এ রাজ্যে সামনেই পঞ্চায়েত ভোট, ২০২৪ সালে দেশে লোকসভা ভোট। ২০২৩ সালে এ রাজ্যে বিজেপি-আরএসএসের হাজারেরও বেশি রামনবমী যাত্রার আয়োজন যে হিন্দু ভোটকে সংহত করার লক্ষ্যে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তৃণমূল কংগ্রেস যেন সেই রাজনীতির অঙ্ককেই শিরোধার্য করে ঘৃণার যাত্রাপথের পথিক হয়ে উঠেছে। এই দুই শাসক দলের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফলেই কি এ রাজ্যে রামনবমী রক্তাক্ত হয়ে উঠছে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় এসেছে। লিখছেন অনিমেষ দত্ত।
৩০ মার্চ, বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা। কাজিপাড়া থেকে জিটি রোড ধরে রামনবমীর শোভাযাত্রা এগিয়ে চলেছে। এই শোভাযাত্রা চলাকালীনই শিবপুর থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ঘটল সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বেশকিছু ভিডিওতে দেখা গেল সেই দৃশ্য। পরেরদিন আমরা তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে কথা বলি এলাকার মানুষের সঙ্গে তাদের দাবি, ৩০ তারিখ সন্ধেবেলা এই শোভাযাত্রা চলাকালীনই হঠাৎই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বেশকিছু গাড়িতে। তারস্বরে চিৎকার শুরু হয় এবং অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাকা। জিটি রোড ধরে আরেকটু এগিয়ে হাওড়া এসি মার্কেট, সন্ধ্যাবাজার, মল্লিক ফটক অঞ্চলে ভেঙে দেওয়া হয় কয়েকটি ছোট দোকান। পুরো ঘটনাটি ঘটেছে পুলিশের নাকের ডগায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পরবর্তীতে নামানো হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। সঙ্গে ছিল রায়ট কন্ট্রোল পুলিশ। পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ৩১ মার্চ সকাল থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে ঘিরে রাখা হয় গোটা এলাকা। পরে ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়। গত দু’বছর এই শিবপুরেই রামনবমীকে কেন্দ্র করে ছোট বড়ো সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। এ বছরও এই চিত্রের কোনও বদল ঘটল না। পশ্চিমবঙ্গের আরেক জেলা উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমার অন্তর্গত ডালখোলায় রামনবমীকে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘটেছে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা। সেখানে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসনের মতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সেই ব্যক্তির। বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নী।
শুধু হাওড়াই নয়, রামনবমী শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সারা দেশ সাক্ষী থাকল একাধিক সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিহার, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, গুজরাত। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, সংবাদসংস্থা সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত দু’জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু সংখ্যক মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ, মালাড় এবং জলগাঁওতে একাধিক হিংসার ঘটনার কথা জানা গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় বারো জন সাধারণ মানুষ এবং দশ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। জানা গেছে ৫১ বছর বয়সি শেখ মইনুদ্দিন নামের একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। ছত্রপতি সম্ভাজিনগরে (আগে নাম ছিল ঔরঙ্গাবাদ) দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশকিছু গাড়ি, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ ও পুলিশ কর্মী। জলগাঁওতে একটি মসজিদে নামাজ চলাকালীন একটি রামনবমী শোভাযাত্রা সেই পথে আসে, ওই শোভাযাত্রায় তারস্বরে ডিজে বক্স বাজানো হচ্ছিল। তারপরই অশান্তি শুরু হয়। অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ। একই ঘটনার সাক্ষী বিহারের সাসারাম। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, পাথর ছোড়াছুড়ি এমনকি একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলিও ছুড়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সবকটি ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশ জানিয়েছে তদন্ত চলছে, দোষীরা শাস্তি পাবে। ঔরঙ্গাবাদে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গুজরাতের বরোদায় ফতেপুরে রামনবমী জুলুস চলাকালীন ঘটেছে প্রায় একইধরনের ঘটনা। ছোড়া হয়েছে পাথর, বেশ কিছু গাড়ি ভাঙা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে কেউ আহত হয়নি। উত্তরপ্রদেশের মথুরায় জামা মসজিদের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে টুইটারে। যেখানে দেখা যাচ্ছে রামনবমীর জুলুস চলাকালীন জামা মসজিদের সামনে একটি দোকানের ছাদে উঠে তিন জন ব্যক্তি গেরুয়া ঝান্ডা ওড়াচ্ছে। সঙ্গে তারস্বরে বাজানো হচ্ছে ডিজে বক্স। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। ৩০ মার্চ ঘোসমালার সাসপেন্ডেড বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিং -এর নেতৃত্বে হায়দরাদের মঙ্গলঘাটে রামনবমী শোভাযাত্রায় দেখা গেছে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের ছবি। দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে যেখানে গত বছর হনুমান জয়ন্তী উৎসব পালনের সময় দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সেখানেই “শ্রীরাম ভগবান প্রতিমা যাত্রা” অনুষ্ঠিত করে স্থানীয় এক সংগঠন। পুলিশ জানিয়েছে, এই শোভাযাত্রার অনুমতি তারা দেয়নি, অনুমতি ছাড়াই এই শোভাযাত্রা হয়েছে। যদিও কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি।
২০২২ সালে ভারতের ১২টি রাজ্যে রামনবমীতে হিংসার ঘটনা নথিভূক্ত হয়েছিল। ১০ এপ্রিল রামনবমীর দিনে ও পরে এবং ১৬ এপ্রিল হনুমান জয়ন্তীর দিন ও পরে মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, গুজরাত, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, গোয়া, মহারাষ্ট্রে বড়ো ধরনের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটে। কম মাত্রায় হলেও সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছিল কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারে।দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়েও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। বেশকিছু ছাত্রছাত্রী আহত হন। গুজরাত, ঝাড়খণ্ড ও মধ্যপ্রদেশের ঘটনায় মুসলিম সম্প্রদায়ের ১০০ জনেরও বেশি আহত হন এবং দু’জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনাগুলিতে কে দোষী, কে নির্দোষ তা বাছবিচার বা কোনও তদন্ত কমিশন গঠন না করেই গুজরাত, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে একতরফাভাবে আক্রান্ত মুসলিম মহল্লায়, তাদেরই বাড়িঘর, দোকান-পাট বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
পিছিয়ে থাকেনি পশ্চিমবঙ্গও। ২০১৭ সালে প্রথম রামনবমী শোভাযাত্রার হিংস্ররূপ দেখা গেল পুরুলিয়া ও বর্ধমানে। ২০১৮ সাল থেকে এ রাজ্যে রামনবমী আর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির একার ধর্মীয় উৎসব রইল না। বিজেপি ও হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনগুলির সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস কোথাও একই মিছিলে, কোথাও বন্ধুত্বপূর্ণ কোথাও বৈরিতামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, কোথাও সশস্ত্র কোথাও বা নিরস্ত্রভাবে রামনবমী পালন ও শোভাযাত্রায় যোগ দিতে শুরু করে। ২০১৮ সালে আসানসোল-রানিগঞ্জ, উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া, হাওড়া, বাঁকুড়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ঘটে। সে বছর রাজ্যে এক ইমামপুত্র-সহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।
গত বছর এবং এ বছর মিলিয়ে প্রত্যেকটি ঘটনাকে যদি এক জায়গায় করা যায় তাহলে আমরা দেখতে পাব, যে কটি শোভাযাত্রা গিয়েছে মুসলিম প্রধান এলাকাগুলির মধ্যে দিয়ে সেখানেই সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকটি শোভাযাত্রাতেই তারস্বরে মাইক ও ডিজে বক্স বাজানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে উগ্র উস্কানিমূলক স্লোগান – “হিন্দুস্তান মে রেহনা হোগা, তো জ্যায় শ্রী রাম কেহনা হোগা”। তলোয়ার সহযোগে হয়েছে অস্ত্র প্রদর্শন। দেখা যাচ্ছে মুসলিম প্রধান এলাকা দিয়ে যে শোভাযাত্রা গেছে সেই শোভাযাত্রাগুলিতে বেশিরভাগই পুরুষ। মহিলা ও শিশু প্রায় নেই বললেই চলে। আবার অন্যদিকে মুসলিম প্রধান এলাকা বাদ দিয়ে অন্যত্র যেখানে যেখানে রামনবমীর শোভাযাত্রা হয়েছে সেখানে হিংসার ঘটনা প্রায় নেই। আর ঠিক সেই শোভাযাত্রাগুলিতেই দেখা গেছে মহিলা ও শিশুদের প্রাধান্য তুলনামূলক বেশি। যদিও এই শোভাযাত্রাগুলিতেও তারস্বরে ডিজে বক্স বাজানো, অস্ত্র প্রদর্শন বহাল থেকেছে। তাহলে প্রতিবছর হিংসার ঘটনাগুলি কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ঘটানো হচ্ছে? উঠছে প্রশ্ন।
হাওড়ার যে রাস্তায় হিংসার ঘটনা ঘটল সেই পথ ধরে হাঁটলে এখনও আমরা দেখতে পাব মোড়ে মোড়ে গেরুয়া পতাকা, ফেস্টুন টাঙানো রয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, অঞ্জনী পুত্র সেনা সহ ৪২টি সংগঠনের মিলিত শোভাযাত্রার স্লোগান, গান, শারীরিক ভাষা যেন রাম বন্দনার চেয়েও অনেকবেশি অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি আগ্রাসন, শক্তি প্রদর্শন। অথচ এই হাওড়াতেই রামরাজাতলায় রামনবমীকে কেন্দ্র করে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে প্রায় আড়াইশো-তিনশো বছর ধরে। ওই রামমন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে রামনবমী উৎসব, এলাকার নামও এই উৎসবের ইতিহাসের সঙ্গী। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরেই হাওড়ার নিজস্ব এই রামরাজা উৎসবকে একরকমভাবে দখল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) ও ভারতীয় জনতা পার্টি। স্থানীয়দের মতে এই প্রচেষ্টা সফল না হওয়ায় এলাকায় আরেকটি রামমন্দির তৈরি এবং শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত করা হয়েছে। যেখানে অংশ নিয়েছে আরএসএস ও বিজেপি নেতৃত্ব।
হাওড়ার শিবপুরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, “শোভাযাত্রার রুট কেন বদল করা হল?” রাজ্যবাসীও একই প্রশ্ন তুলছে। এর উত্তর দেওয়ার দায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। আরও প্রশ্ন, গত দু’বছর ওই এলাকায় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও এই ধরনের সশস্ত্র উস্কানিমূলক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হল এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটতে দেওয়া হল কী করে? প্রশাসন, পুলিশ, গোয়েন্দা দফতর কী করছিল?
পশ্চিমবঙ্গে আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও হাতে গোনা কয়েকটি জায়গাতেই রামনবমীর শোভাযাত্রা বের হতো। সেই সমস্ত শোভাযাত্রার ধরন, শারীরিক ভাষা এত উগ্র, সশস্ত্র এবং উস্কানিমূলক ছিল না। ভারতীয় জনতা পার্টির উত্থান ও একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে শাখা সংগঠন তৈরি, আর বাংলায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা বেড়ে যাওয়া দুটো কোথাও সমার্থক হয়ে যাচ্ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই পরিস্থিতি কয়েকবছর আগে থেকেই তৈরি হয়ে গেছিল।
ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো (NCRB)-র দেওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই ২৮ মার্চ লোকসভায় জানান, ২০১৬-২০২০, এই পাঁচ বছরে ৩৩৯৯টি সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় হিংসার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে, ২০১৬ সালে ৮৬৯টি, ২০১৭ সালে ৭২৩টি, ২০১৮ সালে ৫১২টি, ২০১৯ সালে ৪৩৮টি এবং, ২০২০ সালে ৮৫৭টি ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই ধরনের হিংসা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে (শুধুমাত্র ২০১৪ সালেই এই সংখ্যাটা ছিল ১১২৭, ২০১৫ সালে ৭৮৯টি। যে কোনো ধরনের হিংসা মানেই মানুষের মৃত্যু, আহত হওয়া, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি এবং আতঙ্কের সৃষ্টি হওয়া; যার ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন গরিব সাধারণ মানুষ। হাওড়াতেই হিংসার ফলাফল হিসেবে নিজের ছোট একটি দোকান খুইয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি।
শুধু হাওড়া জেলাতেই ঘুরলে দেখা যাবে শেষ কয়েক বছরে পাড়ার মোডে মোড়ে তৈরি হয়েছে হনুমান মন্দির। এই হনুমান বাংলার পরিচিত প্রভু রামের সামনে হাতজোড় করা বিনয়ী, নম্র হনুমান নন; তিনি উত্তরভারতীয়, বাহুবলী। মন্দিরগুলির দেওয়াল কোথাও কমলা, কোথাও গেরুয়া, বিটগুলি সবুজ। এমনকি বাংলায় যে রামের পুজো হয়ে আসছে, রামরাজাতলার রামমন্দিরে পূজিত রামের মুর্তির সঙ্গে অন্যত্র শোভাযাত্রায় রামের কাটআউটের কোনও মিল নেই। সাংস্কৃতিক ভাবে বদলে যাচ্ছে বাংলার পরিস্থিতি। বদলে যাওয়া এই পরিস্থিতি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা সাম্প্রদায়িক হিংসা ও অন্য ধর্মের মানুষের উপর আক্রমণের মাধ্যমে দাঙ্গা ও দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত মেরুকরণের পথে সঙ্ঘ পরিবার। এ রাজ্যে সামনেই পঞ্চায়েত ভোট, ২০২৪ সালে দেশে লোকসভা ভোট। ২০২৩ সালে এ রাজ্যে বিজেপি-আরএসএসের হাজারেরও বেশি রামনবমী যাত্রার আয়োজন যে হিন্দু ভোটকে সংহত করার লক্ষ্যে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তৃণমূল কংগ্রেস সেই রাজনীতির অঙ্ককেই শিরোধার্য করে ঘৃণার যাত্রাপথের পথিক হয়ে উঠেছে। এই দুই শাসক দলের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফলেই কি এ রাজ্যে রামনবমী রক্তাক্ত হয়ে উঠছে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় এসেছে।
তথ্যসূত্র : National Crime Records Bureau, The Wire, The Times Of India, The Quint and Routes of Wrath: Communal violence during Ram Navami and Hanuman Jayanti, April 2022, Citizens and Lawyers initiative, New Delhi, 2023.