একটি দেহ নয়, সুরতহাল প্রয়োজন পশ্চিমবঙ্গের নারী সুরক্ষা পরিস্থিতির


  • October 5, 2024
  • (0 Comments)
  • 379 Views

আর জি কর-এ তরুণী জুনিয়র ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যা, জয়নগরে দশ বছরের বালিকার ধর্ষণ ও হত্যা এবং সেইসঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে এ রাজ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকা নারীদের হেনস্থার ঘটনা নির্দিষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে ভেঙে পড়তে থাকা প্রশাসনিক পরিকাঠামো, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এবং যথার্থ পিতৃতান্ত্রিকতার নিয়ম মেনে নারী ও সমস্ত প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষদের প্রতি উদাসীনতা, অবমাননার মানসিকতা সর্বস্ব সরকারের প্রকৃত চেহারা। লিখলেন সুদর্শনা চক্রবর্তী

 

দশ বছরের একটি বালিকা, টিউশন পড়ে ফিরছিল, সামনে উৎসবের মরশুম, হয়তো নতুন জামার গন্ধ তখনও তার নাকে লেগেছিল। ধর্ষণ শব্দটা তার যদিও জানার কথা নয়, কিন্তু মা-দিদি-পিসি, বাবা-দাদা-কাকাদের মুখে গত এক মাসের বেশি সময়ে একবারও যে সে শব্দটি শোনেনি, বাড়িতে টিভি চললে যে কখনও চোখে পড়েনি, তেমনটা না-ও হতে পারে। শুধু সে ভাবতেও না পারার আগে যে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে তাকে মরে যেতে হল, যদি তা সেই নতুন শোনা শব্দটা অর্থাৎ ধর্ষণ হয়ে থাকে, তাহলে সে জানতেও পারল না শুধুমাত্র মেয়ে হয়ে জন্মেছিল বলে নারীজন্মের বৃতান্ত কিছুই বোঝার আগে সে মরে গেল।

 

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গত ১৩ বছরের সময়কালে মহিলাদের নিরাপত্তা ও সম্মানের বিষয়টির প্রতি সবচেয়ে বেশি উদাসীনতা দেখিয়েছেন। নারী সুরক্ষা প্রাথমিকভাবে যে নারীর প্রতি সম্মানের বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত তা ধীরে ধীরে এ রাজ্য থেকে চলে যেতে চোখের সামনেই দেখা গেছে। মনে রাখা দরকার শুধু কলকাতা শহর নয়, কথা হচ্ছে গোটা রাজ্য নিয়ে। এবং সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিজেপি বা অন্য কোনও দল শাসিত রাজ্যের সঙ্গে তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে না পিছিয়ে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অবশ্যই ধর্ষণ, যৌন হেনস্থার মতো ঘটনা পূর্বতম সরকারের আমলেও ঘটেছে, কিন্তু তা এরকম লাগামছাড়া, নিয়মে পরিণত হয়নি। এবং বর্তমান শাসক, যখন বিরোধী ভূমিকায় ছিলেন, তখন বিরোধিতার পরিসর পেয়েছেন, যা এখন এ রাজ্যে বিরল হয়ে উঠছে।

 

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী জুনিয়র ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পরে পরেই সারা রাজ্য জুড়ে ‘আর জি কর করে দেব’-এর মতো হুমকি বাক্যর ব্যবহার বেড়ে যাওয়া এবং জয়নগরে বালিকার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা একটি দিকেই আঙুল তোলে – প্রশাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া। যেকোনও বয়সের মেয়ে, নারীকে অত্যাচার, ধর্ষণ, হত্যা ক্রমাগত বেড়ে চলা এবং দোষীদের ধরতে সরকার-প্রশাসনের ব্যর্থতা, ইচ্ছাকৃতভাবে দোষীদের আড়াল করা এই ধরনের ঘটনাগুলিকে ঘটাতে আরও ছাড় দিয়ে দি্চ্ছে। বিশেষত দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্য শাসক যদি নানাভাবে মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিকে কম গুরুত্বের বলে প্রকাশ্যে দীর্ঘদিন ধরে দেগে দিয়ে থাকেন তাহলে তা এধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের আরও সাহস জোগাতে থাকে।

 

সামনে এসেছে জয়নগরের মৃতা বালিকার পিসির বয়ান। তার কন্যাকেও ধর্ষণ করা হয়, বিচারের জন্য পুলিশ, প্রশাসনের দ্বারস্থ হলে কিছু তো হয়ইনি বরং তাঁদের টাকার বিনিময়ে মিটমাট করে নেওয়ার পরামর্শ দেয় পুলিশের উপর মহল। এই ট্রমা, অপমান সহ্য করতে না পেরে ঘটনার দু’বছর পর মেয়েটি আত্মহত্যা করে। এই বয়ানের সত্যতা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে দুর্নীতির কোন্‌ চরম সীমায় পৌঁছেছে এ রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা তা বুঝতে সময় লাগে না। এবং সব ক্ষেত্রেই মেয়েদের সম্মান সবচেয়ে সহজলভ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

 

এর একটা বড় কারণ অবশ্যই দুর্নীতির সঙ্গে মহিলাদের সম্মানহানিকে বর্তমান সরকারের আমলে এক করে ফেলা। নারী সুরক্ষা, নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটাই যেমন সার্বিক পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক মানসিকতার উপর নির্ভরশীল, তেমনি সরকার, রাষ্ট্রের ভূমিকার উপরেও তা নির্ভরশীল। কেন্দ্রের লোক দেখানো ‘বেটি পঢ়াও, বেটি বাঁচাও’ নীতি যেমন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পিতৃতান্ত্রিক, মনুবাদী ভাবনা থেকে মহিলাদের হেনস্থা, ধর্ষণ, হত্যা বন্ধের উপায় নয়, তেমনি পশ্চিমবঙ্গেও মহিলাদের ক্ষমতায়ণের নামে চালু করা প্রকল্প তাঁদের উপরে ঘটতে থাকা অমানবিক অত্যাচার আড়াল করতে পারে না। ভুললে চলবে না টানা তিন বছর পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের উপর অ্যাসিড আক্রমণে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে, বিভিন্ন বশংবদ এনজিও এবং রাজ্যের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন দপ্তর যতই বোঝানোর চেষ্টা করুক, জাতীয় তথ্য-পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ নাবালিকা বিবাহে দেশের প্রথম সারিতে থাকা রাজ্যগুলির একটি। সুতরাং নারী-সুরক্ষায়, নারীর ক্ষমতায়নের সাফল্যের ঢক্কানিনাদ যে কতটা ফাঁপা তা বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।

 

আর জি কর-এর ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছে রাজ্যের সামগ্রিক দুর্নীতির সঙ্গে নারীদের উপর ধর্ষণ ও হত্যার যোগসাজশ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে জনপ্রিয় সংস্কৃতি, সভামঞ্চ সর্বত্র মহিলাদের সম্মান, নিরাপত্তা, তাদের সামাজিক ভাবমূর্তিকে হেয় করা হচ্ছে তা এই সরকারের পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব শুধু সামনে আনে তাই নয়, সামনে আনে সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর সামগ্রিক, সার্বিক উন্নয়নের বদলে তাঁদের হাতে চটজলদি টাকার যোগানের ব্যবস্থা করে দিয়ে, নারীদের পণ্যায়নকে সহজ করে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন কলেজে শাসক দলের ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে, বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের ব্যানারে অপসংস্কৃতির নমুনা বারেবারে সামনে এসেছে। রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বাংলা মেগা সিরিয়ালের চিত্রনাট্য লেখক হয়ে মহিলা চরিত্রদের নির্মাণে যে স্থূল মানসিকতার পরিচয় প্রতিনিয়ত দিয়ে চলেছেন তা প্রমাণ করে এ রাজ্যের নারীর প্রতি সরকারের অবমাননাকর মনোভাব।

 

নারী সুরক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান বহু দিন ধরেই লজ্জাজনক। আর জি কর-এর ঘটনা, জয়নগরের ঘটনা দেশের অন্যান্য রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে যে হৈ-চৈ তার অন্তঃসারশূণ্যতা, তাঁর লিঙ্গরাজনীতি নিয়ে অসচেতনতা প্রকাশ্যে নিয়ে আসছে।

 

সুজেট জর্ডন, কামদুনি, রাণাঘাট, কুশমান্ডি, মাটিগাড়া ভুলিনি, আমরা ভুলিনি হাঁসখালিও। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ১৪ বছরের একটি মেয়ের ‘লভ অ্যাফেয়ার’ থাকতে পারে। থাকতেই পারে, সেই কথা তুলে মাত্র ১৪ বছরের একটি মেয়ের চরিত্রহানি করা কতটা শোভনীয়, কতটা শ্লীল সেই প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন ছিল। এইসব ঘটনার পরেও রাজ্যের মহিলা কমিশন কোনও উদ্যোগ নেয় না।

 

কামদুনির মেয়েটি পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। অভিভাবকদের স্বপ্ন ছিল এক নিশ্চিন্ত জীবন। বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণ ও যে বীভৎস মৃত্যু তার জন্য অপেক্ষা করে ছিল, তার দায় সরকার নেয়নি। কারণ চরম ইগো-য় প্রমাণ করতেই হবে বর্তমান সরকারের আমলে খারাপ কিছু ঘটতেই পারে না। হ্যাঁ, কামদুনির মেয়েটি স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। হ্যাঁ, সুজেট জর্ডন স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। একজন বিবাহবিচ্ছিন্না, একলা মা নিজের পছন্দের পেশা বেছে নিতে পারেন, তার পছন্দের ব্যক্তিগত জীবন থাকতে পারে। কোনও কিছুর জন্যই পুরুষের তাকে ধর্ষণের, খুন করে দেওয়ার অধিকার জন্মায় না।

 

আর জি কর-এর ঘটনায় প্রথমবার নারীর চরম নির্যাতনে যুক্ত অভিযুক্ত বা অপরাধীকে সরকার, প্রশাসনের তরফে আড়াল করা হল না। আমরা নিশ্চয়ই সুজেট জর্ডনের কথা ভুলে যাইনি। সেই ঘটনায় শাসক দলের নেতারা সুজেটের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অপরাধীকে আড়াল করেছিলেন। সেই অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া ব্যক্তি, যিনিও একজন নারী, সংসদের সদস্য করা হয় জোর করে নির্বাচনে জিতিয়ে। এ রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষা, তাঁদের অবস্থান এই প্রত্যেকটি ঘটনার পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়, যা তিনি অত্যন্ত সচেতনভাবেই করে থাকেন।

 

কুশমান্ডির ঘটনাটি এখন প্রায় অনেকেরই বিস্মৃতির আড়ালে। মাত্র কয়েক বছর আগে দিনাজপুরে একজন প্রতিবন্ধী মেয়ের ধর্ষণ শিরোনাম তৈরি করেছিল। প্রতিবন্ধী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা পথে নেমেছিলেন। ঘটনাটি পরোক্ষে শাসক দলের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ায় ক্ষতিপূরণ ও মেয়েটির চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নেবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেই আশ্চর্যজনকভাবে এই পুরো ঘটনাটি স্রেফ ভ্যানিশ হয়ে যায়। লোকচক্ষু থেকে, সংবাদমাধ্যম থেকে এই ঘটনাটি বেমালুম গায়েব হয়ে যায়। এবং সর্বোচ্চ জায়গার নির্দেশ ছাড়া তা যে সম্ভব নয় এ কথা জ্ঞাত। সেই মেয়েটি জীবিত না মৃত আজ পর্যন্ত তা কেউ জানে না।

 

পুরুষতন্ত্র যে একটি ধারণা এবং তা যে লিঙ্গ পরিচিতি নির্ভর নয়, পশ্চিমবঙ্গের দিকে এই মুহূর্তে তাকালে তার উৎকৃষ্টতম প্রমাণ দেখা যায়। রাজ্যের শাসকের প্রতিটি আচরণ বিদ্বেষমূলক ও নারীর অধিকার ও সম্মানের পরিপন্থী। এ রাজ্যে মহিলাদের অধিকার মানে দান-খয়রাতের মতো কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার।

 

আমরা স্তম্ভিত হয়ে দেখি, এই রাজ্যের এক গ্রামে দেনার টাকা মেটাতে না পেরে শাসক দলের নেতার হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দিচ্ছেন বাবা এবং সেই মেয়ে গণধর্ষিতা হচ্ছে। এ কোন্‌ সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা উপহার দেওয়া হচ্ছে? টাকা, পুরুষতন্ত্র, নারীদের সম্মান আর শরীরের উপর এই আক্রমণ আটকানোর জন্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আরও আগেই এ রাজ্যের নাগরিকদের সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন ছিল।

 

সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সেই অঞ্চলে সাংবাদিকতার সূত্রে গিয়ে, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার সুবাদে এটুকু স্পষ্ট হয়েছিল শাসকদলের মদতপুষ্ট হয়ে সেখানে দিনের পর দিন দুর্নীতি চালিয়েছে শাসক দলের নেতারা এবং সেক্ষেত্রে স্থানীয় মহিলাদের হেনস্থা করে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রাখাও ছিল অন্যতম।

 

যারা বিভিন্ন প্রকল্পগুলিকে মহিলাদের ক্ষমতায়ণের জন্য সরকারের দারুণ উদ্যোগ বলে এতদিন হাততালি দিয়েছেন তারা এবার অন্তত একটু চোখের ঠুলিটি সরিয়ে দেখতে শিখুন। লজ্জিত হন। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পঢ়াও’, হাথরাস-এর সঙ্গে এ রাজ্যের মিল কি এখনও চোখে পড়বে না আপনাদের?

 

একইসঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের গা জোয়ারি ক্রমশ বাড়ছে। জয়নগরের মৃতা বালিকার নিখোঁজের ডায়েরি নিতে দেরি করে পুলিশ। আর জি কর-এর ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গেও নানাভাবে অসহযোগিতা করছেন তাঁরা, শনিবার রাত সাড়ে আট’টার পর থেকে ন্যায়ের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করার আগে ধর্মতলায় অবস্থান মঞ্চ তৈরির সময়ে এক জুনিয়র ডাক্তারকে শারীরিকভাবে হেনস্থাও করে পুলিশ। একই দিনে জয়নগরের মৃতা বালিকার দ্বিতীয় দফার ময়নাতদন্তের সময়ে মর্গে উপস্থিত বাম নেত্রী দীপ্সিতা ধরকেও সেখান থেকে সরাতে জঘন্যভাবে শারীরিক হেনস্থা করে পুলিশ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বৈদ্যুতিন মাধ্যমের এক সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সন-এর গায়ে হাত তোলা হয়, ভাঙা হয় ক্যামেরা।

 

এর পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সেকেন্ড-ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ, দলের নেতা সকলেই অভিযুক্ত বা অপরাধীকে এনকাউন্টার, প্রকাশ্যে হত্যা, ফাঁসি ইত্যাদি কথা বলছেন। রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয়েছে অপরাজিতা বিল। যাতে রাজ্যপালের সই ও রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য দাবি জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেখানে ধর্ষণের মতো ঘটনায় দ্রুত বিচার ও ফাঁসির কথা বলা হয়েছে। অথচ আমরা সকলেই জানি ফাঁসি কখনও ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনার কমায় না। এই বিল আনার আগে সংশ্লিষ্ট কারওর সঙ্গেই আলোচনাও হয়নি। যে তথাকথিত ‘ম্যাচো’ ভঙ্গিতে শাসক দল এই জাতীয় শাস্তিগুলির বিধান দিচ্ছেন তার সঙ্গে যোগীরাজ্যের বিশেষ তফাৎ চোখে পড়ছে না। নারীবাদের পাঠ ‘ম্যাচো’ হয়ে উঠতে বলে না।

 

আর জি কর-এ তরুণী জুনিয়র ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যা, জয়নগরে দশ বছরের বালিকার ধর্ষণ ও হত্যা এবং সেইসঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে এ রাজ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকা নারীদের হেনস্থার ঘটনা নির্দিষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে ভেঙে পড়তে থাকা প্রশাসনিক পরিকাঠামো, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এবং যথার্থ পিতৃতান্ত্রিকতার নিয়ম মেনে নারী ও সমস্ত প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষদের প্রতি উদাসীনতা, অবমাননার মানসিকতা সর্বস্ব সরকারের প্রকৃত চেহারা।

 

Share this
Leave a Comment