ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম লিমিটেড: আরেকটি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বিক্রি হয়ে যাওয়ার কাহিনী


  • February 23, 2025
  • (0 Comments)
  • 345 Views

নব্বই এর দশকে আর্থিক পুনর্গঠনের নামে বাজার অর্থনীতির যে আগ্রাসন শুরু হয়, তা ইতিমধ্যেই দেশের বহু রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করে দিতে সমর্থ হয়েছে। এই আগ্রাসন ঠেকানোর ক্ষেত্রে ভারতের মূল ধারার ট্রেড ইউনিয়নগুলো দু একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে সেভাবে বাস্তবে কোন লড়াই গড়ে তুলতে পারে নি। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থায়ী শ্রমিকেরা বেসরকারিকরণকে তাদের অনিবার্য ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ফেরো স্ক্র্যাপের বেসরকারিকরণ তাই আলাদা কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারছে না। তবে এবারও যদি আমরা যেভাবে এই সংস্থাটিকে বিক্রি করা হল, সেই পদ্ধতিটিকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব কর্পোরেট হাঙরদের কাছে দেশের সম্পদ বিক্রি করার নীল নকশটাই কাজ করেছে। লিখলেন সুমন কল্যাণ মৌলিক

 

Groundxero | Feb 23, 2025

 

দেশের মানুষের অর্থ ও শ্রমে তৈরি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে জলের দামে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দেওয়ার ইতিহাস অব্যাহত। সাম্প্রতিক উদাহরণটি হল মাত্র ৩২০ কোটি টাকার বিনিময়ে ধারাবাহিক ভাবে লাভজনক ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম লিমিটেডকে (এফএসএনএল) জাপানি সংস্থা কোনোইকি ট্রান্সপোর্টের হাতে তুলে দেওয়া হল। এ ব্যাপারে জনমানসে তেমন কোন আলোচনাও নজরে এল না। সম্ভবত ফেরো স্ক্র্যাপ কারখানা হিসাবে সাধারণত খুব একটা পরিচিত না হওয়ায় এবং ধারে-ভারে তুলনায় ছোট হওয়ায় বিষয়টা আলোচনার বৃত্তের বাইরেই থেকে গেছে। আরেকটি বিষয় হল, নব্বই এর দশকে আর্থিক পুনর্গঠনের নামে বাজার অর্থনীতির যে আগ্রাসন শুরু হয়, তা ইতিমধ্যেই দেশের বহু রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করে দিতে সমর্থ হয়েছে। এই আগ্রাসন ঠেকানোর ক্ষেত্রে ভারতের মূল ধারার ট্রেড ইউনিয়নগুলো দু একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে সেভাবে বাস্তবে কোন লড়াই গড়ে তুলতে পারে নি। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থায়ী শ্রমিকেরা বেসরকারিকরণকে তাদের অনিবার্য ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ফেরো স্ক্র্যাপের বেসরকারিকরণ তাই আলাদা কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারছে না। তবে এবারও যদি আমরা যেভাবে এই সংস্থাটিকে বিক্রি করা হল, সেই পদ্ধতিটিকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব কর্পোরেট হাঙরদের কাছে দেশের সম্পদ বিক্রি করার নীল নকশটাই কাজ করেছে।

 

আমরা সবাই জানি যে লৌহ আকরিক হল ইস্পাত তৈরির প্রধান কাঁচামাল এবং একই সঙ্গে ইস্পাত কারখানাগুলে যেহেতু জ্বালানী হিসাবে কয়লা ব্যবহার করে তাই গোটা প্রক্রিয়াতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ হয়। কার্বন দূষণের বিষয়ে দুনিয়া জুড়ে ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত দুশ্চিন্তা এবং কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যে ইস্পাত কারখানাগুলো নানান ধরণের বিকল্পের সন্ধান করছে যেমন হাইড্রোজেন, বিদ্যুৎ, কোল গ্যাসিফিকেশন ইত্যাদি। এই প্রেক্ষাপটে তাই স্ক্র্যাপ প্রসেসিং সহনশীল পদ্ধতিতে ইস্পাত উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ। স্ল্যাগ থেকে লোহাকে পুনরুদ্ধার করে তাকে পুনরায় ইস্পাত নির্মাণে কাজে লাগানো হয়। এই কাজটাই করে ফেরো স্ক্র্যাপ যার প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ, কেন্দ্রে তখন জনতা দলের সরকার। ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম তাই প্রথম দিন থেকে সরকারি মেটাল স্ক্র্যাপ ট্রেড কর্পোরেশনের ১০০ শতাংশ অধীনস্থ একটি সংস্থা যারা বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানাগুলোর ভেতরে স্ক্র্যাপ প্রসেসিং এর কাজ করে। এই কারণে এই কোম্পানির নিজের কোন জমি নেই, এমনকি কোম্পানির সদর দপ্তর ছত্তিসগড়ের ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টের সীমানার মধ্যে অবস্থিত। এই কোম্পানির রয়েছে এক দক্ষ কর্মীবাহিনী, যন্রপাতি এবং অবশ্যই কাজ করার আধুনিক প্রযুক্তি। জন্মের সময় থেকে ফেরো স্ক্র্যাপ দেশের প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানা ভিলাই, রাউরকেল্লা, বোকারো ও পূর্বতন ইস্কো বার্ণপুরে কাজ করত। ১৯৯১ সালে কোম্পানি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় কাজ শুরু করে, আগে এই কারখানায় স্ক্র্যাপের কাজ করত টমাস মুগেট অ্যান্ড কোম্পানি। এগুলো ছাড়াও এই মুহূর্তে ফেরো স্ক্র্যাপ নিগমের উপস্থিতি রয়েছে দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট, তামিলনাড়ুর সালেম স্টিল প্ল্যান্ট, অন্ধ্রপ্রদেশের ভাইজাগ স্টিল প্ল্যান্ট, নীলাচল ইস্পাত নিগম লিমিটেড, আর্সেলরমিত্তল নিপ্পন স্টিল ইন্ডিয়া, মিশ্র ধাতু নিগম (হায়দ্রাবাদ), ভারত হেভি ইলেকট্রিকালস লিমিটেড (হরিদ্বার), বিশ্বেশরাইয়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল প্ল্যান্ট (কর্নাটক) ইত্যাদিতে। এই কোম্পানি তার দক্ষতা ও বিশ্বাস যোগ্যতার কারণে ‘মিনি রত্ন’ অভিধায় ভূষিত হয়েছে ভারত সরকারের কাছ থেকে।

 

নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি যখন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বিক্রির চেষ্টা শুরু হল তখন বলা হত রুগ্ন, লোকসানে চলা কোম্পানিগুলোকে বিক্রি করতে হবে যা আখেরে রাজকোষের শ্রীবৃদ্ধি ঘটাবে। তারপর এল ধাপে ধাপে বিলগ্নীকরণের গল্প। এখন অবশ্য ভারত রাষ্ট্রের এই ধরণের মুখোশ পড়ার প্রয়োজন পড়ছে না কারণ বিগত বছরের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন সরকার নিজে আর কোন শিল্প পরিচালনা করবে না। আলোচ্য কারখানাটি অবশ্য শুরুর দিন থেকে লাভজনক। গত পাঁচ বছরে ফেরো স্ক্র্যাপ লাভ করেছে ২৬১.৮২ কোটি টাকা এবং তার কাছে নগদ টাকার সঞ্চয় রয়েছে ১২৪ কোটি টাকা।বাজার থেকে কোম্পানি তুলবে ২০২ কোটি টাকা এবং আগামী দুবছরে কাজের বরাত রয়েছে ১,০০০ কোটি টাকা। কোম্পানির একজন উচ্চ পদস্থ কর্তার হিসাব অনুযায়ী ঐ কাজের বরাতটি সম্পূর্ণ করতে তাদের কর-পূর্ব লাভের পরিমাণ হবে অন্তত তিনশ কোটি টাকা। এছাড়া রয়েছে ৮১ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি, কোন ঋণ নেই, দায়ের পরিমাণ মাত্র ১৮৪ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে আশ্চর্য হল ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (DIPAM) কর্তৃক নিয়োজিত দুই সংস্থা দিল্লি স্থিত AAA Valuation Professionals LLP এবং মুম্বাই স্থিত BDO India LLP কোন মানদণ্ডে ফেরো স্ক্র্যাপের মূল্যাঙ্কন মাত্র ২৬২ কোটি টাকা স্থির করল!

 

২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯ সেপ্টেম্বর  কেন্দ্রীয় সরকার বেসরকারিকরণ ও কোনোইকি ট্রান্সপোর্টের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়গড়ি, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং ইস্পাত মন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর সমন্বয়ে গঠিত অল্টারনেটিভ মেকানিজম কমিটি হায়েস্ট বিডার জাপানি সংস্থাটির হাতে একশ শতাংশ ইকুইটি শেয়ার ও পরিচালন ক্ষমতা তুলে দেয়। আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয় ২৪ অক্টোবর, ২০২৪। এই চুক্তি এমন কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয় যা নিয়ে আলোচনা জরুরি। একথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ফেরো স্ক্র্যাপ রাষ্ট্রীয় ইস্পাত কারখানার মধ্যে কাজ করে। স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া (সেইল), মিশ্র ধাতু নিগম, রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম, ন্যাশানাল মিনারেল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের কারখানায়, তাদের জমি লিজ নিয়ে তারা স্ল্যাগ থেকে স্টিল স্ক্র্যাপ (যা আবার ফার্নেসে ফিরে যায়) ও ধাতুমল (যেগুলো আবার ইস্পাত কারখানাতেই ব্যবহার হয়) পৃথক করে। একজন্য ফেরো স্ক্র্যাপ কোম্পানির ওয়েবসাইটে পরিষ্কার ভাবে লেখা আছে : “the recovered metallics are used in place of externally purchased scrap which saves their costs substantially”। এর থেকে এটা পরিষ্কার যে ফেরোস্ক্র্যাপ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি হওয়ার কারণে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানার কাঁচামাল,জমি তথা পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারছে এবং তাদের প্রোডাক্টটাও ঐ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো কিনে নিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফেরো স্ক্র্যাপ বেসরকারি করণ হয়ে গেলে এই সুবিধাগুলো কি তারা পাবে? চুক্তিতে দেখা যাচ্ছে মাত্র দু বছর এই সুযোগটা থাকছে।তারপর কোন রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ফেরো স্ক্র্যাপকে তাদের স্ল্যাগ দিতে দায়বদ্ধ নয়। তাহলে স্বাভাবিক প্রশ্ন হল কেন তাহলে এই লাভজনক কোম্পানিটিকে বিক্রি করা হল এবং কোনোইকি ট্রান্সপোর্টের মত এক পরিচিত জাপানি সংস্থা কোম্পানিটি কিনতে রাজি হল!

 

এই প্রশ্নটা নতুন নয়। ফেরো স্ক্র্যাপ নিগমকে বিক্রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রথম নেওয়া হয় ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের অ্যাডভাইসারি কমিটি এই বিক্রিতে সন্মতি দেয়। কিন্তু পরের বছর উপরে আলোচিত যুক্তিতে ফেরো স্ক্র্যাপের নাম বিক্রির তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তৎকালীন ইস্পাত সচিব অরুনা শর্মা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার ভাবে বলেন: “আমরা বিলগ্নীকরণের তালিকা থেকে ফেরো স্ক্র্যাপ নিগমের নাম সরিয়ে দিচ্ছি কারণ এই সংস্থার কোন সম্পদ নেই, জমি নেই, আছে কিছু যন্ত্রপাতি মাত্র। সেইল এদের স্ক্র্যাপ বিক্রি করার ও প্রসেস করার অনুমতি দিয়েছে তাই কোম্পানি কাজ করছে। তাই কোন প্রাইভেট গ্রুপের এই কোম্পানি কেনার কোন কারণ নেই কারণ সেইল প্রাইভেট কোম্পানিকে সেই অনুমতি দেবে না। তাহলে কেউ এই যন্ত্রপাতিগুলো কিনে কি করবে!”। এখন প্রশ্ন হল এতদিন পর কেন পূর্বের সিদ্ধান্ত বদল হল আর কেনই বা জাপানি কোম্পানি তা কিনতে টাকা খরচ করল!

 

এই প্রশ্নের উত্তর আছে আজকের নতুন পরিস্থিতির উপর। ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা মনে করছেন জাপানি কোম্পানি ফেরো স্ক্র্যাপকে এক বহুমুখী উদ্যোগে রূপান্তরিত করবেন। এই নতুন নতুন সম্ভাবনাগুলো একে একে আলোচনা সাপেক্ষ। প্রথমটি ইস্পাত শিল্প সম্পর্কিত। কার্বন ট্যাক্স এড়াতে ইস্পাত শিল্প আজ পরিবেশ বান্ধব ইস্পাত উৎপাদনের (তাদের ভাষায় গ্রিন স্টিল) রাস্তা খুঁজছেন। ইস্পাত আজকের দিনে আকরিক এবং স্ক্র্যাপ – দুটো ভাবেই তৈরি হতে পারে। প্রথমটা জ্বালানি নির্ভর, আর কয়লার ব্যবহার কমাতে হলে হাইড্রোজেন বা মডুলার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর ব্যবহার করতে হবে। একমাত্র বড়ো সংস্থাগুলোর পক্ষেই তা সম্ভব। দ্বিতীয়টা হল স্ক্র্যাপ থেকে এবং তাতে ডিকার্বনিফিকেশন সম্ভব। মাঝারি ও ছোট কারখানাগুলোকে তাই স্ক্র্যাপকে নিয়েই বাঁচতে হবে। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো বরাত না দিলেও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর থেকে বরাত আসবে। এরা স্ক্র্যাপ কিনে ফার্নেসে ব্যবহার করবে। মিত্তাল, জিন্দাল বা ছোট ছোট কোম্পানিগুলো হবে ক্রেতা।

 

দ্বিতীয় বিষয়টি হল হাইওয়ে তৈরিতে স্ল্যাগ ব্যবহারের সম্ভাবনা। এ ব্যাপারে ‘Dr Slag’ নামে এক অস্ট্রেলিয়ান ফার্মের কর্তা বিজয় যোশি এই মুহূর্তে দেশের পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গড়গড়ির উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন। ৭ আগস্ট (২০২৪) গড়গড়ি, ইস্পাত মন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীকে একটি চিঠি লিখে হাইওয়ে নির্মাণে কিভাবে স্ল্যাগ হাইওয়ে তৈরিতে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে এক পাইলট প্রজেক্ট তৈরির কথা বলেন।একমাস পরে ফেরো স্ক্র্যাপ নিগমের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় এই বিষয়ে প্রজেক্ট তৈরির জন্য। আশ্চর্যের বিষয় ঠিক তার পরের দিন ফেরো স্ক্র্যাপ নিগমের বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

 

তৃতীয় তথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মোটরগাড়ির স্ক্র্যাপ সংক্রান্ত। আমরা জানি নিতিন গড়গড়ি তার নতুন ‘ভেহিকলস পলিসি’ তে পরিষ্কার বলেছেন ভারতে ব্যক্তিগত বা বানিজ্যিক, সমস্ত ধরণের গাড়ি ১৫ বছর বয়স হলে বাতিল হবে। এতে আগামী দিনে শুধু গাড়ি বিক্রির পরিমাণই বাড়বে না, একই সঙ্গে স্ক্র্যাপ ও কাঁচামালের আমদানিও কমে যাবে। ২০২১ সালে দেশে স্ক্র্যাপের বাজার ছিল ৬ বিলিয়ন মার্কিন  ডলার যা আগামী ২৫ বছরে দেশের মধ্যে হবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই পরিস্থিতিতে এই বিপুল পরিমাণ স্ল্যাগকে প্রসেস করার ক্ষেত্রে ফেরো স্ক্র্যাপের ভূমিকা নির্নায়ক হয়ে উঠবে।

 

এই সম্ভাবনাকে দেখেই কোনোইকি ট্রান্সপোর্ট নামক জাপানি কোম্পানিটি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। এদের ২০২৪ সালে মোট বিক্রির পরিমান ১৭,০০০ কোটি টাকা এবং বার্ষিক লাভ ৬৪০ কোটি টাকা। এই গ্রুপ আদতে বহুমুখী কোম্পানি যারা দীর্ঘদিন ইস্পাত, লজিস্টিকস ও স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কাজ করছে। দেশের কর্পোরেট মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই কোনোইকি পরিবহন ও পরিকাঠামো সংস্থা, নয়া দিল্লির কন্টেইনার টার্মিনালস লিমিটেড এর যৌথ মালিকানায় কাজ শুরু করেছে। মোদ্দা কথা হল এই তিনটি ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা হিসাবে ফেরো স্ক্র্যাপ নিজেই করতে পারত, কিন্তু সরকারের কর্পোরেট বান্ধব নীতি এই সফল কোম্পানিটিকে বেসরকারি ক্ষেত্রের হাতে তুলে দিচ্ছে।

 

এই বেসরকারিকরণে আদৌ কি সরকারের আর্থিক লাভ হল? এই প্রশ্নের উত্তরটা খোঁজা জরুরি। এই ৩২০ কোটও টাকা মেটাল স্ক্র্যাপ ট্রেড কর্পোরেশনের ঘরে জমা হবে। যেহেতু এই সংস্থার ৩৫% শেয়ার পাবলিকের হাতে, তাই কেন্দ্রীয় সরকার সর্বোচ্চ ২০৮ কোটি টাকা পেতে পারে। কিন্তু ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর এমএসটিসি ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে কারণ এতদিন তাদের প্রধান জোগান আসত ফেরো স্ক্র্যাপ নিগমের কাছ থেকে।

 

আজ ফেরো স্ক্র্যাপ নিগমের বেসরকারিকরণ আটকাতে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নগুলো সক্রিয় হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে আদালতের দরজায় নয়, জয় সম্ভব রাস্তার লড়াইয়ে। দুর্ভাগ্য জনক হলেও একথা সত্য যে কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রাসী বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে উদাহরণ যোগ্য কোন লড়াই সম্ভব হয় নি। কৃষকরা কর্পোরেট বান্ধব নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, শ্রমিকরা আজ সেই অগ্নি পরীক্ষার সামনে।

 

Share this
Leave a Comment