গ্রাউন্ডজিরোর প্রতিবেদন
১০০ দিনের কাজ করার পরও মজুরি মেলেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেব অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত এই বকেয়া মজুরির পরিমাণ ১,৫৫৪.৯০ কোটি টাকা। আইন অনুযায়ী কাজ শেষের ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি দিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নির্দোষ মজুরদের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। এই মর্মে গত ২২ জুন ‘খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযান—পশ্চিমবঙ্গ’ ও ‘পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি’ কলকাতায় কেন্দ্রীয় শ্রম কমিশনার হেমাঙ্গ ডিমঙ্গলের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবিদাওয়া পেশ করে।
অধিকার অভিযান এক প্রেস বিবৃতি জানায়, মজুরি প্রদান আইন, ১৯৩৬ অনুযায়ী সমস্ত নারেগা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ক্ষতিপূরণ-সহ অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে এবং আইন অনুযায়ী মজুরি না দেওয়ার জন্য ‘কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের দাবি, ২০২২ সালের ৯ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকার এক চিঠিতে জানিয়েছিল, ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত বকেয়া মজুরির পরিমাণ ১৫৫৪.৯০ কোটি টাকা। অধিকার অভিযানের দাবি, দৈনিক ০.০৫% হারে ক্ষতিপূ্রণ-সহ এখনই মজুরদের মিটিয়ে দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ৬ জুন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতির করা এক মামলার রায়ে প্রকৃত মজুরদের চিহ্নিত করে তাঁদের মজুরি অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। খাদ্য ও কাজের অভিযান—পশ্চিমবঙ্গ’র আরও অভিযোগ, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে মে ২০২৩ পর্যন্ত শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির পরিমাণ ২,৭৬৫ কোটি টাকা। গত ১৮ মাস ধরে এই টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। পাশাপাশি, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে নারেগা খাতে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এই বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। শুধু তাই নয়, ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের সমস্ত আইনি অধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যেমন, মজুরি দিতে দেরি করা, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুর না দেওয়া এবং অন্যান্য আইনি সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা।
বিগত ২০২১-২২ আর্থিক বছরে ভারতে নারেগা মজুরের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৮১ লক্ষ। পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লক্ষ ৭৭ হাজার, যা দেশের মোট নারেগা মজুরের ১৭ শতাংশ। কাজের অধিকার অভিযানের অভিযোগ, মজুরি বন্ধ করে নির্দোষ মজুরদের সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তাঁরা অনাহার, অর্ধাহারের ফলে অপুষ্টিজনিত রোগের শিকার হয়ে পড়ছেন।