বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনে কী আসে যায়? আসল প্রশ্ন হল: পৃথিবী কি বিলুপ্ত হতে চলেছে? শেষের সেদিন কি ঘনিয়ে আসছে?


  • June 7, 2024
  • (0 Comments)
  • 1122 Views

বিশ্বের পরিবেশ সঙ্কট আসলে অতি গভীর। পৃথিবীর গভীর অসুখ এখন। ধুমধাম করে কয়েক হাজার বৃক্ষরোপণের টোটকা দিয়ে তার প্রতিকার অসম্ভব। এই সঙ্কট থেকে বেরোতে হলে বিনাশ ঘটাতে হবে বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার। বেদনাদায়ক হল, মানুষের মধ্যে সেই ধরনের সচেতনতা খুবই স্বল্প, অকিঞ্চিৎকর। তাই মানবজগত আজ বিলুপ্তির মুখে দাঁড়িয়ে পড়েছে কি না এই প্রশ্ন ওঠা অসঙ্গত নয়। 

 

আপডেট স্টাডি গ্রুপ

 

আবার একটা ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুই বাংলার বুকে আছড়ে পড়ল। পশ্চিমবাংলায় তুলনায় কম তাণ্ডব চালালেও, তা বাংলাদেশ এবং প্রায় সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতকে তছনছ করে দিল। বহু মানুষের প্রাণ গেল। বহুজন বাস্তুহারা হল। চাষজমিতে নোনা জল ঢুকল। সেই জমি কবে চাষযোগ্য হবে তার কোনও ঠিক নেই। রাস্তাঘাট, সেতুর ভাঙন, পাহাড়ে ধস – রেমালের ধাক্কা সব কিছুতেই অনুভূত হল। একের পর এক ঘূর্ণিঝড় আসবে, মানুষের জীবনযাত্রা লণ্ডভণ্ড হবে, বহুজনের প্রাণ-ঘর-জীবিকা চলে যাবে! প্রতি বছরে বঙ্গোপসাগরে খান দুয়েক কি খান তিনেক, আরব সাগরে খান দুয়েক, কিংবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলবর্তী অঞ্চল কিংবা উত্তর-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রগুলি অথবা পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলিতে অতিতীব্র ঘূর্ণিঝড়-টাইফুন-হারিকেন-টর্নেডো ঘনঘন আছড়ে পড়বে। এখনকার বিশ্বে এসব যেন অতি স্বাভাবিক!

 

ইতিমধ্যে এপ্রিল-মে মাসে অসহনীয় তাপপ্রবাহে মানুষের প্রাণ হল ওষ্ঠাগত। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনস, ইত্যাদি দেশ রীতিমতো ফুটন্ত কড়াইয়ের মতো হয়ে উঠল। কোথাও তাপমাত্রা ৫০ পেরিয়ে ৫৬ সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে গেল। উষ্ণতা বৃদ্ধির মাত্রায় নতুন নতুন রেকর্ড হল। হিটস্ট্রোকে মারা গেল বহুজন। শুধু ভারত ধরলে তা দুই শতাধিকের কম নয়। গত ১২২ বছরে এরকম একটানা তাপপ্রবাহ দেখা যায়নি। গত ৫৪ বছরে এতটা উচ্চ তাপমাত্রাও দেখা যায়নি। বস্তুত, এই বছরের প্রথম পাঁচ মাস এবং গত বছরের শেষ সাত মাস ধরলে, টানা বারো মাস বিশ্বের তাপমাত্রা তার আগের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে। নেচার পত্রিকার মতে ২০২৩ সাল ছিল গত ২০০০ বছরে উষ্ণতম। ২০২৪ সাল তাকেও ছাপিয়ে যাবে কি না জানা নেই। এমনকি ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলিতেও তাপমাত্রা বেড়ে রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছিল গত বছরে। দাবানল জ্বালিয়ে দিয়েছিল বহু অরণ্য ও জনপদ। ভারতেও এখন উত্তরাখণ্ডে দাবানল চলছে।

 

শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধি নয়। সারা পৃথিবী জুড়ে যখন তখন নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। ভারত সহ পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল যখন পুড়ছে, প্রায় একই সঙ্গে পশ্চিম এশিয়াতে ঘটে গেল অভুতপূর্ব বন্যা। দুবাই, সৌদি আরব, আফগানিস্তানের ব্যাপক অঞ্চল ভেসে গেল। প্রকৃতপক্ষে, সমগ্র বিশ্বের প্রকৃতি ও পরিবেশ এতটাই সঙ্কটগ্রস্ত যে, কখন কোথায় ব্যাপক বিপর্যয় আছড়ে পড়বে তা আগে থেকে আন্দাজ করা যাচ্ছে না।

 

গত বছরেও দাবানল ও তাপপ্রবাহে ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডায় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছিল। এমনকি আর্কটিক, গ্রিনল্যান্ড, সাইবেরিয়ার নানা অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ছিল রেকর্ড পরিমাণ। ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছিল, প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তাপমাত্রার থেকে উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে পারলে পৃথিবী গ্রহটি বেঁচে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু ওই ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেই সমুদ্রের জলস্তর ফুলে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, আর্কটিক-অ্যান্টার্টিকের মতো বরফাবৃত অঞ্চল বহুলাংশে গলে যাবে, হিমালয়-আল্পস-আন্দিজ পর্বতগুলির হিমবাহগুলি গলতে থাকবে, নিচু দেশ ও দ্বীপগুলি জলমগ্ন হবে, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়বে বহুগুণ। তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পায়ন যুগের থেকে ১.৫ সেলসিয়াসের গণ্ডি ছাপিয়ে ২ বা ৩ ডিগ্রি বৃদ্ধির দিকে এগোলে হিমবাহগুলি আরও দ্রুত গলতে থাকবে, হিমবাহজাত নদীগুলিতে জলস্ফীতি ঘটবে। গ্রাম-শহর ডুববে। চাষ-আবাদ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাধারণ জীবনযাত্রা হবে দুর্বিষহ। তারপর হিমবাহগুলির ক্রমশ পঞ্চত্ব ঘটলে নদীগুলিতে জল দ্রুত কমতে শুরু করবে। দেখা যাবে অতিখরা। ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী ২০০ কোটি মানুষের বেঁচে থাকার মতো পরিবেশই বিলুপ্ত হবে।

 

ইতিমধ্যে তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়িত যুগের থেকে গড়ে ১.২ সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। গত দুই বছর ধরে তা প্রায় ১.৮ ডিগ্রি বেশি থেকেছে। ২০৩০ সালের মধ্যেই গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়িত যুগের থেকে ১.৫ ডিগ্রি বেড়ে গেলে তা বিস্ময়কর হবে না। অর্থাৎ, আর মাত্র পাঁচটি বছর! তার মধ্যেই হয়তো ভূপ্রকৃতি ও ভূপরিবেশ ব্যাপক মাত্রায় বিপর্যস্ত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবে। তার পরের বছরগুলিতে যদি তাপমাত্রা ২বা ৩সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় – অন্তত ২০৫০ বা ২১০০ সালে, তবে পৃথিবীতে মানবজীবনের বিলুপ্তির সম্ভাবনা অতি প্রবল।

 

ব্যাপক বিপর্যয়ের নানা ঘটনা দেখা দিতে শুরু করেছে। গত বছরে সিকিমে লোনক হিমবাহজাত হ্রদ ভেঙে গিয়ে তুমুল জলস্রোত তিস্তার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বাঁধ ভাসিয়ে দিল। রাস্তা-বাড়িঘর, সেতু, সামরিক ছাউনি ধ্বংসপ্রাপ্ত হল। বহু মানুষের প্রাণ গেল। উত্তরাখণ্ডে হিমবাহজাত হ্রদ ভেঙে প্লাবন ঘটেছে ২০১৩ ও ২০২১ সালে – কেদারনাথ ও চামোলিতে। সেখানেও বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ১৯৮৪ সালের পর ভারতের হিমালয়ে ৬৭৬টি হিমবাহজাত হ্রদগুলির মধ্যে ৬০১টি গলে আয়তনে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। হিমাচল প্রদেশের গেপাং গথ হিমবাহজাত হ্রদ বে়ড়ে গেছে ১৭৮ শতাংশ। তা যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ে মানালি-লে রাস্তা সহ বহু জনপদকে ভাসিয়ে দিতে পারে। গত বছরে লোনক হ্রদ বিস্ফোরিত হওয়ার পর তিস্তার জলস্তর ১.৫ মিটার বা প্রায় ৫ ফুট বেড়ে গেছে।

 

তা সত্ত্বেও তিস্তা-গঙ্গা-শতদ্রু-বিয়াসের বুকে বাঁধ নির্মাণ চলছে নির্বিচারে। সিকিমে তিস্তার বুকে ইতিমধ্যে পাঁচটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়ে গেছে। ১৫টি নির্মীয়মান। আরও ২৭টি বিদ্যুৎপ্রকল্প নির্মাণের নীল নকশা তৈরি হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গেও তিস্তার ওপর বাঁধ নির্মাণ চলছে অপ্রতিহত ভাবে। প্রকৃতপক্ষে সমগ্র হিমালয় জুড়ে ভারত, চিন, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটানের নদীগুলির ওপর প্রায় ১৫০০টি বাঁধ নির্মাণ করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হয় নির্মিত হয়েছে অথবা নির্মীয়মান অবস্থায় আছে। বাঁধগুলি নদীগুলির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে যেমন নষ্ট করছে, অতিবৃষ্টিতে নদীর দু’কূল ভাসিয়ে দিয়ে জনপদ ধ্বংস করছে, তেমনই ধ্বংস করছে নদীগুলির ওপর নির্ভরশীল অগণ্য কীট-কীটাণু-প্রাণি-উদ্ভিদের বাস্তুতন্ত্রকে। ফলে নদীগুলির জৈববৈচিত্র এখন হয় চরম সঙ্কটগ্রস্ত অথবা ইতিমধ্যে মৃত্যুমুখে পতিত।

 

হিমালয়ের মতো একটি নবীন ও ভূমিকম্পপ্রবণ পর্বতে উন্নয়ন, নগরায়ণ, আধুিনকীকরণ চলছে ব্যাপক মাত্রায়। উত্তরাখণ্ডে চলছে চারধাম প্রকল্প। গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রী-কেদারনাথ-বদ্রিনাথের সংযোগকারী হাইওয়ে ও পরিকাঠামো নির্মাণ চলছে জোর কদমে। হিমালয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে গাড়ি চলাচল মসৃণ করার জন্য পাহাড় কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। পাহাড় কেটে টানেল তৈরি হচ্ছে অজস্র। নির্বিকারে হাজার হাজার গাছ কাটা হচ্ছে। নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রুদ্ধ হচ্ছে। ভূমিকম্পপ্রবণ হিমালয়ে ‘মানবসভ্যতা’ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এসব চলছে পরিবেশবিদদের সাবধানবার্তাকে অগ্রাহ্য করে। ঋষিকেশ থেকে কর্ণপ্রয়াগ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ চলছে। সিকিমের রংপো পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। এই ধরনের ‘উন্নয়ন’ পাহাড়বাসীরা চায় কি না, তা কেউ জানতে চায়নি। কাশ্মীরেও নির্মিত হয়েছে রেলপথ। উন্নয়নের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে, যাতে অতি দ্রুত সীমান্তে সৈন্য, সাঁজোয়া গাড়ি পাঠানো যায় ও সামরিক অভিযান চালানো যায়। এর খেসারত কম দিতে হচ্ছে না। অতিবৃষ্টিতে বা হরপা বানে শুধু ঘনঘন বিপর্যয় নয়। উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠ ক্রমশ বসে যাচ্ছে। বাড়িঘরে দেখা দিয়েছে ফাটল। জনজীবন বিপর্যস্ত। পরিবেশবিদদের মতে অদূর ভবিষ্যতে নৈনিতাল, সিমলা, কর্ণপ্রয়াগ, পিথোরাগড়েও একই ঘটনা দেখা যেতে পারে। পাহাড় ও প্রকৃতি ‘উন্নয়ন’ যজ্ঞের এত চাপ নিতে পারছে না।

 

প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রায় অন্ধের মতো, কার্যত পাগলের মতো ছুটে চলেছে উন্নয়ন, নগরায়ণ, আধুনিকীকরণের পেছনে। তার ফলে এই গ্রহটা ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে এগোচ্ছে। কীভাবে তা ঘটছে তা একটু খোলসা করা যাক।

 

এই গ্রহে বর্তমান মানবসমাজের বিকাশ ঘটেছে দশ-বােরা হাজার বছর আগে। তার আগে পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলেছে প্রাণস্পন্দনের সূত্রপাত, বিকাশ। অতীতে যে জীবজগৎ ছিল, প্রাকৃতিক কারণে, অর্থাৎ কখনও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের আধিক্য, কখনও পৃথিবীতে তুষার যুগের আগমন, কখনও আগ্নেয়গিরি থেকে বিপুল অগ্নুৎপাত, মাত্রাতিরিক্ত উত্তাপ ইত্যাদির ফলে নানা সময়ে প্রাণি-উদ্ভিদের গণ-বিনাশ ঘটেছে। পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল হলে নতুন প্রজাতির প্রাণি-উদ্ভিদ-কীট-কীটাণুর আবির্ভাব ঘটেছে। আজ থেকে প্রায় বারো হাজার আগে বিশ্বের জলবায়ু স্থিতু হয়েছে, আধুনিক মানুষ সহ নানা প্রাণি ও উদ্ভিদের বিকাশ ঘটেছে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থান, আদান-প্রদান, বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে। মানুষ তখন জীবনধারা বজায় রাখার জন্য প্রকৃতির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।

 

তারপর, মানুষ যখন কৃষিকাজ শিখল, তখনই প্রকৃতির ওপর সে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করল। কিন্তু তখনকার কৃষিব্যবস্থা এখনকার মতো প্রকৃতিকে যথেচ্ছভাবে বিঘ্নিত করেনি, নষ্ট করেনি। মানুষ তখন প্রকৃতি বা মাটি থেকে যে পুষ্টিদ্রব্য ফসলের মধ্যে আবদ্ধ করত, সেই পুষ্টিদ্রব্য বর্জ্য পদার্থ রূপে আবার মাটিতে ফিরে যেত। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে একটা চক্রাকার আদান-প্রদান ঘটত। কিন্তু যখন থেকে পুঁজিবাদী বিকাশের হাত ধরে শিল্পগত বিকাশ ঘটল, শহরগুলি গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে স্থাপিত হল, উপরোক্ত চক্রাকার আদান-প্রদান ব্যবস্থা তখন ভেঙে গেল। গ্রাম থেকে ফসল ও কৃষিজাত তন্তু শহর পানে ধাবিত হল। তা শহরবাসীর খাদ্য, পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাল। কিন্তু এর ফলে শহরে যে বর্জ্যদ্রব্য তৈরি হল তা আর গ্রামের মাটিতে ফিরে গেল না। তা নদী-নালা-জলাশয়ে মিশল, সাগরে জমা হল এবং ব্যাপক দূষণ সৃষ্টি হল। এইভাবে একদিকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আবাহনে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সরল-স্বাভাবিক আদান-প্রদানের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল, মানুষ প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। অন্যদিকে, প্রকৃতির বিনাশের পথ উন্মুক্ত হল।

 

শিল্প-বিপ্লবের পর প্রকৃতিকে নিংড়ে নেওয়া, প্রকৃতি থেকে শুধু নেওয়া, অথচ প্রায় কিছুই ফিরিয়ে না দেওয়ার রীতি ক্রমশ পাকাপোক্ত হল। প্রকৃতি ও মাটির অবক্ষয় ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত হল ১৯৫০ সালের পর থেকে। ততদিনে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা রাসায়নিক সার আবিষ্কার করে ফেলেছে। শুরু হয়েছে তার নির্বিচার প্রয়োগ। ছোট ছোট চাষি পরিচালিত খেতগুলোকে বড় বড় কোম্পানি দখলে নিয়ে বৃহদাকার খামার বানাল। চাষ-আবাদ হয়ে উঠল শিল্পায়িত। আরও আরও মুনাফা ও ফসল ফলানোর তাগিদে নানা রকম কীটনাশক, আগাছানাশক, যন্ত্রপাতির প্রয়োগ ঘটল মাত্রাতিরিক্ত। এর সামগ্রিক ফলাফল হল ভয়াবহ। রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক মাটির মধ্যে থাকা উপকারী কীট-কীটাণু ও নানা অমেরুদণ্ডী-মেরুদণ্ডী প্রাণিকে মেরে ফেলল। ওই প্রাণিগুলিকে ভক্ষণ করে যে সব প্রাণি বাঁচত, তারা হল বিপুলভাবে বিপন্ন।

 

প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীতে পোকামাকড়ের সংখ্যা কোটি কোটি। প্রায় ২০ লক্ষ প্রজাতির পতঙ্গ, কীট, কীটাণু, ইত্যাদির অস্তিত্ব এখন পর্যন্ত জানা গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে অজানা পোকামাকড়ের সংখ্যা তার দ্বিগুণেরও বেশি। এরা গাছের ফুলের রস খেয়ে যে পরাগসংযোগে সাহায্য করে, তার ফলে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। সেই উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন প্রাণিসহ মানুষ খাদ্য পায়, পায় প্রয়োজনীয় রসদ। ওই পোকামাকড়ের দল মাটি খুঁড়ে তাতে জল, বাতাস প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে। তাদের উপকারের সীমা নেই। এদের সবাইকে মিলে জীবসংসার তথা জৈববৈচিত্র।

 

কিন্তু শিল্পায়িত কৃষি-ব্যবস্থার ফলে কেঁচো, প্রজাপতি সহ নানা পোকা-মাকড়, পতঙ্গ (সংখ্যায় ও প্রজাতিতে তারা লক্ষ লক্ষ) এবং তার ওপর নির্ভরশীল পাখি, সরীসৃপ, উভচর প্রাণিগুলো নির্বংশ হতে থাকল। খাদ্য-শৃঙ্খল যেমন বিনষ্ট হতে শুরু করল, তেমনই মাটি উর্বরতা হারিয়ে অনুর্বর হতে থাকল। এককথায়, পৃথিবীর বিপুল জৈববৈচিত্র ক্রমশ বিপন্ন হল। ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশে এবং ভারতের মতো অনুন্নত দেশেও পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উপরোক্ত ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি বিনাশের দিকে এগিয়ে চলল। আসলে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানবসভ্যতা ভুলে গেছে কিংবা তারা অচেতন যে, পৃথিবীর মধ্যে বসতি গড়া প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব-জীবাণু-কীট-পতঙ্গ-অমেরুদণ্ডী ও মেরুদণ্ডী প্রাণিগুলি একে অপরের ওপর বিপুল মাত্রায় নির্ভরশীল। তারা অচেতন যে, এই সহাবস্থানের শৃঙ্খলের একটি বা একাধিক প্রজাতি বিলুপ্ত হলে মানুষের অস্তিত্বই হয়ে পড়বে বিপন্ন।

 

অর্থাৎ, পৃথিবীর বর্তমান সঙ্কট শুধু ভূ-উষ্ণায়ন নয়। পৃথিবীর সঙ্কট বহুমাত্রিক। জীবজগতের শ্বাসকার্যের ফলে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বাতাসে কার্বন ও অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখে অগণ্য উদ্ভিদ। ফলে উদ্ভিদ কাটা পড়লে বা অরণ্য লুপ্ত হলে মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণি সেই কার্বন-প্রধান পরিবেশে বাঁচবে না। তার উপর, গাছগুলি যে বাষ্পমোচন করে তা শুধু আবহাওয়াকে ঠাণ্ডা রাখে না, তা মেঘপুঞ্জ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এগুলো একেবারে গোড়ার কথা। প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কচিকাঁচারা পাঠ্যক্রম থেকে এসব কথা ভালই জানে।

 

কিন্তু বিশ্বের দেশগুলোর সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী শাসকবৃন্দের কাছে মুনাফা ও পুঁজির পুঞ্জীভবনই মোক্ষ। ফলে নির্বিচার জঙ্গল নিধনে তাদের কিছু যায় আসে না। আসলে একটি বৃহৎ বৃক্ষের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন উদ্ভিদ-প্রাণি – যেমন, লতা-গুল্ম, পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ, পাখি, পোকামাকড়, সরীসৃপ-উভচর সহ মানুষ। তারা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একে অপরের সঙ্গে সহাবস্থান করে এবং একে অপরের থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে, আবাসস্থলের বন্দোবস্ত করে তারা বেঁচে থাকে ও বংশবৃদ্ধি করে। তাই, গাছপালা, বনজঙ্গল, প্রাণিগুলির আবাসস্থল, বিচরণ ক্ষেত্র, বংশবৃদ্ধির প্রাকৃতিক পরিবেশকে যখন নির্বিচারে নষ্ট করা হয়, ধ্বংস করা হয় – তখন মানুষ সহ সমগ্র জীবজগৎ হয়ে পড়ে বিপন্ন, বিপর্যস্ত।

 

পৃথিবীর সিংহভাগ জল আছে সমুদ্রে। সমুদ্রের জলরাশি বিপুল পরিমাণ তাপ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এই বিশ্বকে মানুষের পক্ষে বাসযোগ্য করে তুলেছে। আর্কটিক-অ্যান্টার্টিকের সঞ্চিত সাদা বরফ সূর্যের উত্তাপকে প্রতিফলিত করে পৃথিবীর তাপমাত্রাকে স্থিতাবস্থায় রাখে। কিন্তু সেই বরফ ক্রমাগত গলছে। ফলে বরফ গলে নির্গত কালো জল এখন তাপ শোষণ করছে। এর ফলেও ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে। সমুদ্রের জলও ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তার ফলে শুধু বর্ধিত মাত্রায় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে না, উত্তপ্ত সমুদ্রে দ্রবীভূত প্রাণদায়ী অক্সিজেন জল থেকে বেরিয়ে আসছে। ফলে সামুদ্রিক জীবগুলিও আজ বিপন্ন। এছাড়া, সমুদ্রের অম্লত্ব বেড়ে যাচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। এইসবের সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে সামুদ্রিক প্রাণি ও মাছের ওপর। সামুদ্রিক প্রাণি ও তটভূমিকে সুরক্ষা দেয় যে প্রবালপ্রাচীর, তাও দ্রুত লয় পাচ্ছে। মানুষ সমুদ্রের মাছ নিজেরা যতটা শেষ করেছে, তার চেয়েও দ্রুত গতিতে তা নিঃশেষিত হচ্ছে সামুদ্রিক পরিবর্তনের ফলে।

 

পুঁজিবাদী যুগের আরও তিনটি উপাদান পরিেবশকে করে তুলল মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত। এর মধ্যে প্রধান হল জীবাশ্ম জ্বালানিজাত কার্বন ডাই-অক্সাইড। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উন্নত ও উন্নতিশীল দেশগুলির কল-কারখানা, ব্যক্তিগত গাড়ির বিপুলাকার ব্যবহার, জাহাজে পরিবহণ, উড়োজাহাজে ভ্রমণ, অতিরিক্ত মাংস-দুধ ভক্ষণ, অতিবিলাসী জীবনযাপন ইত্যাদির থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড গত ৭০ বছরে বেড়ে গেছে বহু গুণ। প্রাক-শিল্পায়ন যুগে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছিল ২৮০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন বা প্রতি দশ লক্ষ অণুতে ২৮০ অণু)। বিজ্ঞানীরা বললেন, পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে তা ৩৫০ অণুর মধ্যে রাখতে হবে। কিন্তু ২০১৪ সালে তা ৪০০ পেরিয়ে গেছে। এখন তা ৪২৭.৪। বস্তুত, প্রতি বছর তা ২ পিপিএম করে বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তা ৪৫০ অতিক্রম করলে ফলাফল হবে ভয়াবহ। তখন বিশ্বের তাপমাত্রা ২ কেন, বেড়ে যাবে ৩ থেকে ৪ সেলসিয়াস।

 

সম্প্রতি মার্কিন বিজ্ঞান সংস্থা NOAA জানিয়েছে, বর্তমানে বাতাসে ভাসমান কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ দেখা গিয়েছিল ৪৩ লক্ষ বছর আগে। যে সময় তা ঘটেছিল, তখন সমুদ্রের জলস্তরের উচ্চতা ছিল ২৩ মিটার বা ৭৫ ফুট। সমুদ্রতলের এহেন উচ্চতা বৃদ্ধি কল্পনাতীত। আমরা কি নিশ্চিতভাবে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে চলেছি?

 

বিশ্বে খনিজ তেল-গ্যাস-কয়লা ইত্যাদির ব্যবহার কিছুটা কমলেও এখনও বিশ্বের ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। এর জন্য প্রধানত দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলি। তারা শিল্পযুগের পর থেকে বাতাসে যে কার্বন ক্রমপুঞ্জীভূত করেছে তা ভারতের মতো অনুন্নত-উন্নয়নশীল দেশগুলির তুলনায় বহু গুণ বেশি। ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্বে যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়েছে তার ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী ১০০টি বৃহদাকার বহুজাতিক কোম্পানি। ২০১৫ সালে বিশ্বের ধনীতম ১০ শতাংশ মানুষ ৪৯ শতাংশ কার্বন নির্গমন করেছে। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তেলের উৎপাদন কমায়নি। বরং তারা উত্তর সাগরে, আলাস্কায়, আফ্রিকায় নতুন তেলের খনি খুঁজছে, খুঁড়ছে, উৎপাদন বাড়াচ্ছে। ভারতের মতো কিছু দেশও জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন হ্রাস করার পথে এগোচ্ছে এমন কথা বুক ঠুকে বলা যাবে না। বরং, ছত্তিশগড়ে, ঝাড়খণ্ডে, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গে নতুন কয়লা খনি স্থাপনের বরাত পাচ্ছে বৃহদাকার কোম্পানি। তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পথ থেকে ভারতের শাসকশ্রেণি সরে আসছে এমন কথাও জোর গলায় বলা যাবে না।

 

কার্বন ডাই-অক্সাইড হল এমন এক গ্রিনহাউস গ্যাস যা পৃথিবীর ঊর্ধ্বাকাশে সৃষ্টি করে ছাতার মতো আবরণ। এই আবরণ ভেদ করে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত উত্তাপ মহাশূন্যে চলে যেতে পারে না। ফলে, যত বেশি কার্বন নির্গত হচ্ছে, পৃথিবী তত বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুোল বারবার বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কার্যত শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বললেও, তেল-গ্যাস-কয়লা কোম্পানিগুলো অতি-মুনাফার পেছনে ছুটছে।

 

শুধু কার্বন নয়, কৃষিকার্য থেকে নির্গত মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডও অত্যন্ত ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস। মিথেন কার্বন ডাই-অক্সাইডের থেকে ৮৬ গুণ এবং নাইট্রাস অক্সাইড ৩০০ গুণ ক্ষতিকর। এই গ্যাসগুলি নির্গত হয় পশুর রোমন্থন প্রক্রিয়া, শিল্পায়িত কৃষিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার, ইত্যাদি থেকে। বিশ্বে যে বিপুল সয়া, ভুট্টা, বিন উৎপাদন হয়, তার অধিকাংশ যায় পশুখাদ্যের ব্যবহারে। মাথাপিছু পশুমাংস ব্যবহারে উন্নত দেশগুলি ভারতের মতো দেশগুলির থেকে বহু যোজন এগিয়ে। মেথেন ও নাইট্রাস গ্যাসের নির্গমন উন্নত দেশে আকাশছোঁয়া। সেখানে কম মাংস ভক্ষণের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কমছে না। পশুপালন ও পশুমাংস উৎপাদন এবং বৃহদাকৃতি খামার প্রথায় চাষাবাদ এখন িবশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসাগুলির অন্যতম।

 

২০১৯ সালে বিশ্ববাসী যে কোভিডে আক্রান্ত হল তার পেছনেও আছে পরিবেশের নির্বিচার ধ্বংসসাধন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উন্নয়ন, আধুনিকীকরণের হাত যত বেশি পরিমাণে গভীর অরণ্যে প্রবেশ করছে, নির্বিচারে গাছপালা কাটছে, ততই তা গভীর অরণ্যে বসবাসকারী নানা প্রাণির বসতকে নষ্ট করছে। সেই প্রাণিগুলির মধ্যে আছে লক্ষ লক্ষ ভাইরাস সহ নানা জীবাণু। এই ভাইরাস স্থানচ্যুত হয়ে অন্য কোনও প্রাণির মাধ্যমে (যেমন বাদুর থেকে শুয়োর, সেখান থেকে মানুষ) মানবদেহে প্রবেশ করছে। বনে-জঙ্গলে থাকা মশা-মাছি-পোকামাকড়ের সংস্পর্শে আসছে মানুষ। ফলে ঘটছে করোনা, সার্স, নিপা, জিকা, ইবোলার মতো জীবাণু-বাহিত রোগ। এই ঘটনা শিল্পযুগের আগেও ঘটেছে। উন্নয়নের ঠেলায় এখন ঘটছে আরও বিপুলভাবে। ফলে করোনার মতো অন্য কোনও জীবাণু-বাহিত রোগ মানবদেহে প্রবেশ করার সম্ভাবনা এখন যথেষ্ট প্রবল। বিজ্ঞানীদের মতে ২০৩০ সালের মধ্যেই আমরা এই ধরনের আরও প্রাণঘাতী রোগের বিস্তার দেখব।

 

সম্প্রতি গার্ডিয়ান পত্রিকা বিশ্বের ৮৪৩ জন বিজ্ঞানীর কাছে পরিবেশ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করেছিল। তাঁদের উত্তর ভীতিপ্রদ। উত্তরদাতাদের ৮০ শতাংশ বলেছেন, ২১০০ সালে প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তাপমাত্রা থেকে ২.৫ সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি অনিবার্য। তাঁরা কেউ চূড়ান্ত হতাশ, কেউ প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ, কেউ ভেঙে পড়েছেন, কেউ অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত। এই গ্রহটি বিলুপ্তির হাত থেকে বেঁচে যাবে এমন আশা প্রায় কেউ করছেন না। তাঁরা নীতিপ্রণয়নকারীদের মূর্খ আখ্যা দিয়েছেন।

 

বিশ্বের পরিবেশ সঙ্কট আসলে অতি গভীর। পৃথিবীর গভীর অসুখ এখন। ধুমধাম করে কয়েক হাজার বৃক্ষরোপণের টোটকা দিয়ে তার প্রতিকার অসম্ভব। এই সঙ্কট থেকে বেরোতে হলে বিনাশ ঘটাতে হবে বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার। বেদনাদায়ক হল, মানুষের মধ্যে সেই ধরনের সচেতনতা খুবই স্বল্প, অকিঞ্চিৎকর। তাই মানবজগত আজ বিলুপ্তির মুখে দাঁড়িয়ে পড়েছে কি না এই প্রশ্ন ওঠা অসঙ্গত নয়।

 

সম্পাদনা: শুভ্র মল্লিক

আপডেট স্টাডি গ্রুপ

 

Share this
Leave a Comment