রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লাশিল্পে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিপদ রেভেনিউ শেয়ারিং অ্যান্ড মাইনস ডেভলপার অ্যান্ড অপারেটর (এমডিও) মডেল। সরকারি কাঠামো বজায় রেখে বেসরকারি সংস্থার দখলদারি কায়েমের ব্যবস্থা। কয়লা শিল্পের ধাত্রীভূমি হিসাবে পরিচিত রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চলে এমডিও মডেল চালু করতে উদ্যত হয়েছে কর্পোরেট বান্ধব মোদি সরকার। এমডিও মডেল আসলে ধারাবাহিক ভাবে কয়লা শিল্পকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার শেষ ধাপ মাত্র। বিগত সময়ে সংগঠিত প্রতিরোধের দুর্বলতা এবং নয়া-উদারবাদী আগ্রাসনের মাধ্যমে দেশের জল-জমি-খনিজ ও অরণ্য সম্পদের লুণ্ঠনের নীল নকশা অনুধাবনে দুর্বলতার সুযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্পের সমান্তরালে গড়ে উঠেছে বেসরকারি কয়লা শিল্প। তাই যদি কয়লাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের অস্তিত্ব বজায় রাখতে হয় তাহলে কয়লা শিল্পের পূর্বাপর বিশ্লেষণ করেই আমাদের প্রতিরোধের কৌশল স্থির করতে হবে। লিখলেন সুমন কল্যাণ মৌলিক।
নব্বই এর দশকে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার, বিশ্বব্যাঙ্ক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট প্রভৃতি আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীসংস্থাগুলোর অভিভাবকত্বে এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির নির্দেশে ভারতে ‘উদারীকরণ-বেসরকারিকরণ-বিশ্বায়নের’ শ্লোগানের আড়ালে ভারতে যে নয়া উদারবাদী আর্থিক সংস্কার নীতি লাগু হয়,তার তিনদশক অতিক্রান্ত। প্রথম দিন থেকে এই সংস্কার নীতির আক্রমণের লক্ষ্য ছিল ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র। ক্ষতিতে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে তাদের যাবতীয় সম্পদ কর্পোরেট হাঙরদের হাতে তুলে দেওয়া, লাভজনক সংস্থার আর্থিক বিলগ্নীকরণ, ধাপে ধাপে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় বেসরকারি সংস্থার প্রবেশ, জাতীয়করণের নীতিকে লাথি মেরে দুই একটি ক্ষেত্র বাদ দিয়ে প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের আমন্ত্রণ — এই ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর ধ্বংস সাধন অব্যাহত থেকেছে। এখন আর জনস্বার্থের মুখোশ ধারণ করার আবশ্যকতাও থাকছে না। বিগত কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন সরকার আর কোন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা চালিয়ে যেতে আগ্রহী নয়। স্বাভাবিক ভাবেই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা এই আক্রমণের বাইরে নয়। একের পর এক সরকারি নীতি আগামী দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা কোল ইন্ডিয়া ও তার সাবডিয়ারি সংস্থাগুলোর অস্তিত্ব আর থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লাশিল্পে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিপদ রেভেনিউ শেয়ারিং অ্যান্ড মাইনস ডেভলপার অ্যান্ড অপারেটর (এমডিও) মডেল। সরকারি কাঠামো বজায় রেখে বেসরকারি সংস্থার দখলদারি কায়েমের ব্যবস্থা। কয়লা শিল্পের ধাত্রীভূমি হিসাবে পরিচিত রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চলে এমডিও মডেল চালু করতে উদ্যত হয়েছে কর্পোরেট বান্ধব মোদি সরকার। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, কয়লা মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি হিটলার সিং এর জারি করা একটি মিটিং এর সার্কুলার অনুযায়ী ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের (ইসিএল) গভীরতম ভূগর্ভস্থ খনি চিনাকুড়িকে রেভেনিউ শেয়ারিং পদ্ধতিতে বেসরকারি সংস্থা ইনোভেটিভ মাইনিং প্রজেক্ট প্রাইভেট লিমিটেডকে লিজ দেওয়া হয়েছে। আশার কথা হল এই শ্রমিক ও জনস্বার্থ বিরোধী ও কর্পোরেট মুনাফা নিশ্চিতকরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কয়লা শিল্পের সাথে যুক্ত ছোট-বড় বিভিন্ন সংগঠন সরব হয়েছে, প্রাথমিক প্রতিরোধও নজরে পড়ছে। এই প্রতিবাদকে সমর্থন করেই আরেকবার স্মরণ করাতে চাই যে এমডিও মডেল আসলে ধারাবাহিক ভাবে কয়লা শিল্পকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার শেষ ধাপ মাত্র। বিগত সময়ে সংগঠিত প্রতিরোধের দুর্বলতা এবং নয়া-উদারবাদী আগ্রাসনের মাধ্যমে দেশের জল-জমি-খনিজ ও অরণ্য সম্পদের লুণ্ঠনের নীল নকশা অনুধাবনে দুর্বলতার সুযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্পের সমান্তরালে গড়ে উঠেছে বেসরকারি কয়লা শিল্প। তাই যদি কয়লাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের অস্তিত্ব বজায় রাখতে হয় তাহলে কয়লা শিল্পের পূর্বাপর বিশ্লেষণ করেই আমাদের প্রতিরোধের কৌশল স্থির করতে হবে।
১৭৭৪ সালে ভারতে প্রথম ব্রিটিশ মালিকরা কয়লা উত্তোলন শুরু করে। পরাধীন দেশেই ভারতীয়রা কয়লা খনির ব্যবসায় যুক্ত হয়। দেশ স্বাধীন হবার পরেও কয়লা শিল্প ব্যক্তি মালিকানাধীন ছিল, যাকে কোম্পানির আমল বলা হয়। ১৯৭৩ সালে কোল মাইনস ন্যাশানালাইজেশন অ্যাক্ট অনুসারে কয়লা শিল্পের জাতীয়করণ করা হয়েছিল। এই জাতীয়করণের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের শিল্পের অগ্রগতির জন্য ভারতীয় শিল্পপতিদের সস্তায় পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করে দেওয়া। কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছিল সেই সময় টাটা, বিড়লা, গোয়েঙ্কার মতো ভারতীয় শিল্পপতিদের হাতে পরিকাঠামো তৈরির জন্য যথেষ্ট পুঁজি ছিল না। তাই শিল্পের অগ্রগতির প্রয়োজন দেখিয়ে বেসরকারি শিল্পপতিদের সাহায্য করার জন্য আমাদের দেশের জনগণের পয়সায় তৈরি হলো খনি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ইস্পাত শিল্প। কয়লা খনি জাতীয়করণের আরও একটি কারণ ছিল। কোম্পানির আমলে বেশি লাভের আশায় কোন নিয়ম নীতি না মেনে কয়লা তোলা হত ফলে বহু কয়লা মাটির তলায় চলে যায়, যেমন রানিগঞ্জ কয়লা খনি অঞ্চলে বেসরকারি মালিকদের যথেচ্ছ ভাবে কয়লা খননের ফলে বহু কয়লা মাটির তলায় জ্বলছে ও ধ্বসের কারণে জনজীবন সহ বহু সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। কিন্তু খনিতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে পরিকল্পিত ভাবে বেশি পরিমাণ কয়লা তুলে আনার খরচ বেসরকারি মালিকরা বহন করবে না কারণ তাতে লাভের অঙ্ক কমে যাবে। তাই ভারত সরকার নিজে দায়িত্ব নিয়েছিল জনগণের পয়সায় কয়লাখনি চালাবার।
কয়লা শিল্প জাতীয়করণের পর উৎপাদন খরচের থেকে কম দামে কয়লার জোগান পেয়েছে বেসরকারি পুঁজি। কয়লা ব্যবহারকারী শিল্পপতিদের চাপে সরকার তাদের স্বার্থে কয়লার দাম নির্ধারণ করত। বিশেষ করে উচ্চ তাপ মূল্যের কয়লা উৎপাদনকারী সংস্থা ইসিএল, বিসিসিএল, সিসিএল-এর কয়লা উৎপাদন খরচের থেকে অনেক কম দামে সরকার বেসরকারি মালিকদের হাতে দিত। এছাড়া প্রথম থেকেই কোল ইন্ডিয়ার সংস্থাগুলিতে সীমাহীন দুর্নীতি, সঠিক পরিকল্পনার অভাব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে একটি অদক্ষ সংস্থায় পরিণত করলো। মূল সমস্যার সমাধান না করে এই সংকটকে কাজে লাগানো হল কয়লা শিল্পে বেসরকারি করণের পথ প্রশস্ত করতে। এই অবস্থায় ১৯৯১ তে নয়া আর্থিক নীতির অনুষঙ্গে শুরু হল ধাপে ধাপে বেসরকারিকরণ পর্ব। প্রথমে কয়লার দাম বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি কয়লার আমদানি শুল্ক ৮৫% থেকে কমে ৩৫% হয়, ফলে আমদানিকৃত কয়লার দাম কোল ইন্ডিয়ার কয়লার দামের থেকে কমে গেল। শুরু হল কয়লা আমদানির নতুন পর্ব।
কয়লা বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়াটিকে ধাপে ধাপে কার্যকরী করার ইতিহাসটাও খুব সংক্ষেপে জেনে নেওয়া জরুরি। ১৯৯২সালে ১৪৩টা কয়লা ব্লক ও সিঙ্গারেনি খনি কয়লা তোলার জন্য রাজ্যগুলোর হাতে দেওয়া হল। ১৯৯৩ ও ২০০০ সালের দুটি সংশোধনীর মাধ্যমে কয়লা শিল্পকে সরাসরি বেসরকারি উদ্যোগের হাতে দেওয়া হল। ১৯৯৩(জুন) সালে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি, ১৯৯৬ (মার্চ) সিমেন্ট কোম্পানি ও ২০০৭ সালে বেসরকারি কোল গ্যাসিফিকেশন ও লিকুইডিফিকেশন সংস্থাগুলিকে ক্যাপটিভ কয়লা খনি করার অনুমতি দেওয়া হল। মাইনস অ্যান্ড মিনারেল (ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যাক্ট (২০০০) সংশোধনী অনুসারে সমস্ত রাজ্যগুলোকে কয়লা খনি চালানোর অনুমতি দেওয়া হল। একই সঙ্গে একথাও বলা হল যেহেতু রাজ্য সরকারগুলোর কয়লা উৎপাদনের অভিজ্ঞতা নেই, তাই রাজ্যগুলো অভিজ্ঞতা আছে এমন বেসরকারি কোম্পানিকে আউটসোর্সিং করতে পারবে। তারপর থেকে রাজ্য সরকারগুলো বেসরকারি কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছে মূল্যবান কয়লা সম্পদ। ২০০৬ সালে ক্যাপটিভ মাইনসে ১০০ শতাংশ বিদেশি পুঁজি আসার ছাড়পত্র পেল। বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করার জন্য ২০১০ সালে মাইনস অ্যান্ড মিনারেল (ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যাক্টে সংশোধনী এনে অন্যান্য খনিজ দ্রব্যের সাথে কয়লাখনিকেও নিলামে চড়ানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এই নীলামের পরিণতি ২০১২ সালে ২১৪টি কয়লা ব্লক বিভিন্ন রাজ্য সরকার ও বেসরকারি কোম্পানিকে বরাদ্দ করা। দেশ প্রত্যক্ষ করল ঐতিহাসিক ‘কোল গেট’ কেলেঙ্কারি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ব্লক প্রত্যাহার। এরপর কর্পোরেট হিন্দুত্বের পোস্টার বয় নরেন্দ্র মোদির শাসনের প্রথম পর্বে কোল মাইনস স্পেশাল প্রভিশন অ্যাক্ট (২০১৫) এবং দ্বিতীয় পর্বে কয়লা শিল্পে ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) অনুমতি। এক্ষেত্রে শুধু মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে ১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল — এই ৩২বছরে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ও বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ। তাই বলা যায় প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থনে বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে।
কয়লা শিল্পের বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতাই আজকের মাইন ডেভলপার অ্যান্ড অপারেটর পদ্ধতি (এমডিও মডেল)। এই মডেল তড়িঘড়ি করে নেওয়ার উদ্দেশ্য হল সরাসরি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির চালু কয়লা খাদান লিজ হোল্ড এরিয়ায় কয়লা ভান্ডার পরিকাঠামো সহ বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া। বিগত সময়ে কয়লাক্ষেত্র বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে কয়লা খননের জন্য একাধিক ছাড় দেওয়া হলেও নতুন খনির ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না তাই আজ রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা ক্ষেত্রকে গিলে খাওয়ার পরিকল্পনা। আর এমডিও মডেল কোন নতুন নীতি নয়, চালু কয়লা নীতিরই অংশ। এই মডেলে খনির সমস্ত কয়লা উত্তোলন থেকে পরিবহন — বেসরকারি মালিকদের বা ঠিকা এজেন্সির মাধ্যমে করা হবে। সরকারের স্পষ্ট নীতি হল এসো কয়লা খনি গ্রহণ কর, উৎপাদন কর, যেখানে খুশি কয়লা বিক্রি করো আর মুনাফার নামমাত্র ৪% সরকারের ঘরে জমা কর। শুধুমাত্র চিনাকুড়ি নয়, ইতিমধ্যেই পশ্চিম বাংলাতে ২২টি কয়লা খাদান ইসিএল কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই চিহ্নিত ২টি ভূগর্ভস্থ খনি ও কয়লা ভান্ডারের সম্পূর্ণ ঠিকাকরণ হবে ও তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে (খনিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য সুজিত ভট্টাচার্য লিখিত উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধ / গণশক্তি / ১ অক্টোবর, ২০২৩ দ্রষ্টব্য)।
আজ রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চল তথা রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্প এক সন্ধিক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে। ইতিমধ্যেই সরকারের কর্পোরেট বান্ধব নীতি ও ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের যুগলবন্দীতে আদানি গোষ্ঠী কোল ইন্ডিয়ার পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। একথা কারো অজানা নয় যে আদানি সাম্রাজ্যের হৃৎপিণ্ড হল কয়লা তথা জ্বালানি শিল্প। ভারতের কয়লাক্ষেত্রে এই দখলদারি যদি অব্যহত থাকে তবে শুধু কোল ইন্ডিয়ার বিভিন্ন খনিতে কর্মরত পাঁচ লক্ষ শ্রমিক আক্রান্ত হবে না, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ আরো বেশি করে কর্পোরেট লুণ্ঠনের শিকার হবে। তাই কোল ইন্ডিয়া বাঁচানোর লড়াইতে শুধু শ্রমিক সংগঠন নয়, সমস্ত গণতান্ত্রিক সংগঠন ও ব্যক্তি মানুষকে যুক্ত হতে হবে। আজ কোল ইন্ডিয়ার একটা বড়ো অংশের শ্রমিকদের ভ্রান্ত ধারণা হলো আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে ঠিকা শ্রমিকদের ঘাম রক্তকে ব্যবহার করে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে কয়লা উৎপাদন না করালে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া বাঁচবে না। বাস্তবে কিন্তু বেসরকারি কয়লা ক্ষেত্র হয়ে উঠছে উৎপাদনের প্রধান ক্ষেত্র যেখানে শোষিত হচ্ছেন হাজার হাজার ঠিকা শ্রমিক। তাই আজকে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লাশিল্পকে বাঁচাবার লড়াইয়ে অবশ্যই ঠিকা শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও সঠিক মজুরির দাবিটিকে যুক্ত করতে হবে। বিগত সময় সাক্ষী যে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলনের দুর্বলতার কারণে সরকার এক তরফা ভাবে ও ধাপে ধাপে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে ও প্রতিরক্ষা, রেল, খনি, যোগাযোগ সহ সমস্ত ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বার্ণ স্ট্যান্ডার্ড, হিন্দুস্তান কেবলস, এমএএমসি সহ একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ। অ্যালয় স্টিল অস্তিত্ব বাঁচাতে লড়ছে। রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলে আজ প্রয়োজন এক উদাহরণ যোগ্য লড়াই তৈরি করার যা শুধু ইসিএলকে রক্ষা করবে না, সারা দেশে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইকে শক্তি জোগাবে।
লেখক স্কুল শিক্ষক ও অধিকার আন্দোলনের কর্মী।
খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খুব কম মানুষই এ সব জানেন। সব সরকারি কর্পোরেট শোষণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ সবের বিরুদ্ধে দল নিরপেক্ষ ভাবে জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াই দরকার।