গত ৬ মার্চ কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের বনগ্রামভাগুলির সংগ্রামী গ্রামসভাসমূহের ডাকে যে আলোচনা সভা আয়োজিত হয় সেখানে মহিলা কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানেই কয়েক জন সক্রিয় নারীকর্মীর সঙ্গে কথা বলার সূত্রে উঠে এল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর অধিকারের লড়াই, সরকারের কাছে দাবি এবং অবশ্যই বনাধিকার আইন ২০০৬ লাগু করার দাবি। সুদর্শনা চক্রবর্তীর প্রতিবেদন।
কোভিড-পরবর্তী সময়ে ভারতের নারী সাংবাদিকদের একটি স্বাধীন কালেক্টিভ ‘নেটওয়ার্ক অফ উওমেন ইন মিডিয়া, ইন্ডিয়া’-র সদস্য হিসাবে একটি সমীক্ষার গবেষণায় যুক্ত ছিলাম। বিষয় ছিল – কোভিড পরবর্তী সময়ে সারা দেশের ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষার সংবাদপত্রে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংবাদে মহিলাদের খবরের উপস্থিতি ও পরিবেশন। সমীক্ষার প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নিজের তরফ থেকে যে বিষয়টি যোগ করেছিলাম, তা হল সংবাদপত্রে পরিবেশিত খবরগুলির প্রায় সব ক’টিতেই মহিলারা পুরুষ পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের সদস্য হিসাবে সামনে এসেছেন, নিজেরা শ্রমিক হিসাবে নয়। মহিলাদের শ্রমজীবী হিসাবে না দেখার এই যে সামাজিক-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তা এভাবেই প্রতিফলিত হতে থাকে সংবাদমাধ্যমে। এর ফলশ্রুতিতেই মহিলাদের শ্রম ও শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি, সমকাজে সম বেতন, কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়গুলি রাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারে।
শ্রমজীবী মহিলাদের মধ্যে আজকের ভারতে দাঁড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন জনজাতির মহিলাদের লড়াইগুলিকেও স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে। কয়েক দশকে তাঁদের নিজেদের জনজাতি সম্প্রদায়ের, বনবাসী-আদিবাসী মানুষদের অধিকার রক্ষার লড়াইতে অংশগ্রহণ যেমন বেড়েছে, তেমনি নারী অধিকার বিষয়ে সচেতনতাও বেড়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলাদের শ্রমের খতিয়ান দেখতে শুরু করলে বোঝা যেতে পারে, তাঁদের আজকের প্রজন্ম কেন নিজেদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার নিয়ে নিজেরা সচেতন হচ্ছেন এবং সচেতনতার প্রসারেও একইভাবে সক্রিয় হচ্ছেন। জল-জঙ্গল-জমির অধিকারের পাশাপাশি শ্রমজীবী মহিলাদের অধিকার নিয়েও সরব তাঁরা।
গত ৬ মার্চ কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের বনগ্রামভাগুলির সংগ্রামী গ্রামসভাসমূহের ডাকে যে আলোচনা সভা আয়োজিত হয় সেখানে মহিলা কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানেই কয়েক জন সক্রিয় নারীকর্মীর সঙ্গে কথা বলার সূত্রে উঠে এল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর অধিকারের লড়াই, সরকারের কাছে দাবি এবং অবশ্যই বনাধিকার আইন ২০০৬ লাগু করার দাবি।
সুলেখা মান্ডি – পুরুলিয়া, ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহল, মহিলাদের ইউনিট
আমি দশ, বারো বছর আন্দোলনে যুক্ত। আন্দোলনে ছেলেরাই বেশি এগিয়ে আসেন, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, ওনারা যখন বেরোচ্ছেন, আমাদেরও তো বেরোনো দরকার, কেননা, যেকোনও অধিকার, তা তো নারী-পুরুষ হিসাবে ভাগ করে হয় না। সেই হিসাবে আমিও এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি। নেতুরিয়া ব্লকে আমাদের ইউনিটে মহিলা সদস্যের সংখ্যা এখন ৩৫০।
কিন্তু কোনও আন্দোলনে মহিলাদের বাইরে বেরোতে হলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েই বেরোতে হয়। ঘর-সংসার সামলানো থেকে শুরু করে, বাচ্চাকে মানুষ করা সবই তাদের দায়িত্ব। কোনও জনজাতি যদি উন্নতির কথা ভাবে তাকে মহিলাদের শিক্ষার কথা ভাবতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি, স্বাস্থ্যের কথাও ভাবতে হবে। আদিবাসী জনজাতির মহিলাদের পুষ্টির অভাব, চিকিৎসার অভাব আর মারাত্মক পরিশ্রম তাদের গড় আয়ু কমিয়ে দেয়, স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। তথ্য বলে আদিবাসী জনজাতির ৭০% মানুষের চিকিৎসার অভাবে মৃত্য হয়।
আদিবাসীদের জল-জমি-জঙ্গলের উপর রাষ্ট্রের একটা নজর আছে। সেটা অযোধ্যা পাহাড় বা পাঞ্চেৎ পাহাড় যাই বলুন, প্রাকৃতিক সম্পদ সেখানে পরিপূর্ণ, সেটাকে টার্গেট করে রাষ্ট্র আমাদের উপর শকুনের মতো চোখ রাখছে। গত এক দশকে আদিবাসী জনজাতির উপরে নির্যাতন অনেক বেড়ে গেছে। আমার মনে হয়েছে, যে দলই সরকারে আসুক না কেন, রাষ্ট্রের চেহারা বদলায় না। সব সরকারই একই কাজ করে আসছে – কেন্দ্র সরকার বলুন, রাজ্য সরকার বলুন। সেক্ষেত্রে আমাদের একত্রিত হতে হবে। আমরা গ্রামসভার মধ্যে দিয়ে বনাধিকার আইন ২০০৬ প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও আমরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছি। সরকারের উচিৎ ছিল গ্রামসভাগুলো বানানো। ওনারা আমাদের সাহায্য করছেন না। আমরা লড়াইটা থামিয়ে রাখিনি। আমরা চেষ্টা করছি। গ্রামসভার মধ্যে দিয়েই আমাদের একজোট হতে হবে, জঙ্গল রক্ষা করতে হবে, ভবিষ্যত প্রজন্মের শিক্ষা-স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস আছে, আমরা জিতব।
বন-জঙ্গল, প্রাকৃতিক পরিবেশ সকলেরই প্রয়োজন। কিন্তু বনকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় মহিলাদের। ঘর-সংসার চালনোর জন্য কিছু জিনিস যেমন জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করেন, তেমনি তাঁদের পুষ্টি, তাঁদের সুরক্ষাও জঙ্গল থেকেই সংগ্রহ করে থাকেন। আদিবাসী মহিলাদের জঙ্গলে ঢোকার উপরে, কাঠ সংগ্রহ, পাতা তোলায় বাধা-নিষেধ আছে। অথচ আমাদের জীবন-জীবিকা তো জঙ্গলের উপরেই নির্ভরশীল। আমাদের রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, দেশের রাষ্ট্রপতি মহিলা – কিন্তু সাধারণ নারীরা সেই সেফটি-তে (নিরাপত্তায়) নেই এখনও। গত ১০ বছরে যদি দেখি মহিলাদের নির্যাতনের হার ৫০% বেড়েছে। তাঁদের, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের খুবই খারাপ দশা। মহিলাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জঙ্গল রক্ষা, মহিলাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতি এই সবগুলোই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে আমার মনে হয়।
আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার হার কম হওয়ায়, মহিলারা খুব বেশি এগিয়ে আসেননি। বড়রা আমাদের উৎসাহ দিচ্ছেন। আমাদের সেল্ফ হেল্প গ্রুপ আছে, মহিলা ইউনিট আছে, আমরা গ্রামে গ্রামে আলোচনার ব্যবস্থা করি, যখনই সময় পাই, ৫-১০টা গ্রাম মিলে একটা জমায়েত করে আমাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শেয়ার করি।
নির্বাচনের আগে ভোট চাইতে আসা সমস্ত দলকে বলব –
১) দাবি নয় – ২০০৬ বনাধিকার আইন আমাদের অধিকার, সেটা যেন প্রতিষ্ঠা হয়
২) আদিবাসীদের শিক্ষার অধিকার চাই। যেকোনও জনজাতির মাতৃভাষা আলাদা। মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক, ঐ ভাষায় ঐ এলাকায় লেখাপড়ার সুযোগ যেন থাকে।
৩) জল-জমি-জঙ্গল রক্ষা করতে হবে। জঙ্গল সবার জন্যই। জঙ্গল না থাকলে কেউ বাঁচবে না, তাই জঙ্গল আমাদের বাঁচাতে হবে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য।
উর্মিলা রাভা – উত্তর মেন্দাবারি রাভা বস্তি, কালচিনি ব্লক, আলিপুর দুয়ার
আগে যখন গ্রামসভা হত, তখন মহিলাদের সংখ্যা বহুতই কমজোরি ছিল, বাংলাও বলতে পারে না। আবার কাজগুলোও তেমন কিছু জানত না। এখন গ্রামসভায় আসতে আসতে, সেল্ফ হেল্প গ্রুপ হয়ে কাজ কিছু শেখা হয়েছে। আমরা এখন তাঁত বোনা, রাভা মেয়েদের ড্রেস তৈরি এগুলো শিখেছি, শেখাই। আমরা চাই সরকার যাতে আদিবাসী মহিলা তাঁত শিল্পীদের সাহায্যের কথা ভাবেন।
গ্রামসভা থেকে বাচ্চাদের পড়াশোনা শেখাচ্ছে। তাছাড়াও মহিলারা এখন সেল্ফ হেল্প গ্রুপ তৈরি করে শসা, হলুদ চাষ করছি, মাছ চাষ করছি, আমাদের গ্রুপ এখন ভালো চলতেছে। আগে তো ছিল না এগুলা।
আমাদের আদিবাসীদের অধিকার তো কেন্দ্র, রাজ্য কোনও সরকারই দেয় না। দেবে বলে আমরা এখনও আশা রাখি। আমাদের বনের অধিকার পেলে অনেক সুবিধা হবে। লকড়ি নিতে পারব। আমাদের মা-বাবা-দাদি-দাদারাই তো এই জঙ্গল তৈরি করেছে। জঙ্গল লাগুয়া বনবস্তি। কিন্তু আমাদের জমিনের পাট্টা নেই, পাট্টা না পেলে ওখানে থাকতে পারব না, সরকার তাড়া দেবে, সব সময় ভয়ে থাকি। তাই আমাদের আন্দোলন চলছে। আমাদের দাবি তারা মানেনি, কিন্তু মানাতে লাগবেই।
বিশুখা রাভা – উত্তর মেন্দাবারি রাভা বস্তি, কালচিনি, আলিপুর দুয়ার
আমি গ্রামসভায় মহিলা ও বাচ্চাদের পড়াই। আমি বি.এড কমপ্লিট করেছি। বর্তমানে মহিলা ও বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক বদল এসেছে। আমাদের যে রাভা জাতি, তাঁরা পড়াশোনায় খুব উৎসাহী নয়। তাঁরা মনে করত, যদি মেয়ে হয় তাহলে ঘরের কাজকর্ম করবে, বাসন মাজবে, সে স্কুলে গিয়ে কী লাভ! এরকম তাঁরা আগে ভাবতেন। এখন রাভা বস্তিতে এতটা উন্নতি হয়েছে যে ছেলে, মেয়ে কোনও বাচ্চাকেই লেখাপড়া না শিখিয়ে রাখা হয় না। তারজন্য সবচেয়ে ভালো এডুকেশন দেওয়ার কথা ভাবে। আগের জেনারেশনের মা-বাবারা তো পড়তে পারেননি, তাই তাঁরা চান যাতে তাঁদের সন্তানেরা পড়ার সুযোগ পায়। সেইজন্যই মহিলারা, বাচ্চারা লেখাপড়ায় এগিয়ে গেছে অনেকটাই।
প্রথমে গ্রামসভায় মহিলারা কিন্তু যেতেন। মাঝের সময়টায় তাদের যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছিল, তাঁরা যেন গায়েব হয়ে গেছিলেন। কারণ, গ্রামের লোকেরা ভাবতেন, মহিলাদের দিয়ে কিছু হবে না, মহিলারা শুধু ঘরের কাজকর্ম পারেন। তাঁরা মুভমেন্ট করে, মিটিং-এ বসে কী করবেন? তার বদলে ঘরে বসে কাজ করুক। সেই ধারণা কিন্তু এখনও আছে। যে মিটিং-ই হোক, মহিলাদের খুব কম দেখা যায়। এক, দু’জন…ব্যাস।
আমাদের লার্নিং সেন্টার খোলার পর মহিলাদের ইনভল্ভ করা হচ্ছে বেশি করে, তাঁদের কাজ দিয়ে, তাঁদের বাচ্চাদের পড়িয়ে, শিক্ষা দিয়ে, কিছু না কিছু বদল আনার চেষ্টা করছি। এসব কথা ভেবে মহিলারা এগিয়ে আসছেন আর লার্নিং সেন্টারের মাধ্যমে কাজও পাচ্ছেন। আমাদের লার্নিং সেন্টারের জন্য, গ্রামসভার জন্য মহিলাদের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে, তাঁরা আরও বেশি করে আসছেন।
আমাদের মহিলারা সামনে যেতে একটু লজ্জা পান। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে একটা ‘পাওয়ার’ থাকে, একটা ‘হিম্মত’ থাকে। তারা ঘর, সন্তান, লেবারারদের কাজ সবই সামলাতে পারেন, তাহলে একটা আন্দোলন কেন সামলাতে পারবেন না?
আমার যে দাবিগুলি সামনে রাখতে চাই, সেগুলি হল –
ক) আমাদের গ্রাম এখনও রেভেনিউ ভিলেজ হয়নি, সেই স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাই।
খ) মহিলাদের জঙ্গলে ঢুকতে দেওয়ার অধিকারের দাবি জানাই।
পরবর্তী নির্বাচনে আমি বিজেপি-কে আবার ক্ষমতায় দেখতে চাই না, কারণ আমি মনে করি বিজেপি ফরেস্ট আইন-এর বিরুদ্ধে, ফরেস্ট থেকে আমাদের তাড়াতে চায়। তাই তাদের আর চাই না।
জ্যোতি ওঁরাও – নিমাতি ফরেস্ট বস্তি, আলিপুর দুয়ার
আমি আমাদের গ্রামের লার্নিং সেন্টারে একজন টিচার আর মহিলাদের সঙ্গে কাজেও যুক্ত। আমি গ্র্যাজুয়েশন করে বি.এড-এ ভর্তি হয়েছি। আমাদের ওখানে ১০, ১৫ বছর আগেও মেয়েদের পড়ানোই হত না। যদিও বা হোতো, ক্লাস সেভেন, এইট পর্যন্ত, খুব কম মেয়ে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেত, তারপর তাদের আর স্কুলে পাঠাত না। ১৪, ১৫ বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে দিত। এখন সিচুয়েশন সেরকম নয়। এখন বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সকলেই বুঝতে পারছে যে এডুকেশনের ইমপর্ট্যান্স কীঁ। এখন আর ছেলে, মেয়ের তফাৎ না করে সমানভাবে লেখাপড়া করায়, যতদূর পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা পড়তে চায়, মা-বাবারা পড়ানোর চেষ্টা করেন।
আগে গ্রামসভার মিটিং বললে মেয়েরা এক, দু’জনই আসত। যবে থেকে লার্নিং সেন্টার শুরু হয়েছে আমরা স্টুডেন্টদের গার্জিয়ানদেরও ইনভল্ভ করতে শুরু করেছি। সেখানে গার্জিয়ান মিটিং ডাকলে তাঁরা আসেন, তার মধ্যে এখন মহিলারাই বেশি আসেন। স্কুলের কথা বলে তাঁদের আমরা ডাকি, স্টুডেন্টদের পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রামের কথা বা এফআরএ (ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট) বিষয়ে কিছু ইনফর্মেশন তাঁদের দেওয়ার থাকলেও আমরা এই মিটিংয়েই মহিলাদের সঙ্গে শেয়ার করি।
আমাদের গ্রামে, ফরেস্ট ভিলেজে মহিলারা মূলত বাড়িতেই থাকেন, কাজের জন্য বাইরে বিশেষ যান না। তাঁদের কাজের, রোজগারের ব্যবস্থা যাতে গ্রামেই করে দেয় সরকার তার দাবি জানাতে চাই।
সনিয়া মুর্মু, মনিকা টুডু – পৃথিবীর পাঠশালা, কমলাবহাল ও বাড়ুয়াজারা, পুরুলিয়া
আমাদের গ্রামসভা থেকে ২০২৩ থেকে আমরা এই পাঠশালা শুরু করি। সবাই ভালোই বলেছিল, ছোট বাচ্চাদের লেখাপড়ার সুবিধা হবে। কারণ আমাদের এলাকায় প্রাইমারি স্কুল নেই। তাইজন্য গ্রামসভা থেকেই স্কুল করা হল। এই স্কুলে ৪০-৫০ জন বাচ্চা পড়ে ৭/৮ বছর বয়সী। আমরা চাই ভবিষ্যতে গ্রামসভা থেকেই যাতে আরও উঁচু ক্লাসে পড়ার স্কুলও তৈরি করা যায়। লকডাউনের সময় থেকে পড়াশোনা আর ভালো নেই। কেন? মাস্টার ভালো যাচ্ছে না। ছেলেমেয়ে স্কুল যাচ্ছে না। পরীক্ষা না দিয়েও মাধ্যমিকটা পাশ করিয়ে দিল। পড়াশোনা হচ্ছে না।
গ্রামসভায় সেলফ হেলফ গ্রুপে মহিলারা আসেন। আগে অত আসতেন না। গ্রামসভার মানে আগে জানত না বলে আসত না। এখন আস্তে আস্তে জেনেছে, বুঝেছে তাই আসছে। আমরাও বুঝেছি কেন গ্রামসভা জরুরি। আগে নিয়ম করে গ্রামসভা হত না, আগে জানত না। এই যে বনজঙ্গলগুলো চলে যাচ্ছে…আমরা কোথায় থাকব? কী খাব? ড্যামগুলো হলে আমরা কোথায় থাকব? তারপর গরু-ছাগলগুলা আছে? কোথায় চড়াব? ওগুলা কী খাবে? পাহাড়ে তো কিছু নেই। পাহাড়ে তো কোনও কাজ নেই, শুধু কাঠ বিক্রি করে আমরা খাই।
আমাদের আন্দোলন চলছে ঠুরগা প্রকল্পের বিরুদ্ধে। ড্যাম হলে আমরা ডুবে যাব। সব জল-জঙ্গলগুলো চলে যাবে। আমরা ড্যাম হতে দেব না।
ভোট আসছে। আমরা চাই সব কিছু। আমাদের স্কুল নেই। আসা-যাওয়ার রাস্তা ভালো নেই। আইসিডিএস স্কুল নেই। আমরা এগুলা চাই আর খাবার জল চাই।
বনাধিকার আইন জিন্দাবাদ