কলকাতা পৌরসভার ১১৫ ও ১২১ নম্বর ওয়ার্ড-এর নব তরুণ সংঘ ক্লাবের সদস্যরা ও সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা এলাকার মাঠ বাঁচানোর আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। গ্রাউন্ডজিরোর প্রতিবেদন।
কলকাতা শহরে যখন চারিদিকে বহুতল আর শপিং মল-এর ভিড়, তখন একটি মাঠ বাঁচানোর জন্য লড়াই চালাচ্ছেন এই শহরেরই একদল মানুষ। হরিদেবপুরের সিরিটি নব তরুণ সংঘের সদস্যরা ও পার্শ্ববর্তী সিরিটি মাইতি পাড়া অঞ্চলের অধিবাসীরা তাঁদের এলাকার মাঠ বাঁচাতে বদ্ধপরিকর। এই মুহূর্তে প্রতিবাদে, প্রতিরোধে উত্তাল এই শহর। তরুণী জুনিয়র ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা, সরকারের ভূমিকা ইত্যাদির প্রতিবাদে সারা শহরের মানুষ এখন বিক্ষোভ, আন্দোলনে জোটবদ্ধ। তারমধ্যেই কলকাতা পৌরসভার ১১৫ ও ১২১ নম্বর ওয়ার্ড-এর সিরিটি অঞ্চলের রাজা রামমোহন রায় রোড রাস্তার অন্তর্গত নব তরুণ সংঘ ক্লাবের সদস্যরা ও সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা এই মাঠ বাঁচানোর আন্দোলনে শামিল হয়েছেন।
যে মাঠটি বাঁচানোর জন্য লড়ছেন অঞ্চলের বাসিন্দারা সেটি ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ও ক্লাব ও ক্লাব সংলগ্ন ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৬৫ সালে ক্লাবটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই এই মাঠটি ক্লাবের তত্ত্বাবধানে রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হয়। ইঁট-কাঠ-পাথরের শহুরে পরিবেশে এই মাঠই অঞ্চলের সকলের জন্য খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা। বিশেষত শিশু ও প্রবীণদের জন্য। তাছাড়া এখানেই নিয়মিত ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ চলে ও বিভিন্ন স্কুলের স্পোর্টস অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘ ৭০ বছর যাবৎ মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রথমে অঞ্চলবাসী ও ১৯৬৫ থেকে নব তরুণ সংঘ ক্লাবের সদস্যরা নিয়েছেন। গত জুলাই মাসের ৭ তারিখ আচমকাই অপরিচিত কয়েক জন মানুষ ক্লাবের সদস্যদের বিনা অনুমতিতে ও তাঁদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই মাঠটি মাপজোকের কাজ শুরু করেন। যখন অঞ্চলবাসী তাদের পরিচয় জানতে চান, তারা তাঁদেরই ভয় দেখান ও উপস্থিত স্থানীয় মহিলাদের প্রতি অপমানজনক কটুক্তি করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেই অপরিচিত ব্যক্তিদের হরিদেবপুর থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় হরিদেবপুর থানার সহায়তায়, থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়।
জুলাই মাসের এই ঘটনার পর নব তরুণ সংঘ ক্লাব আইনজীবীদের পরামর্শে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিচারের জন্য আবেদন জানানো হবে, আবেদন করা হবে যাতে মাঠটি অঞ্চলের নাগরিকদের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের ব্যবহারের জন্য রাখা হয়, ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়। তবে সেদিনের পর থেকে একাধিক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি লাগাতার ক্লাব সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয় দেখিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি নব তরুণ সংঘ ক্লাব সংলগ্ন অঞ্চলবাসী ও নব তরুণ সংঘ ক্লাবের সদস্যরা হরিদেবপুর থানার অফিসার ইন-চার্জকে একটি চিঠি দেন, যেখানে কপি করা আছেন – সাউথ ওয়েস্ট ডিভিশন-এর ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন-এর কমিশনার, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বরো নং ১৩-এর চেয়ারম্যান, কলকাতার মেয়র এবং পুর উন্নয়ন ও মিউনিসিপ্যাল অ্যাফেয়ার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কলকাতা মেট্রোপলিটাল অথরিটি-র চেয়ারম্যান।
এই চিঠিতে আবেদন জানানো হয়েছে উল্লিখিত কর্তৃপক্ষ যেন খেলার মাঠটি যে অবস্থায় রয়েছে সেই অবস্থাতেই যাতে থাকে তার ব্যবস্থা করেন, তার চরিত্র যাতে কোনওভাবেই পরিবর্তিত না হয় সেদিকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন, অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের থেকে অঞ্চলবাসী বিশেষত মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন, আদালতে মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত যাতে কেউ এই খেলার মাঠের কোনও অংশ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে তা সুনিশ্চিত করেন।
বহুতল, শপিং কমপ্লেক্স, মাল্টিপ্লেক্স-এর ভিড়ে খেলার মাঠ বাঁচানোর লড়াই আজকাল কলকাতা শহরে বিশেষ চোখে পড়ে না। জমি দখলের চলতি সিন্ডিকেট রাজ আর থ্রেট কালচার মোকাবিলা করে এক টুকরো সবুজ, পাড়ার প্রাণভোমরাটুকু বাঁচিয়ে রাখার মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষের উদ্যোগটি সফল হয় কি না তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।