চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রাভিযানের সাফল্য কামনায় সারা দেশ যখন প্রার্থনায়, এমন এক সময় পাহাড়-জঙ্গলে আছড়ে পড়ে ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল। চন্দ্রসাফল্যে কি কোথাও রয়ে গেল মর্ত্যকলঙ্কের মৃত্যুদাগ? মালদহের চৌদুয়ার, কোকলামারি, নাগরাই, সাত্তারির মতো গ্রামগুলির ঘরে ঘরে আজ অকাল অমাবস্যা।
গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন
করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও মুছে যায়নি। আবারও এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অন্তত ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল। এঁরা সকলেই মালদহের বাসিন্দা। বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ২৭ জন। প্রায় ৪০ দিন আগে মালদহের এই শ্রমিকরা মিজোরামের জঙ্গলময় পাহাড়ি এলাকায় রেলসেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ কাজ চলাকালীন হঠাৎই সেতুটি ভেঙে পড়ে।
মিজোরামের রাজধানী আইজলকে রেলপথে যুক্ত করার লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাইরাঙের এই সেতু। এই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা সব্যসাচী দে জানান, বৈরাবি ও সাইরাং রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে অবস্থিত কুরুং নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেতুর পিয়ারের উচ্চতা ১০৪ মিটার ছিল। সেখান থেকেই পাথর বিছানো নদীর উপর সেতুর ইস্পাতের কাঠামো-সহ আছড়ে পড়েন মৃতেরা।
২ জুন বালেশ্বরে করমণ্ডল দুর্ঘটনার প্রায় ৩০০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। মৃতদের অধিকাংশই ছিলেন এ রাজ্যের বাসিন্দা ও পরিযায়ী শ্রমিক। তার ২ মাস ২১ দিনের মাথায় ফের আর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এত জন শ্রমিকের মৃত্যু হল। করমণ্ডল দুর্ঘটনা বাদ দিলে সাম্প্রতিক অতীতে এ রাজ্যে একটি দুর্ঘটনায় এত জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের মহম্মদ রিপনকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে জনৈক শ্রমিক সালাম জানান, মালদহের অন্তত ৩৪ জন শ্রমিক এই কাজে যুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে দুর্ঘটনার সময় ২৪/২৫ জন ভেঙে পড়া অংশে কাজ করছিলেন। হঠাৎই তার চোখের সামনে সেতুর একাংশ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে।
মৃতদের মধ্যে ১৬ জনই হলেন রতুয়া ২ ব্লকের পুখুরিয়া থানার বাসিন্দা। তার মধ্যে শুধুমাত্র চৌদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ১১ জন। ইংরেজবাজার থানার সাত্তারি গ্রামের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে সাইরাং এলাকায় নির্মীয়মাণ এই রেলওয়ে প্রকল্প নিয়ে গর্বের শেষ ছিল না কেন্দ্রীয় সরকার ও রেলমন্ত্রকের। প্রায় দুর্ভেদ্য জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকার মধ্যে দিয়ে ১০৪ মিটার উঁচু এই সেতু নিয়ে উচ্ছসিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বলা হয়েছিল, কুতুব মিনারের চেয়ে উঁচু এই সেতুটি দুর্গম উত্তরপূর্বে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাবে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রাভিযানের সাফল্য কামনায় সারা দেশ যখন প্রার্থনায়, এমন এক সময় পাহাড়-জঙ্গলে আছড়ে পড়ে ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল। চন্দ্রসাফল্যে কি কোথাও রয়ে গেল মর্ত্যকলঙ্কের মৃত্যুদাগ? মালদহের চৌদুয়ার, কোকলামারি, নাগরাই, সাত্তারির মতো গ্রামগুলির ঘরে ঘরে আজ অকাল অমাবস্যা।
ভারতের কিছু রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উৎপাদনের ও যোগানের কারখানা। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের আগের যুগে আফ্রিকা থেকে দাস আমদানি করত। ইউরোপে ঢোকানোর আগে সেই দাসদের জর্ডন নদীর জল ছিটিয়ে পবিত্র করা হত।
সমস্যা হচ্ছে ৩৪ বছরের সরকার বা ১২ বছরের সরকার কেউই এই বিষয়টি নিয়ে কোনো সমাধানের চেষ্টা করেনি। বা করতে চায়নি। বা পরিযায়ী শ্রমিকের জোগানদার হয়ে থাকতে চায়। সংঘটিত ভাবে (আধুনিক) দাস যোগানের ঠিকা নিয়ে থাকতে চায়।
পরিযায়ীদের জেলাভিত্তিক তালিকা তৈরি করার নূন্যতম পদক্ষেপ ৩৪/১২ বছরে নেওয়া হয়নি।
মূল ধারার বাইরে যারা আছেন তাদের অধিকাংশের চিন্তা পরে আছে ১৯৩০ এর চীনে। শহরের কেন্দ্রে বসে শহর ঘেরার স্বপ্ন দেখেন।
ফল সরকারগুলো ২/৩ লাখ টাকা নিয়ে পরিযায়ী পরিবারের সামনে উপস্থিত হয়।
১৯৯০ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়বাড়ন্ত কেন হোল ও তার জন্য কি অর্থনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া যায় তার কথা ভাবা ও নামা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা নেই।