হিন্দু-মুসলিম নয়, সন্দেশখালির লড়াই জমির : তথ্যানুসন্ধানী দলের পর্যবেক্ষণ 


  • March 23, 2024
  • (1 Comments)
  • 993 Views

নিঃসন্দেহে সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি কেবলই সেখানে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে মূলস্রোত মিডিয়ার ক্রমাগত এই একটিমাত্র বিষয়ে রিপোর্ট করার কারণে। সন্দেশখালির মহিলারা তথ্যানুসন্ধানী দলের কাছে এই বক্তব্যও জানিয়েছেন যে, সংবাদমাধ্যমে শুধুমাত্র যৌন নির্যাতন হয়েছে কি না এই ব্যাপারেই আলোচনার মনোযোগ ঘুরিয়ে দিতে চাওয়ায় তাঁরা অপমানিত বোধ করেছেন। সন্দেশখালিতে ‘খবর’ করতে আসা সাংবাদিকরা ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা ‘প্রত্যক্ষ’ যৌন নির্যাতনের শিকার বা ধর্ষিতার সংখ্যা জানতে, তার বিবরণ শুনতেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে সেখানকার মহিলারা জানিয়েছেন।

 

Groundxero | সুদর্শনা চক্রবর্তীর প্রতিবেদন

২৩ মার্চ, ২০২৪

 

“আমরা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। আমাদের কাছে কোনও পার্টিই ভালো নয়। যে পার্টিই আসুক আমাদেরকে অত্যাচার করবে। আদিবাসীদের জমি নিয়ে নেওয়া, সেই জমির চরিত্র বদল করা, যার নামে জমি তার কাছ থেকে বেআইনিভাবে অন্যের নামে করে নেওয়া— এর বিরুদ্ধে পাঁচ বছর আগে থেকেই আমাদের আন্দোলন আমরা নিজেরাই শুরু করেছি। কোনওভাবেই এই আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নিতে দেব না। আগামী দিনে আমরা নিজেদের অধিকারের জন্য এই আন্দোলনকে আরও জোরদার করব,” কলকাতা প্রেস ক্লাবে সন্দেশখালিতে তথ্যানুসন্ধানী দলের রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে এই কথা বললেন সন্দেশখালির সুনীল সর্দার।

 

শ্রমজীবী মহিলা সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি, আমরা এক সচেতন প্রয়াস এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর) সম্প্রতি সন্দেশখালিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাদের দ্বারা সংঘটিত বেআইনিভাবে জমি দখল ও মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার তথ্যানুসন্ধান করতে দু’দফায় সেখানে যায় এবং তার ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট তৈরি করে। গত ২২ মার্চ কলকাতা প্রেস ক্লাবে এই রিপোর্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হয়।

 

রিপোর্টে যে তথ্যগুলি উঠে এসেছে তার বাইরেও এদিনের আলোচনায় তথ্যানুসন্ধানী দলের বক্তব্য থেকে যে বিষয়গুলি স্পষ্টত উঠে আসে তার থেকে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে তুলে ধরা দরকার।

 

গত পাঁচ বছর যাবত সন্দেশখালির সন্দেশখালি, জেরিয়াখালি ও বেড়মজুর এলাকায় শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারের হাত ধরে বেআইনিভাবে জমি দখলের মাফিয়ারাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তথ্যানুসন্ধান দল এই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে  কথা বলে বুঝতে পেরেছেন যে, স্থানীয় স্তরে এই যে বেপরোয়া জমি দখল ও অর্থকরী লেনদেন তা রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সকলেরই জানা। এমনকি বিষয়টি এতটাই বিস্তৃত যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও বিষয়টি সম্পর্কে  সম্পূর্ণ অবগত বলেই তথ্যানুসন্ধানীদলের ধারণা। সন্দেশখালির মানুষেরা দীর্ঘ বহু বছর ধরে এই অত্যাচারের শিকার হতে হতে নিজেরাই গণআন্দোলন গড়ে তোলেন, বিশেষত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তারই এক বৃহত্তর চেহারা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা দিয়েছে।

 

তথ্যানুসন্ধানী দল জানতে পারেছে, শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা – সকলেই একটা সময়ে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সিপিএম-এর দলভুক্ত ছিল। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরেই তারা দলবদল করে তৃণমূলে নাম লেখায় এবং দলের লাগামহীন দুর্নীতির অংশীদার হয়ে নিজেদের এলাকায় জমি মাফিয়া হয়ে ওঠে। এই স্থানীয় নেতাদের কোনও নির্দিষ্ট দলের প্রতিই আনুগত্য নেই। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় অন্য কোনও রাজনৈতিক দল আসলে তারা আবারও দল বদল করে নেবে সহজেই বলে তথ্যানুসন্ধানী দলের মনে হয়েছে।

 

তথ্যানুসন্ধান দল, কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে দু’দফায় যখনই তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়েছে, তখনই সর্বত্রই এক ভয়ের পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছেন। কিছু মানুষ অবশ্যই নিজেদের অভিজ্ঞতা, শাহজাহান-শিবু-উত্তমদের মতো স্থানীয় নেতাদের লাগাতার অত্যাচারের কথা বলেছেন, তবে বহু ক্ষেত্রেই তাঁরা ভয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেছেন, পরোক্ষভাবে জানিয়েছেন সমস্যার কথা।

 

পুলিশ-পঞ্চায়েত প্রশাসনিক সব দফতরই এই স্থানীয় নেতাদের অঙ্গুলিহেলনে চলে বলে স্থানীয়দের দাবি। অভিযোগ, নাগরিকদের নিরাপত্তা, অধিকার নিশ্চিত করার বদলে তারা কার্যত ক্ষমতাশালীর দলদাসে পরিণত হয়েছে। সন্দেশখালি থানা, সন্দেশখালি গ্রাম পঞ্চায়েত, অন্যান্য গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের এই অভিযোগ। কোনও অভিযোগ নিয়ে গেলে তাঁদের বলা হয় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের কাছে গিয়ে সমস্যা মিটিয়ে নিতে।  গ্রামবাসীদের অসহায় অবস্থার এর থেকে বড় প্রমাণ আর কীই-বা হতে পারে।

 

সুনীল সর্দার যেমন বলছিলেন, “আমাদের কাছে কমিশনের অর্ডার আছে জমি আমাদের দিয়ে দেওয়ার। অর্ডারের কপিও আছে আমাদের কাছে। কিন্তু যারা আমাদের জমি নিয়ে নিয়েছে তারা আমাদের জমিতে নামতে দেয়নি। আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে, যদি এখানে আসো কেটে ফেলে রেখে দেব।”

 

তিনি জানান, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও ভেড়ির জন্য জমি লিজ নেওয়ার বিষয়টি ছিল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হত আইনিভাবে। উপযুক্ত অর্থের বিনিময়ে সেই জমি লিজ দিতেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই লিজে জমি নেওয়ার বিষয়টি বদলে যায় বেআইনিভাবে জমি দখলে। ধানের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দিয়ে ফসল, জমি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বদলে দেওয়া হয়েছে জমির চরিত্র। অনিচ্ছুক চাষিদের জমির চারপাশে নোনা জল ঢুকিয়ে দিয়ে তাঁদের চাষাবাদ পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে দেওয়া হয়েছে।

 

গ্রামের উন্নয়নে অন্যদিকে কোনও কাজই প্রায় হয়নি। তথ্যানুসন্ধানী দলের চোখে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকায় টিউবওয়েল নেই প্রায় একটিও। গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা না-থাকায় নিত্যদিনের জীবনও যেন টালমাটাল হয়ে পড়েছে। অথচ এর পাশাপাশি প্রায়শই জলসা বসত। বাইরে থেকে নাচগানের দল, ডিজে, মদের আয়োজন সবই থাকত। একপ্রকার ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। সামাজিক পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা এভাবেই চালিয়েছে শাসক দলের ঘনিষ্ঠরা।

 

অন্য যে বিষয়টি এই তথ্যানুসন্ধানী দলের থেকে উঠে আসে তা হল – নিঃসন্দেহে সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি কেবলই সেখানে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে মূলস্রোত মিডিয়ার ক্রমাগত এই একটিমাত্র বিষয়ে রিপোর্ট করার কারণে। রাত্রে মহিলাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া, দরজা বন্ধ করে মিটিং করার অভিযোগ করেছেন সব মহিলারাই। তথাকথিত সুন্দর মহিলাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, শ্লীলতাহানির অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু এরই পাশাপাশি সন্দেশখালির মহিলারা তথ্যানুসন্ধানী দলের কাছে এই বক্তব্যও জানিয়েছেন যে, সংবাদমাধ্যমে শুধুমাত্র যৌন নির্যাতন হয়েছে কি না এই ব্যাপারেই আলোচনার মনোযোগ ঘুরিয়ে দিতে চাওয়ায় তাঁরা অপমানিত বোধ করেছেন। সন্দেশখালিতে ‘খবর’ করতে আসা সাংবাদিকরা ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা ‘প্রত্যক্ষ’ যৌন নির্যাতনের শিকার বা ধর্ষিতার সংখ্যা জানতে, তার বিবরণ শুনতেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে সেখানকার মহিলারা জানিয়েছেন। তথ্যানুসন্ধানী দলের কাছে গ্রামবাসী মহিলারা প্রশ্ন তোলেন ‘প্রত্যক্ষ’ যৌন নির্যাতন কী – তা নিয়েই। রাত্রিবেলা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও মহিলাকে পার্টি অফিসে নিয়ে যাওয়া, কাজ করানো, কেউ যেতে অস্বীকার করলে পরদিন তাঁর স্বামীকে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে মেরে অজ্ঞান করে দেওয়ার মতো অত্যাচারকে নির্যাতন হিসাবে আইনিভাবেই গণ্য করা হবে বলে মতপ্রকাশ করেন তথ্যানুসন্ধানী দলের সদস্যরা।

 

পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতির পক্ষ থেকে অনুরাধা তলওয়ার বলেন, “এই জমি দখলের ফেনোমেনা সমগ্র অঞ্চলে থাকলেও এই বেল্ট-এ তুলনায় নতুন। তাছাড়া লিজ দিয়ে গ্রামবাসীরা টাকা পেতেন। এখানে সেই টাকা পাওয়াটাই বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া অভিযোগ নিয়ে যাঁদের কাছে যাওয়া যেত তাঁরাই এদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। মানুষ বুঝেছেন যে প্রতিরোধ-প্রতিবাদ ছাড়া উপায় নেই, গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদের সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ করিয়ে টাকা দিচ্ছে না, টোটো ভাড়া নিয়ে টাকা দিচ্ছে না, পার্টি মিটিঙে যাওয়ার জন্য জোর-জবরদস্তি, আর তার সঙ্গে মহিলাদের হেনস্থা।”

 

নির্বাচনের আগে এই বিষয়টি কীভাবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলি জানতে চাওয়ায়, তিনি বললেন, “আমি বুঝতে পারছি না বিজেপি জমির ইস্যুটাকে কেন দেখছে না? এই শুভেন্দু অধিকারী তো নন্দীগ্রামের সময়ে অনেক কথা বলেছিলেন। তাহলে এখানে কেন শুধু ধর্মীয় রংটাকেই সামনে আনছেন? এখানে মূল সমস্যা জমি, তোলাবাজি। ব্যাঙ্ক, বিশ্বব্যাঙ্ক এখানে পলিসিগত ভাবে জমি দখলকে উৎসাহিত করেছে।”

 

মহিলাদের যৌন নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আমাদের একটা মহিলা সদস্যদের দল ওখানে গিয়েছিল। গ্রামবাসী মহিলারা সকলেই যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কথা বলেছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে কথা বলতে তাঁরা কিছুটা আড়ষ্ট ছিলেন। এবং তাঁদের নিজেদের সঙ্গে ঘটেছে এমনটা বলতে চাননি। অন্যের সঙ্গে ঘটেছে এটাই অধিকাংশ মহিলা বলেছেন। আবারও বলছি ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও মহিলাকে ডেকে নিয়ে যাওয়াটাই যৌন নির্যাতন। কিন্তু সন্দেশখালিতে শুধু সেটাই ঘটেনি। অর্থনৈতিক শোষণ, যার বড় অংশ মহিলারাও সেটা সামনে আসছে না।”

 

তথ্যানুসন্ধানী দলের পর্যবেক্ষণ:-

  • গত ৩ বছরে জমি দখল করে পোলট্রি ফার্ম, ভেড়ি করা বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। প্রথম বছর লিজের টাকা পেলেও, পরের দু’বছরে আর কোনও টাকা পাননি যাঁরা জমি দিয়েছেন। টাকা চেয়ে মারও খেতে হয়েছে। গ্রাম বা ব্লক স্তরে সর্বত্রই জমি দখল, নির্যাতনে যুক্ত শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।

 

  • জমির রেকর্ড ব্যাপক মাত্রায় বদল করা হয়েছে। ভূমিরাজস্ব দপ্তর এই দুর্নীতিতে যুক্ত। চাষ জমি ফিসারিতে বদল করা বেআইনি। একইভাবে রেকর্ড বদল করাও আইনবিরুদ্ধ।

 

  • এই দুর্নীতিতে জুড়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের নামও। ফিসারি, পোলট্রি প্রকল্পে ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে দখল করা জমি ও অবৈধভাবে রেকর্ড বদল করা জমিতে ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়াও বেআইনি।

 

  • সামগ্রিকভাবে জমি কেড়ে নেওয়া, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভেড়ি, এলাকার আর্থিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করেছে। কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের জমি কেড়ে নেওয়ায় তাঁরা পরিযায়ী হতে বাধ্য হয়েছেন। ভেড়িতে যারা কাজ নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা মজুরি পান না ঠিক করে। সমগ্র অঞ্চলে দারিদ্র্য ক্রমেই বেড়েছে। সন্দেশখালি গড়ে উঠেছে কালো ও বাদামি দোআঁশ মাটি ও পলিমাটি দিয়ে। মাটির চরিত্র ভেড়ির কারণে বদলে যাওয়ার আশপাশের জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দূষিত হয়েছে মাটি, পানীয় ও সেচের জল।

 

  • পুরো পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছে বিজেপি, ঘটনায় ধর্মীয় মোড়ক দিয়ে। তারা বলছে মুসলমান নেতার হাতে হিন্দু গ্রামবাসী মহিলারা যৌন নির্যাতিত হয়েছেন। তথ্যানুসন্ধানী দলের বক্তব্য গ্রামবাসীরা নিজেরাই এই যুক্তি খারিজ করেছেন। নির্যাতনকারী ও নির্যাতিত কারওরই ধর্মীয় পরিচয় এক্ষেত্রে বিচার্য নয়। যৌন নির্যাতনের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে। শাহজাহানের বিরুদ্ধে জমি মাফিয়া রাজের যাবতীয় অভিযোগ থাকলেও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রায় নেই। বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতির দিকটিও এক্ষেত্রে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।

 

তথ্যানুসন্ধানকারী দলের দাবি:-

 

  • গ্রামবাসীদের যে জমিগুলো জোর করে বা ভুল বুঝিয়ে নেওয়া হয়েছে সেগুলি অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে।

 

  • যে চাষের জমিগুলির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য জোর করে পাল্টানো হয়েছে সেগুলি চাষযোগ্য করার খরচ সরকারকে বহন করতে হবে।

 

  • শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার ও সকল অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

 

  • যে সকল সরকারি (পুলিশ, প্রশাসন, ভূমিরাজস্ব দপ্তর) পদাধিকারীরা ও কর্মচারীরা এই দুর্বৃত্তদের কাজে সাহায্য করেছেন তাঁদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

 

  • প্রতিবাসী গ্রামবাসীদের উপর থেকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

 

  • ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শুধু বকেয়া লিজের অর্থ নয়, তাঁদের রোজগার বন্ধ হওয়ায় যে লোকসান হয়েছে তা পূরণ করার পাশাপাশি তাঁদের জমি যতদিন চাষযোগ্য না হচ্ছে ও চাষ শুরু না হচ্ছে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।

 

  • মাটি ও জল দূষণ পরিমাপ করতে উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা করতে হবে। দূষণের মাত্রা নিরূপিত হলে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

  • সন্দেশখালির পূর্ণাঙ্গ ঘটনার বিষয়ে দ্রুত বিচারবিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে।

 

Share this
Recent Comments
1
  • comments
    By: Kamal Mostafa on March 24, 2024

    অর্থনৈতিক শোষণ আড়াল করতেই ব্যস্ত শাসকদল। বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গী বিভেদ তৈরির ও কদর্য।

Leave a Comment