প্রান্তিক মুসলমান নারীদের দাবিগুলিই ছিল নিজেদের অধিকারের, আর্থিক বৈষম্য দূর করতে মুসলিম পারিবারিক আইন সংস্কারের। তার সঙ্গেই বৃহত্তরভাবে মিলে যাচ্ছিল আর.জি.কর-এ নির্যাতিতা নারীর জন্য ন্যায়ের দাবি, সমাজ-রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি বদলের দাবি। সুদর্শনা চক্রবর্তীর প্রতিবেদন।
“আমার অত্যাচারিত বোনের বিচার চাই” – এই একটি কথাই তিনি বারবার বলে যাচ্ছিলেন, চিৎকার করে। গলা বন্ধ হয়ে আসছিল কান্নায়। চোখের জল বাঁধ মানছিল না। তার আগে এটুকুই বলতে পেরেছিলেন যে তিনি একজন নির্যাতিতা নারী। কোনও এক বিন্দুতে মিলে যাচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত জেলার এক নির্যাতিতা মুসলমান নারীর সঙ্গে খাস কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজে এক নারী জুনিয়র ডাক্তারের নির্যাতন। নিজের উপর ঘটতে থাকা নির্যাতনে এই নারী হয়তো দেখেছেন সমাজ, পরিবারের সকলকে চুপ করে থাকতে আজ যখন তাঁরই কাছাকাছি বয়সের এক মেয়ের নির্যাতনের প্রতিবাদে উত্তাল হতে দেখছেন চারপাশ, আগল ভাঙছে সমস্ত যন্ত্রণার, ক্ষোভের, অভিমানের। তাই বিচার চাওয়ার দাবির সঙ্গে মিশে যাওয়া অশ্রুতে কোথাও এক ক্যাথারসিস ঘটে।
রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি, সাউথ ক্যালকাটা সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট ফর উইমেন, নারীস্বত্ব.কম গত ১৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি হলে ‘লিঙ্গবৈষম্যমূলক মুসলিম পারিবারিক আইন সংস্কারের দাবি’ শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন করে। এই আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গেই যুক্ত ছিল ‘আর.জি.কর-এরধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে’ শব্দবন্ধটিও। এদিন আলোচনায় বক্তারা এবং নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার গ্রাম থেকে আসা মুসলিম মহিলারা যেভাবে কলকাতার আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নারী জুনিয়র ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবি জানালেন, তাতে সমাজের প্রান্তিক নারীদের সঙ্গে ঘটতে থাকা বৈষম্য ও সহিংসতার ঘটনা কীভাবে সামগ্রিকভাবে নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন স্তরে যুক্ত তাই আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠল।
এদিনের আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল কীভাবে বর্তমান মুসলিম পারিবারিক আইন বিভিন্নভাবে কন্যাসন্তান, তালাকপ্রাপ্ত নারী, একাধিক বিবাহ করা পুরুষের স্ত্রী, বিধবা নারীদের প্রতি অত্যন্ত বৈষম্যমূলক, তাঁদের মুখ্যত জন্মগত পরিবার বা বিবাহসূত্রের পরিবারের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে যা তাঁদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দেয় এবং তাঁদের এক সম্মানজনক জীবনযাপন থেকেও বঞ্চিত করে।
মুসলিম পারিবারিক আইন সংশোধনের দাবিতে রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি এবং সাউথ ক্যালকাটা সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট ফর উইমেন যে দীর্ঘ আন্দোলন চালাচ্ছে তার মূল কয়েকটি দাবি হল –
১) মুসলিম দম্পতির শুধু কন্যাসন্তান থাকলে, তাঁদের অবর্তমানে আত্মীয়রা কেন কন্যার সম্পত্তির অংশীদার হবে? মুসলিম পারিবারিক পৈত্রিক সম্পত্তি আইনের সংস্কার করে নারী-পুরুষের সম অধিকার দিতে হবে
২) মুসলিম পরিবারে পিতা জীবিত অবস্থায় তাঁর পুত্র সন্তানের মৃত্যু হলে সেই মৃত সন্তানের পরিবার কেন আইনি ধারায় পথের ভিখিরি হবে? মুসলিম বিধবা নারীর শ্বশুর জীবিত বিধবা স্ত্রী ও তার সন্তানদের সম্পত্তি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা চলবে না
৩) মুসলিম পরিবারে স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর সম্পত্তি স্ত্রী আট ভাগের এক ভাগ পাবেন অথচ স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর সম্পত্তি স্বামী কেন চার ভাগের এক ভাগ পাবেন?
৪) নারীর প্রতি অপমানজনক শরিয়তি নিকাহ হালালা বন্ধের আইন চাই
৫) মুসলিম পুরুষের বহুবিবাহ করার অধিকার আইন করে বন্ধ করতে হবে
৬) মৌখিক তালাক বন্ধের আইন করতে হবে। তালাক হবে কোর্টে, সরকারী হস্তক্ষেপে, মুখের কথায় নয়।
৭) তালাক বন্ধ, বহু বিবাহ নিষিদ্ধ, বিধবা নারী ও তার সন্তানদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে আইনি অধিকার দেওয়া সহ সমস্ত ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
৮) সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে মুসলিম দম্পতি দত্তক সন্তানের মাতা-পিতা হতে পারেন, কিন্তু আইন হচ্ছে না কেন?
আলোচনাসভায় এই দাবিগুলি লেখা পোস্টারের সঙ্গেই ছিল – ‘সারা বাংলার একই স্বর/আর.জি.কর, আর.জি.কর’, ‘আর. জি. কর কাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায় বিচার চাই’, ‘আর.জি.করের লড়াই থামবে না, গলার আওয়া্জ নামবে না’, ‘জাস্টিস ফর আর.জি.কর – হোক প্রতিবাদ – দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’, ‘আর.জি.কর আমাদের সকলের লজ্জা – দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে’ – এই পোস্টারও সমান গুরুত্বে জায়গা করে নিয়েছিল। সকলের বক্তব্যেই সূত্রে গাঁথা হয়ে যাচ্ছিল বৈষম্য বন্ধের দাবির সঙ্গে ন্যায় বিচারের দাবি।
মুসলিম নারীদের সঙ্গে যে ধরনের বৈষম্য ও অত্যাচারের ঘটনা ঘটতে থাকে তাতে জড়িয়ে থাকা ধর্মীয় মৌলবাদ, পিতৃতন্ত্র ইত্যাদির গভীর প্রভাব ও সামাজিক ব্যবস্থায় তার প্রতিফলনের কথাই নিজেদের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার ঘটনাগুলি থেকে নিজেদের মতো করে বলছিলেন প্রান্তিক মুসলিম নারীরা। সেই কথাগুলিতে যেমন ছিল সামাজিক অব্যবস্থা, পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্যের প্রতি আঙুল তুলে প্রতিবাদ, তেমনি ছিল রাজনৈতিক দল, সরকার-প্রশাসনের অনীহার কথাও।
মুর্শিদাবাদের লালগোলা থেকে আসা তালাকপ্রাপ্তা নারী হীরা খাতুন যেমন বলছিলেন, “৪, ৫ বছর কেস চালিয়েও তো কোনও লাভ হয় না। অত্যাচারিত মেয়েরা একটা সময়ে কেস ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। দোষীদের শাস্তি না হওয়াতেই নারী পাচার, ধর্ষণের মতো ঘটনা বাড়তে থাকে। আগে তাও ১০০ নম্বর ডায়াল করলে সাহায্য পাওয়া যেত, এখন তো সাহায্য দূর, ১০০ টাকা নিয়েও পুলিশ কোনও কাজ করে না।” হীরা নিজের এলাকার উদাহরণ দিয়ে বলেন সেখানে কিশোর, তরুণ ছেলেদের মধ্যে মদ ও ড্রাগের নেশা বাড়ছে, পুলিশ-প্রশাসন উদাসীন। মদ্যপ স্বামীদের হাতে অত্যাচারিত নারীর সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যই মেয়েদের বিড়ি বেঁধে হোক, হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করে হোক নিজের পায়ে দাঁড়ানো, নিজেদের রোজগার থাকা জরুরি বলে মনে করেন ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার সচেতনতা প্রচারের কাজে যুক্ত থাকা হীরা। “সব রাজনৈতিক দল ভোটের কারণে কোনও অত্যাচারের প্রতিবাদ করে না। মেয়েদের স্বাধীনতা চাই। তাঁদের ঘরে-বাইরে সর্বত্র নিরাপত্তা চাই,” স্পষ্ট দাবি তাঁর।
মঞ্চে উঠে নিজেদের জীবনে বৈষম্য, সহিংসতার কথা বলতে গিয়ে বারেবারেই গলা বুজে আসছিল এই লড়াকু মহিলাদের, যাঁদের দাবি কেবলই হিংসামুক্ত, বৈষম্যহীন জীবন ও সমান অধিকারের। জলঙ্গী থানার রাজিনা খাতুনের স্বামী মারা যান ২০১১-১২ সালে। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কেরালায় কাজ করেন। মেয়ের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ার পর বিয়ে হলেও, তা সুখের না হওয়ায়, সেও ফিরে এসে মায়ের কাছে থাকেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রাজিনা ও তাঁর সন্তানদের শ্বশুরবাড়ি থেকে সম্পত্তি ও জমির অধিকারের থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বহু কষ্টে মানুষ করেছেন সন্তানদের। বিড়ি বাঁধার কাজ করেন। ১০০০ বিড়ি বেঁধে আগে পেতেন ১৫০ টাকা, তা বেড়ে হয়েছে এখন হয়েছে ১৬০ টাকা। মেয়েও এখন মায়ের সঙ্গেই কাজ করে। তিনিও লড়ছেন মুসলিম পারিবারিক আইন সংস্কারের লক্ষ্যে। প্রধান দাবি কি – এই প্রশ্নের উত্তরে শান্ত, নীচু স্বরে বললেন, “আমরা যা কষ্ট পেয়েছি, তা যেন পরবর্তী আর কোনও মেয়ে না পায়, যেন নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।”
মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার মাহফুজা খাতুন নিজের পরিচয় দেন নির্যাতিতা নারী বলে। ১৯৯৮ সালে বিধবা হন তিনি। শ্বশুরবাড়ি স্বামীর সম্পত্তি থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করে তাঁকে। তিনি জোর গলায় বলেন, “আমাদের ছোট, ছোট স্বপ্ন। কিন্তু পারিবারিক আইন আমাদের তার থেকেও বঞ্চিত করে। সরকার, প্রশাসনকে আমাদের কথা শুনতে বাধ্য না করলে কী করে মেয়েরা নিজেদের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা পাব?”
মুর্শিদাবাদের লালগোলার সাকিলা বিবি চুপচাপ সবার কথা শুনছিলেন। তাঁর এক ছেলে। স্বামী তালাক দিয়েছেন। ধীরে ধীরে বললেন, “কোনও খোরপোশ দেয়নি। কোর্ট, আদালতও তো করছি। কোনও লাভ হয়নি। আইন-আদালত, গ্রাম, পরিবার কোথাও আমাদের কোনও অধিকার নেই। টাকায় সব কিছু বদলে দিতে পারে। আমরা মেয়েরা নিজেদের উন্নতি না করলে কিছুই হবে না।”
দক্ষিণ ২৪ পরগণার মগরাহাটের রুমি সুলতানার স্বামী মারা গেছেন ২০২১ সালে। ১৭ বছরের ছেলে বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধী। রয়েছে ১০ বছরের এক মেয়ে। বিধবা হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি স্পষ্ট বলে দিয়েছে কোনও সম্পত্তি দেবে না। শ্বশুরবাড়ি থেকে মায়ের বাড়িতে চলে আসলেও কোনও রোজগার না থাকায় নিদারুণ সমস্যায় পড়েছেন। প্রতিবন্ধী সন্তান মানবিক ভাতায় ১০০০ টাকা পেলেও তাতে খুব সুরাহা হয় না। মাসে একবার কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে আসতেই হয়। দুই সন্তান সহ নিজের জীবন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক সংস্থান তাঁর নেই। “আমার মতো সব মেয়েরা যেন নিজেদের অধিকার পায়,” এটুকুই সহজ-সরল দাবি তাঁর।
এই সকল নারী আর উপস্থিত সব প্রান্তিক মুসলমান নারীদের দাবিগুলিই ছিল নিজেদের অধিকারের, আর্থিক বৈষম্য দূর করতে মুসলিম পারিবারিক আইন সংস্কারের। তার সঙ্গেই বৃহত্তরভাবে মিলে যাচ্ছিল আর.জি.কর-এ নির্যাতিতা নারীর জন্য ন্যায়ের দাবি, সমাজ-রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি বদলের দাবি।
শেঠ সুরজমল জালান গার্লস কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপিকা শবনম বৈদ্য নিজের মা-বাবার পরিবারেই পারিবারিক হিংসার সম্মুখীন হয়েছেন দীর্ঘদিন। নিজের ব্যক্তি জীবনের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরতে গিয়েই তিনি বললেন, “শরীয়তী আইন বদলানোর কথা বললেই আমাদের, মেয়েদের বলা হয় বিধর্মী। পিতৃতান্ত্রিক ধর্মীয় মৌলবাদীরা আমাদের অধিকার দিতে চায় না। প্রান্তিক মহিলাদের লড়াইটা জেতার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
তরুণী নার্গিস পারভিন ঋজু কন্ঠে বলেন “একটিমাত্র ধর্ষণ, খুনের প্রতিবাদ নয়, রোজ অসংখ্য শিশুকন্যা ধর্ষিতা হয়। তাদের সকলের জন্য প্রতিবাদ করতে হবে। ছেলেদের তো রাত দখলে নামতে হয় না! এই রাত দখল করা দেখিয়ে দিয়েছে এখনও মেয়েদের স্থান কতটা নীচুতে।” আরেক তরুণী আসমিরা শেখ-ও একই স্বরে বলেন, “এরকম ঘটনা প্রতিদিন ঘরে, বাইরে ঘটছে। আমরা জানতেও পারি না। সেগুলোও বলতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে।”
রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি, সাউথ ক্যালকাটা সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট ফর উইমেন-এর পক্ষ থেকে অধ্যাপিকা ও দীর্ঘদিনের মুসলিম নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী আফরোজা খাতুন বলেন, “মুসলমান মেয়েরা প্রতিটা জায়গায় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আজকের সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে। আইন থেকেও অত্যাচার হচ্ছে। কিন্তু কেন আমাদের আইন আমাদের দরকার? কারণ প্রশাসনের কাছে গিয়ে বিচার পাই না। মুসলিম মেয়েরা অত্যাচারিত হয়ে প্রশাসনের কাছে গেলে তাঁরা বলে, ‘এটা তো আপনাদের আইনে আছে!’ সুতরাং আইন তো আমাদের নিতেই হবে। তারপর সচেতনতা আমরা ঠিকই তৈরি করব। নিকাহ হালালা-র মতো প্রথা বন্ধ করতে হবে। ধর্মগুরুদের ফতোয়ার উপর মেয়েদের জীবন নির্ভর করে। এর বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে। আর জি কর-এর ঘটনার পর থেকে এক অস্বস্তি, নিরাপত্তাহীনতার বোধ আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। আমরা মেয়েরা জোট বেঁধেছি, প্রতিরোধ করছি, দখল নিচ্ছি। হবে। মুসলিম মেয়েদেরও দখলের লড়াই করতে হবে। আমাদের একজোট হয়ে আন্দোলন করতে হবে।”
অধ্যাপিকা নাসিমা ইসলাম বলছিলেন, কীভাবে আর.জি.কর-এর ঘটনার পর সমাজের বিভিন্ন ভাগ থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় বুঝতে পেরেছেন মেয়েদের সঙ্গে ঘটা সহিংসতা দিয়েও কীভাবে তাঁদের বেঁধে রাখার, আটকে দেওয়ার, দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কাজ করে যায়। যেমন শুনেছেন এত আন্দোলন-প্রতিবাদ হয়তো হত না যদি মেয়েটি মুসলিম হতেন, তেমনি শুনেছেন ধনী, সুবিধাপ্রাপ্ত পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে ধর্ষণ বা অত্যাচারের ঘটনা ঘটে না, শুনেছেন আন্দোলন করতে হলেও মেয়েদের নির্দিষ্টভাবে পোশাক পরার, আচারণ করার প্রয়োজনীয়তা আছে বা মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য উচ্চশিক্ষায় বাইরে না পাঠিয়ে বাড়িতে রেখে দেওয়াই ভালো। এই সমস্ত কিছুই যে আসলে মেয়েদের প্রতি বৈষম্যমূলক তা বুঝে নিয়েই জোট বাঁধার কথা বলেন তিনি।
মেয়েদের লড়াই এভাবেই এক থেকে সকলের হয়ে ওঠে বারে বারে, দশক পেরিয়ে।