বন্ধ হোক তপোবন-বিষ্ণুগড় প্রকল্প


  • January 19, 2023
  • (0 Comments)
  • 849 Views

জোশীমঠ বিপর্যয় নিয়ে কোনও সরকারি সংস্থার তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সংবাদমাধ্যম, সমাজমাধ্যমেও জোশীমঠ বিষয়ক সংবাদ হয় ভিতরের পাতায় কিংবা অবলুপ্ত। কিন্তু, বিপর্যস্ত মানুষ সংগঠিত ভাবে তপোবন-বিষ্ণুগড় প্রকল্প বন্ধ এবং ত্রাণ-পুনর্বাসন-স্থিতিকরণের দাবিতে সোচ্চার। তাদের সেই দাবিপত্র এখানে তুলে ধরা হল। গ্রাউন্ডজিরো

 

 

সুধী,

 

উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ এক অভূতপূর্ব গভীর সংকটের সম্মুখীন। হিমবাহ সংলগ্ন, ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ, সীমান্ত সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর। হিন্দু তীর্থক্ষেত্র হিসেবে আস্থাশীল মানুষের প্রিয় শহর। এহেন প্রাচীন শহর আজ তাঁর অস্তিত্ব সংকটে। স্থানীয় মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাছেন। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন ১০ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন দিতে হবে। যদিও এই ঘটনা আকস্মিক নয় এবং অজানাও ছিল না। পরিবেশ গবেষক, বিশেষজ্ঞ, সমাজ, পরিবেশ ও নদী কর্মীরা এই বিপদের আশঙ্কার কথা বারবার বলেছিলেন। দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে স্থানীয় মানুষেরা ‘জোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতি’ গড়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। অথচ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিপদ সামনে আসার পরেও প্রশাসন যথেষ্ট সংবেদনশীল নয়। তৎপর নয় হিমালয়ের এই বিপর্যয়ের যথার্থ কারণ অনুসন্ধানে। আশঙ্কা এমন বিপর্যয় সমগ্র হিমালয় জুড়ে নেমে আসবে। আর প্রভাবিত করবে সমগ্র উত্তর ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন পর্যন্ত। তাই কেন্দ্রে থাকা মেকি হিন্দু ধর্মের কথা বলা সরকার এবং তার সঙ্গী সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির বিরুদ্ধেই সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে। আমরা, ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন’ নদী ইস্তেহার প্রকাশ করে হিমালয় নীতি ও হিমালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার দাবি তুলেছি। এর সঙ্গে ‘জোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতির’ দাবিগুলিকে সমর্থন করা হয়েছে। সমগ্র ভারতবাসী এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠার আহ্বান জানাই।

 

জোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতির দাবি সমূহ:

 

১। কেন্দ্র সরকার জোশীমঠ –এর ত্রাণ–পুনর্বাসন –স্থিতিকরণ (stabilisation) এর কাজ নিজের হাতে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করুক, যাতে মানুষের জীবন ও স্বার্থ সুরক্ষিত হয়।

 

২। মহোদয়, এন.টি.পি.সি–র নির্মীয়মাণ তপোবন-বিষ্ণুগড় প্রকল্পের সুড়ঙ্গ তৈরির প্রক্রিয়া জোশীমঠের বর্তমান ধ্বংসলীলার কারণ। এল অ্যান্ড টি কোম্পানি এই প্রকল্পের সুড়ঙ্গ তৈরি করছিল, কিন্তু এনটিপিসি-র কার্য প্রণালীতে অসন্তুষ্ট হয়ে এল অ্যান্ড টি এই কাজ ছেড়ে দিয়েছে। এল অ্যান্ড টি-র সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ ছেড়ে দেওয়ার উপর লেখা একটি গবেষণাপত্র হতে এই কথাই প্রমাণিত হয় যে, জোশীমঠের বর্তমান সংকটের জন্য এনটিপিসি-র, তপোবন-বিষ্ণুগড়  প্রকল্পের নির্মাণ কাজ দায়ী।

 

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্র (“Change in Hydraulic Properties of Rock Mass Due to Tunnelling by Bernard Millen, Giorgio Höfer-Öllinger, and Johann Brandl (2015). In G. Lollino et al. (eds.), Engineering Geology for Society and Territory – Volume 6, DOI: 10.1007/978-3-319-09060-3_170, © Springer International Publishing Switzerland 2015”) জানাচ্ছে যে, প্রকল্পের জন্য তিন বার সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ যেখানে যেখানে করা হয়েছে তা ফাটল জোনে পড়ে। ২০০৯ সালে তপোবন- বিষ্ণুগড় প্রকল্পের কাজে টিবিএম (Tunnel Boring Machine) আটকে যাওয়ার সময় জলও জমে গিয়েছিল। সেই জলের চাপে পাথরে নতুন করে ফাটল তৈরি হয়েছে এবং পুরানো ফাটলগুলো আরো চওড়া হয়েছে। এই কারণে সুড়ঙ্গের ভিতর ও বাইরেও জল জমা হচ্ছে।

এই গবেষণাপত্র অনুসারে যেখানে টিবিএম এখনো আটকে রয়েছে, সেখানে ফাটল পূরণ করার জন্য ব্যাপক গ্রাউন্ডিং করার পরামর্শ এন.টি.পি.সি-কে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোম্পানি খরচ বাঁচানোর জন্য সেই কাজ করেনি এবং তাঁর ফলে আজ গোটা জোশীমঠের অস্তিত্বই সংকটের মুখে।

 

তাই এনটিপিসি–র তপোবন-বিষ্ণুগড় প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। তাঁর সাথে জোশীমঠের অস্তিত্ব বিপন্ন করার দায়ে, এনটিপিসি–র এই প্রকল্পের খরচের দ্বিগুণ জরিমানা করা হোক। সেই মোটামুটি বিশ হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হোক।

 

৩। কেন্দ্র সরকার জোশীমঠের লোকজনের ঘরের বদলে ঘর এবং জমির বদলে জমি দিয়ে নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে নতুন ও অত্যাধুনিক জোশীমঠ নির্মাণের জন্য উচ্চস্তরীয় ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সমিতি গঠন করুক, সেই সমিতিতে জোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সামিল করা হোক।

 

৪। মহোদয়, ১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সেনাদের জন্য জোশীমঠে জমি অধিগ্রহণ করেছিল। কিন্তু সেই জমির ক্ষতিপূরণ এখনো লোক পায়নি। এখন সেই জমিও সঙ্কটের মুখে। সেই জমির অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হওয়ার আগে জোশীমঠের মানুষজনকে জমির ক্ষতিপূরণ বর্তমান বাজার দরে দেওয়া হোক।

 

৫। মহোদয়, অর্পিত জমিতে বহু বছর ধরে মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু ১৯৫৮-৬৪ র পড়ে কোন ভূমি বণ্টন না হওয়ার ফলে মানুষ তার বসবাসের জমিতে আইনি অধিকার প্রাপ্ত হচ্ছে না। এখন এই সব জমিতে বসবাসকারী মানুষজনের নামে জমি নথিভুক্ত করা হোক যাতে এইসব জমির ক্ষয়ক্ষতির সময় মানুষ তার বদলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারে।

 

__________________________________________

নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষে তাপস দাস কর্তৃক প্রকাশিত। (9830779291)

 

Share this
Leave a Comment