বনাধিকার আইনের পূর্ণ অধিকারের দাবিতে পুরুলিয়ায় আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চের কনভেনশন


  • June 2, 2023
  • (0 Comments)
  • 718 Views

গ্রাউন্ডজিরোর প্রতিবেদন | ০২ জুন, ২০২৩

 

২০১৮ সাল থেকে অযোধ্যার পাহাড়ে ‘প্রাণ-প্রকৃতি-সংস্কৃতির অধিকার রক্ষা’র আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, গত ৫ বছর ব্যাপী এই আন্দোলনের জেরে ঠুড়গা ও বান্দু প্রোজেক্টের ‘অপ-উন্নয়ন’কে প্রতিহত করা গেছে। ২৭টি গ্রামকে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা গেছে। ‘আবুওয়া দিশম আবুওয়া রাজ’ স্লোগানের বাস্তবিক প্রয়োগের অংশত সফল কর্মসূচি নেওয়া গেছে বামনি ঝর্ণায়। ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন রির্সোটের দখল করা কিছু পরিমাণ বনভূমিকে উদ্ধার করা গেছে। এ সবই করা গেছে বনাধিকার স্বীকার আইন ২০০৬ কে অবলম্বন করে।

 

‘প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চ’র সভাপতি নকুল বাস্কে জানান, বনের উপর অধিকার বন সংলগ্ন গ্রামের মানুষের জন্মগত অধিকার। বহু সংগ্রামের পর এই আইনটি পাওয়া গেছে। তাকে এটুকু মাত্র আমরা ব্যবহার করতে পারছি। আইনের প্রকৃত ব্যবহার হলে, জল জঙ্গল জমির নায্য অধিকার ও প্রকৃতিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, বীরভূমের দেওচা পাঁচামির প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনি হলে প্রায় ৪০টি আদিবাসী গ্রাম উচ্ছেদ হবে। এর বিরুদ্ধে নানা সংগঠন লড়াই করছে, বনাধিকার স্বীকার আইন ২০০৬-এর মোতাবেক টোলা বা গ্রাম স্তরে তৈরি হওয়া গ্রামসভাগুলিই পেরেছে এখনও অবধি গ্রামগুলিকে উচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা করতে। তিনি আরও বলেন, লুগুবুরু ঘণ্টাবাড়ি ও পরেশনাথ পাহাড়ে আন্দোলনরত মঞ্চগুলির কাছেও বনাধিকার স্বীকার আইন ও পেসা আইন গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

 

মঞ্চের মতে, আলিপুরদুয়ার কোচবিহার জলপাইগুড়ি দার্জিলিং জেলায় বনগ্রামবাসীদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে ব্যাক্তি ও সমষ্টিগত বনাধিকারের সরকারি স্বীকৃতি পেলেও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গে যথোচিত আন্দোলন না থাকায় সরকার ও আমলারা ন্যায্য বনাধিকারকে হরণ করতে পারছে। তাদের আরও অভিযোগ, হাতির জন্য নষ্ট হওয়া ফসল-ঘর, এবং মৃত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ নিয়ে রাজনৈতিক পার্টিগুলি নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রতি বছর জঙ্গলমহলে বহু মানুষের প্রাণ হারাচ্ছেন, হাজার হাজার বিঘের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে অথচ সেন্দরা-র মতন উৎসবকে প্রকৃতি বিরোধী আখ্যা দিয়ে আদিবাসীদের জঙ্গলে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা চলছে।

 

মঞ্চের আহ্বায়ক সুপেন হেমব্রম বলেন, এক দিকে আমাদের বন পাহাড় নদীকে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে চাইছে ক্ষমতাসীনেরা, অন্যদিকে আমাদের সংস্কৃতিকে আক্রমণ করে দুর্বল করে দিতে চাইছে। যাতে কোনও আন্দোলন না হতে পারে। অথবা লাল ফিতের ফাঁসে জড়িয়ে রাখতে চাইছে। এই সমস্তের বিরুদ্ধে লড়াই হল বনাধিকারের জন্য লড়াই। সেখানে ওই আইনটি এখনও আমাদের অস্ত্র। যদিও ভারতীয় বন আইন, বন সংরক্ষণ আইন, ইআইএ প্রভৃতির অনুচিত বদল ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ক্রমাগত বনাধিকার লঘু করতে তৎপর। ফলে আমাদের কাছে সম্মিলিত জোটবদ্ধ, দৃঢ়, দীর্ঘমেয়াদী গণতান্ত্রিক লড়াই ছাড়া অধিকার রক্ষার অন্য কোনও পথ নেই।

 

তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী অঞ্চলগুলিকে পঞ্চম শিডিউলে অন্তর্ভুক্তি ও পেসা আইন বলবত করতে নতুন লড়াই গড়ে তুলতে হবে। এই লড়াই কেবলমাত্র বন সংলগ্ন গ্রামের মানুষের নয়, বরং সবার। এটি গণতন্ত্রের জন্য, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য জরুরি।

 

এই লক্ষ্যে আগামী ৩ জুন পুরুলিয়ার হোটেল বৈশালীতে মঞ্চ এক কনভেনশনের আয়োজন করেছে।

 

Share this
Leave a Comment