলে আমার মতো কোনও মানুষ, আমাদের ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়ের কেউ কলেজে গিয়ে পড়তে পারবেন না বা কোনও সাধারণ জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারবে না। যদি তাঁকে কাজ করতে হয় তাহলে তিনি যেখানে কাজ করবেন ও যাঁদের সঙ্গে কাজ করবেন তাঁদের সচেতন হওয়া খুব প্রয়োজন। যদি এরকম হয়, তাহলেই আমরা বলব যে – হ্যাঁ, শিক্ষাও চাই। শিক্ষা একইসঙ্গে চাই। কিন্তু যে স্কুল বা কলেজে পড়তে যাবেন সেখানে শিক্ষক বা অন্য পড়ুয়ারা যদি লিঙ্গ সচেতন, সংবেদনশীল না হন তাহলে কি তাঁরা পড়তে পারবেন? না, পড়তে পারবেন না। অত্যাচার হবে, বৈষম্য হবে, ছুঁৎমার্গ হবে, হেনস্থা হবে আর এই হেনস্থার কোনও অভিযোগও দায়ের করা যাবে না, কারণ, যাঁর কাছে অভিযোগ জানানোর কথা, তিনিই লিঙ্গ সচেতন নন। আমরা যাদের সঙ্গে থাকব তাঁদের জানা-বোঝা দরকার আমি কে ও আমি কেন এরকম, আমি সাধারণ, আমি বিশেষ নই এবং তাঁদের মতোই আমাদেরও সবকিছুর উপর অধিকার আছে। আমি কেমন পোশাক পরব, আমার ভাষা কি হবে, আমি কার সঙ্গে মেলামেশা করব বা আমার সঙ্গী নির্বাচন কী হবে – এইসব কিছুর আমার তাঁদের মতোই অধিকার আছে। এগুলি মানুষের অধিকার ও দেশের সংবিধান অনুযায়ীই আমিও এগুলি পেয়েছি। আমি যেমন তাঁদের সঙ্গী নির্বাচনকে সম্মান করি, পোশাককে সম্মান করি, তেমনি তাঁরাও আমার পোশাক, আমার শরীরী ভাষা, আমার আচার-ব্যবহার, আমার জীবনযাত্রা, আমার সঙ্গী নির্বাচন এই সবকিছুকে সম্মান করুন। এই কারণেই আমার মনে হয়, আমাদের জন্য সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এরপর আমরা শিক্ষার কথা বলব, রোজগারের কথা বলব, সংরক্ষণের কথা বলব, বাকি বিষয়গুলি এরসঙ্গে আসবে। আর এই ছুঁৎমার্গ, বৈষম্য আমাদের সঙ্গে কেন হয়? কারণ আমরা নারীদের মতো। আমার মনে হয় এই সমাজ আমাদের দিকে দেখার আগে যদি নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় তাহলে এই বিষয়গুলিতে বদল আনতে অনেকটাই সাহায্য হয়।

 

প্র: এই দেশের সরকার এখন নিরাপত্তা ও উন্নয়নের নামে এমন অনেক বিল পাশ করছে, আইন তৈরি করছে যা মানুষের অধিকারকে লঙ্ঘন করছে। সেরকমই একটি ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস (প্রোটেকশন অফ রাইটস্‌) অ্যাক্ট। যার বিরূদ্ধে সারা দেশ জুড়ে আন্দোলন চলেছে। এই বিষয়টি নিয়ে আপনার কি বক্তব্য?

 

উঃ (এই উত্তরে ‘আপনি’ অর্থে রাষ্ট্রকে বোঝানো হয়েছে) প্রথমেই বলি আমি এই ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্ট মানি না। আই অ্যাম এগেইনস্ট দিস ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্ট। কারণ এই বিল তৈরির সময়ে আপনি কোন্‌ ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের রায় নিয়েছেন? যদি আপনি ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করতে চান আর সত্যিই সৎভাবে করতে চান তাহলে এই সম্প্রদায়ের আলাদা আলাদা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা কি আপনাদের সেই কমিটিতে ছিলেন? আর আপনি কোন্‌ গাইডলাইন-এর ভিত্তিতে তা বানিয়েছেন? আমরা নালসা রায় নিয়ে কথা বলি, কিন্তু আপনারা সেই রায়ের কোনও উল্লেখই করেননি? আপনারা ২০১৯-এ যে ট্রান্সজেন্ডার বিল আনলেন তাতে বললেন যে ‘আমরা সার্টিফিকেট দেব যে তুমি ট্রান্সজেন্ডার কি না’। তো আমি এই শাসকদের বলতে চাই – কেন সার্টিফিকেট দেবেন আপনি? কোনও পুরুষ পুরুষ হওয়ার সার্টিফিকেট পান না, কোনও নারী নারী হওয়ার সার্টিফিকেট পান না, তাহলে আমি কেন কোনও কমিটির সামনে গিয়ে নিজের প্রমাণ দেব। কয়েক জনকে নিয়ে কমিটি তৈরি হবে আর তারপর তাঁরা ঠিক করবেন যে আমি ট্রান্সজেন্ডার কি না আর তারপর তাঁরা সার্টিফিকেট দেবেন। আজ দেশে যদি কোনও জাতির পরিচয়পত্র বানাতে যাও, যদি সাধারণ রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড বানাতে যাও তাহলেই কি পরিমাণ শোষন হয়! আর সেখানে আপনি আমার অস্তিত্বরই সার্টিফিকেট আনতে বলছেন, তাহলে সেখানে কি পরিমাণ শোষন হতে পারে?

 

এটি কি সংবিধানে যে ‘রাইট টু প্রিভেসি’ (গোপনীয়তার অধিকার) আছে তা লঙ্ঘন করা নয়? এটা আমার ব্যক্তিগত পরিসর, আমার ‘প্রিভেসি’। আমি কে, সেটা অন্য কেউ কেন ঠিক করবে? আমি বলছি তো যে আমি ট্রান্সজেন্ডার, তাহলে আপনাকে সেটা মানতে হবে, কিছুদিন পরে আমি যদি বলি আমি ট্রান্সজেন্ডার নই, তাহলে আপনাকে সেটাও মানতে হবে। হতে পারে যে ট্রান্সজেন্ডার আমার জীবনের একটি পর্যায়, তাহলে আপনাকে সেটাও মানতে হবে। আর সেই অনুযায়ী আপনাকে শিক্ষা দিতে হবে, রোজগার দিতে হবে, সম্মান দিতে হবে, সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিতে হবে – এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলুন না। আপনি ‘আইডেন্টিটি’, ‘পরিচিতি’ নিয়ে কেন কথা বলছেন?

 

এতে বলা হয়েছে যদি কেউ ট্রান্সজেন্ডার কোনও ব্যক্তিকে ধর্ষণ করেন তাহলে তার ৩ বছরের শাস্তি হবে, কোনও মহিলাকে ধর্ষণের শাস্তি ৭ বছর। এরকম পার্থক্য কেন? দু’জনেই সমান, দু’জনেই মানুষ। আমি তো বলব একজন পুরুষেরও যদি ধর্ষণ হয় তাহলে সেই ধর্ষণকারীরও একজন মহিলার ধর্ষণকারীর মতোই শাস্তি পাওয়া উচিত। এই বিল অনুযায়ী সমান অধিকার নেই, বৈষম্য রয়েছে।

 

তাছাড়া কিছু ছোট ছোট বিষয় রয়েছে যেগুলিকে কাগজে-কলনে চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে যে স্বেচ্ছায় ভিক্ষাবৃত্তি করলে বন্দী করা হবে না। এবার এটা কী করে প্রমাণ করা যাবে যে স্বেচ্ছায় করছে না জোর করে করানো হচ্ছে? ৩৭৭ ধারা রদ হওয়ার আগে অনেক যুগলকে পুলিস উঠিয়ে নিয়ে যেত আর এই আইনের ভয় দেখিয়ে মারধোর, শোসন, টাকা আদায় করা হত। এখন এই আইন যদি হয়, তাহলে তো হিজড়াদরও তুলে নিয়ে যাবে আর চাপ দিয়ে বলানোর চেষ্টা করবে যে কে তাঁকে ভিক্ষা করতে পাঠিয়েছে। এখন বিষয় হল যে আমরা গুরু-শিষ্য পরম্পরায় থাকি। আপনারা যেমন মা-বাবার নাম বলেন, আমরা বাবার জায়গায় গুরুর নাম বলি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি আমাদের কোনওরকম চাপ দেন। এর মানে দাঁড়াবে যে আপনি তাঁকে টার্গেট করার জন্য আমাকে ব্যবহার করবেন ও তাঁকে শোষন করবেন। আজকে যিনি শিষ্য, ভবিষ্যতে তিনি গুরু হবেন। এইভাবে আমাদের যে পরিবারপ্রথা তাকে পুরোপুরি শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারণ আপনাদের পরিবারপ্রথা তো আমরা স্বীকারই করি না। আপনি আসলে আমাদের জন্য কিছুই করছেন না। আমাদের যে ব্যবস্থা রয়েছে তার কোনও বিকল্প না করে, আপনি তাকে তুলে দিতে পারেন না। আপনার কোনও অধিকার নেই আমাদের পরিবারপ্রথাকে খারাপ বলার। যদি সেটা করেন, তাহলে বিসমকামী মানুষদের পরিবারতন্ত্রও আপনাকে তুলে দিতে হবে। কারণ শাশুড়ি সম্পর্কে যত খারাপ কথা শোনা যায়, তাতে তো তাহলে প্রমাণ হয় শাশুড়ি মাত্রেই খারাপ, বা শ্বশুর খারাপ বা পুরো শ্বশুরবাড়ি বিষয়টিই খুব খারাপ। কারণ এই পুরো বিষয়টাই দাঁড়িয়ে আছে নারীর শোষনের উপর। এবার কথা হল আমরা তো ভিন্‌গ্রহের প্রাণী নই। আমরাও তো এখানেই জন্মেছি, আপনাদের পাশেই থাকি। তাই কিছু শোষনব্যবস্থা আপনাদের থেকেই শিখেছি। কিছু খারাপ মানুষ থাকবেনই, তাদের অপরাধী হিসাবেই দেখা হোক, গোটা সম্প্রদায়কে যেন অপরাধী ভাবা না হয়। যেমন যখন একজন হিজড়ে পকেটমনারি করে, তখন তাকে একজন অপরাধী ব্যক্তি হিসাবে না দেখে বলা হয় ‘হিজড়েরা পকেট মারে’।

 

এধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ যেন না হয়। কিন্তু এই ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্ট তাতেই উৎসাহ দিচ্ছে। ব্রিটিশ শাসনের পরবর্তী সময়ে বাবাসাহেব-এর হাত ধরে আমরা যেটুকু অপরাধীর তকমামুক্ত হয়েছিলাম, এখন সরকার আবার আমাদের অপরাধী বানানোর চেষ্টা করছে।

 

প্র: আপনার কি মনে হয় নাগরিক সমাজের সামগ্রিকভাবে এই বিলটি নিয়ে আরও বেশি সোচ্চার হওয়া দরকার ছিল?

 

উ: বিষয়টা হল, এখানে যতক্ষণ পর্যন্ত না কারওর নিজের ঘরে আগুন লাগছে, ততক্ষণ কেউ নিজের লড়াইটা লড়ে না। ট্রান্সজেন্ডার বিল যখন ২০১৯-এ এল তখন আমরা ট্রান্সজেন্ডার মানুষেরা চিৎকার করে বলেছিলাম আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে, আমরা বিপদে পড়েছি, আপনারা আমাদের পাশে থাকুন। তখন খুব কম সংখ্যক মানুষ আমাদের পাশে ছিলেন। বাকিরা বলল – ট্রান্স বিল তো? ট্রান্সজেন্ডারদের সংখ্যাই বা আর কত? আমাদের কিছু যায়-আসে না। তারপরে সিএএ, এনপিআর আর এনআরসি এল। কিন্তু আমি বলব না যে, এতে আমার কি যায়-আসে। কারণ সত্যিই আমার যায়-আসে। আপনি আমাকে সমাজের বাইরের কেউ মনে করতেই পারেন, কিন্তু এই সমাজকে আমি নিজের মনে করি। এই সরকারের এই যে সার্টিফিকেট দেওয়া তা তারা আমাদের দিয়েই শুরু করেছে। আমাদের বলা হয়েছে – প্রমাণ করো যে তুমি ট্রান্সজেন্ডার। এবার বলছে প্রমাণ করো যে তুমি দেশভক্ত বা তুমি দেশের নাগরিক। এই সরকারই এমন – সার্টিফিকেট বিলি করতে থাকে।

 

যাইহোক ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের যখনই পেটের প্রশ্ন আসে, খিদের প্রশ্ন আসে – তা কিন্তু অনেক সংখ্যক মানুষের বিষয়। তাঁদের জন্য সংগঠন তৈরি করা ও লড়াই করা কিন্তু বেশ কঠিন। কারণ যাঁরা সত্তর বছর ধরে সাংবিধানিক অধিকারের লাভ ভোগ করছেন ও শিক্ষা, সংরক্ষণ, রোজগার, সংস্কার সবের পরিষেবা পাচ্ছেন, তাঁরা সংগঠিত হতে পারছেন না, তাহলে আমাদের সমাজ তো হাজার বছর ধরে পায়ের নিচে দলিত হয়ে আসছে, যাঁদের কাছে শিক্ষা পৌঁছায়নি, সামাজিক সাম্য কিছুই পৌঁছায়নি, তাঁদের কাছে লড়ার আশা করা যায় না। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও যাঁরা লড়াই করছেন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটা সমাজের অন্যান্যরা করতে পারতেন, যা তাঁরা করেননি; তাই ২০১৯-এর বিল এল আমাদের উপরে আর তারপরে এনপিআর-এনআরসি-সিএএ এল সবার উপরে…।

 

প্র: আপনি রাজনীতিতে আছেন ও সমাজকে নানাভাবে দেখেন। আমরা দেখছি বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনে ট্রান্সজেন্ডার মানুষেরা যোগ দিচ্ছেন, আপনার কথার রেশ ধরেই বলা যায় – তাঁরা মনে করছেন যে দাবীগুলি তোলা হচ্ছে, তা তাঁদেরও সাংবিধানিক অধিকার। আপনি এই বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? দৃষ্টিভঙ্গী কি বদলাচ্ছে?

 

উ: দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে ঠিকই, ‘লেকিন উও চিঁটি কি চাল হ্যায়, উও চিতে কি চাল হোনি চাহিয়ে’ (পিঁপড়ের গতিতে বদলাচ্ছে, চিতার গতিতে বদলাতে হবে)। এই যে পিঁপড়ের গতি, তার কারণ খুব কম মানুষ বদলাচ্ছেন ও তাও হিসেব কষে। কারণ অন্যের বাড়ির ট্রান্সজেন্ডার মানুষকে সম্মান করার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু নিজের বাড়িতে ট্রান্সজেন্ডার থাকলে তাঁকেও সম্মান করার মানুষের সংখ্যাও বাড়া দরকার। কারণ আজকে যদি একজন হিজড়াকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখা যায়, তারজন্য গোটা একটি পরিবার দায়ী। কারণ আপনি তাঁর অস্তিত্বটাকে স্বীকার করেননি আর তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। যদি আপনি তাঁর অস্তিত্বসহ তাঁকে গ্রহণ করে নিতেন তাহলে হয়তো সেই হিজড়া মানুষটি আজ শাড়ি পড়ে কলেজ যেতেন, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতেন, আপনার বিসমকামী সন্তানের মতো কোনও সঙ্গী নির্বাচন করে আনতেন, ঘরে থাকতেন, পরিবার গড়ে তুলতেন, জরুরি নয় যে সন্তান গর্ভজাতই হতে হবে হয়তো তিনি সন্তান দত্তক নিতেন। সমাজ এমনটা হতে দেয়নি। এবং আজও এরকম যাঁরা করেন, তাঁদের বিরোধিতাই করা হয়। অবশ্য সহানুভূতির পরিমাণ বেড়েছে। মানে ‘সিমপ্যাথি’ বেড়েছে, আশা করা যায় তা দ্রুত বেশি করে ‘এমপ্যাথি’তে পরিণত হবে আর তা হচ্ছেও। আজকে যদি দেখেন বিচারপতি, শিক্ষক, লেখক, রাজনীতিবিদ সবক্ষেত্রেই আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। এই বিষয়টির আরও উন্নতি ঘটে, এঁদের সংখ্যা বাড়া প্রয়োজন।

 

প্র: আপনি আপনার বক্তব্যে বলছিলেন কংগ্রেস-এ ট্রান্সজেন্ডার কম্যিউনিটি থেকে যিনি নির্বাচিত হয়েছেন অপ্সরা রেড্ডি তাঁর নির্বাচনেও উঁচু জাত ও শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। আপনি নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করেন, আপনার সম্প্রদায়ের মধ্যে কীভাবে আপনাকে দেখা হয়? মানে, ইনি আমাদেরই একজন, না কি ইনি তো সেমিনার-এ যান, বক্তব্য রাখেন, রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন…

 

উ: না, আমাকে সম্প্রদায়ের একজন বলেই দেখা হয়। কারণ যখন আমি সেমিনার থেকে ঘরে যাই আমি আর সেমিনারের থাকি না। কারণ বাড়ি ফিরে আমি তাঁদের সঙ্গেই সব্জি কাটা থেকে ভিক্ষা ‘মাঙ্গতে’ যাওয়া বা তাঁরা যে সাংস্কৃতিক নাচ করেন, সেখানে যাওয়া সবেতেই থাকি। আমি চারটে বই বেশি পড়েছি বলে ‘আই ডোন্ট লাইক দিস’ মার্কা ‘অ্যাটিটিউড’ আমার নেই আর থাক উচিতও নয়। তাহলেই মানুষ আমাকে তাঁদের সঙ্গে রাখবে আর তাই-ই হয়। আর আমি তাঁদের কথা বলি। এখনও আমি যত কথাই বলেছি, তার সবটাই আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির কাঠামো মাথায় রেখে বলা। কারণ তাঁরা ছাড়া আমার কোনও অস্তিত্ব নেই। আমার নিজের মা-বাবা যখন লাথি মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল তখন এই পরিবারই আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল। আজকে যখন আমি কিছুটা লেখাপড়া করেছি তখন আমি তাদের সংস্কৃতি, তাঁদের ভেতরের বিষয়গুলি মানুষকে আন্ডারলাইন করে দেখাবো। আমি সম্প্রদায়ের ভেতরের যে খারাপ জিনিসগুলি সেগুলিও তুলে ধরব, তার বিরূদ্ধে লড়বও, কিন্তু বাইরের লড়াই শেষ হলে তারপর ভেতরের লড়াইটা লড়া যাবে। বাইরের পরিবেশটা নিরাপদ হওয়া দরকার। তাই আমার সমাজ আমার সঙ্গেই আছে। আমার গুরু-ই আমাকে বলেন বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কথা, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য উৎসাহ দেন। আমার একজন ‘নানি’ আছেন, তিনি বলেন “দিশা যখন মঞ্চে উঠে রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তৃতা দেয় তখন ৭০% রাজনীতির কথা বলে আর ৩০% নিজের, আমাদের কথা ঢুকিয়ে দেয়।” আমার উপর ওঁনাদের এই ভরসা আছে যে আমি পুরোপুরি রাজনীতিবিদ হয়ে যাব না। সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার যে যোগ তা কখনও ছিন্ন হবে না। আর যতক্ষণ তা আছে ততক্ষণ আমার সঙ্গে আমার পুরো সম্প্রদায় থাকবে, সে বিশ্বাস আমারও আছে।

 

প্র: আপনি একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র। আবার আপনার নিজের লিঙ্গ পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতিও আছে। একদিকে জাতের পরিচয়, আরেক দিকে লিঙ্গ পরিচয়। আপনি কোন্‌টিকে অগ্রাধিকার দেবেন?

 

উ: বিষয়টা কী তার উপরে অগ্রাধিকার নির্ভর করবে। যদি দেখি যে বিষয়টি ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের অধিকারকেন্দ্রীক, আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইছি অথচ আমার দল সেই বিষয়টিকে তুলে ধরছে না, তাহলে আমি আমার সম্প্রদায়ের সঙ্গে থাকব। আবার যদি এমন হয় যে কোনও সামাজিক ইস্যুতে দল চাইছে কথা বলা প্রয়োজন অথচ আমার সম্প্রদায় চাইছে আমি তা নিয়ে কথা না বলি, তাহলে আমি আমার দলের সঙ্গে থাকব।

 

প্র: একজন ব্যক্তি মানুষ হিসাবে আপনার কাছে কোন্‌টা আগে – জাতভিত্তিক পরিচয় না লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়?

 

উ: দেখুন, আমার জায়গা থেকে আগে রাখব লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়কে। তারপরে জাতভিত্তিক পরিচয়। এরপরে আসবে শ্রেণীভিত্তিক পরিচয়। তারপরে আসবে ভাষার উপর ভিত্তি করে যে প্রান্তিকতা তৈরি হয় সেই ভিত্তিতে পরিচয়। এই যে সবার আগে লিঙ্গভিত্তিক পরিচয় থাকা সেটা অদৃশ্যভাবে ছিল। লোকে ভাবত যে আমি জাতভিত্তিক পরিচয়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। আমি কিন্তু প্রথমে লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়ের মুখোমুখি হয়েছি, তারপরে এসেছে জাতের পরিচয়। তাই আজও যদি আমাকে বেছে নিতে হয় তাহলে আমি লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়কেই বেছে নেব। কারণ লিঙ্গপরিচিতি নিয়ে লড়ার জন্য কেউ নেই, জাতের পরিচিতি নিয়ে লড়াইয়ের জন্য অনেকেই আছেন।

 

প্র: আপনি কখন বুঝতে পারলেন যে শব্দই হল সেই মাধ্যম যা দিয়ে আপনি নিজেকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারছেন? আর সেই শব্দগুলো আপনাকে লিখতে হবে…

 

উ: আমি আগে থেকেই লিখতাম। কিন্তু এর গুরুত্ব আরও বুঝলাম আমার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর।

 

প্র: সেটা কোন্‌ সাল ছিল?

 

উ: ২০১৩। খুব গভীর উপলব্ধি দিয়ে লেখা শুরু করেছি ৫,৬ বছরই হয়েছে। তার আগে তো প্রেম-ভালবসা, পাতা-ফুল, পাহাড়-ঝর্ণা এসব নিয়েই লিখতাম। কিন্তু গভীরতার সঙ্গে লিখতে শুরু করলাম ‘ব্রেক-আপ’-এর পরে, কারণ যেজন্য আমার ব্রেক-আপ হয়…আমার সঙ্গী ভুল ছিল না। তিনি যে কারণগুলি বলেছিলেন সেগুলি খুব সৎ ছিল, তিনি বুঝিয়ে বলেন আর আমিও বুঝতে পারি। কিন্তু আমি যখন সেই কারণের কারণ খুঁজছিলাম তখন আমি পুরুষতন্ত্র, প্রজননক্ষমতা, সম্পর্কের রাজনীতি, পরিবারতন্ত্র, মহিলাদের পপতি দৃষ্টিভঙ্গী, মহিলাদের শোসন, ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এইসব কিছু বুঝতে ধীরে ধীরে বুঝতে পারি। আমার তখন মনে হল ফলাফের বিরূদ্ধে না লড়ে, যে কারণে এই ফল বরং তার বিরূদ্ধে লড়ি। আর তারপর সেই লড়াইটাকে আমি শব্দে বুনতে শুরু করি।

 

প্র: আপনার এই লেখালেখির জগৎ নিয়ে আপনার কী ভাবনা রয়েছে? ভবিষ্যতে কি কোনও প্রকাশনা খুলতে চান, যেখানে থেকে প্রান্তিক মানুষদের লেখা প্রকাশিত হবে?

 

উ: আমি আমাদের আলাদা কিছু করতে চাই না। চাই না যে আমাদের আলাদা প্রকাশনা হোক, আমাদের আলাদা শৌচালয় হোক। আমি আগেই বলেছি – আমি সাধারণ হতে চাই, বিশেষ নয়। আমি চাই প্রকাশনা সংস্থাগুলো এতটা লিঙ্গসচেতন হোক, যাতে তারা আমাদের সম্প্রদায়ের লেখাগুলি একটুও না বদলে, আমাদের ভাষাকে সভ্য-অসভ্যের বিচার না করে, ছাপে, প্রকাশ করে। আমি এরজন্য তাদের সঙ্গে ‘অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম’ করতে পারি। আমি যদি কখনও হিজড়াদের প্রকাশনা সংস্থা খুলি, তাহলে সেখান থেকে শুধু হিজড়াদের লেখা প্রকাশিত হবে না, আমি চাইব যাঁরা প্রতিষ্ঠিত লেখক, যাঁরা বিদ্রোহী লেখক, বিভিন্ন ভাষার লেখক, সবার লেখাই যেন ছাপতে পারি।

 

আচ্ছা, শৌচালয়ের প্রসঙ্গটা যখন উঠলই তখন কয়েক’টা কথা বলেই ফেলি। আমি মনে করি, শৌচালয়ে কেউ প্রেম বা রোম্যান্স করতে যায় না, কোনও প্রাকৃতিক কারণেই যায়। এবার সেখানে যদি লিঙ্গ পরিচিতি চলে আসে, তার মানে আপনার মাথার মধ্যে লিঙ্গ বিষয়টি গেঁড়ে বসে রয়েছে। আর আপনার মধ্যে লিঙ্গ নিরপেক্ষতা নেই। আপনার পাশে কে ‘বাথরুম’ করছে, আপনার নজর সেইদিকে! আমি লিঙ্গ নিরপেক্ষ শৌচালয়ের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নারী-পুরুষ বা যে যাঁর নিজের পছন্দের লিঙ্গ পরিচিতি নিয়ে প্রবেশ করবেন, ‘বাথরুম’ করবেন ও চলে যাবেন। দেশ কবে এতটা লিঙ্গ বিষয়ে উদারমনস্ক হবে, জানা নেই। মুশকিল হচ্ছে সবাই যদি নিজেদের যৌন ও লিঙ্গ পরিচিতি অনুযায়ী শৌচালয় চাইতে শুরু করেন তাহলে কত শৌচালয় বানানো যেতে পারে!

 

প্র: একটা কথা আমার মাথায় প্রায়ই ঘোরে যে এই যে মূলস্রোতের কথা বলা হয়, এই মূলস্রোতটা ঠিক কী? কাদের তৈরি করা? যেমন ধরুন, আপনি যে সংবাদপত্রে কলাম বা অন্যান্য লেখা লেখেন এটা কি আপনার কাছে মূলস্রোতে থাকা?

 

উ: সামাজিক ভাষায় হয়তো একেই মূলস্রোত বলবে। তবে আমি মনে করি আমার স্রোতের ধারার সঙ্গে এসে যে আমাকে সঙ্গে নেবে তাই মূলস্রোত। আমার অস্তিত্ব, আমার ভাষা, আমার সংস্কার-সংস্কৃতিকে শেষ না করে এটা হতে হবে। মূলস্রোত যখনই কিছুকে আত্মস্থ করে, তার বৈচিত্র্যকে নষ্ট করে তারপর গ্রহণ করে। আমরা আদিবাসীদের মূলস্রোতে এনে তাঁদেরও পিতৃতান্ত্রিক করে তুলি। আমরা গ্রামের জীবনকে মূলস্রোতে আনার কথা বললে তাদেরও শহুরে করে তুলি। আমরা আসল বাঙালি, আসল মারাঠি বললে – এই ভাষার তাবৎ উপশাখা-উপভাষাগুলিকে অসভ্য ঠাউরে নিই ও তাদের সভ্য ভাষা শেখাই ও বলি তাঁরা মূলস্রোতে এসে গেছেন। এই মূলস্রোতকে আমি স্বীকার করি না। আমার পৃথক হওয়াটা যে মূলস্রোত মেনে নেবে আমি তাকেই স্বীকার করব।

 

Share this
Leave a Comment