আন্দোলনরত এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন এবং আপাতত বিশ্বাসও করছেন যে মেধা তালিকায় থাকা ১০০% চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ করা হবে। এই বিষয় প্রতিক্রিয়া জানালেন দেবাশিস আইচ ।
ফুটপাথে, ময়দানে রোদ-ঝড়-জলে; পুলিশের মার, লকআপ, মামলা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ৫০৩ দিন পর সুড়ঙ্গের শেষে বোধহয় আলোর রেখা দেখা গেল। অন্তত আন্দোলনরত এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের কথা শুনে তাই মনে হল। তাঁরা প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন এবং আপাতত বিশ্বাসও করছেন যে, মেধা তালিকায় থাকা ১০০% চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ করা হবে। তাঁদের এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতেই চাকরি প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এবং এও জানা গিয়েছে, আগামী ৮ অগস্ট শিক্ষামন্ত্রী ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এই প্রতিনিধিরা পরবর্তী বৈঠকে বসবেন।
এখানে অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে। এবং তা হল, এই আলোচনা সভার ডাক সরকারের পক্ষ থেকে না এসে দলের পক্ষ থেকে এল কেন? শিক্ষক-নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত তো দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নেওয়ার কথা নয়। মুখ্যমন্ত্রী কিংবা শিক্ষামন্ত্রীর সিদ্ধান্ত এবং সর্বোপরি মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষেই এই নিয়োগে শিলমোহর পড়া উচিত। তবুও ধরে নেওয়া যাক শাসক দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির সভাপতিত্বে এই সভা ও প্রতিশ্রুতি নিয়োগ সংক্রান্ত এক চূড়ান্ত অচলাবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার এক মরিয়া দলীয় চেষ্টা।
তবুও বলা যেতে পারে, প্রার্থীদের আলোচনায় ডাকা এবং নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে যুগপৎ সরকার ও দল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় বার প্রকারন্তরে স্বীকার করে নিল নিয়োগ-দুর্নীতি ঘটেছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব ও দল থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত পারত পক্ষে স্বীকার করে নেওয়া যে, শিক্ষা-দুর্নীতির এই মহাভার আর বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কলকাতা হাইকোর্টের একের পর এক রায়, প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের রিপোর্ট, আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তের গুরুত্বকে এতটুকু খাটো না করেই বলা যায়, চাকরি প্রার্থীদের অসীম ধৈর্য, ত্যাগ ও তিতিক্ষা নিষ্ঠুর সংখ্যাধিক্যের বলে বলিয়ান এক প্রবল অহংকারী, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার ও দলটির স্বরূপ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আইনের শাসন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতার পক্ষে, নথি জালিয়াতি, প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ এক মস্ত প্রাথমিক জয়। চূড়ান্ত জয়ের জন্য আরও অনেক পথ যাওয়া বাকি।
আপাতস্বস্তির এটি আরও এক বড় কারণ যে, এই সেদিন পর্যন্তও—টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে কুবেরের ধন উদ্ধার হওয়ার পরও—সরকার ও দল ষড়যন্ত্রের ধুয়ো তুলে যাবতীয় অপরাধকে অস্বীকার করে গিয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে বার বার ডিভিশন বেঞ্চে হাজির হয়ে বিচার বিলম্বিত করা, বিচারকের এজলাসে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং আদালত বয়কটের চেষ্টার মধ্য দিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে পঙ্গু করার অপকৌশল এক শ্রেণির অ্যাডভোকেটকে নিতে দেখা গেছে। ধরে নেওয়া যাক এই সব অপকৌশলের পথ ছেড়ে সরকার ‘রাজধর্ম’ পালনের পথে হাঁটবে এমনই এক বার্তা দিতে চাওয়া হল। তবে অবশ্যই, স্বচ্ছ নিয়োগের পাশাপাশি যাদের বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে — প্রাথমিক থেকে নবম-দশম, গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি — তাদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বরখাস্ত করতে হবে। এবং সরকার ও দল এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বিধায়ক, মন্ত্রী, সরকারি আধিকারিক, দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পথে তদন্তকারী সংস্থা এবং উচ্চ আদালতের পথের বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।