শাসককে বলতে বাধ্য করতে হবে কেন জয়িতা, হাসিবুর, প্রতীক, অর্কদীপ, টিপুদের তুলে নিয়ে যাওয়া হল? এতো গুমখুনের প্রক্রিয়া। রাজ্য সরকারের রাজ্য পুলিশের এই স্বৈরাচারের জবাব তো আগে চাই, পরে বিচার হবে তাঁদের অপরাধ কী। লিখলেন দেবাশিস আইচ।
একের পর এক প্রতিবাদী চরিত্রের তরুণ-তরুণীদের ধারাবাহিকভাবে স্রেফ তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যতটুকু খবর মিলছে তা পুলিশি রাষ্ট্রের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এঁদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা নেই। পরিচয়ও নেই কারও সঙ্গে, কিন্তু সাধারণ বোধবুদ্ধি বলছে, এঁরা শাসক দলগুলির এমনকি শাসকদলের প্রথাসিদ্ধ বিরোধী দলগুলিরও রাজনৈতিকভাবে বিরোধীপক্ষ। তাই কোনও প্রশ্ন উঠছে না। তাই এত নীরবতা। এই নীরবতা অপরাধ। অপরাধ এই কারণেই যে, যেকোনও মত ও পথের অনুগামীদের — সে যতই ক্ষুদ্র ও ভিন্নমতের রাষ্ট্রবিরোধী গোষ্ঠীই হোক বা না-হোক না কেন — তাদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে গগনবিদারী নীরবতায় মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়ার অর্থ পুলিশি রাষ্ট্রকে মেনে নেওয়া। সারা দেশ এমনই এক ফ্যাসিবাদী দুঃসময়ের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েছে। সন্দেহ নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারও এই রাজ্যকেও দুঃস্বপ্নের কারাগারে পরিণত করেছে। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এই তরুণ-তরুণীদের স্বৈরাচারী জুন্টা গোপনীয়তার লৌহচাদরের আড়ালে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধেও কথা বলতে হবে।
এ যে অন্যায়, ঘোরতর অন্যায়, এ যে স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের বিরোধী, এ যে দেশের মানুষকে শাসক বাগাড়ম্বরের বিপরীতে ভিন্ন স্বরের কণ্ঠরোধ। যাঁরা তাঁদের কথা শুনতে চায়, জানতে চায় তাঁদেরও অধিকারহরণ। এটুকু বলতে আমরা যাঁরা অপারগ, তাঁরা যদি মনে করেন — আমরা তো ওরা নেই, তাই গণতন্ত্রের ঘেরাটোপে নিশ্চিত, তবে এই আমরারা মুর্খের স্বর্গে বাস করছি। আমাদের এই অপারগতার দুর্বলতাই বুলডোজার নামিয়ে আনে। গ্রেপ্তার করে জলাভূমি রক্ষার লড়াইয়ে ব্রতী বহরমপুরের প্রবীণ মাস্টারমশাই, দিদিমণিদের। যে দেশ তার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গ্রেপ্তার করে, সে দেশের কোনও ব্যক্তির কোনও গণতান্ত্রিক অধিকারের নিশ্চয়তা নেই। এই শাসকের প্রতিটি পদক্ষেপকে সন্দেহের চোখে দেখা উচিত। প্রশ্ন করা উচিত। তাই প্রশ্ন করতে হবে এই জুন্টা আচরণকেও।
শাসককে বলতে বাধ্য করতে হবে কেন জয়িতা, হাসিবুর, প্রতীক, অর্কদীপ, টিপুদের তুলে নিয়ে যাওয়া হল? এতো গুমখুনের প্রক্রিয়া। রাজ্য সরকারের রাজ্য পুলিশের এই স্বৈরাচারের জবাব তো আগে চাই, পরে বিচার হবে তাঁদের অপরাধ কী। মানবাধিকার রক্ষার জন্য এই জবাব আমাদের পেতেই হবে। এওতো একরকম মানবাধিকারের উপর, গণতন্ত্রের উপর, আইনের শাসন ও সংবিধানের উপর বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া। মানে বুলডোজারতন্ত্র।