সম্প্রতি, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (APDR)-এর আমন্ত্রণে কপিল ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা দিতে কলকাতায় এসেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও পিপলস্ ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস (পিইউসিএল)-এর সহ সভাপতি মিহির দেশাই। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক বন্দীদের বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় এই সময়ের অন্যতম প্রধান মানবাধিকার আইনজীবী (Human Rights Lawyer) মিহির দেশাইয়ের আইনি লড়াই সারা ভারতের অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের নজর কেড়েছে। বোম্বে হাইকোর্টে ভীমা-কোরেগাঁও-এলগার পরিষদ মামলায় অধিকার কর্মীদের পক্ষে প্রধান আইনজীবী শ্রী মিহির দেশাই। তিস্তা শেতলবাদের মামলারও তিনি প্রধান আইনজীবী। তাঁর বক্তৃতার বিষয় ছিল : ভীমা কোরেগাঁও, তিস্তা শেতলবাদ, উমর খালিদ, সিদ্দিকী কাপ্পান প্রভৃতি মামলার আলোকে “হিন্দুত্ববাদ”-এর সময়কালে বিচারব্যবস্থা (Judiciary at the time of “Hindutva”)। সে উপলক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাব সাংবাদিক সম্মেলন ও তারপর গ্রাউন্ডজিরো-র পক্ষে সুদর্শনা চক্রবর্তীর সঙ্গে একান্ত আলাপচারীতায় শ্রী মিহির দেশাই।
আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের বর্ষীয়ান কর্মী, পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ফাদার স্ট্যান স্বামীকে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেফতার করা হয়। মানবাধিকার অধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত তৈরি করে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নে জেলবন্দী অবস্থায় স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু হয়। এক আন্তর্জাতিক ফরেনসিক সংস্থার পরীক্ষার রিপোর্টে জানা গেছে তাঁর ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী তথ্য পাওয়া গেছে এই অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারের এক দিন আগেই সেই তথ্য বাইরের কোনও সূত্র থেকে তাঁর অজান্তে তাঁরই ল্যাপটপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ যারা এই কাজটি করছিলেন তারা নিশ্চিতভাবেই জানতেন যে তাঁকে গ্রেফতার করা হতে চলেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সুতরাং তদন্তকারী সংস্থা জানত যে পুরো বিষয়টিই সাজানো সেই সম্ভাবনা আর একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
কলকাতায় এসে এমনটাই জানালেন মিহির দেশাই। ফ্যাসিস্ত সরকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে প্রতিনিয়ত লড়ছেন মিহির দেশাইয়ের মতো মুষ্টিমেয় আইনজীবী। বিশেষত বিচারব্যবস্থা যখন রাষ্ট্রের অঙ্গুলিহেলনে চলছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, দেশের মানুষের অধিকারের থেকেও রাষ্ট্র আর পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা যখন দেশের আইন আদালতের মূল কাজ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তখন মিহির দেশাই-এর মতো আইনজীবীদের কাজটি প্রতিনিয়ত আরওই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর সাম্প্রতিক কলকাতা সফরে সাংবাদিক সম্মেলনে ভীমা কোরেগাঁও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বর্তমান হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ত সরকারের আইনি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও তাকে প্রভাবিত করার যে লগাতার প্রয়াস সেদিকে বিশেষভাবে আলোকপাত করেন। যে বিষয়গুলি মুখ্যত উঠে আসে সাংবাদিক সম্মেলনে তা হল–
- ভীমা কোরেগাঁও মামলার বৃহত্তর প্রেক্ষিতে বুঝতে হবে, কীভাবে বর্তমান সরকার নাগরিক সমাজ ও যেকোনও ভিন্ন মতকে অভূতপূর্বভাবে সরাসরি টার্গেট করছে।
- এই মামলার পরিসর বাড়িয়ে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগে দেশজুড়ে ধরপাকড় করা হয়েছে। সাংবাদিক, শিক্ষাবীদ, আইনজীবী, নারী অধিকার কর্মী, আদিবাসী অধিকার কর্মী, সংস্কৃতি আন্দোলন কর্মী, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী, মানবাধিকার কর্মীদের আর্বান নক্সাল বলে চিহ্নিত করে জেলবন্দী করা হয়েছে। এই গ্রেফতারিগুলো হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতীক।
- ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্তদের কয়েক জনের ল্যাপটপ-এর যে স্ক্রিনশট ব্যবহার করে তাঁদের ইউএপিএ অ্যাক্ট-এ আটক করা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক এক ফরেনসিক সংস্থার দ্বারা পরীক্ষা করে দেখা গেছে ল্যাপটপগুলিতে তথ্যগুলি বাইরে থেকে ঢোকানো হয়েছিল। যে তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে ও ভীমা কোরেগাঁও মামলা সরকারের তরফে যে তথ্যপ্রমাণের উপরে দাঁড়িয়ে আছে তা পুরোপুরি মিথ্যা ও সম্পূর্ণ সাজানো।
- অভিযুক্তদের আইনজীবীরা চেষ্টা করছেন ট্রায়াল শুরু হওয়ার আগে যাঁদের এখনও জামিন হয়নি তাঁদের জামিনে বের করে আনার। প্রথম এফআইআর হওয়ার পাঁচ বছর পরেও ট্রায়াল শুরু হয়নি এবং তা শুরু হলে কতটা সময় লাগবে তা অনিশ্চিত। যদিও উগ্রপন্থা-বিরোধী আইন ইউএপিএ-তে জামিন পাওয়া খুব কঠিন, তার উপরে সুপ্রিম কোর্টের কিছু রায় এই মামলায় অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করেছে।
- হাজার হাজার মানুষ ইউএপিএ-তে আটক হয়ে রয়েছেন, দেশের বিচারব্যবস্থা তাদের মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারছে না। বর্তমান কেন্দ্র সরকার যে স্ট্র্যাটেজি নিয়ে চলছে তা খুবই স্পষ্ট। অমুসলমান কোনও ব্যক্তিকে টার্গেট করতে চাইলে তাঁকে দেশদ্রোহী, আর্বান নক্সাল বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে এবং মুসলমান কোনও ব্যক্তিকে টার্গেট করতে চাইলে বলা হচ্ছে জেহাদী। পন্থা নেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করার ও তাদের উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করার যাতে অধিকারের দাবি তোলা নাগরিক সমাজের অন্যান্যদের মনেও এক ধরনের ভয় ও আতঙ্ক তৈরি হয়।
মিহির দেশাই বলেন, “ভয় দেখিয়ে যে কোনও ভিন্ন মতকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে ভয় পেলে চলবে না। গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলি সেই জন্যই কাজ করে চলেছে। সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করা হবে। নাগাল্যান্ডের পর আবারও ছত্তিশগড়ে এরিয়াল বম্বিং করা হয়েছে। কোনও সরকার নিজের দেশের মানুষের উপরে এই কাজ করতে পারে না। শুধু রাষ্ট্র যা ইচ্ছে তাই করতে পারে মাওবাদী দমনের নামে ছত্তিশগড়ে এরিয়াল বম্বিং করে শুধু তা প্রমাণ করতে চাওয়া হয়নি, আসলে যে পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষায় তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে সরকার সেটাই প্রমাণ হয়ে গেছে। ভুললে চলবে না, আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকাগুলি খনিজসম্পদে সম্মৃদ্ধ।”
সাংবাদিক সম্মেলন শেষে দেশাই-এর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় গ্রাউন্ডজিরো।
প্র: আপনি বললেন এনআইএ, ইউএপিএ-এর মতো বেশ কিছু আইনই কংগ্রেস জমানায় তৈরি। বিজেপি সেগুলিকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। ঠিক কীভাবে তারা এতটা সক্রিয়ভাবে এটা করতে শুরু করল এবং সে কাজে সফল হচ্ছে ?
উঃ আমার মনে হয় আইনগুলি যদিও আগেও ছিল, কিন্তু বর্তমান সরকার ব্যক্তি বা নাগরিক সমাজের উদ্যো্গ বা গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে অনেক বেশি টার্গেট করে সেগুলিকে ব্যবহার করছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় বিদেশী আর্থিক অনুদান নিয়ে কাজ করার বা এফসিআর (Foreign Contribution (Regulation) Act)-এ প্রসঙ্গে। অনেক এনজিও-ই বিদেশী আর্থিক অনুদান নিয়ে কাজ করে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কোনও এনজিও গণতান্ত্রিক অধিকার বা নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করলে তাদের এফসিআরএ বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। আগে এরকমটা হত না। আইনটা কিন্তু আগেও ছিল। বহু সংগঠন যারা দলিতদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, আইনজীবীদের সংগঠন, গণতান্ত্রিক অধিকার সংগঠনের এফসিআরএ বাতিল হয়েছে। অনেক আইনই আগে ছিল, তবে সেগুলি প্রয়োগ করা হত না। সেগুলি এখন এই সরকারের আমলে সক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বেশ কিছু আইন সংশোধনও করা হয়েছে। পিএমএলএ, ইউএপিএ সংশোধন হয়েছে।
প্র: কেন্দ্রের সরকার নাগরিক সমাজকে ভয়ের কারণ বলে মনে করছে। নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের টার্গেট করছে। নাগরিক সমাজের আন্দোলনও চলছে পাশাপাশি। এই দু’টি বিষয় একইসঙ্গে কীভাবে চলবে?
উঃ আমার মনে হয় নাগরিক সমাজের আন্দোলন এখন বেশ পিছু হঠছে। তা আর খুব শক্তিশালী জায়গায় নেই। তার কারণ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের জন্য একটা ভয়ের পরিবেষ তৈরি হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম খুব বেশি যোগদান করছে না। যদি এধরনের আন্দোলনে থাকা মানুষদের গড় বয়স দেখেন, খুব বেশি তরুণ চোখে পড়বে না। সুতরাং এক দিক থেকে এই সরকার নাগরিক সমাজের কাজকর্মকে কিছুটা হলেও ছেঁটে ফেলতে সফল হয়েছে। আমি আশা করব আগামী দিনে নাগরিক সমাজের আন্দোলন আবারও শক্তিশালী হবে। কিন্তু আপাতত তা হতে দেখছি না।
প্র: আমরা কি তাহলে সামনে আরও অন্ধকার সময় দেখছি?
উঃ আমরা আশঙ্কা তাই। হয়তো তারপরে পরিস্থিতি বদল হবে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি অত্যন্ত অন্ধকার।
প্র: আপনি বিচারব্যবস্থার মধ্যে থেকে কাজ করছেন। বর্তমানে এ দেশের বিচারব্যবস্থা যেভাবে সরকারের অঙ্গুলিহেলনে চলছে, আপনার মতে তার পেছনের কারণগুলি কী?
উঃ দেখুন, আমার মনে হয় এর পেছনে তিন, চারটি কারণ কাজ করে। বিচারব্যবস্থা এই সমাজেরই অংশ। বিচারপতিরা এই সমাজের মধ্যে থেকেই আসেন। ফলে সমাজের যে মানসিকতার তাঁরা বহন করেন, তা বিচারব্যবস্থাতেও প্রতিফলিত হয়। সেইজন্য কিছু বিচারপতি বাস্তবিকই প্রতিষ্ঠান যা কিছুই করছে তার সঙ্গে সহমত পোষন করেন। তাছাড়া বিচারব্যবস্থায় এমন কিছু মানুষ আছেন তাদের বেশ কিছু দূর্নীতি গোপন রয়েছে ও সেগুলির কথা সরকার জানে। এরপর রয়েছে অবসরের পরের চাকরি। এখন তো ৬৫ বছরে অবসরপ্রাপ্তরা ফিট থাকেন যেকোনও চাকরির জন্য আর সেই সুযোগটি সরকারের তরফ থেকে করে দেওয়া হয়। মূলত এই কারণগুলির জন্যই সরকার যখন নাগরিকদের অধিকার বিরোধী কিছু করেন তখন বিচারব্যবস্থা তা অদেখা করে।
প্র: আপনার মতো মুষ্টিমেয় আইনজীবীরা মানবাধিকার রক্ষার জন্য, বিচারব্যবস্থাকে নাগরিকদের পক্ষে কাজ করানোর জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন। কখনও কি হুমকির মুখে পড়েছেন?
উঃ আমার মতো আরও বেশ কিছু আইনজীবী কাজ করছেন। আমি কয়েক জন বন্ধুর কথা জানিও যাঁরা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এখনও কোনও হুমকির মুখোমুখি হইনি।
প্র: আপনাকে বিচারব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে থেকেই যখন কাজ করতে হচ্ছে, তখন প্রতিদিনের কাজের ক্ষেত্রে কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়?
উঃ প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ হল কেসগুলি নিয়ে আর্গু করতে হয়, যেগুলি রান অফ দ্য মিল কেস নয়। বিচারপতিদের সেই কেসগুলি শোনানো, নিজের পয়েন্ট অফ ভিউ-টা তাদেরকে বোঝানোই যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জর বিষয়। এটি খুবই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার আর সব সময়ে তা কাজও করে না। বিচারপতিরা অনেক সময়েই তা শোনেন না।
প্র: আপনি যেমন বললেন তরুণ প্রজন্ম নাগরিক সমাজের আন্দোলনে, মানবাধিকার আন্দোলনে সেভাবে আসছেন না। তাহলে যে হাজার হাজার নাগরিক মিথ্যা অভিযোগে জেলবন্দী, যারা প্রতিষ্ঠিত, পরিচিত নন, তাদের ভবিষ্যত কী?
উঃ সেইজন্যই জেলবন্দীদের জন্য আরও বেশি কাজ করা উচিত। আইনজীবীদের আরও বেশি কাজ করতে হবে তাদের জন্য যারা সত্যিই আইনজীবীর সাহায্য হয়তো নিতে পারছেন না নানা কারণে, মূলত আর্থিক কারণে। আইনি সহায়তা পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাই বাইরে থেকেই পরিষেবা দিতে হবে। আমরা তাই আইনজীবীদের উৎসাহ দিই সেইরকম কেস নিতে যা হয়তো খুবই সাধারণ, অথচ যা একজন মানুষের জীবন-মৃত্যু নির্দ্ধারণ করবে।
প্র: তাঁরা কি উৎসাহিত হন? আপনি কি আশার আলো দেখছেন?
উঃ হ্যাঁ তাঁরা হন। আমি এক্ষেত্রে আশাবাদী।
প্র: দেশের কোন কোন রাজ্যে আপনি বিচারব্যবস্থাকে এখনও নাগরিক অধিকার, মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করতে দেখছেন?
উঃ কাজ হচ্ছে। মানবাধিকার নানাবিধ হয়। যেমন ধরুন, নারী অধিকার, শিশু অধিকার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার – এই ক্ষেত্রগুলিতে বিচারব্যবস্থা ভালোভাবে কাজ করছে। যদিও সব ইস্যুই গুরুত্বপূর্ণ, তবু বলছি, যখনই কোনও হার্ডকোর মানবাধিকার ইস্যু উঠে আসে, যা সরাসরি রাষ্ট্রের সঙ্গে ভিন্নমত পোষন করছে, বা রাষ্ট্রের ভাবনার বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তখনই বিচারব্যবস্থা অন্য রকম আচরণ করছে। তবে আমি বলব, সেই পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।
প্র: আপনি প্রতিবন্ধী অধিকার, জেলবন্দীদের অধিকারের কথা বলছেন। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে অধ্যাপক সাইবাবা-র কেসের। এ ক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে কী বলবেন?
উঃ আমি বলব বিচারব্যবস্থা ব্যর্থ, অকৃতকার্য হয়েছে। রাজনৈতিক বন্দীদের মামলায় বিচারব্যবস্থা কোনও রকম ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারেনি। বিচারব্যবস্থার যা করা উচিত ছিল, তারা তা করেনি। এবং এটা বারবারই বলে যেতে হবে। আদালতে বারবার ফিরে যেতে হবে, দাবি জানিয়ে যেতে হবে। সময় লাগবে বদল আসতে, তবে বদল আসবেই।
প্র: উচ্চ আদালত কোনও কোনও সময় কিছু কেস-এ এমন কিছু রায়ও দেন যা আমাদের আশাবাদী করে তোলে। এটা কী ভারসাম্য বজায় রাখার খেলা?
উঃ এটুকু বলতে পারি কোনও কোনও সময়ে নিশ্চয়ই ভারসাম্য বজায় রাখতে চাওয়া, আবার কোনও সময়ে সত্যিই তারা ইতিবাচক রায় দেন বিষয়টি উপলব্ধি করে।