ধর্ষণের চেষ্টা-সহ যৌন হেনস্থার একাধিক অভিযোগে জেরবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এই সমস্ত ঘটনা যাতে না ঘটে সেই জন্যেই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ‘নির্যাতন বিরোধী ঘোষণাপত্র’ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গ্রাউন্ডজিরোর পক্ষে অনিমেষ দত্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে এই যৌন নির্যাতনের বাস্তব চিত্রটির খোঁজ করার চেষ্টা করলেন।
সাম্প্রতিক সময়ের একটি ঘটনার কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন
অভিযোগ, গত ১৫ জুন জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন বিভাগের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তাঁরই সহপাঠী মণির মল্লিক। বন্ধুদের সঙ্গে যাদবপুরের বিক্রমগড় অঞ্চলে, বিভাগেরই এক জুনিয়রের ভাড়া ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। অভিযোগকারী ছাত্রী গ্রাউন্ডজিরোকে বলেন, “আমরা মাঝেমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে যেতাম আড্ডা মারতে। আমি সেদিন একটা কাজে গিয়েছিলাম, ওদের সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যায়। আমাকে বাদ দিয়ে আরও চার জন ছিল। সেদিন সেখানে একটা পার্টি ছিল, আমিও জয়েন করি। মণির আমার জুনিয়র কিন্তু আমার চেয়ে বয়সে বড়। আমাদের মধ্যে একটি জুনিয়র ছাত্রী ছিল, সে বাড়ি চলে যায়। তারপর আমরা চার জন ছিলাম। তার মধ্যে থেকে যার ফ্ল্যাট সে এবং আরেক জুনিয়র বাইরে সিগারেট কিনতে যায়। তখন মণির আমার কাছে আসে, আমার ভালো লাগছিল না৷ এরপর আমায় ও আরেকটা ঘরে নিয়ে যায়। যখন আমাকে নিয়ে যাচ্ছে আমি বারণ করেছিলাম৷ তারপর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়, তখনও আমি বারণ করেছিলাম। এরপর আমি মেঝের উপর শুয়ে পড়ার পর আমার অনুমতি ছাড়াই, আমার উপর জোর করতে থাকে এবং তারপর ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি বারণ করতে থাকি। কোনওরকমে ওকে সরিয়ে আমি ঘরের দরজা খুলে ফেলি। বাইরে এসে দেখি যারা বাইরে গিয়েছিল তারা এসে দাঁড়িয়েছে। আমার ভীষণ গা গুলিয়ে উঠেছিল তারপরে।”
কলকাতার বাসিন্দা সেই ছাত্রী আরও বলেন, “আমি ভীষণ ‘ট্রমাটাইজড’ ছিলাম বেশকয়েকদিন। আস্তে আস্তে সবাইকে জানানো শুরু করি। তারপর মণির একদিন আমায় হঠাৎ ফোন করে ‘ম্যানিপুলেট’ করা শুরু করে। আমি ওকে জানিয়েছিলাম সেদিন যেটা করেছিস আমার একেবারেই ভালো লাগেনি। এমনকি যে ছাত্রের ফ্ল্যাটে এই ঘটনাটা ঘটেছে সেও আমাকে বারণ করে আমি যাতে কোনরকম আইনি ব্যবস্থা না নিই। এমনকি আমায় মানহানি মামলার হুমকিও দেয় মণির।” এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়নকে (বা আফসু) জানিয়ে একটি জেনারেল বডির মিটিং (জিবি) ডাকেন সেই ছাত্রী। গত ৭ জুলাই ইউনিয়নের তরফ থেকেও অমনই একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে অভিযোগকারী ছাত্রী ও অভিযুক্ত ছাত্র দু’জনেই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ছাত্রীর অভিযোগ, জিবিতে মণির মল্লিক সম্পূর্ণ ঘটনাটিই অস্বীকার করেন। গত ১০ জুলাই গল্ফগ্রিন থানায় ৩৭৬ ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়। থানার পক্ষ থেকে ছাত্রীর বয়ান নথিভুক্ত করা হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। জানা যায় অভিযুক্ত মণির মল্লিক হাওড়া জেলার বাউড়িয়ার বাসিন্দা। সে এবং তার বাড়ির লোক সকলেই পলাতক। এখনও পুলিশ ধরতে পারেনি।
শুধু এই ঘটনাটিই নয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। কোনও ক্ষেত্রে সেটা একেবারেই ধর্ষণের চেষ্টা, তো আবার কোনও ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন। গত বছর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন এক গবেষক ছাত্রী। বর্তমানে সেই অধ্যাপক জেলে। গত বছরই ডিসেম্বর মাসে আরেক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ক্লাসরুমে যৌন ইঙ্গিত করার অভিযোগ করেছিলেন বেশ কিছু ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ-এর তরফে সেই অধ্যাপককে ‘কাউন্সেলিং’-এ পাঠানো হয়। ২০১৭ সালে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে লাগাতার যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে, বেশ কয়েকমাস সেই অধ্যাপকের ক্লাস বয়কট করেছিলেন সেই বিভাগের পড়ুয়ারা। অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাশাপাশি বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধেও। ২০১৬ সালে ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে ফেসবুকে একাধিক ছাত্রী অভিযোগ করে লেখালেখি করেন। বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী সময়ে কখনও সামাজিক মাধ্যমে আবার কখনও একেবারেই সামনাসামনি সাইভাইভাররা নিজেদের অভিযোগগুলি সামনে এনেছেন। ইতিহাস, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন বিভাগে কয়েক মাসের ব্যবধানে এরকম আরও ঘটনা সামনে এসেছে। ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে একাধিক হেনস্থার অভিযোগ আসে। প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনা নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জিবি অনুষ্ঠিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল কমপ্লেন্ট কমিটি (আইসিসি)-র কাছে লিখিত অভিযোগও জমা পড়ে।
সাধারণ সভা বা জেনারেল বডি মিটিং (জিবি)
দেখা যাচ্ছে অনেকগুলি ঘটনাতেই অভিযোগকারী পড়ুয়া মিটিং ডেকেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এই অধিকার প্রত্যেকটি পড়ুয়ার আছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে কোভিডের আগেও এই অভিযোগগুলি নিয়ে সাধারণ সভা বা জিবি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে শুধুমাত্র অভিযোগকারী উপস্থিত থাকতেন। অভিযোগকারী চাইলে জিবি সিদ্ধান্ত নিত ঘটনাটি আইসিসিতে যাওয়া উচিত কি না কিংবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে সরাসরি থানায় অভিযোগ জানানো হবে কি না। মূল কথা হল অভিযোগকারীর সঙ্গে বাকি পড়ুয়ারা আছেন, সুবিচার পাওয়াতে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালাবেন সকলে, এমন একটা আশ্বাস পাওয়া যেত। এক ছাত্রীর কথায়, ২০১৯ সালে তিনি প্রথম একটি জিবি দেখেছিলেন যেখানে অভিযোগকারীর মুখোমুখি হয়েছিলেন অভিযুক্তও। যুক্তি ছিল, যে অভিযুক্ত, তাকেও তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে যেকটি অভিযোগ এসেছে যৌন, শারীরিক, মানসিক কিংবা মৌখিক হেনস্থার, প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের মুখোমুখি রেখে জিবি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে কখনো অভিযুক্ত অভিযোগ স্বীকার করছে, আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বীকার করা তো দূর, অস্বীকার করে নিজের পক্ষে লোক জড়ো করেছে এবং অভিযোগকারীকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হয়েছে বলে জানা গেছে। (শুরুতে যে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানেও এটি লক্ষ্য করা গিয়েছে)। এখন প্রশ্ন হল, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে জিবি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এই মিটিং কি আদৌ এইধরণের ঘটনার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে? বেশিরভাগ পড়ুয়ার মতে এই প্রশ্নের উত্তর— না। পড়ুয়াদের মতে জিবি একটা শিক্ষার্থীকে জায়গা (স্পেস) দেয় যেখানে সে তাঁর প্রতি হওয়া যেকোনো ধরনের অন্যায়কে খোলাখুলি বলতে পারে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে সরাসরি অভিযুক্তকে প্রশ্ন করতে পারে। কিন্তু অনেক পড়ুয়ার মতেই জিবি আইনগত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না, এটা বিচারসভা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা মোকাবিলা বা তদন্ত করার জন্য ন্যায়সম্মত আনুষ্ঠানিক সংগঠন হল আইসিসি।
ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি (আইসিসি)
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কারুর সাথে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সরাসরি আইসিসিতে অভিযোগ জানানো যায়। যদিও এই আইসিসি হাল আমলের। ১৯৯৭ সালের ‘যুগান্তকারী’ বিশাখা জাজমেন্টের প্রস্তাব অনুযায়ী জেন্ডার সেন্সিটাইজেশন সেল এগেইন্সট সেক্সচুয়াল হ্যারাসমেন্ট বা জিএসক্যাশ গঠন করা হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন রোধ করবে। জিএসক্যাশ একটি স্বশাসিত গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত, যেখানে ৫০% শতাংশ মহিলা প্রতিনিধি থাকা বাধ্যতামূলক, শিক্ষার্থী, অধ্যাপকরা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি হিসেবে এখানে যুক্ত হতেন। ২০০১ সালে প্রথমে দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তার পরপরই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে জিএসক্যাশ চালু করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে ইউজিসির প্রস্তাবিত ‘সক্ষম’ গাইডলাইন, জাস্টিস ভার্মা কমিটির রিপোর্ট ও দ্য সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অফ উমেন অ্যট ওয়ার্কপ্লেস (প্রিভেনশন, প্রহিবিশন অ্যান্ড রিড্রেসাল) অ্যাক্ট ২০১৩ ইত্যাদির মাধ্যমে চালু জিএসক্যাশগুলি আইসিসিতে রুপান্তরিত করে দেওয়া হয়। যেখানে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা, বিতর্ক, রাজনৈতিক লড়াইয়ের পরে জিএসক্যাশে ছাত্র-শিক্ষক প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হতেন, তা আইসিসিতে মনোনয়নের ভিত্তিতে প্রতিনিধিদের যুক্ত করার নীতি গৃহীত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের মতে আইসিসি জিএসক্যাশের তুলনায় অনেক বেশি অগণতান্ত্রিক একটি সংগঠন। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩, আজ অবধি প্রায় সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই আইসিসি-ই বিদ্যমান। জেএনইউ, ডিইউ, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আজও আইসিসির পরিবর্তে ফের জিএসক্যাশ গঠনের দাবি উঠছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অভিযোগ আইসিসি খুবই নিষ্ক্রিয়। শিক্ষার্থী সংগঠন আইসার সদস্য আকাশ গুপ্ত বলেন, “লোকজন এখন আইসিসিতে অভিযোগ করতেই চায় না কারণ তারা জানে সেখানে ৯০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তার বিলম্ব ঘটে। আইসিসিতে অভিযোগ করে সুবিচার পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে কর্তৃপক্ষ পছন্দের লোকজনই বাছাই করেন। ছাত্রছাত্রীদের বলার জায়গাটা খুবই সীমিত। তাই আমরা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছি জিএসক্যাশ গঠন করার।” ফোরাম ফর আর্টস স্টুডেন্টস (ফ্যাস)-এর সদস্য রিম্পা দানার মতে, “যবে থেকে ক্যাম্পাসে এসেছি তবে থেকে যতগুলো জিবি হয়েছে তার বেশিরভাগই আমি দেখেছি হ্যারাসমেন্ট নিয়ে, সেটা শারীরিক, মানসিক আবার কখনও মৌখিক। আইসিসিতে বর্তমানে কোনও ছাত্রছাত্রী প্রতিনিধি নেই। যারাই আছেন সবাই অথরিটির পছন্দ করা ব্যক্তি। আইসিসি দিয়ে যেহেতু সবটা করা সম্ভব হচ্ছে না এবং ইউনিয়ন ইলেকশন এখনও হয়নি তাই জিবিতেই নানান প্রস্তাব এসেছে এই বিষয়গুলিকে তুলে ধরার জন্য।” ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর সদস্য অহনা দাসের মতে, “ইউনিয়ন ইলেকশন না হওয়া এর একটা বড়ো কারণ বলেই আমার মনে হয়। এই মুহূর্তে ইউনিয়নের এবং বিভিন্ন সেলের পদগুলি প্রায় খালি। প্রত্যেকটা ইস্যু নিয়েই আমাদের জিবি হয়। কিন্তু জিবি কোনও বিচারক্ষেত্র নয়, জিবিতে আলোচনার মাধ্যমে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আইসিসিতে ছাত্রছাত্রী প্রতিনিধি নেই। এতদিন আফসু, ফেটসু (ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থী ইউনিয়ন) কিংবা এসএফএসইউ (সায়েন্স ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থী ইউনিয়ন) এর তরফ থেকে যাওয়া হয়েছে, আমরা দাবি জানাচ্ছি ছাত্র প্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে ওই কমিটির মধ্যে। একই সাথে আমরা ইউনিয়ন ইলেকশনেরও দাবি জানাচ্ছি।”
যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে ভিত্তি করেই ‘হোক কলরব’ আন্দোলন দানা বেঁধেছিল ২০১৪ সালে। ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের পরে ‘মি টু’ আন্দোলন এবং ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরবর্তীতে বিভিন্ন হেনস্থার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী নিজেদের উপর ঘটা বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের কথা লিখেছেন, কখনও জিবি ডেকেছেন, কখনও আইসিসিতে অভিযোগ জানিয়েছেন তো আবার কখনও থানায় অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন সমাজ মাধ্যম আসার ফলে আনুষ্ঠানিক ভাবে যা তুলে ধরা যাচ্ছিল না, তা অনেক বেশি প্রকাশ্যে আসছে। আগে যৌন হেনস্থাকে সনাক্ত করতে যে সমস্যা হতো তা এখন অনেকটাই কেটেছে।
সমাজ মাধ্যম আসার আগের পরিস্থিতিটা কেমন ছিল?
ইংরেজি বিভাগের গবেষক ঝিলম রায় বলেন, “যৌন নির্যাতনের ঘটনা বরাবরই ছিল। মানসিক এবং অন্যান্য ধরণের নির্যাতনের ক্ষেত্রে সেইটাকে স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করার মতো ‘ভোকাবুলারি’ হয়তো ছিল না। এমনকি হোক কলরবের যে মূল ঘটনাটি সেটাও প্রথম সোশ্যাল মিডিয়াতেই আসে। এর আগে আইসিসি বা জিএসক্যাশে অভিযোগ জমা পড়েছে, তার তদন্ত হয়েছে সেই নিয়মেই। খুব যে প্রকাশ্যে এসেছে তা নয়। হোক কলরবের সময়ে নানা আলোচনা হয়েছিল এই ব্যাপারে। কোনটাকে যৌন নির্যাতন বলে, নানা ধরণের হেনস্থাগুলোকে কীভাবে ‘আর্টিকুলেট’ করব এই সমস্ত বিষয়গুলি সেই সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি ‘কমন সেন্সিকাল’ হয়েছে।” ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং একদা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মানস ঘোষ বলেন, “আমাদের সময়ে ঘটনাগুলো এতটা পরিমাণে সামনে আসত না। আর কেউ সুবিচার পেয়েছে বলেও আমার জানা নেই।” ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপিকা পারমিতা চক্রবর্তীর মতে, “ইন্টিমেট পার্টনার ভায়োলেন্স’ তখনও ছিল, এখনও আছে। তখন বন্ধুবান্ধব বা শিক্ষক সমাজের মধ্যে হলে একটা সাপোর্ট পাওয়া যেত, যে সাপোর্টটা এখন আমার একটু মিসিং মনে হচ্ছে। আমরা যখন কলেজে পড়েছি তখন কোনও আইনই ছিল না, সেটা ‘বিশাখা’-র ও আগে৷ আমি নব্বই দশকের শুরুতে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েছি। তখন এই ঘটনাগুলো বন্ধুবান্ধবদের বললে বা ইউনিয়নে বললে ‘অ্যাড্রেসড’ হত, কখনও হাতাহাতিও হয়েছে কিন্তু এরকম ‘আনঅ্যাড্রেসড’ চলে যেত না। আইনমাফিক কোনও প্রতিবিধান ছিল না, পুলিশের কাছেও এগুলো নিয়ে যাওয়া যায় এটা বিশ্বাসই করতাম না। বরং আমরা তখন বাসে ট্রামে হেনস্থা সাংঘাতিক ভাবে মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু সেখানেও একটু চিৎকার করে বললে বা কনডাক্টরকে বললে একভাবে ‘অ্যাড্রেসড’ হতো। যখন কোনও ‘ফরমাল মেকানিজম’ ছিল না একটা ‘ইনফরমাল সিস্টেম’ কাজ করত।”
আইনানুগ পদ্ধতিতে কি সবটা বিহিত করা আদৌ সম্ভব?
পারমিতা চক্রবর্তীর মতে “এখন আমি যেটা দেখছি ‘ফরমাল সিস্টেম’ আছে বলে ‘ইনফরমাল সিস্টেম’গুলো ‘কোলাপ্স’ করে গেছে। এখন যদি বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে হয় বা সে যদি আমার প্রেমিক হয় বা কমরেড হয় যাই হোক সেইগুলো অনেকবেশি জটিল হয়ে গেছে। ঘরোয়া বা নিয়মমাফিক নয় (ইনফরমাল মিনস অব অ্যড্রেস) এমন পদ্ধতি ছাড়াও আইনানুগ পদ্ধতির (ফরমাল মেকানিজম) দরকার আছে। কিন্তু সব কিছু ‘ফরমাল মেকানিজম’ দিয়ে হয় না। ‘ইনফরমাল মেকানিজম’গুলো কেন ব্যর্থ হল, সেই জায়গাগুলো দেখার দরকার আছে। হোক কলরবের সময়ে যৌন নির্যাতনের ঘটনাটা পরবর্তীতে হারিয়ে গেল, মেয়েটা হারিয়ে গেল, আমরা ‘ট্রেস’ করতে পারলাম না।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একদা জিএসক্যাশ ছিল যার কনভেনর ছিলেন পারমিতা চক্রবর্তী। তিনি আরও বলেন, “আমি বিভিন্ন কারণে সেখান থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। ‘ফরমাল মেকানিজম’ ভালো হলে কতটা ভালো হতে পারে আর খারাপ হলে কতটা খারাপ হতে পারে দুটোই আমি দেখেছি।”
আইনানুগ পদ্ধতিকে একরকম ভাবে চ্যালেঞ্জ জানাল মি-টু আন্দোলন। মি-টু আন্দোলন দেখাল যে ফরমাল মেকানিজমের মাথায় যারা বসে আছেন তারাও একই দোষে দুষ্ট। তাহলে কি এগুলোর প্রয়োজন নেই? পারমিতা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, “আমি মনে করি ফরমাল মেকানিজমের দরকার আছে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে একটা আন্দোলন জারি রাখা জরুরি, সমাজ সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি, “দেয়ার হ্যাজ টু বি আ সেন্স অব মেকিং পিপল ইন দ্য ফরমাল মেকানিজম অ্যাকাউন্টেবল”, আইসিসি আইসোলেটেড একটা বডি। সেখানে আমরা লড়াকু আগুনখেকো ফেমিনিস্টদের বসিয়ে দিলাম কিন্তু সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটা (সিস্টেম) পিতৃতান্ত্রিক, সেখানে তারা আর কী করবেন!”
ভারতীয় দণ্ডবিধির নীতি অনুযায়ী— যতক্ষণ না কেউ দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে নিরপরাধ। এক্ষেত্রে ঠিক কোন নিয়ম মানা হবে? এক্ষেত্রেও রয়েছে একাধিক মতামত। আবার অন্যদিকে অভিযুক্তদের ‘শাস্তি’ প্রদানের ক্ষেত্রেও কোনো বিভাজন চোখে পড়ছে? মানস ঘোষের মতে, “আমি অন্য একটা জিনিস দেখতে পাই। যারা কোনও না কোনও ভাবে একটা দুর্বল শ্রেণি অবস্থান কিংবা জাতি অবস্থান থেকে উঠে আসে তাদের অপরাধ যত দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হয়, আর যারা প্রকৃত অর্থে ‘প্রিভিলেজড’ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিবিধান হতে অতটা আমি দেখিনি।” তিনি আরও বলেন, “প্রতিষ্ঠানের চরিত্র পুরোদস্তুর পুরুষতান্ত্রিক, সেটা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রিমিয়ার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সত্যি। আমাদের সময়ে রাজনৈতিক ফোরামগুলি যারা করতেন, ছাত্র নেতারা তখন এই বিষয়ে সেন্সিটিভ ছিলেন বলে মনে হয়। অভিযুক্তকে সেন্সর করা হত।”
সংবেদীকরণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব লিঙ্গ-সংবেদীকরণ (জেন্ডার সেন্সিটাইজেশন) বিষয়ে সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি আয়োজন করার। কিন্তু পড়ুয়া, অধ্যাপক সকলেই জানাচ্ছেন বেশ কয়েকবছর এই ধরণের কাজ বন্ধ রয়েছে। কখনও হয়ত কোনও সংগঠন বা ফোরাম থেকে কিছু উদ্যোগ নিতে দেখা গেলেও ক্যাম্পাসের মধ্যে এই বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনার পরিসরটাই যেন কমে গেছে। সেটা কোভিডের আগে হোক বা পরে, চিত্রটা পাল্টায়নি। ঝিলম রায় বলেন, “আইসিসি যবে থেকে হয়েছে, তবে থেকে তাঁরা এটা তাঁদের দায় মনে করেননি। আমার মনে হয় আইসিসি কী, জিএসক্যাশ কী, তাদের ভূমিকা কী কী, কিসে কিসে তাকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে পারি সেই ধারণাগুলিও অনেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্পষ্ট নেই। আজকে কোনও স্টুডেন্ট-এর সঙ্গে কিছু হলে সে কোথায় যাবে সেটাই তার কাছে স্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দায় বর্তায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সেই সচেতনতা তৈরি করার, কিন্তু সেই দায়ও তারা খুব সহজেই ঝেড়ে ফেলেছে এবং শিক্ষার্থীদের দিক থেকেও সেই চাপটা নেই যা দিয়ে কর্তৃপক্ষকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য করা যায়।” মানস ঘোষের মতে, “আমাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্সিটাইজেশন’-এর প্রক্রিয়া হিসেবে ওয়ার্কশপ, সেমিনার খুব একটা হতো না। যেটুকু ছিল তাতে রাজনৈতিক রং থাকত সবসময়। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত। তারাই ঠিক করে দিত কী ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ হবে, কীভাবে কাজটা এগোবে। তবে ‘যাদবপুর উইমেন স্টাডিজ’- এর একটা বড় ভূমিকা থেকেছিল সেসময়ে, ‘অ্যাকাডেমিক স্ফিয়ারে’ অন্তত বিষয়টাকে নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করার। বর্তমানে আমার মনে হয় এইটা একটা ‘ইস্যু’তে পরিণত হয়েছে। যেখানে একটা লাগাতার সেন্সিটাইজেশনের প্রক্রিয়া নেওয়া দরকার, শুধুমাত্র ‘সারভাইভার’ ও ‘পার্পিটেটর আইডেন্টিফাই’ করলেই হবে না, এই ধরনের জিনিস কেন ঘটল, কীভাবে ঘটল, যাতে আর না ঘটে; তার জন্য যে যে ব্যবস্থা গুলো নিতে হয়—কাউন্সেলিং, সেমিনার, সেন্সিটাইজেশন প্রোগ্রাম করা দরকার। কিন্তু সেগুলো আমরা এখন আর করি না। শুধুমাত্র ‘ইস্যু’ হয়ে যাওয়ার ফলে গুরুত্ব দিয়ে আর আলাপ আলোচনাগুলো হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও এখানে ধরি মাছ না ছুঁই পানি।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যেত পড়ুয়ারা বসে আড্ডা মারছেন, গল্প করছেন, তর্কবিতর্ক করছেন। কোভিডের পরে কি এই ‘স্বাভাবিক’ ক্যাম্পাস আর দেখা যাচ্ছে? একসাথে বসে থাকলেও এখন নিজের নিজের মোবাইল ফোনে ব্যস্ততা চোখে পড়ছে। কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হচ্ছে কি? পারমিতা চক্রবর্তীর মতে, “ক্যাম্পাসটা আর ‘রেলিভেন্ট’ থাকছে না। ক্যাম্পাস বলতে এখন হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় জেইউ গ্রুপ’। আমাদের কমিউনিটির সেন্সটা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা ডিটারমিন্ড’ হয়ে যাচ্ছে। কোভিডের সময়ে একটা ‘আইসোলেশন’ হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই ‘আইসোলেশনটা’ অনেকে বেছে নিচ্ছে। আর এই ‘সেন্সিটাইজেশন’ হোক বা এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হোক, এটা কারুর একার দায়িত্ব নয়, আমাদের যৌথ দায়িত্ব বলেই মনে হয়।” লিঙ্গ রাজনীতির কি একরকম অনুপস্থিতি দেখা যাচ্ছে? “না, বরং বেড়েছে। সচেতন শব্দ ব্যবহার, ‘পলিটিকাল কারেক্টনেস’, ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’ এসব খুবই বেড়েছে। ব্যক্তিগত স্তরে সচেতনতা হয়তো বেড়েছে কিন্তু যৌথ প্রতিরোধ গড়ে উঠছে না। মি-টু’র পর এক ধরণের ‘ফ্র্যাকচার’ দেখি জেন্ডার আন্দোলনে ক্যাম্পাসের মধ্যে। আমি সামাজিক বয়কটে বিশ্বাসী নই। অনেকেই সামাজিক বয়কট করেন। আবার অনেকে কিছুই করেন না। তাদের আবার আমি সন্দেহর চোখেই দেখি যে এত বড় একটা অভিযোগ এল, কিছুই করলেন না কেন? তো আমার মনে হয় ‘ফ্র্যাকচার’ বাড়ছে, ‘সলিডারিটি’ কমছে। ‘ইন্ডিভিজুয়াল পলিটিক্স’ হয়ে গেছে, একজন হেনস্থা করেছে, তার সাথে কথা বন্ধ। কিন্তু হেনস্থাটা কেন হচ্ছে, সেটার যদি আমি উত্তর না দিতে পারি তাহলে একজন কলিগের সাথে কথা বন্ধ করে কী করব? হেনস্থা শুধুমাত্র হেনস্থাকারীর সমস্যা নয়, এটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা”, মত পারমিতা চক্রবর্তীর।
অন্যদিকে যাদবপুরের মতো একটি ‘এগিয়ে থাকা’ প্রতিষ্ঠানে একের পর এক হেনস্থার ঘটনা ঘটে চলা নিয়ে উদ্বীগ্ন শিক্ষার্থীরাও। রিম্পা বলেন, “সমাজের থেকে উচ্চস্তরে আছে যাদবপুর, এমনটা ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। কোভিডও একটা কারণ বলে আমার মনে হয়। দু’বছর ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল, তার ফলে ক্যাম্পাসের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো অনেক বদলে গেছে৷ ছাত্রছাত্রীদেরও বৈশিষ্ট্য বদলেছে। আগে ক্যাম্পাসকে পড়ুয়ারা যেভাবে ‘ওন’ করত, এখন সেভাবে ‘ওন’ করছে না। হেনস্থার ঘটনা কোভিডের আগেও ঘটত। কিন্তু আগে ক্যাম্পাসের মধ্যে যে স্পেসটা ছিল, পড়ুয়াদের মধ্যে যে কমিউনিকেশন চলত তাতেই এই ‘ভুল’গুলোকে অনেক বেশি চিহ্নিত করা সহজ হত। কিন্তু এখন সেই কমিউনিকেশনে একটা ভালো রকম শূন্যতা তৈরি হয়েছে। অনেক পড়ুয়াই শুধুমাত্র ক্লাস করতে ক্যাম্পাসে আসে, তারপর ক্লাস করেই বেরিয়ে যায়। তার ফলে সেই চর্চার পরিসরটাই তৈরি হচ্ছে না যেখানে আমরা আমাদের সামাজিক ‘ব্যাকলগগুলো’ আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে উঠব। এতগুলো হেনস্থার ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও অনেক ছাত্রছাত্রীই আছে যারা হয়ত ঘটনাগুলি শুনেছে কিন্তু কোনও জিবিতেই আসেনি।” আকাশের মতে, “অন্যান্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনাই হয় না। অনেক ঘটনাই খবরে আসে না। অনেকক্ষেত্রেই ভিক্টিমরা সাহস করে নিজের অভিযোগ জানাতে পারেন না, সেই স্পেসটাই থাকে না। যাদবপুরে তাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘সারভাইভাররা’ এগিয়ে এসে অভিযুক্তদের চোখে আঙুল দিয়ে বলতে পারে, অভিযোগ জানাতে পারে, জিবি ডাকতে পারে।” অহনা বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকেই একটা প্রচণ্ড পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বড়ো হয়ে উঠি, সেখান থেকেই এই প্রবণতাগুলো আমাদের মধ্যে বিকাশলাভ করে। সমাজে দিনের পর দিন এই ধরনের নিপীড়ন বেড়ে চলেছে যার ছাপ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ছে। আমরা বিভিন্ন ভাবে ‘জেন্ডার সেন্সিটাইজেশনের’ প্রক্রিয়া গুলি নেওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শেষ কয়েকমাসের মধ্যে যতগুলি হেনস্থার ঘটনা সামনে এসেছে, বেশিরভাগই বন্ধুমহলে ঘটেছে, কিছু প্রেমের সম্পর্কে। বন্ধুদের মধ্যে এমন ঘটনা বেড়ে যাওয়া থেকে নানান প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। তাহলে সমাজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও তরুণ প্রজন্মের বন্ধুত্বের ধারণাগুলো বদলাচ্ছে? বন্ধুত্বের মধ্যেও নিজেদের সীমা কতটা, তা নিয়ে বোধের অভাব দেখা যাচ্ছে? এখানেও কি কমিউনিকেশন গ্যাপ হচ্ছে? প্রেমের সম্পর্কেও ‘না’ মানে যে ‘না-ই’, সেটা বোঝার অসুবিধা? এই সমস্ত ঘটনাগুলি যা অত্যন্ত সূক্ষ্মতায় আলোচনার বিষয় সেগুলি এককথায় বলে দেওয়া বেশ মুশকিলই বটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি ফ্যাকাল্টির পক্ষ থেকেই ‘সংস্কৃতি’ অনুষ্ঠিত হয় প্রত্যেকবছর। সেখানেও মদ্যপ অবস্থায় হেনস্থার ঘটনা একাধিক। অনুষ্ঠানের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকেও অনেকেই আসেন। বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিরা হেনস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে কিংবা বাইরের কোনো শিক্ষার্থীকে, এমন ঘটনায়ও ঘটেছে। সেইক্ষেত্রে ঘটনাগুলি ‘বিচার’ করবে কে? উঠছে প্রশ্ন।
অ্যান্টি হ্যারাসমেন্ট ডিক্লারেশন বা নির্যাতন বিরোধী ঘোষণাপত্র
সম্প্রতি সংবেদীকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে নানান মতামত উঠে আসছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে। যার মধ্যে রয়েছে একটি অ্যাপ বানানোর মতামত যেখানে ‘ভিক্টিম’ নির্দ্বিধায় নিজের অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং তার পরিচয় গোপন ও সুরক্ষিত থাকবে। আবার আরেকটি মতামত রয়েছে যে ‘অ্যান্টি র্যাগিং ফর্মে’র পাশাপাশি ‘অ্যান্টি হ্যারাসমেন্ট’ ফর্ম তৈরি করা যেখানে নতুন ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হওয়ার সময় ফর্মে স্বাক্ষর করে তারপর ভর্তি হবে। অর্থাৎ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হবেন তাঁদের ভর্তির সময় লিখিয়ে নেওয়া যে তাঁরা কোনও ধরনের হেনস্থার সঙ্গে জড়িত থাকবেন না। যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘোষণা শুধুমাত্র যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে নয়, জাতিবিদ্বেষ-সহ সবরকম হেনস্থার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষকে এবং তাতে সাড়া দিয়েছেন কর্তৃপক্ষও। এই ঘোষণাপত্রে কী কী আইনি ধারা যুক্ত করা হবে তা নিয়ে এখনও আলাপ আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। নির্যাতন বিরোধী ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলেই কেউ আর হেনস্থা করবে না তা ধরে নেওয়া বাতুলতা। সমাজ মাধ্যমে অভিযোগ আসার পরেও অভিযুক্তরা কি নিজেদের ‘ভুল’/’অপরাধ’ গুলি নিয়ে ভাবছেন? নিজেদের বদলানোর চেষ্টা করছেন? কে-ই বা দেখবে সেগুলো? বিচারই বা করবে কারা? উত্তর এখনও নেই, কিন্তু প্রশ্নগুলো থাক। উত্তরগুলো খুঁজতে থাকব আমরা। ‘অ্যান্টি হ্যারাসমেন্ট ফর্মে’-এর প্রস্তাব একটা ক্ষীণ আশার আলোর মতোই, মনে করছেন পড়ুয়ারা। সেটুকু হলেই বা মন্দ কী!
In India, the media is generally prohibited from publishing the identity of the rape case accused, unless permitted by a court order. This restriction is in place to protect the privacy and reputation of the accused until they are proven guilty.
The relevant law in this regard is the Section 228A of the Indian Penal Code (IPC), which states that disclosing the identity of the rape case accused is an offense. As per this section, whoever publishes the identity of the accused in a manner that leads to the disclosure of their identity is punishable with imprisonment for a term that may extend to two years and/or a fine.
However, it is important to note that there have been instances where the court has allowed the media to identify the accused, but this is typically done in cases where the public interest outweighs the privacy concerns. The decision to disclose the accused’s identity is usually made on a case-by-case basis, and it is ultimately up to the court to decide whether or not the media can publish the details.
It is also worth mentioning that different courts may have different interpretations of the law, and the decision regarding the publication of the accused’s identity is often subject to the jurisdiction of the court handling the case.
Therefore, it is advisable for the media to exercise caution and seek legal advice before publishing the identity of the accused in a rape case, as they may be held liable for violating the law if there is no court order permitting the disclosure.