আর.জি.কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদের পাশে পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠন


  • August 24, 2024
  • (0 Comments)
  • 536 Views

প্রতিবেদন: সুদর্শনা চক্রবর্তী

২৪/০৮/২০২৪

 

“মমতা বন্দোপাধ্যায় একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার রাজ্যে মহিলারা যে নিরাপদ নন, তা এই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রমাণিত। মহিলারা কোথাওই, কোনও বয়সেই নিরাপদ নন। আমাদের দেশে ধর্ষকদের কোনও শাস্তি হয় না, তারা বেকসুর খালাস হয়ে যান, তাদের নিয়ে মিছিল বেরোয়, ফুলবৃষ্টি হয়। গুজরাটের বিলকিস বানোর ঘটনায় এটা আমরা দেখলাম। এই সমস্ত ঘটনাই রাজনৈতিক। পশ্চিমবঙ্গের ঘটনাতেও সরকার জড়িত। আমরা চাই নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, দোষীরা যথাযথ শাস্তি পাক। পশ্চিমবঙ্গের মেয়েটি আমাদেরও মেয়ে। এই ঘটনা আমি, আমার বাড়ির যেকোনও মেয়ের সঙ্গে স্কুল, কলেজ, অফিস, কাজের অন্য জায়গা – যেকোনও জায়গায় হতে পারে। মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কেন ৩৬ ঘন্টা কাজ করে একজন মহিলা ডাক্তারকে এভাবে মরতে হল? নিশ্চয় দূর্নীতি জড়িত এরসঙ্গে। আমরা এই সব কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে, সচেতনতা বাড়াতে, সরকারের উপর চাপ তৈরি করতেই আমাদের এখানে প্রতিবাদ জারি রেখেছি,” ফোনের অপর প্রান্তে বলছিলেন পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠন বিকেইউ একতা (উগ্রাহান)-র মহিলা নেত্রী হরিন্দর সিং বিন্দু।

 

সাম্প্রতিক সময়ে যে আন্দোলন ভারতে অধিকার আন্দোলনকে নতুন অভিমুখ দেখিয়েছিল, সেই কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব সংহতি জানাল কলকাতার আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সারা রাজ্যে ন্যায়ের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তার প্রতি।

 

এই ঘটনার পর থেকেই বিকেইউ একতা (উগ্রাহান), পাঞ্জাব ক্ষেত মজদুর ইউনিয়ন ও পিএসইউ (শহীদ রন্ধওয়া) – এই তিন ইউনিয়ন পাঞ্জাবের প্রত্যন্ত গ্রামে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, মহিলাদের শাখা সংগঠনের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে সচেতনতার প্রসার ও প্রতিবাদের সমর্থনে মিছিল ও আরও নানা লাগাতার কর্মসূচী নিয়ে চলেছে।

 

কুসস্যা গ্রামে বিকেইউ একতা (উগ্রাহান)-এর ডাকে মহিলাদের প্রতিবাদ

 

তাঁদের মূল দাবি মূলত – মহিলাদের ‘কর্মক্ষেত্রে’ নিরাপত্তা। সাঙরুর জেলার ধিন্ধসা গ্রামে ২২ অগাস্ট মোমবাতি মিছিলে যোগ দেন বহু মহিলা। একই দিনে ওই জেলার ছাথা গ্রামেও বের হয় মোমবাতি মিছিল। মিছিলে যোগ দেন পাঞ্জাব ক্ষেত মজদুর ইউনিয়ন-এর ইউনিয়ন লিডার লছমন সিয়েওয়ালা এবং পিএসইউ (শহীদ রন্ধওয়া)-র ইউনিয়ন লিডার হুশিয়ার সালেমগর। ছিলেন বিকেইউ একতা (উগ্রাহান)-এর নেতৃবৃন্দও। ভাতিন্ডার ঘুড্ডা গ্রামে বিকেইউ একতা উগ্রাহান আর নওজওয়ান ভারত সভা প্রতিবাদী মোমবাতি মিছিল করে।

 

সঙরুরের ছাথা গ্রামে পাঞ্জাব ক্ষেত মজদুর ইউনিয়ন, বিকেইউ একতা (উগ্রাহান), পিসিইউ (শহীদ রন্ধুওয়া)-র মোমবাতি মিছিল ও প্রতিবাদ

 

পিএসইউ (শহীদ রন্ধওয়া) রামপুরা ফুল-এ ডিপিডি কলেজে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদের আয়োজন করে। ঘুড্ডা-র পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি কলেজে পিএসইউ (শহীদ রন্ধওয়া) আলোচনা, সচেতনতা প্রসার কর্মসূচী নেওয়া হয়। এই কর্মসূচীর ডাক দেন ছাত্রনেতা বিন্দর, গুরদত্ত ঘুড্ডা।

 

বিকেইউ একতা (উগ্রাহান)-এর মহিলা নেত্রী কুলদীপ কৌর প্রতিবাদ কর্মসূচীর ডাক দেন। কুসস্যা গ্রামে মহিলা র‍্যালি ও অবস্থান কর্মসূচীর ডাক দেন।

 

পিএসইউ (শহীদ রন্ধওয়া)-র পক্ষ থেকে গুরপাল সিং গুরি জানালেন তাঁদের দাবি মূলত তিনটি – (১) এই ঘটনায় যুক্ত অপরাধীদের কঠোর শাস্তি, (২) মহিলাদের সকল ‘কর্মক্ষেত্রে’ তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার ও সুনিশ্চিত করা, (৩) ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের কোনও ঘটনা না ঘটে তার দায়িত্ব নিয়ে সরকারের কাজ করা।

 

আর.জি.কর-এর প্রতিবাদে শামিল হওয়াকে সরাসরি রাজনৈতিক না বললেও গুরপাল বলেন, “আমরা ঠিক এটাকে রাজনৈতিক না বললেও, মনে করি এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে মানবিকতার দিক থেকেই আওয়াজ তোলা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ইউনিয়নগুলিও তাই মনে করেই প্রতিবাদ করছে।”

 

বিকেইউ একতা (উগ্রাহান)-এর বরিষ্ঠ নেতা যোগিন্দর সিং উগ্রাহান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “কলকাতার ঘটনা নিন্দনীয় ও বেদনাদায়ক। মমতা সরকার সিসিটিভি ফুটেজের উপর ভিত্তি করে একজনকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এরকম ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক লোকজন যুক্ত বলে সন্দেহ অমূলক নয়। এরকম ঘটনা দেশ জুড়ে ঘটছে – উন্নাও থেকে হাথরাস। আমাদের এই ঘটনার বিচারের জন্য প্রতিবাদ করতে হবে। যাতে স্থানীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যায়।”

 

Share this
Leave a Comment