নাগরিকত্ব বাঁচানোর লড়াই, সংবিধান ও বামপন্থা


  • February 17, 2020
  • (2 Comments)
  • 3401 Views

সংবিধান রক্ষার বিভ্রান্তিমূলক সড়কে সওয়ারি না হলে বামপন্থীদের চোখে পড়ত এই আন্দোলনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শ্লোগান – ‘আজাদি’। ক্ষুধা, বেকারত্ব, জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের থেকে আজাদির দাবি যত শক্তিশালী হবে তত সংবিধানের মায়া-কাজল চোখ থেকে সরে গিয়ে পূর্ণ প্রজাতন্ত্রের স্বপ্ন জাগরূক হবে, শ্রমজীবী মানুষ দাবি তুলবেন সংবিধানের খোল-নলচে বদলে দেওয়ার। লিখেছেন সুমন কল্যাণ মৌলিক

 

জীবনের একান্নটা শীতকাল পার করে এলাম, কিন্তু মনে পড়ে না কখনও এর আগের অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে এতো হর্ষ-উল্লাস ও সচেতন প্রয়াসে বামপন্থীদের প্রজাতন্ত্র দিবস উদ্‌যাপন করতে দেখেছি। প্রজাতন্ত্র দিবসে রাস্তার মোড়ে-মোড়ে ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ, চোয়াল শক্ত করে সংবিধান রক্ষার কঠিন শপথ নেওয়া এবং বুঝে হোক বা না বুঝে সংবিধানকে সর্বরোগহর বটিকা হিসাবে প্রচার করার চেষ্টা – এসব কিছুই আগে কখনও দেখা যায়নি। কেউ বলতেই পারেন এতে সমস্যা কোথায়? হ্যাঁ, সমস্যা আছে, যা এই কথকতার প্ররোচনা।

 

এ কথা অনস্বীকার্য যে ২০১৪ সালে ৫৬ ইঞ্চি ছাতি বিশিষ্ট ‘আচ্ছে দিন’-এর ফেরিওয়ালা ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীর তখ্‌তে বসার পর এ দেশের শ্রমজীবী মানুষদের উপর, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষদের উপর, মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীদের উপর ধারাবাহিক আক্রমণ নেমে এসেছে। নোটবন্দী, জিএসটি, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বিলগ্নীকরণ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আক্রমণ, সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের নামে বিরুদ্ধ চিন্তার উপর আঘাত, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ও ৩৫ ক বিলোপ, কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেট স্বার্থে চরম অবহেলা, যে কোনও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের বিরূদ্ধে ইউএপিএ প্রয়োগ – কাগজ শেষ হয়ে যাবে কিন্তু রাষ্ট্রীয় অত্যাচারের তালিকা শেষ হবে না। এর পিছনে একটা নির্দিষ্ট মতাদর্শ আছে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতৃত্ব আছে, সঙ্গে আছে ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’ তৈরি করার ঘোষিত অ্যাজেন্ডা। এনআরসি, সিএএ, এনপিআর সেই আক্রমণেরই ধারাবাহিকতা এবং আরও ভয়ঙ্কর। এই নতুন নাগরিকত্ব আইন শুধু হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণকেই তীব্র করবে না, একইসঙ্গে দরিদ্র সুযোগবঞ্চিত মানুষদের আরও বিপন্ন করে তুলবে। শুধু সংখ্যালঘু নয়, দলিত আদিবাসী তথা গরীব মানুষদের বিপদও বাড়বে। দেশহীন, কাগজপত্রহীন গরীব মানুষদের ডিটেনশন ক্যাম্পে চালান করা হবে, কর্পোরেটদের জন্য সস্তা শ্রমের জোগান বাড়বে। অর্থাৎ, নাগরিকত্ব সমস্যার একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীচরিত্র আছে।

 

আশার কথা কাশ্মীরের ক্ষেত্রে না হলেও নাগরিকত্বের উপর আক্রমণের বিরূদ্ধে দেশের একটা বড় অংশের মানুষ প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। যদিও প্রতিবাদের মাত্রা ও ধরন সারা দেশে এক রকম নয়। আর এই আন্দোলনে বামপন্থীদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। তাঁরাই বলার চেষ্টা করছেন এনআরসি, সিএএ, এনপিআর আলাদা কিছু নয়, বরং ধর্মীয় মেরুকরণের বৃহত্তর চক্রান্তেরই অংশ। বিজেপি বিরোধী কিন্তু দক্ষিণপন্থার সমর্থক রাজনৈতিক দল বা গণ সংগঠন এনপিআর প্রসঙ্গে প্রথমে বিভ্রান্তিমূলক অবস্থান নিলেও বামপন্থীরা সেই ভুল করেননি। আর এ কথাও নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে যে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর এই প্রথমবার গণবিক্ষোভের চাপে মোদি সরকার কিছুটা হলেও থমকেছে।

 

কিন্তু সমস্যা হল নাগরিকত্ব সংশোধন বিরোধী আন্দোলন ধীরে ধীরে সংবিধান রক্ষার লড়াইতে পরিণত হচ্ছে এবং বামপন্থীরাও পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে এই নতুন লড়াইতে শামিল হচ্ছেন। এমন একটা ভাব করা হচ্ছে যেন সংবিধানে সবকিছু ঠিকঠাক আছে, মোদি-অমিত শাহ্‌ নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানকে অস্বীকার করে দেশ শাসন করছে বলে দেশের মানুষের আজ এত দুর্ভোগ। তাই সংবিধান রক্ষার লড়াইতে শামিল হওয়াই আজ প্রধান কর্তব্য। আমার আপত্তিটা ঠিক এইখানেই। সংবিধানের এহেন মূল্যায়ন (তা যে পরিস্থিতির চাপেই হোক না কেন) আন্দোলনকে শুধু পথভ্রষ্টই করবে না, তার সম্ভাবনাময় অন্তর্বস্তুর ক্ষয় করবে। আমরা যদি সংবিধান রচনার ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরাই, তাহলে দেখতে পাব দেশের ২৬ শতাংশ মানুষের ভোটের ভিত্তিতে সংবিধান সভার প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন এবং কোনও গণভোট ছাড়াই তা ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি লাগু হয়। এই সংবিধান তাই প্রথম থেকেই সমাজের এলিট শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে। ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রণয়ন করা জনবিরোধী আইনগুলি নতুন জমানায় বহাল তবিয়তে বিরাজমান থাকে। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন থেকে দানবীয় ইউএপিএ – সমস্ত কিছুরই উৎস ভারতীয় সংবিধান। ’৫০ পরবর্তী দেশের শাসকেরা তাঁদের স্বার্থ মোতাবেক যথেচ্ছভাবে সংবিধানে সংশোধন ও সংযোজনী আনে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ও ৩৫ ক বিলোপের বিরুদ্ধে আমরা এত কথা বলছি, কিন্তু এর সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে এটাও বলা প্রয়োজন যে কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে খর্ব করার জন্য জাতীয় কংগ্রেস ধারাবাহিকভাবে ৩৭০ ধারাকে নিষ্ক্রিয় করেছে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। এই সংবিধানের মতাদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে দেশের আইন, আদালত ও অন্যান্য প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান। এই সংবিধানের মধ্যেই আছে অসংখ্য জনবিরোধী ছিদ্র যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি তার প্রকল্পিত হিন্দু ভারত নির্মাণ করতে চাইছে। ১৯৭৪ সালে প্রস্তাবনায় সংশোধনীর মাধ্যমে যে ধর্ম নিরপেক্ষতার ধারণাটি যুক্ত করা হয় তার সঙ্গে ধর্ম নিরপেক্ষতার ধ্রুপদী ধারণার কোনও মিল নেই। এ দেশে ধর্ম নিরপেক্ষতার অর্থ রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে ধর্মকে বিযুক্ত করা নয় বরং সকল ধর্মের সহাবস্থান। যত দিন যাচ্ছে পরিষ্কার হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের প্রতি আইনি পক্ষপাত, যার অতি সাম্প্রতিক উদাহরণ অযোধ্যা মামলার রায়। পৃথিবীর খুব কম দেশের সংবিধানে জরুরি অবস্থার মতো এক চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী অগণতান্ত্রিক আইন রয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে সংবিধান একটি নির্দিষ্ট শ্রেণী স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে যা দেশের শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের বিরোধী। তাই এই সংবিধানকে রক্ষা করার ডাক দেওয়া কোনওভাবেই বামপন্থীদের কাজ হতে পারে না।

 

আরেকটা সমস্যা হল আন্দোলনের এই রূপে প্রচ্ছন্নভাবে রয়েছে জাতীয়তাবাদের ফাঁদ। এ কথা কারোও অজানা নয় যে বিজেপি-র রাজনৈতিক কৌশলের অন্যতম উপাদান হল উগ্র জাতীয়তাবাদ। ছদ্ম দেশপ্রেমের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে বাজিমাতের চেষ্টা। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সামরিক ট্যাঙ্ক বসানোর প্রস্তাব, এক কিলোমিটার লম্বা জাতীয় পতাকা প্রদর্শন, বল্লভভাই প্যাটেলের দীর্ঘতম মূর্তি আসলে প্রতীকসর্বস্ব ছদ্ম দেশপ্রেমের নিরন্তর অনুশীলন, কিছু কল্পিত গণশত্রুকে চাঁদমারি করে হিন্দু আবেগকে সংহত করাই যার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এই উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রকল্পের বিরুদ্ধ কর্মসূচী কখনোই পাল্টা জাতীয়তাবাদ হতে পারে না। কারণ বামপন্থীদের কাছে দেশপ্রেম অনেক বৃহত্তর শব্দ যেখানে দেশ মানে মানুষ, তাদের ভালো-মন্দ, তাদের বেঁচে থাকার লড়াই। বিজেপি-র থেকে আমরা কম দেশপ্রেমী নই – এটা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা আসলে এক দক্ষিণপন্থী ন্যারেটিভ যা দেশ বেচার কারিগরদের দেশপ্রেমিক হিসাবে মান্যতা দেয়। ইতিহাস সাক্ষী যে বামপন্থীদের কাছে এই ফাঁদ বারবার আসে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘পিতৃভূমি রক্ষার জন্য যুদ্ধ কর’ এই শ্লোগানে যখন ইওরোপের বহু বামপন্থী দল ও নেতৃত্ব মাতোয়ারা, তখন সেই যুদ্ধকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির লড়াই বলে সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন লেনিন। ফল কী হয়েছিল তা আমাদের সকলের জানা। এ দেশে ১৯৬২ সালে ভারত-চীন সীমান্ত যুদ্ধের সময় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বামপন্থীদের বিরূদ্ধে জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে চরম প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল। বামপন্থী নেতৃত্বের কিয়দংশ দোদুল্যমান অবস্থান নিলেও সাধারণভাবে বামপন্থী কর্মীরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে সেই প্ররোচনাকে পরাজিত করতে পেরেছিল। আজও বিজেপি-র বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক জোটকে দক্ষিণপন্থীদের একটা অংশ বিকল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, তারাও তাদের আচরিত রাজনীতিতে সফট্‌ হিন্দুত্বকেই ব্যবহার করে। বর্তমানে কংগ্রেস-এর নেতৃত্বে গো-বলয়ের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে (মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান) যেভাবে সরকার চালাচ্ছে তাতে হিন্দুত্ববাদীদের রাজনীতির ছাপ স্পষ্ট। তাই মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপির মিলিজুলি সরকার তৈরি করতে অসুবিধা হয় না, যেমন অসুবিধা হয় না সেই সরকারের পক্ষ থেকে মুম্বইতে আন্দোলনরত মানুষদের উপর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করতে।

 

এতক্ষণ পর্যন্ত আমার বক্তব্য পড়ার পর কারওর মনে হতে পারে যে আমি বোধহয় শাহিনবাগ ও তার অনুপ্রেরণায় গড়ে ওঠা বাংলায় পার্ক সার্কাস, আসানসোল, বহরমপুর বা ভারতের বহু প্রান্তে গড়ে ওঠা অবস্থান-আন্দোলনকে নাকচ করতে চাইছি। সবিনয়ে জানাতে চাই নাকচ নয় বরং সর্ব অর্থেই ঐতিহাসিক এই আন্দোলনকে কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় নেই। কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাও বলতে চাই যে পার্ক সার্কাস সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা ধারাবাহিক অবস্থান আন্দোলনগুলি মূলত দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মুসলমানদের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ হিসাবে সীমায়িত হয়ে রয়েছে। আমাদের ব্যর্থতার কারণে তা এখনও সব ধর্মের মানুষের প্রতিরোধে রূপান্তরিত হতে পারেনি। এ দেশে শুধুমাত্র ধর্ম পরিচয়ে মুসলমান হওয়ার কারণে একজনকে অনেক বেশি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা ধরে নিই মুসলমান মানেই তার অনেকগুলি সন্তান, ক্রিকেট ম্যাচে ভারতের বিরূদ্ধে পাকিস্তান জিতলে সে খুশি হয়। তাই তাকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া যায় না, বরং যখন-তখন পাকিস্তানে চলে যাওয়ার নিদান হাঁকা যায়। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত রাষ্ট্র গঠিত না হলেও মুসলমানরা প্রথম থেকেই সামাজিক বিযুক্তির শিকার যা বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। আজ তাঁদের প্রতি মুহূর্তে দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিতে হয়। তাই তাঁদের অস্তিত্ব বাঁচানোর সংগ্রাম, এ দেশকে ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁদের লড়াই অবশ্যই অন্যরকম হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন বামপন্থীদের নিয়ে, যাঁদের দায় ও কর্তব্যের প্রশ্নটি ভিন্ন।

 

বামপন্থীরা যদি তাঁদের মতাদর্শে ভরসা রেখে আন্দোলনে অংশ নিতে পারতেন তাহলে দু’টি গুণগত পরিবর্তন সাধিত হতে পারত। প্রথমটি অর্থনৈতিক। নব্বইয়ের দশকে বিশ্বব্যাঙ্ক-আইএমএফ-এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক প্রভৃতি আর্ন্তজাতিক অর্থ লগ্নীকারি সংস্থাগুলির অভিভাবকত্বে এবং নরসিমহা রাও-মনমোহন সিংদের পৌরোহিত্যে উদারিকরণ-বেসরকারিকরণ-ভুবনায়নের শ্লোগান আউড়ে যে আর্থিক সংস্কার নীতি চালু হয়, আজ তিরিশ বছর পরে তার ফল আমাদের সবার কাছে পরিষ্কার। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, অভূতপূর্ব বেকারি, ক্রমহ্রাসমান বৃদ্ধি, প্রতি ঘন্টায় কৃষকের আত্মহত্যা, রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ কর্পোরেট হাঙরদের কাছে জলের দরে বিক্রি – সবটাই দেউলিয়া অর্থনীতির ছবি। এই লুঠেরা অর্থনীতির বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের প্রতিবাদ যাতে দানা বাঁধতে না পারে তার জন্যই মেরুকরণের রাজনীতি, নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার হুমকি। বামপন্থীরা এই অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে পারতেন।

 

দ্বিতীয় বিষয়টি হল সংবিধান রক্ষার বিভ্রান্তিমূলক সড়কে সওয়ারি না হলে বামপন্থীদের চোখে পড়ত এই আন্দোলনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শ্লোগান – ‘আজাদি’। ক্ষুধা, বেকারত্ব, জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের থেকে আজাদির দাবি যত শক্তিশালী হবে তত সংবিধানের মায়া-কাজল চোখ থেকে সরে গিয়ে পূর্ণ প্রজাতন্ত্রের স্বপ্ন জাগরূক হবে, শ্রমজীবী মানুষ দাবি তুলবেন সংবিধানের খোল-নলচে বদলে দেওয়ার। আমরা যেন ভুলে না যাই যে বিজেপিকে ঠেকাতে আরেকটি দক্ষিণপন্থী দলের লেজুড় হয়ে নির্বাচনী পাটিগণিতে জয়লাভ করা নয়, এ আন্দোলন এক বিকল্প রাজনীতির ছবি দেখাচ্ছে। এই অসীম সম্ভাবনাময় গণ আন্দোলনের প্রকৃত তাৎপর্য বামপন্থীরা এখনো উপলব্ধি করতে পারছে না, বরং তাদের কর্মসূচি সাংবিধানিক প্রকরণেই সীমাবদ্ধ থাকছে – এটাই যন্ত্রণার।

 

 

লেখক স্কুলশিক্ষক  গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী। মতামত লেখকের নিজস্ব। 

 

ছবি – The Print, The Wire ও ইন্টারনেটে অন্যত্র

 

Share this
Recent Comments
2
Leave a Comment