বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে বিষমকামী নারী পুরুষের বন্ধুত্বের চিত্রায়ণের ইতিহাস বড়ো একটা গভীর নয়। প্রেম তথা বিষমকামী যৌন আকাংখার বেড়াজাল পেরিয়ে নারীপুরুষের ভেতরকার নির্ভেজাল বন্ধুত্বের গল্প সেখানে প্রাধান্য পায়নি একেবারেই। এর পেছনে যেমন একদিকে রয়েছে সামাজিক বাস্তবতা, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক সম্পর্কসমূহ, যা আসলে নিয়ন্ত্রিত হয় সম্পত্তি, পরিবার ও যৌনতার আন্তঃ সম্পর্কের ধারাবাহিকতার ভেতর দিয়ে। লিখলেন দেবারতি গুপ্ত।
সত্যজিৎ রায় এক জায়াগায় লিখেছিলেন, উপযুক্ত কাস্টিং খুঁজে না পেয়ে ‘অপরাজিত’ ছবিতে অপুর কিশোর বয়সের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী লীলার চরিত্রটি ছবি থেকে বাদ দিতে হয়। ধরে নেওয়া যেতে পারে ওই একইভাবে নির্মলার চরিত্রও চিত্রনাট্যে জায়গা পায়নি। সত্যজিতের হাতে ইন্দির ঠাকরুন বাদে, অপুর জীবনের মাত্র তিন জন নারীই প্রাণ পেয়েছেন; জননী সর্বজয়া, সহোদরা দুর্গা ও জায়া অপর্ণা। অর্থাৎ রক্ত ও যৌন সম্পর্ক ছাড়া অপুর জীবনের আর কোনও নারী সম্বন্ধে সিনেমার দর্শক জানতে পারে না। অপরাজিত ছবিতে এই দুই বান্ধবীর উপস্থিতি, সত্যজিৎ কী ভাবে পাঠ করতেন এবং ছবির পর্দায় এই নির্ভার বন্ধুত্বের অভিব্যক্তি কীভাবে ফুটে উঠত তা আমাদের জানা হয় না।
ভারতীয় কবিতায় কি আখ্যানে, নারী–পুরুষের নিষ্কাম সখ্যতার নজির কি তেমন চোখে পড়ে? (পশ্চিমী সমান্তরালে আছে কি না জানা থাকলে বলবেন)। এ মহান গণতন্ত্রে আসমুদ্র হিমাচলমোহিনী যে সিনেমা তার পর্দায় কখনও নারী পুরুষের ভারহীন দায়হীন বন্ধুত্ব ফুটে উঠেছে? বরং ছেলেটি মেয়েটি হেসে কথা বলে/ মেয়েটি ছেলেটি হাসে দেখলেই সমাজ বলে উঠেছে—এক লড়কা অউর এক লড়কি কভি দোস্ত নহি বন সকতি! যাহ বাবা! শুনে চমকে উঠেছিলাম! আমি তো সন্দীপকে বন্ধুই ধরে নিয়েছি! প্রেম তো নিখিলেশের সঙ্গে… হেসে কথা বলেছি বলে সন্দীপ ভুল বুঝল! না কি রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং ভুল বুঝেছিলেন?
রবি ঠাকুর যাই বুঝুন কেষ্ট ঠাকুর ভুল বোঝেননি। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস তাঁর নেমসেকের মধ্যে দিয়ে এক অতুলনীয় এবং সত্যিই মহাকাব্যিক সখার নির্মাণ করেছিলেন। সে যেমন অর্জুনের বন্ধু তেমনি দ্রৌপদীরও বন্ধু। নিজের স্বামীদের অপদার্থতায় যৌন লাঞ্ছনার মুখে পড়ে, কৃষ্ণা দ্রৌপদী পরম সখা কৃষ্ণকেই স্মরণ করেছিলেন। মহাভারতের শ্রেষ্ঠ নারী চরিত্র আর শ্রেষ্ঠ পুরুষ চরিত্রের মধ্যে এমন বন্ধুত্ব রচিত হয়েছিল ভাবলেই চমক লাগে।
একটু বাংলা মূলধারার সিনেমার দিকে তাকানো যাক। ১৯৬৪ সালে নির্মিত ‘বিভাস’ ও ১৯৬৬ সালের ‘কাল তুমি আলেয়া’ —এই দুটি উত্তমকুমার অভিনীত ছবিতে দু’জন পার্শ্ব নায়িকার চরিত্র বেশ নজরকাড়া। বিভাসে অনুভা গুপ্ত অভিনীত বিদ্যুৎবালা ও কাল তুমি আলেয়াতে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের রূপায়িত সোনা বউদি— বুদ্ধিমতী দীর্ঘশ্বাস ফেলা দু’জন গৃহবধূ। অভিনেত্রী দু’জন সম্বন্ধে তো কিছু বলার নেই। অভিনয়ে অমন সাবলীল সূক্ষ্মতা আজ থেকে ৬০ বছর আগে বাঙালি কত সহজে রপ্ত করে ফেলেছিল! (অথচ এখন কাজটাকে এত কঠিন করে ফেলেছে কেন ভাবলে গা শিউরে ওঠে) অবাক হবার মতো বিষয় হল মূলধারার সিনেমায় অমন বুদ্ধিমতী ক্ষুরধার ব্যক্তিত্বের পার্শ্বনারী চরিত্রের উপস্থিতি। নায়কের প্রেমিকা বা স্ত্রী নন, সোজা সাপটায় দেখলে তেমন আকাঙ্ক্ষিত বা কামনার মানুষও নন। নিপাট বন্ধু। পরামর্শদাতা, সমব্যথী আর তার সঙ্গে কখনও-সখনও দৈনন্দিনের সাহায্যের দাবিদার। ‘উত্তমকুমার – আ লাইফ ইন সিনেমা’ বইটির লেখক অধ্যাপক সায়নদেব চৌধুরি আরও দু’টি ছবির দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। ‘পুষ্পধনু’ এবং ‘আমি সে ও সখা’। প্রথম ছবির নায়িকা অরুন্ধতী দেবী আর পরেরটিতে কাবেরী বসু। আগাগোড়া নায়ক নায়িকার বন্ধুত্বের গল্প। সায়নদেব হেসে বললেন, এরকম চমকপ্রদ ঘটনা পুরনো বাংলা সিনেমায় হামেশাই হত। কিন্তু এসব নিয়ে তেমন চর্চা হয় না। উত্তমকুমারের প্রেমের নায়িকাদের নিয়ে তো কতই চিরুণিতল্লাশি হয়ে থাকে। অথচ এরকম বান্ধবীরা চিরকাল সিনেমায় উপেক্ষিতা। শুধু তাই নয়, সেকালের সিনেমায় নারী-পুরুষের বন্ধুত্বের এমন সহজ অবকাশ তৈরি করা গেছিল তার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতের বিচারও খুব একটা হয় নি। সত্যজিতের ‘সীমাবদ্ধ’ ছবিতে টুটুল আর তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী কর্পোরেট জামাইবাবু শ্যামলেন্দুর মিঠে খুনসুটিওলা বন্ধুত্ব ছিল। তবে তা বাঙালির সাবেকি শালি-জামাইবাবু সম্পর্কের চৌকাঠ কতটা পার হতে পেরেছে বলা কঠিন।
তাছাড়া উত্তমের বাণিজ্যিক ছবি হোক বা সত্যজিতের অত্যর (auteur) সিনেমা, এই খালি চোখে বন্ধু বলে মনে হওয়া সম্পর্কগুলো পারিবারিক গণ্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খায়। তার বাইরে কি নারী পুরুষের বন্ধুত্ব হত না? পাড়ার পাতানো বোন থেকে গ্রুপ থিয়েটারে মাথার ওপর ছাতা সম ভৃগুদা – এঁরা তো ছিলেনই! ১৯৭১ সালে তৈরি ‘এখনি’ ছবিটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বাংলা এবং বোধহয় ভারতীয় সিনেমার ক্ষেত্রে। মূলধারা আর সমান্তরালের মাঝখানে পরিচালক তপন সিংহের অস্তিত্বের মতোই একটি মনোরম তথাপি মনোজ্ঞ সেতু নির্মাণ করেছিল ‘এখনি’। কলেজের এক ঝাঁক বন্ধু, সত্তর দশকের অস্থিরতা নিয়ে কবেকার কলকাতা শহরের বুকে হেঁটে বেড়াচ্ছে। কলেজজীবন নিয়ে তার আগেও সিনেমা হয়েছে অঢেল; কিন্তু অপর্ণা সেন, স্বরূপ দত্ত, চিন্ময় রায়, মৃণাল মুখার্জিদের মতো তুইতোকারি করতে দেখা যায়নি আগে। কিন্তু ওই একটিই সবেধন। তার আগেও নেই, পরেও নেই। (অনেক পরে হয়তো আছে। হয়তো ২০০৯ সালে অঞ্জন দত্তর ‘ম্যাডলি বাঙালি’কে এই দলে রাখা যায়।)
একথা বলতে যাদবপুর ফিল্ম স্টাডিজ’এর মধুজা মুখোপাধ্যায় বললেন সেকালের বাংলা সিনেমা কেন! হিন্দি বাণিজ্যিক ছবিতেই বা এরকম বন্ধুত্ব কবে উদযাপিত হয়েছে? সত্যিই তো! আমি আর মধুজাদি একটা একটা করে ‘ব্রমেডি – ফ্রেন্ডশিপ’ জঁরের (genre) হিন্দি ছবি মনে করার চেষ্টা করলাম আর আবিষ্কার করতে লাগলাম যে শুরুতে বন্ধুত্ব মনে হলেও, শেষে সব ওই ত্রিকোণ–চতুষ্কোণ প্রেমে গিয়ে ঠেকেছে। ২০১৩ সালের ছবি ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’তে কাল্কি কোয়েচলিনকে খানিক বন্ধুত্বের আদলে দেখা যায়। কিন্তু ওই ছবিতে রণবীর-দীপিকাকে বাদ দিয়ে কাল্কি কতটা দাগ কেটেছে বলা শক্ত। কাজলের ‘অঞ্জলি’ নিশ্চয়ই মনে রাখার মতো কিন্তু তার পরিণতি শোচনীয়! যেকারণে হিন্দি মূলধারার ছবির নিরিখে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ রীতিমতো কাল্ট হয়ে উঠতে গিয়েও ব্যর্থ। প্রথম অর্ধে ছোট চুলওলা, ঢিলে ঢালা জিনস – টি শার্ট পরে নায়কের বন্ধু হয়ে লাফিয়ে বেড়ানো কাজলের চরিত্রটি মূলধারা কি সমান্তরাল যেকোনও ধরনের ভারতীয় সিনেমায় অভিনব। কিন্তু দ্বিতীয় অর্ধে তার শিফন শাড়ি পরে লম্বা চুল এলিয়ে নায়কের প্রেমিকা হয়ে ওঠার চেষ্টা সেই নতুনত্বে জল ঢেলে দেয়। যে মেয়ে অনায়াসে ছেলেদের বাস্কেটবল খেলায় (এবং আরও অন্য খেলায়) হারিয়ে দিতে পারে সে গার্লফ্রেন্ড মেটেরিয়াল নয়। তাই দ্বিতীয়ার্ধে কাজলকে শাহরুখের কাছে খেলায় হারতে হয়, এবং আদর্শ প্রেমিকা হয়ে ওঠে। এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। এমনকি ‘হিপ হিপ হুররে’ নামক সত্যি করেই কাল্ট টিভি সিরিয়ালের একটি এপিসোডে দেখানো হয়, স্কুলের ছেলে মেয়েরা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ নিয়ে সমালোচনায় মুখর। করণ জোহরকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছিল মোনা রূপী নীলাঞ্জনা সেনগুপ্ত আর কিরণের ভূমিকায় পিয়া রাই চৌধুরি।
‘কাল তুমি আলেয়া’ আর ‘বিভাস’ ছবি দু’টি মূলত নায়কেরই গল্প। তার সঙ্গে জুটি বাঁধার নায়িকারাও ছিলেন। (প্রথমটিতে সুপ্রিয়া দেবী আর পরেরটিতে ললিতা চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে আছে দুই বান্ধবী, যারা সম্পর্কে বা সম্বোধনে বৌদি)। এরা নায়িকাদের মতো তেমন সুন্দরী নন। অনুভা গুপ্ত বা সাবিত্রী যতই বড় অভিনেত্রী হোন দেখতে তেমন সুললিত নন। কাজল যখন শাহরুখের বন্ধু তখন সেও প্রথাগত সুন্দরী নয়। একথা মনে হতেই খটকা লাগল। এঁরা যে সুন্দর নন তা আমি কেমন করে জানলাম! আমার চোখ তো বহুযুগের নির্ধারিত সৌন্দর্য্য সংজ্ঞায় অভ্যস্থ। মোটা নারী বা টাক মাথার পুরুষকেও (এবং উল্টোটাও) যে শ্রীময় লাগতে পারে, এই সৌন্দর্য্য শিক্ষা তো আমাদের হয়নি। এ বিষয় বহুযুগ আগে মুখের ওপর উত্তর দিয়েছিল অনুরাধা। ১৯৩৭ সালে তৈরি ছবি ‘বিদ্যাপতি’তে মহাকবির সাধনসঙ্গিনী অনুরাধা। সদা আনন্দময়ী এই নারীকে যখন মিথিলারাজ শিব সিংহ ‘সুন্দরী’ সম্বোধনে ডেকে উঠলে অনুরাধার ভূমিকায় কাননবালার সপ্রতিভ উত্তর ছিল; রাজার কোনও ভুল হয়েছে, আর যাই হোক সুন্দরী সে নয়। ৮৫ বছরেরও বেশি আগে পরিচালক দেবকী বোস অনুরাধার মধ্যে দিয়ে এক আদর্শ বন্ধুর চরিত্র নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। মহারানি লক্ষ্মীদেবী যখন পরকীয়া প্রেমে অনুতপ্ত, অনুরাধা তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, যে পাপবোধ থেকে এই অনুতাপ আসছে তা মিথ্যে। সমাজের চাপিয়ে দেওয়া এক প্রকারের ভয়। আর এই ভয় মনের নয় বরং দেহের। তাই দেহের বাইরে মনের ছুটে আসাকে মানুষ পাপ বলে ধরে নিয়েছে। স্বয়ং মহাকবি বিদ্যাপতিকেও এই নারী বলতে কুণ্ঠা করেননি যে প্রেমের মহাধর্ম মানুষকে বাদ দিয়ে হবে না। রাজা, রানি আর কবির মধ্যে যে ত্রিকোণ প্রেমের গোলকধাঁধা তৈরি হয়েছিল তাকে পরমবন্ধুর মতো অনুরাধা সহজ, স্বাভাবিক ও মানবিক করে তুলেছিলেন। এই উদার আধুনিকতা তো পশ্চিমের থেকে কুড়িয়ে পাওয়া নয়। সহজিয়া – বৈষ্ণবধারায় জারিত বাংলার গণহৃদয়ে এ জিনিস আজন্মলালিত। আমরা ইতিহাস বিস্মৃত জাতি তাই নিজেদের মনের খবর ভুলে গেছি! নইলে নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব বিষয়টি এত ভিনদেশি ঠেকার কথা নয়।
এখন কথা হল সিনেমার কী দোষ! বাস্তবেও কি নারী পুরুষে বন্ধুত্ব হয়? অতীতে হয়েছে? নারী – পুরুষ বাদ দিন, দুই নারীর মধ্যে তেমন বন্ধুত্ব দেখা যায়? পূর্ববঙ্গে একটা কথা প্রচলিত আছে, “নদীতে নদীতে দেখা হইলেও হইতে পারে বহিনে বহিনে হইব না।” তবে কি সম্পত্তির সম্পর্কই একমাত্র অবিনশ্বর আর বাকি সব ফালতু? তাই সমাজ একে শুধুই অগ্রাহ্য করে না, ভয়ও পায়। আমার পরিচিত এক পুরনো বামপন্থী দিদি বলছিলেন, বাম আন্দোলনের পরিসরে আকছার নারী পুরুষের বন্ধুত্ব হত এবং সেগুলো যে সব সময় প্রেমে পরিণতি পেত তা নয়। শুধু বন্ধু থেকে গিয়েও সম্পর্ক সুদীর্ঘ হত। তবে এসব মেলামেশা নাকি কোনওদিন কেউ সুবিধের চোখে দেখত না। সামন্ততান্ত্রিক পরিধিতে তবু ‘বোনের মতো’ বা ‘দাদার মতো’ গোছের পরিবার বহির্ভূত নিঃশর্ত বন্ধুত্ব দেখা যেত। ধনতন্ত্রে বোধহয় তার পরিসরও সঙ্কুচিত হতে থেকেছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নমিনি করতে গেলে পারিবারিক সম্পর্ক তথা রাষ্ট্রের নজরে বৈধ সম্পর্কের বাইরে করা যায় না। অর্থাৎ সম্পত্তির জন্যে পরিবার আবার পরিবারের জন্যে সম্পত্তি –সোজা হিসেব।
মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী ও জেন্ডার রাইটস অ্যাকটিভিস্ট শ্রাবস্তী মজুমদারকে এই বিষয়টি নিয়ে জিগ্যেস করায় একটু ভেবে উনি আমায় ‘মেড ইন হেভেন’ সিরিজটির কথা বললেন। দু’জন মূল চরিত্র তারা আর করনের মধ্যে খুব সুন্দর বন্ধুত্ব দেখানো হয়েছে। আমি শুনে বললাম তা হবে না কেন? তারা একজন বিষমকামী নারী আর করন গে। যৌন টেনশনের বালাই নেই, তাই ফুরফুরে বন্ধুত্ব। আমার কথায় সায় দিয়ে শ্রাবস্তীর শঙ্কা হল। তাহলে কি দুজন বিষমকামী নারী–পুরুষের সম্পর্ক যৌনতা ব্যতিরেকে অন্যকিছু হলে সেটা পাবলিক খায় না? তাই সিনেমায় এ জিনিস ব্রাত্য? ছেলেটি মেয়েটি হেসে কথা বলে – অর্থাৎ সেক্সুয়াল টেনশন অবধারিত। না থাকলে মন ভরে না। এটা চরম রিডাকশনিস্ট পন্থা। বিষমকাম একমাত্র বৈধ, কারণ ইহাই একমাত্র স্বাভাবিক (হেটেরোনর্মাটিভিটি) – ঘুরপথে এই মানসিকতাই মান্যতা পায়। তাছাড়া দু’টি মানুষ তারা যেকোনও লিঙ্গ পরিচিতিরই হোক না কেন তাদের বন্ধুত্বের গভীরে যৌন আকর্ষণ নিহিত থাকতেই পারে। তাকে সবসময় সেক্সুয়াল অ্যাক্টের নিরিখে দেখতে হবে কেন? এভাবে দেখার প্রবণতা একান্ত পুরুষতান্ত্রিক অভ্যাস।
আর সমাজ থেকে সিনেমা সবেরই তো ওই একটাই জানলা। সেই জানলা পুরুষের তৈরি। অপর লিঙ্গ তাতে ইটের যোগান দিয়েছে মাত্র, খিড়কি খোলার অধিকার পায়নি। পুরুষকে বাদ দিয়ে আমি, সে ও সখীরা সবাই নিজের নিজের জানলা খুললে অন্য সবকিছুর মতো বন্ধুত্বও হয়তো মুক্তি পাবে।