পরিবেশ রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত আর ভরসাযোগ্য প্রতিষ্ঠান রইল কি? 


  • March 26, 2023
  • (0 Comments)
  • 1323 Views

যশোর রোডের গাছ কাটার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায় তুলে দিল একাধিক প্রশ্ন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সিলেবাসে পরিবেশবিদ্যা পড়ানো বাধ্যতামূলক। বইগুলিতে বড়ো বড়ো হরফে লেখা থাকে গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, গাছ লাগাও প্রাণ বাঁচাও, গাছ কাটা অপরাধ ইত্যাদি সব নীতিবাক্য। এবার বইগুলোকে পুনঃমুদ্রণে পাঠানোর সময় এসেছে। উন্নয়নের নামে গাছ কাটা ভালো, গাছ কেটে রাস্তা তৈরি করা ভালো; এইসমস্ত নীতিপাঠ দেওয়ার প্রক্রিয়া বোধহয় শুরু হবে পরিবেশবিদ্যার সিলেবাসে। আর প্রয়োজন নেই সভা, সেমিনারের; ৫ জুনের লোক দেখানো অনুষ্ঠানগুলোর। অন্তত সুপ্রিম কোর্টের রায় সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। লিখলেন অনিমেষ দত্ত।

 

ন্যাশানাল হাইওয়ে-১১২ (এনএইচ-১১২) অর্থাৎ যশোর রোডের বারাসাত চাঁপাডালি মোড় থেকে পেট্রাপোল বর্ডার (ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার) পর্যন্ত প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বিস্তৃত রাস্তাটিতে ৩৫৬টি গাছ কেটে সম্প্রসারণ করে ৫টি রেল ওভারব্রিজ বানানোর পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টের যে নির্দেশ ছিল, তাকেই বহাল রেখেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আর এই রায়দানের বিরুদ্ধেই আবারও নতুন করে আন্দোলনে সামিল ছাত্রছাত্রী থেকে পরিবেশকর্মীরা। এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন। ২৫ মার্চ ২০২৩ কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে  নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন তারা। এর পাশাপাশি প্রেস ক্লাব থেকে লেনিন মূর্তি পর্যন্ত একটি মিছিল এবং তারপর মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা আয়োজন করে যশোর রোড গাছবাঁচাও কমিটি ।

কলকাতা প্রেস ক্লাবে প্রেস বিবৃতি

 

কমিটির সদস্য পাভেলের মতে, “সুপ্রিমকোর্টের এই রায় খুবই অনুমানযোগ্য। কারণ গত পাঁচ বছরে পরিবেশ রক্ষার জন্য যতগুলো মামলা হয়েছে প্রায় সবক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে হাইকোর্ট কিংবা সুপ্রিমকোর্ট পরিবেশ রক্ষার পক্ষে রায় দেননি। আমরা খুব অবাক হইনি এই রায়ে। আমরা এই রায় মানতে পারছি না।” পাভেলের দাবী, “আদালত এবং সরকার কর্পোরেট পুঁজির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।  আর কোনো রাখঢাক নেই। সরাসরি এই প্রতিষ্ঠানগুলি কর্পোরেটদের পক্ষে কাজ করে চলেছে।” মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের রাজ্য সম্পাদক রঞ্জিত সূরের মতে, “আদালতের গ্রীন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছেন, এটাই মজার বিষয়। সরকারের যে পলিসি এবং আদালত দুটো খুব মিলে যাচ্ছে। এটাই আশঙ্কার জায়গা, যে আদালত স্বাধীন ভাবে বিচার করেন, কিন্তু এই ধরনের রায়গুলি সাধারণ মানুষের যে আস্থা বা বিশ্বাস আদালতের প্রতি সেটাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে” 

প্রেস ক্লাব থেকে লেনিন মূর্তি পর্যন্ত মিছিল

 

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫ সালে। দেশের একটি পরিচিত দৈনিক সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী জানা যায় যে যশোর রোডের প্রায় চার হাজার গাছ কাটা পড়বে। তখন থেকেই প্রতিবাদের স্বর ধ্বনিত হচ্ছিল। মানবাধিকার সংগঠন এবং ছাত্রছাত্রীরা খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। করা হয় একাধিক আরটিআই। স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদ এবং জেলা শাসকের কাছেও চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ছিল যে উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা অনেকে তাদের চিঠি গ্রহণই করেননি।
এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের (অয়াসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্রেটিক রাইটস) তরফ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে Tree Act 2006-এর অধীনে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়। ২ এপ্রিল বনগাঁয় শুরু হয় গাছ কাটা। গাছ কাটার খবর পেয়েই আন্দোলনকারীরা ছুটে যান এবং প্রতিবাদ করেন। মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ ছিল, যারা গাছ কাটতে এসেছিলেন তারা গাছ কাটার অনুমতির কোনো যথোপযুক্ত কাগজ দেখাতে পারেননি। অবশেষে প্রতিবাদের ফলে সেই সময়ের মতো বন্ধ হয় গাছ কাটা। এরপর ২১ এপ্রিল হাবড়ায় ও ২২ এপ্রিল অশোকনগরে গাছ কাটা শুরু হয়। স্থানীয় ছাত্রছাত্রী, পরিবেশপ্রেমী মানুষেরা রাস্তায় নামেন। এমনকি প্রতিবাদীদের কয়েকদিনের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে যশোর রোডের ধারের গাছতলা। অশোকনগর, হাবড়া বিভিন্ন অঞ্চলে গাছ কাটা রোধ করার কাজ শুরু হয় এবং ২৩ এপ্রিল তৈরি হয়  যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি

 

কলকাতা হাইকোর্ট একটি প্রতিনিধি দল পাঠায় যশোর রোডের গাছগুলির অবস্থা পর্যালোচনা এবং বিকল্প কোনো পথে এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব কি না তা খতিয়ে দেখতে। এই প্রতিনিধি দল এলাকায় ঘুরে একটি ১৬১ পাতার রিপোর্ট তৈরি করে এবং তা পেশ করে প্রধান বিচারপতি নিশিথা মাথরে এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে। প্রাথমিক ভাবে গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ জারি করে কলকাতা হাইকোর্ট।  যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটির সদস্য শৌভিক মুখার্জি বলেন, “এপিডিআরের করা মামলাটির পাশাপাশি আমরাও একটি জনস্বার্থ মামলা করি কলকাতা হাইকোর্টে। দু’টি মামলা এক সঙ্গে চলছিল। আমরা দাবি করি যশোর রোডের গাছগুলিকে হেরিটেজ ঘোষণা করার জন্য। কারণ গাছগুলি পুরনো, কোনো কোনো গাছ তো শতাব্দী প্রাচীন।” শৌভিকের মতে, “যশোর রোডের গাছ শুধু তার জীববৈচিত্র্যগত অবস্থানের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বহু শরণার্থী এই পথেই ভারতে এসেছিলেন এবং এই গাছগুলির তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই গাছগুলি আমাদের আবেগ, আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অংশ।”
কিন্তু ২০১৮ সালের ৩১ অগাষ্ট কলকাতা হাইকোর্ট ৫টি রেলওয়ে ওভারব্রিজের জন্য মোট ৩৫৬টি গাছ কাটার পক্ষে রায় দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান আন্দোলনকারীরা। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্টের রায়ের ওপর। সেই মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর ধরে। অবশেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের রায়তেই শিলমোহর দেয় অর্থাৎ ৩০৬টি গাছ (৩৫৬টির মধ্যে ৫০টি গাছ ইতিমধ্যেই মারা গেছে) কাটার পক্ষে রায় দেয়।

 

সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, “one hand, there is a necessity to protect the trees and in the event it is not possible to protect, to direct afforestation, and on the other hand, there is a need to have ROBs, which are part of Setu Bharatam Project.” [SLP (C) No.25047/2918 ITEM NO. 5)] যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, একদিকে যেমন গাছগুলি রক্ষা করা জরুরি, অন্যদিকে রেলওয়ে ওভারব্রিজেরও প্রয়োজন আছে যা ‘সেতু ভারতম’ প্রকল্পের অংশ। এরপর রায়ে আরও বলা হয়েছে, “The High Court has restricted the number of trees to be felled to only 356 and further put the State Government on terms for compensatory afforestation. The special leave petition is, therefore, dismissed.” অর্থাৎ কলকাতা হাই কোর্টের যে রায় তাতে চার হাজারের জায়গায় ৩৫৬টি গাছ কাটার কথা বলা হয়েছে, হাই কোর্ট গাছ কাটার সংখ্যাটা অনেকটাই কমিয়েছে। তাই এই আবেদনটি খারিজ করা হল।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা

যশোর রোড এমনিতে ২৫-৩০ ফুট চওড়া। সেখানে ১২০ ফুট রেল ওভারব্রিজ করা কি আদৌ সম্ভব? আর তা যদি সম্ভব হয় তাহলে ৩০৬ টি নয়, কাটা পড়বে ওই চার হাজার গাছ, এমনই আশঙ্কা করছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এর আগেও সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিলেন যে সরকার এরকম বহু প্রকল্পের ক্ষেত্রেই ন্যূনতম পরিবেশ সুরক্ষার কথা বিবেচনা না করেই ছাড়পত্র দিয়েছে। আদালতকে তিনি আরও বলেন, “..unless a study is made regarding viability of an alternative proposal, such  project, which requires felling of heritage trees should not be permitted. He further submits that as a matter of fact, the project at hand envisages felling of thousands of trees.” কিন্তু আদালত এই বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি।
অন্যদিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি আদালতে জানিয়েছেন, “..in account of congestion, more than 600 people have lost their lives in accidents….He further submits that out of 356 trees, which were initially required to be felled, some trees have naturally fell on account of cyclone and others on account of some other reasons. As of now only 306 trees are surviving. He submits that the State is willing to plant five trees as against one tree to be felled.” অর্থাৎ তাঁর যুক্তি অনুযায়ী জনবহুল এলাকা হওয়ার কারণে এবং রাস্তা ছোট হওয়ার কারণে (অর্থাৎ গাছগুলি থাকার কারণে?) দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬০০ জনের উপর মানুষ। এ ব্যাপারে শৌভিক মুখার্জির দাবি, “রাস্তা সম্প্রসারণের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পথ চলাচলের সুবিধা হবে এটা আমরা মনে করি না। কারণ রাস্তা যত সম্প্রসারণ হবে তত বড়ো গাড়ি বেশি যাতায়াত করবে। তাতে সাধারণ পথচারীদের অনেক বেশি অসুবিধায় পড়তে হবে।” তিনি আরও দাবি করেন, “যেখানে যেখানে রাস্তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে, হাইওয়ে গুলোতে দুর্ঘটনার পরিমাণ কত আর যশোর রোডের দুর্ঘটনার পরিমাণ কত তার তুল্যমূল্য বিচার হওয়া প্রয়োজন। রাস্তা বড়ো করার সঙ্গে দুর্ঘটনা কমে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।” যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটির সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করা হয়েছে, “যানজটের কারণে যে ৬০০টি মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি আইনজীবী কোর্টে উল্লেখ করেছেন, সেই প্রতিটি মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট সর্বোচ্চ আদালতে অতি দ্রুত রাজ্য সরকারকে জমা দিতে হবে।” একই সুর রঞ্জিত সূরের কথাতেও, “মামলায় বলা হয়ে হয়েছে ৬০০ মানুষ মারা গেছেন, তার কোনো রেকর্ড নেই। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে এগোনো যায় কি না ভেবে দেখব আমরা।”

 

সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে বলছেন রাস্তা ছোট হওয়ার কারণে আপতকালীন সময়ে অয়াম্বুলেন্স নিয়ে তাড়াতাড়ি কলকাতার হাসপাতালে পৌঁছানো মুশকিল। অনেকে বলছেন রাস্তার পাশে গাছের ডাল পড়ে আহত হয়েছেন পথচারীরা। এই প্রশ্নগুলির জবাবে শোভিক মুখার্জি বলেন, “বনগাঁয় কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে ছুটে আসার দরকার কেন হবে? বনগাঁয় কেন এসএসকেএম কিংবা মেডিকেল কলেজের মতো হাসপাতাল নেই? প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর পরিষেবা ও পরিকাঠামো খারাপ করে রাখা হয়েছে কেন? হাবড়া হাসপাতালের উপর চাপ কমিয়ে যশোর রোড সংলগ্ন এলাকায় আরও সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল করলে তো এই অসুবিধা হয় না। আর গাছের ডাল পড়ে পথচারীদের আহত হওয়ার দায় পুরোপুরি প্রশাসনের। কারণ আমরা একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে ডেপুটেশন দিলেও এই গাছগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করার উদ্যোগ তারা নেয়নি।”

 

সুপ্রিমকোর্টের এই রায় প্রাথমিকভাবে আশা করেননি পরিবেশকর্মী অংশুমান দাস। তিনি বলেন, “এখন আমরা এত পরিবেশ সচেতন, গ্রিন বেঞ্চ আছে, তাও কেন এরকম রায় তা নিয়ে আমি একটু আশ্চর্য হয়েছিলাম। কিন্তু পরে বিবেচনা করে দেখলাম যেভাবে জল-জঙ্গল-জমি আদিবাসী মানুষের উপর আক্রমণ নেমে আসছে, তাতে বোধহয় কোর্টের থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করারও ছিল না। এমনিতেই এখানে অনেকগুলি কেসকে জুড়ে এক সঙ্গে রায় দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের রায় আরও বেরোবে বলেই আমার মনে হয়।” অংশুমান দাস আরও বলেন, “আগামী দিনে জনআন্দোলনের পথেই আমাদের হাঁটতে হবে। এর পাশাপাশি আরও অনেক সংস্থা আছে যেমন বায়োডাইভারসিটি বোর্ড, বনদপ্তর তাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে গাছগুলির জীববৈচিত্র্যগত কী ভূমিকা আছে সেটা দেখার জন্য কমিটি গড়ার কিংবা গাছগুলির স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়ার। গাছের ডাল সত্যিই ভেঙে পড়ছে, আর সেটা রক্ষণাবেক্ষণ করাও একটা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে সরকারের।”

 

একটু তলিয়ে দেখলে আমরা দেখতে পাব এই যশোর রোডের রাস্তা সম্প্রসারণ প্রকল্প এশিয়ান হাইওয়ে-১ (এএইচ-১) প্রকল্পের অংশ যা ২০৫৫৭ কিলোমিটার বিস্তৃত সড়কপথ। জাপানের টোকিও থেকে কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান হয়ে তুর্কি-বুলগেরিয়া বর্ডার যেখানে ইউরোপের রুট ই-৮০ -তে যুক্ত হচ্ছে যা শেষ হবে একেবারে পর্তুগালের লিসবনে। এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে অর্থ দিচ্ছে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এডিবি। এবার এত বড়ো একটা প্রকল্প নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য আরও উন্নত হবে। যশোর রোডের ক্ষেত্রে দেখলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি আরও সুবিধাজনক জায়গায় যাবে। পরিবেশকর্মীদের মতে এই বাণিজ্য অন্য কোনো বিকল্প পথেও করা  সম্ভব, গাছগুলোকে বাঁচিয়েই সম্ভব। আন্দোলনকারীদের দাবি যানজট এড়াতে শিয়ালদহ-বনগাঁ সমস্ত লোকালগুলিকে ১২ বগির করতে হবে। এর পাশাপাশি তাদের প্রশ্ন, পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও কি রেল একটা মাধ্যম হতে পারে না? রঞ্জিত সূরের মতে, “রেলের তুলনায় সড়ক পরিবহনে পণ্য আদানপ্রদানে মুনাফা বেশি এবং খরচ কম, তাই কর্পোরেটদের সুবিধার্থেই এই পদক্ষেপ।”

 

একটি গাছ মানে তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আরও কয়েকশো প্রাণীর বেঁচে থাকা, যার মধ্যে মানুষও অন্যতম। অর্থাৎ একটা বাস্তুবাস্তুতন্ত্রের টিকে থাকা। এই গাছগুলিকে কেন্দ্র করেও তো অনেক মানুষ নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন। ২০০২ সালে বন্যার হাত থেকে বহু মানুষকে রক্ষা করেছিল গাছগুলি। গাছকে কেন্দ্র করে অনেক স্থানের নামকরণ আছে এই অঞ্চলে। সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্ট উভয়ই বলেছেন যে একটা গাছ কাটলে তার বদলে কাছাকাছি অন্য এলাকায় পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে। ঘনবসতির কারণে  আশেপাশে এত গাছ লাগানো প্রায় অসম্ভব!  আর একশো দেড়শো বছরের পুরনো মেহগনি, বট, অশ্বত্থ গাছ কেটে নতুন গাছ লাগানো একেবারেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। দু’ধরনের গাছের বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা একই হবে না। প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে যশোর রোড ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হচ্ছে আন্দোলন, জল–জঙ্গল–জমির উপর কর্পোরেট আগ্রাসন  যত হচ্ছে ততই সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ। এই ক্ষোভ কোন দিকে মোড় নেয় এখন সেটাই দেখার।

Share this
Leave a Comment