গত বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী যখন লোকসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যে “সন্দেশখালি ঝড়” উঠবে বলে রাজনৈতিক পূর্বাভাস দিয়ে গেলেন, তখন কলকাতার ‘গোকুলে’ বেড়ে উঠল আর এক শপথ — গ্রামসভার শত্রু যারা লোকসভা থেকে তাদের তাড়াও। রাজ্যের বনাঞ্চলের নির্বাচনী আকাশের ঈশান কোণে এক বিদ্যুৎগর্ভ মেঘের উদয়ের সেই খবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি পৌঁছল? লিখলেন দেবাশিস আইচ।
নাম না করেই, বিজেপিকে লোকসভা থেকে তাড়াবার স্লোগান উঠল। মোদীর নাম না-করেই মোদী-তাড়াও নাড়ায় ভরল প্রেক্ষাগৃহ। গত বুধবার ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন এ শহরে। কলকাতা-হাওড়া-সহ এ শহরের এবং অন্যান্য রাজ্যের একগুচ্ছ মেট্রোরেল প্রকল্পের উদ্বোধনে ব্যস্ত। অন্যদিকে, তখন মধ্য কলকাতার মহাজাতি সদন ভরে তুলেছেন এ রাজ্যের পাহাড় থেকে সুন্দরবন, ডুয়ার্স থেকে জঙ্গলমহলের হাজারেরও বেশি জনজাতি, আদিবাসী মানুষ। কেন্দ্রের থাবা থেকে, বনাধিকার আইন ২০০৬ নস্যাৎ করতে আনা ২০২৩-এর আইনের বিরোধিতায়— সেই সভা থেকেই আওয়াজ উঠল “গ্রামসভার শত্রু যারা, লোকসভা থেকে তাদের তাড়াও।” সন্দেহ নেই, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বনগ্রামগুলিতে এই স্লোগান এক নতুন রাজনৈতিক আলোড়ন তৈরি করবে।
আজ থেকে ১৭ বছর আগে দেশে বনাধিকার আইন লোকসভায় গৃহীত হলেও তার সুফল খুব কম জনজাতি ও আদিবাসী গ্রাম উপভোগ করতে পেরেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিগত ও বর্তমান দুই সরকারের আমলেই বনাধিকার আইনের প্রয়োগ কিংবা গ্রামসভাকে আমলই দেওয়া হয়নি। গ্রামসভা কীভাবে আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমির অধিকার, রুজিরোজগার, সংস্কৃতির অধিকার রক্ষা করেছে তার উজ্জ্বল উদাহরণ ওড়িশার নিয়মগিরিতে ডোঙরিয়া কোন্ধ আদিবাসীদের লড়াই, ছত্তীশগঢ়ের হাসদেও অরণ্য রক্ষার লড়াই কিংবা ওই ছত্তীশগঢ়েরই আচানকমারে টাইগার রিজার্ভের কোর এলাকার বাইগা আদিবাসী গোষ্ঠীর গ্রামগুলি রক্ষা করার সংগ্রাম। অন্যান্য অনেক রাজ্যের অরণ্য নির্ভর, অরণ্যবাসী মানুষের মতোই এ রাজ্যের জনজাতি ও আদিবাসী মানুষকে সেই অধিকার দেওয়া হয়নি। সে নিয়ে আন্দোলন যেমন চলছিল, তেমনি যেখানে যেখানে বনগ্রামসভা প্রতিষ্ঠা হয়েছে তার কার্যকরী স্বীকৃতির লড়াই জারি রয়েছে। কিন্তু, নয়া সংশোধনী আইন বনবাসীদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। মরিয়া তাঁরা, গ্রামসভার প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকেই।
সভামঞ্চ থেকে তাই পালটা লড়াইয়ের ডাক উঠেছে। আর তার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে সভাগৃহের প্রতিটি কোণ থেকে। একাধিক বক্তা বললেন, বনাধিকার আইন বলে যেখানে যেখানে জঙ্গলকে গ্রামসভার সাধারণ সম্পত্তি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে অতীতের বনসংরক্ষণ আইনের বদল এনে যে “বনসংরক্ষণ সংশোধনী আইন, ২০২৩” আনা হয়েছে, তা “মুনাফার স্বার্থে জঙ্গলকে বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া।” তার অর্থ, বনবাসী-আদিবাসী মানুষদের দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে বনাধিকার আইনের বলে এক “ঐতিহাসিক অন্যায়”-এর যে অবসান ঘোষিত হয়েছিল, ২০২৩ সালের সংশোধনী ফের তাঁদের অধিকার, জীবন-জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র, বন্যপ্রাণকে সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৌমিত্র ঘোষ বলেন, লড়াইটা তাই আমাদের বনে, আমাদের জমিতে, আমাদের জঙ্গলে, মাটিতে, আমাদের পাহাড়ে।
লড়াই যে এখনও করে যেতে হচ্ছে, তার প্রমাণ মিলেছে, রাজ্যের বিভিন্ন বনগ্রাম থেকে আসা বনআন্দোলন কর্মীদের বক্তৃতা থেকে বক্তৃতায়। দক্ষিণবঙ্গে বনাধিকার আইন প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলেছে পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা পাহাড়ে। জঙ্গল বিনাশী ঠুড়্গা পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পকে ঘিরে। অযোধ্যা জুড়ে গ্রামসভা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। বীরভূমের পাচামিতেও কয়লাখনির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হয়ে উঠছে আদিবাসীদের গ্রামসভা।
এ রাজ্যে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে ও ডুয়ার্সেই কোনও সরকারি সমর্থন ছাড়াই সর্বাধিক গ্রামসভার প্রতিষ্ঠা করেছেন বনগ্রামের বাসিন্দারা। শতাধিক বনগ্রামকে রাজস্বগ্রামে পরিণত করা গেছে। এখনও তাঁদের হকের পাওনা পেতে প্রতি পদে পদে বনদফতরের মর্জির উপর নির্ভর করতে হয়। এবং জমি ও বাস্তুর পাট্টার ক্ষেত্রেও বনাধিকার আইন অনুযায়ী পাট্টা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ডুয়ার্সের আন্দু বনবস্তির রবি রাভার অভিযোগ, এর আগে যে পাট্টা দেওয়া হয়েছিল, সেটা পাট্টাই নয়। পরবর্তীতে আন্দোলনের চাপে খতিয়ান নম্বর দেওয়া হয়। আর এখন পাট্টায় বাবার নামের জায়গায় ‘ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট’ লিখে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, বকলমে জমির অধিকার বনদফতরের থেকে যাচ্ছে। রবি বলেন, এর প্রতিবাদে আইন অনুযায়ী এসডিও-র কাছে অভিযোগ জানালে তা বিডিও’র কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ, বনাধিকার আইনে বিডিও’র কোনও ভূমিকা নেই। রবির আরও অভিযোগ, অনেক আন্দোলনের পর এলাকায় একটি ‘হেলথ সেন্টার’-এর অনুমতি মিলেছিল। কিন্তু, বনবিভাগ থেকে অনুমতি না মেলায় সেই অনুমতি ফিরে গিয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গে অযোধ্যা পাহাড়ে গ্রামসভা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পুরুলিয়ার ‘জঙ্গল ভাসানো, গ্রাম উচ্ছেদকারী’ ঠুড়্গা প্রকল্পকে রুখে দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি জানালেন অযোধ্যাবাসী নকুল বাস্কে। তিনি জানান, ২০১৭ সালেই অযোধ্যাবাসীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও পাহাড় কেটে ৫০০-৭০০ মিটার সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছিল। লাগাতার আন্দোলনের জেরে এবং গ্রামসভার অনুমতি না মেলায় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি গর্বের সঙ্গে জানান, পূর্বতন এক ডিএফও ওই প্রকল্পের জন্য গাছকাটা শুরু করলে বনগ্রামবাসীরা বাধা দেয়। এবং গ্রামসভার অনুমতি ছাড়া জঙ্গলে ঢুকে গাছ কাটার কৈফিয়ত চায়। ডিএফও এর পরে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করলে, তাঁরাও গ্রামসভার অনুমতি ছাড়া জঙ্গলে প্রবেশ, গাছকাটার জন্য পালটা এফআইআর করেন। এর পর ডিএফও-কে বদলি করে দেওয়া হয়।
বাঁকুড়ার খাতড়ার বিপ্লব সোরেন অভিযোগ করেন, ২০২০ সালে মিরগি পাহাড় এলাকায় আদিবাসীদের জমিতে ট্র্যাক্টর চালিয়ে জমি থেকে ধানগাছ উপরে দেয় বনদফতর। বিপ্লবের মতে, বনের ধার ঘেঁষে ওই জমিতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আদিবাসীরা ধানচাষ করছিলেন। বিপ্লব বলেন, গ্রামসভার অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলে ডিএফও, রেঞ্জাররা মান্ধাতা আমলের নিয়ম, কমিটি, সংসদ দেখান। বলেন, কেন তোমাদের তো বনকমিটি, গ্রামসংসদ আছে। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের বনাধিকার আইন চালু হওয়ার পর জয়েন্ট ফরেস্ট প্রোটেকশন কমিটি/ ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এফপিসি/ ইডিসি) বাতিল হয়ে গেলে এ রাজ্যে ২০০৮ সালে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি বা জেএফএমসি তৈরি করে গ্রামসভার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং বনাধিকার আইনকে নস্যাৎ করে বনদফতরের রাজ চলতে থাকে। উত্তরবঙ্গে তা বাধা পেলেও দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র এখনও সেই বনকমিটি তৈরি হয় এবং কমিটির মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ, বনের পাতা, ঘাস, উদ্ভিদজাত অকাষ্ঠল (নন টিম্বার ফরেস্ট প্রোডাক্ট) এবং অন্যান্য দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। সেই সংগ্রহের বিক্রয়লব্ধ অর্থের ২৫ শতাংশ অর্থ কমিটিকে দেওয়া হয়। বনাধিকার আইন অনুযায়ী এই রক্ষণাবেক্ষণ ও সংগৃহীত দ্রব্যের অধিকার সম্পূর্ণত ও যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট বনগ্রামের, বনগ্রামসভার সকলের। বিপ্লবের অভিযোগ, “স্থানীয় মাতব্বরদের দালালরাজ ও অবৈধ কাজকারবার” চালিয়ে যাওয়ার জন্যই এখনও বনকমিটি ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে এবং বনাধিকার আইন দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
এই প্রতিকূলতার মধ্যেই বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে খাতরা (১০টি), রানিবাঁধ (১টি), ও হিরবাঁধে (৩টি) মোট ১৪টি বনগ্রামসভা প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে বিপ্লব জানান। তাঁরা ইতিমধ্যেই গ্রামসভার অনুমতি ছাড়া কুমারবহাল বনগ্রামের বাসিন্দাদের ১০০ বিঘা পশুচারণ ও খেলাধূলার জমি মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র অধিগ্রহণের হাত থেকে রুখে দিতে পেরেছেন বলে বিপ্লব জানান। এই জমি অধিগ্রহণে বনগ্রামসভার অনুমতি মেলেনি। একইভাবে ধোরাবি গ্রামে বনগ্রামের জমিতে একটি রিসর্ট নির্মিত হলেও গ্রামসভা মামলা করে তা চালু হতে দেয়নি বলেও জানান বিপ্লব।
ওড়িশার নিয়মগিরিতে গ্রামসভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বেদান্তের খনির অনুমতি বাতিল হওয়াই বনাধিকার আইনের একমাত্র ঐতিহাসিক প্রয়োগ নয়। ছত্তীশগঢ়ের তামাম জীববৈচিত্র্যে ভরপুর, আদিবাসীদের জীবনজীবিকা, সংস্কৃতির মহাভান্ডার ১৮০০ কিলোমিটার ব্যাপী হসদেও অরণ্যকে আদানির কয়লাখনির হাত থেকে রক্ষা করছে এই আইন। দেশের মোট কয়লার ১০ শতাংশ হসদেও পাহাড়ের নীচে রয়েছে। পুরনো কোল ব্লকগুলি (২২টি) ছাড়া আর একটিও কয়লাখনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। সম্প্রতি সারা দেশে কোল ব্লক নিলাম হলেও আন্দোলনের জেরে হসদেওকে সেই তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছিল। এই আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় কর্মী অলোক শুক্লা রাজ্যের বনাধিকার আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে বলেন, সংবিধানের পঞ্চম অনুসূচিত অঞ্চল, বনাধিকার আইনের জোরে এবং দুনিয়ার মানুষের সমর্থনে বিগত ১০ বছর লাগাতার সংঘর্ষের ফলে হসদেওকে সুরক্ষিত রাখা গিয়েছে।
ছত্তীশগঢ়ের আচানকমার টাইগার রিজার্ভের বাইগা আদিবাসী গোষ্ঠীর লড়াইয়ের কথা শোনান তাঁদের প্রতিনিধি সীমাঞ্চল। তিনি জানান, আচানকমার টাইগার রিজার্ভ ঘোষিত হওয়ার পর ২০০৯ সালে ৫৫৬টি বাইগা পরিবারকে বন থেকে উচ্ছেদ করা হয়। কোন্ধদের মতো বাইগারাও “পার্টিকুলারলি ভালনারেবল ট্রাইবালস গ্রুপ (পিভিটিজি)-র অন্তর্ভুক্ত। আগে যাঁদের বলা হত প্রিমিটিভ ট্রাইবাল গ্রুপ বা আদিম আদিবাসী গোষ্ঠী। খনিজ দ্রব্য, বন্যজন্তুর বাসস্থানের জন্য এমন সংকটাপন্ন আদিবাসীদের নিষ্ঠুরভাবে বন থেকে তাড়িয়ে দিতে দু’বার ভাবা হয় না। ন্যাশনাল টাইগার রিজার্ভ অথরিটি (এনটিসিএ)-র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে “ব্যাঘ্র প্রকল্প” শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে ৫০টি ব্যাঘ্র প্রকল্পের ৭৫১টা গ্রাম থেকে ৫৬,২৪৭টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্য ৪৪ হাজারেরও বেশি পরিবারের আনুমানিক ২২০,০০০ জন কোনও “রিলোকেশন প্যাকেজ” পাননি। প্রসঙ্গত, এ রাজ্যের বক্সা টাইগার রিজার্ভ থেকে আদিবাসী ও অন্যান্য পরম্পরাগত বনবাসীদের উচ্ছেদের জন্য বনদফতর আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আচানকমার সংঘর্ষ সমিতির সীমাঞ্চল জানান, ওই উচ্ছেদের পর দীর্ঘ লড়াই চলছে। দিনের পর দিন বনে ঢুকতে না পারলেও বাইগা আদিবাসীদের সন্তানদের নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে, আইন বিষয়ে ওয়াকিবহাল করে তুলে, তাঁদের মাধ্যমে আচানকমারের কোর অঞ্চলের ১৯টি বাইগা গ্রামকে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলা হয়। এই ১৯টি গ্রামকে উচ্ছেদের চেষ্টা করলে গ্রামসভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তা রোধ করা যায়। কেননা আইন বলছে, বনগ্রামবাসীরা গ্রাম না ছাড়তে চাইলে তাঁদের জোর করে সরানো যাবে না। তিনি আরও জানান, ওই ১৯টি গ্রাম টাইগার রিজার্ভের কোর অঞ্চলে শুধু তাদের থাকার অধিকারকেই প্রতিষ্ঠা করেনি, আন্দোলনের জেরে এবং আইন মোতাবেক গ্রাম প্রতি ১০,০০০ হেক্টর জমি আদায় করেছে। এছাড়াও বেআইনি কাজের জন্য বনদফতরকে দু’লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য করেছে।
উত্তরবঙ্গ বন জন শ্রমজীবী মঞ্চের প্রতিনিধি সৌমিত্র ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অমৃতকাল কর্পোরেট লুঠের বিষকাল। জল-জমি-জঙ্গল কর্পোরেট, ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যই বন সংরক্ষণ সংশোধনী আইন আনা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে গ্রামে, গ্রামে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদা, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রক্ষার লড়াই চালাতে হবে। না সরকার, না রাষ্ট্র, না বাইরের লোক— কাউকে বনবাসীদের প্রাপ্ত অধিকার কেড়ে নিতে দেওয়া যাবে না।
উত্তরের ডুয়ার্সের লালসিং ভুজেল, দক্ষিণের জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার রাজেন টুডুদের মতে, বনাধিকার আইনের বলে “জঙ্গল হল গ্রামসভার সাধারণ সম্পত্তি।” গ্রামসভা মানে বনগ্রামের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষদের নিয়ে তৈরি সাধারণ সভা। বনাধিকার আইনে রয়েছে, জঙ্গল কীভাবে রক্ষা করা, ব্যবহার করা হবে তা স্থির করবে গ্রামসভা। গ্রামসভার অনুমতি ছাড়া সরকার, প্রশাসন কেউই জঙ্গল ধ্বংস করে কোনও রকম প্রকল্প, নির্মাণ, খননকাজ করতে পারবে না। অথচ, সরকার নিজের তৈরি আইনকে নিজেই অমান্য করছে। উল্টে, আইন সংশোধন করে কর্পোরেট স্বার্থে ব্রিটিশদের মতোই পুরো বনভূমির দখল নিতে চাইছে। তাই আমাদের স্লোগান, “গ্রামসভার শত্রু যারা, লোকসভা থেকে তাদের তাড়াও।”
এই সভা থেকেই সারা রাজ্যের সমস্ত গ্রামসভাগুলিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হয়। এবং রাজ্যের গ্রামসভাগুলির মিলিত মঞ্চ তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যা আগামীতে প্রকাশ্য সভার মাধ্যমে তাদের মূল রাজনৈতিক দাবিটি তুলে ধরবে বলে স্থির হয়েছে।
এই প্রয়াস দানা বাঁধলে উত্তরের পাহাড় ও ডুয়ার্স, দক্ষিণের জঙ্গলমহলের আদিবাসী প্রধান অঞ্চলগুলিতে অনেক রাজনৈতিক সমীকরণকে বদলে দিতে পারেন বনগ্রামবাসীরা। বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী যখন লোকসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যে “সন্দেশখালি ঝড়” উঠবে বলে রাজনৈতিক পূর্বাভাস দিয়ে গেলেন, তখন কলকাতার ‘গোকুলে’ বেড়ে উঠল আর এক শপথ— গ্রামসভার শত্রু যারা লোকসভা থেকে তাদের তাড়াও। রাজ্যের বনাঞ্চলের নির্বাচনী আকাশের ঈশান কোণে এক বিদ্যুৎগর্ভ মেঘের উদয়ের সেই খবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি পৌঁছল?