সাদত হাসান মান্টোর ১১২তম জন্মদিন চলে গেল এই মাসে। গত দু’বছর হল মান্টোর ‘খোল দো’ গল্প নিয়ে একক পারফর্মেন্স করে চলেছে কত্থক, সমসাময়িক নাচ ও থিয়েটার শিল্পী শ্রুতি ঘোষ। শ্রুতির সঙ্গে নাচ নিয়ে একাধিক কাজ করার সুবাদে ওর ‘খোল দো’-র সাথে সামান্য হলেও আমি জড়িয়ে থেকেছি। সেই ‘খোল দো’র শৈল্পিক, অর্থনৈতিক পথ চলা নিয়ে মান্টোর জন্মমাসে কিছু কথা। – মধুশ্রী।
শ্রুতি ঘোষের একক পারফর্মেন্স ‘খোল দো’-র দ্বিতীয় পর্যায়ের পথ চলা শুরু হয়েছে ২০২২ সালে। এই দু’বছরে ২৮টি শো হয়েছে ভারতের নানা রাজ্যে – গ্রামের বাড়ির উঠোন থেকে কলেজের অডিটোরিয়ামে, বস্তির স্কুল থেকে শহুরে পারফর্মেন্স স্পেসে। ‘খোল দো’ দেশভাগ নিয়ে সাদত হাসান মান্টোর ঐ একই নামের গল্পের উপর তৈরি। শ্রুতি এই কাজটি যে আঙ্গিকে করেছে, তাকে ডান্স-থিয়েটার বলা যেতে পারে। কিন্তু আঙ্গিকের চাইতেও যা আমাকে টানে, তা হল নানা মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার নিরিখে এই কাজ যেভাবে ছড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেছে, এবং তার সাথে এই কাজের ও এই জাতীয় আরও নানা কাজের বহুদূর অবধি ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
এমনিতে নানা আঙ্গিকের বিকল্প থিয়েটার, বিশেষত তৃতীয় থিয়েটার যেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে চায়, ‘খোল দো’র পথ তার চেয়ে বিরাট আলাদা কিছু নয়। তবু তারই মধ্যে শ্রুতির শিল্পী হিসেবে, নাচের শিক্ষক হিসেবে যে নিজস্ব পথ চলা, সেসব মিশে গিয়ে এমন কিছু সংযোগ তৈরি হয়েছে, যা ‘খোল দো’কে, শ্রুতিকে ঋদ্ধ করেছে বলে আমার মনে হয়। তাছাড়া পারফর্মেন্স শিল্পের ইতিহাসে নাটক যেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছে, সমসাময়িক নাচ সেভাবে পারেনি। তাই সেদিক থেকেও ‘খোল দো’ আমার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে থেকেছে। শিল্পের ‘মানে করে নেওয়া’ আসলে ‘মানে বোঝা’র চাইতে কম সুন্দর বা কম দরকারি কিনা, ‘খোল দো’ বারবার সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে।
শ্রুতির ‘খোল দো’র আমি তিনটি শো দেখেছি, যেহেতু একই পারফর্মেন্স বহুবার দেখতে আমি ভালোবাসি। তিনটির মধ্যে একটি অনলাইন – ২০১৬ সালে দিল্লির স্টুডিও সফদারে। দু’টি লাইভ – ২০২২ সালে গুরগাঁওয়ের একটি ছোট টিউশন সেন্টারে (শিক্ষা কে সাথী) ও পরে চেন্নাইয়ের একটি ইন্টিমেট পারফর্মেন্স স্পেসে (আর্ট অন দ্য টেরেস)। দিল্লির ‘খোল দো’ – সেটা শ্রুতির ‘খোল দো’র প্রথম পর্যায় – অনেক বেশি ‘পারফর্মেন্স’, অনেকটা নাচ। ২০২২-এর ‘খোল দো’কে নাচ, নাটক দু’নামেই ডাকা যায় – আসলে নাচ-নাটক মিলেমিশে গেছে, যেমন গেছিল মায়া কৃষ্ণা রাও-এর বাবরি-পরবর্তী ‘খোল দো’ একক পারফর্মেন্সে।
‘খোল দো’-র কথা উঠলে মায়া রাওয়ের বিখ্যাত পারফর্মেন্সের কথা একবার বলতেই হবে, তাই বলা। তা নয়তো শ্রুতির কাজের ধরন মায়া রাওয়ের চাইতে অনেকটাই আলাদা। বয়স ও অভিজ্ঞতার তফাত ছাড়াও গল্প বলার ধরনে, শব্দ বা টেক্সট ব্যবহারের ধরনে, পারফর্মেন্সের তীব্রতায় ও আকারে। মিল বলতে মায়ার মতো শ্রুতিও ওর ‘খোল দো’তে পুনরাবৃত্তি বা রিপিটেশনের ব্যবহার রেখেছে। হয়তো রাখতেই হবে, তাই। কারণ পুনরাবৃত্তিই এ গল্পের মূল চরিত্র সাকিনার বাবার হারিয়ে যাওয়া মেয়ের সন্ধানের আশায় ঘুরে, ঘুরে, ঘুরে, ঘুরে মরাকে জীবন্ত করে তোলে। মাত্র কুড়ি মিনিটের পরিসরে শ্রুতির অভিনয় ও নাচ জাগিয়ে তোলে নানা অনুভূতি – আশংকা, ভয়, যন্ত্রণা।
দেখে খুশি হয়ে বাড়ি যাওয়ার মতো পারফর্মেন্স এটা নয়। মান্টোর গল্পও তা নয়। চেন্নাইতে একজন দর্শককে আমি প্রায় চোখ বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় দেখেছি; পরে তাঁর দম বন্ধ হওয়া অনুভূতি নিয়ে তাঁর সাথে কথা বলেছি। গুরগাঁওতে টিউশন সেন্টারের ছাত্র-ছাত্রীদের ও তাদের মায়েদের চোখে জল ছিল, অনেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছিলেন। এছাড়া শ্রুতির কাছে শুনেছি, দিল্লিতে এক দর্শকের ওপার থেকে চলে আসা ঠাকুমার বিনিদ্র রাতগুলির কথা মনে পড়ে যাওয়া, শো-র পরে পুরুষ ও মহিলা দর্শকদের মধ্যে তর্ক শুরু হয়ে যাওয়া। তার মানে, শ্রুতির কাজ এক অর্থে, খানিকটা হলেও, এই গল্পকে নানা সামাজিক বিতর্কের মূলে নিয়ে গিয়ে বসাতে পারছে। দেশভাগের স্মৃতি সরাসরি বহন করে না যে প্রজন্ম, তারাও ‘খোল দো’ দেখে চমকে উঠছে, ভাবছে।
শ্রুতির পারফর্মেন্সে টেক্সট যেটুকু না থাকলেই নয়, সেটুকুই মাত্র আছে। ফলে ‘খোল দো’র দর্শকদের নিজেদের মতো গল্প গড়ে নেওয়ার একটা স্বাধীনতা থেকে যায়। অনেকেই এই ‘খোল দো’কে দেখছেন জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-বিশেষে প্রান্তিক মানুষের উপর অত্যাচারের কাহিনী হিসেবে। আত্মীয়দের হাতে মেয়েদের মারধোর খাওয়া বা মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেওয়া সামাজিক বাধা নিয়ে যাঁরা তাড়িত, এই কাজের সুর তাঁদের চিন্তাভাবনার সাথে মিলে যাচ্ছে। শুনেছি শো’র পরে হরিয়ানার চিড়ি চাঁদনি গ্রামের একটি ছোট মেয়ে প্রশ্ন করে উঠেছিল – “দিদি এত দূর থেকে একা-একা নাচগান করতে এসেছে, আমি ঘরে বসে নাচগান করলে বাবা আমায় বকে কেন?”
২০১৬ সালে নাচিয়ে শ্রুতিকে গল্পের চরিত্রগুলির চেয়ে বেশি চোখে পড়ছিল। ২০২২-এ শ্রুতি অনেকটাই সাকিনা, সাকিনার বাবা আর সেই যুবক ছেলেগুলি হয়ে উঠেছে। সেই ছেলেগুলি, যারা আজও দেশের অলিগলিতে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়ায়, হয়তো পাশের গলিতেই থাকে, যাতায়াতের পথে লাজুক হাসিমুখে মাথা নাড়ে, হয়তো আমি বা আপনি তাদের ছোট ক্লাসে বৃথা অঙ্ক পড়িয়েছি, তাদের দোকান থেকে বিস্কুট-চকোলেট কিনেছি, তাদের রিক্সায় চড়েছি আর ছোট বয়েসেই স্কুল ছেড়ে তাদের কাজে লেগে যেতে হয়েছে ভেবে, মাঝে মাঝে, মনে মনে আক্ষেপ করেছি। দাঙ্গা সেই ছায়াদের নিঃশব্দ পায়ে নতুন চনমনে তাল তোলে – সব ‘ভুল’কে ‘ঠিক’ করে দেওয়ার ক্ষমতার তাল, যে ক্ষমতা তারা আর কোথাও থেকে পায় না। ২০২২-২৪-এ সেই তাল শ্রুতি বারবার ওর ঘুঙুর পরা পায়ে ফুটিয়ে তোলে। কত্থকে ঘুঙুরের ব্যবহারে গল্প বলা যায় – ফুটিয়ে তোলা যায় প্রাকৃতিক শব্দ বা যানবাহনের শব্দ। কিন্তু শ্রুতি ‘খোল দো’-তে পায়ের আওয়াজে, ঘুঙুরের ব্যবহারে, তালের ব্যবহারে, কোথাও কোথাও চরিত্রের মনের ভিতরটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে। মান্টোর স্তরের লেখকের গল্প নিয়ে এইভাবে ফর্মে ফর্ম মিশিয়ে দিতে পারাটা একটা বড় পারা।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ভারতে দেশভাগ নিয়ে সাহিত্যশিল্পের ছড়াছড়ি। কিছু কিছু তীব্র যন্ত্রণার স্মৃতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ বয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়। লেখা-ছবি-সিনেমার ভিতর দিয়ে তার খানিকটা হালকা না করতে পারলে লোক-কে-লোক পাগল হয়ে যেত, যাচ্ছেও, তবু চেষ্টা থাকে। তো সেই বহুধারার ক্রিয়েটিভ এক্সপ্রেশনের মধ্যে সাদত হাসান মান্টোর গল্প ‘খোল দো’-র মতো, ততো কিছু না লিখেও হাড় হিম করে দেওয়া লেখা হয়তো বা বেশি নেই। শ্রুতি ওর পারফর্মেন্সে কম বলে অনেকটা দেখানোর মান্টো-পন্থী খেলাটা ধরে রাখতে পেরেছে। কিন্তু, ‘মিনিমাল’ হয়েও ওর কাজ অবোধ্য বা পুরোপুরি বিমূর্ত হয়ে ওঠেনি। এই ব্যালেন্সটা ‘খোল দো’র একটা বড় জোরের জায়গা।
মান্টোকে প্রতিষ্ঠানরা বুড়ো আঙুল দেখিয়েছিল। মান্টো একটা সময় ‘যা কাজ পাব তাই করব’ গোছের বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসার চালাবার চেষ্টাও করেছেন। শ্রুতির বা শ্রুতির মতো আমাদের প্রজন্মের কিছু কিছু শিল্পীর শো জোগাড়ের ধরনে এই বেপরোয়া ভাবটা চেয়ে হোক না-চেয়ে হোক, আছে। একক পারফর্মেন্স, বেশি কিছু চাই না, এক ফালি মাটি, যাতায়াতের ভাড়া, কিছু দর্শক, আর শো-শেষে গামছা পেতে (কপাল থাকলে শো’র আগেই, গামছা না পেতেই) কিছু রোজগার। না, শ্রুতিকে বা শ্রুতির মতো আমাদের অনেকেরই রোজগারের উপর ভরসা করে হয়তো কেউ পেটে কিল মেরে বসে নেই, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে আছেও। কিন্তু পেটে ভাত পড়ুক বা না পড়ুক, শ্রুতিদের যে পারফর্মেন্সটাই জীবিকা।
আবার অন্যদিকে, ‘খোল দো’র মতো একটা গল্প, নাটক বা নাচকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাটার মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠানের দিকে বুড়ো আঙুল দেখানোর মতো একটা ব্যাপার আছে। কারণ যত ছোট ছোট অনামা অজানা জায়গায় এই ধরনের কাজ নিয়ে শ্রুতিরা পৌঁছে যেতে পারবে, তত বেশি ভরসা পাওয়া যাবে যে, শিল্পসাহিত্য আজও ফান্ডিং এজেন্সি আর গ্রান্ট লেখার উপর ভর দিয়ে পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে পড়েনি। আজও সাধারণ মানুষ ভালোবেসে নাচ, নাটক দেখতে চান, তা নিয়ে চর্চা করতে চান। জীবনে শিল্পের প্রয়োজন বুঝতে গেলে পাতা-পাতা ইংরিজি পড়া আজও আবশ্যক নয়, কোনোদিন হবে না।
এই যে, সব স্তরের মানুষের মধ্যে পারফর্মেন্স নিয়ে পৌঁছে যেতে চাওয়া একক শিল্পীরা, বা ছোট ছোট শিল্পী-দল, তাদের ছোট ছোট সাপোর্ট সিস্টেম – সে সিস্টেম কিছু একই ধরনের ভাবনাচিন্তা করা ব্যক্তিমানুষ বা পাড়ার আড্ডা থেকে শুরু করে ছোটখাটো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক দল নানাকিছুই হতে পারে – মূল কথাটা হল, সেই ছোট ছোট সাপোর্ট সিস্টেমগুলি শিল্পীকে ও তাঁর দর্শকদের ‘সার্ভিস প্রোভাইডার-কাস্টমার’ জাতীয় বেচাকেনার বিচিত্র সম্পর্কের খাতায় না ফেলে, মোটামুটি একটা মানবিক কোণ থেকে দেখছে কিনা। কখনো আবার এই ‘ছোট’দেরই কারো কারো পরস্পরকে সাহায্য করা, হয়তো বা একসাথে মিলে কিছুদিনের জন্য একটা বৃহত্তর বদলের ছবি তৈরি করা, স্বপ্ন দেখানো, ভাবনার খোরাক জোগানো, চাগিয়ে তোলা, দরকারে আবার আলাদা হয়ে যাওয়া, কিন্তু আলাদা হয়ে গিয়েও ‘ছোট’র উপর বিশ্বাস না হারানো – আমার মনে হয়, ফান্ডিং-গ্রান্টিং জুজুর থাবা থেকে বাঁচার জন্য এটাই আমাদের সামনে একমাত্র কার্যকরী ‘আর্টিস্টিক ইকোনমি’।
২০১৭ থেকে ভারত সরকারের খাতায় প্রতিটা নতুন বাজেটে ‘আর্ট’ আরও বেশি করে ‘সার্ভিস’ হয়ে উঠছে, তার উপর নতুন নতুন ট্যাক্স বসছে। আর অন্যদিকে সম্পূর্ণ হৃদয়হীন হিংস্র জাতীয়তাবাদ বরাত দিচ্ছে, লোভে পড়ে হোক, শাসানিতে ভয় পেয়ে হোক, শিল্প শুধু তাদেরই বার্তা দিকে দিকে ছড়িয়ে দিক। স্বল্প সংখ্যক ফান্ডিং বা রেসিডেন্সির সুযোগ নিয়ে কামড়াকামড়ি করতে বাধ্য হচ্ছেন শিল্পীরা। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা, যাঁরা কম্যুনিটি বা কালেক্টিভ বস্তুটা নামে শুনলেও তার অ-কর্পোরেট, প্রতিবাদী, মানবিক চেহারাটা কী হতে পারে, তার পিছনে কতটা লেগে থাকতে হতে পারে, তা নিয়ে তাড়িত হওয়ার মতো আর্থিক বা মানসিক জায়গায় পৌঁছে উঠতে পারছেন না। আসলে মান্টোকে মনে করা মানে তো শুধু তাঁর আশ্চর্য যন্ত্রণাময় তবু সৃষ্টিশীল জীবনটুকুকেই মনে করা নয়। মান্টো একটা সময়েরও প্রতীক। তিনি যেমন সাদত হাসান মান্টো, তেমনি তিনি ইন্ডিয়ান প্রোগ্রেসিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য। একটা কালেক্টিভ, কিছু মানুষ, যাঁরা একসাথে লেখালেখি, ভাবনাচিন্তা, কাজকর্ম করেছেন। যাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে একা একা ‘বড়’ হয়ে যেতে চাননি। দেশভাগ এরকম বহু সংযোগ, বহু গোষ্ঠীকে ভেঙেচুরে দিয়েছিল। আজও শিল্পীদের পিছনেও লেগে আছে একটা ‘বড় সিস্টেম’, ভাগাভাগির সিস্টেম, যা সংযোগের, সংগঠনের জায়গায় শিল্পীদের পৌঁছতে দেয় না। এরকমই হওয়ার কথা। সেই ‘বড়’র বিরুদ্ধে ‘ছোট’ হওয়ার চেষ্টার একটা ছায়া শ্রুতির ‘খোল দো’র মধ্যে আছে।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কম খরচে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার নানা ফন্দি নিয়ে আমাদের মতো ছোটখাটো শিল্পীদের ভাবনাচিন্তা করতেই হবে। মানুষের জন্য, মানুষের মধ্যে করা নাটকের যে ছোট ছোট সাপোর্ট সিস্টেমগুলি আজ থেকে কুড়ি-তিরিশ বছর আগেও ছিল, আজ তাদের অনেকেই ক্লান্ত-বিধ্বস্ত। তাছাড়া সমাজ পরিবর্তন আগে না শিল্প আগে, শিল্প আগে না মানুষ আগে, এজাতীয় অনর্থক তবু অনিবার্য তর্কও এই ‘আন্দোলন’কে বারবার পিছনে টেনে ধরে। এ অবস্থায় ‘ছোট আর্ট’-এর ‘ছোট সাপোর্ট সিস্টেম’ যাঁরা হয়ে উঠতে পারেন, এমন মানুষ বা দল যাঁরা আছেন, তাঁদের কেউ কেউ এই লেখা পড়ে ‘খোল দো’-র মতো কাজের ‘আর্টিস্টিক ইকোনমি’কে আরও শক্তপোক্ত একটা দাঁড়াবার জায়গা দেওয়ার কথা ভাববেন, এই আশা।
(মধুশ্রী পারফর্মার ও কমিক্স মেকার, চেন্নাই ও কলকাতায় কর্মরত। )